বরফ গলা by একরামুল হক শামীম

বরফ গলার দুই বিপরীতমুখী অর্থ রয়েছে। কখনও তা ইতিবাচক আবার কখনও নেতিবাচক। সম্পর্কের বরফ গলা, তিক্ততার বরফ গলা কিংবা কোনো প্রকল্পের বরফ গলার মধ্যে ইতিবাচক কিছু খোঁজা যেতে পারে। দীর্ঘদিনের সম্পর্ক যখন শীতল হতে হতে বরফ হয়ে যায়,


তখন সেই বরফ গললে সম্পর্কে জড়ানো মানুষগুলোর মনে তা স্বস্তি এনে দিতে পারে বৈকি! কিন্তু এসব তো কেবল রূপক অর্থে বরফ গলা। আক্ষরিক অর্থেই যদি বরফ গলতে শুরু করে তাহলে তা কি স্বস্তির খবর হতে পারে? বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে দ্রুত বরফ গলে চলছে, এই খবর পুরনো এবং নিয়মিত। কিছুদিন পরপরই বিজ্ঞানীদের বরাতে এই খবর জানা যায়। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ক্ষতিকর প্রভাব রুখতে নানা ধরনের পদক্ষেপের কথাও জানা যায়। গ্রিন ফান্ডের কথা তো জানা থাকারই কথা। কিন্তু এত সব উদ্যোগ বরফ গলা কমাতে পারছে না।
গেল জুলাই মাসের খবর ছিল গ্রিনল্যান্ডে নজিরবিহীন বরফ গলছে। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসার বিজ্ঞানীরা এই তথ্য জানিয়েছিল। সাধারণত গ্রীষ্মকালে গ্রিনল্যান্ডের বরফের স্তর প্রায় অর্ধেক গলে যায়। কিন্তু এ বছরের বরফ গলার পরিমাণ অস্বাভাবিক। গত ৩ দশকের মধ্যে ৩ কিলোমিটার পুরু বরফ স্তরের সর্বোচ্চ ৫৫ শতাংশ গলেছে। এবার নাকি সেই পরিমাণ ৯৭ শতাংশে পেঁৗছেছে। পরিবেশের জন্য এ ব্যাপারটিকে বিজ্ঞানীরা বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
সম্প্রতি নাসার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সুমেরু অঞ্চলের বরফ গলতে গলতে এখন সর্বনিম্ন সীমানায় পেঁৗছেছে। এর আগে ২০০৭ সালে সুমেরু অঞ্চলের বরফ গলে সবচেয়ে ছোট আকার ধারণ করেছিল। কিন্তু এবার তার চেয়ে ছোট হয়ে গেছে। সুমেরু অঞ্চলের বরফ গলে পানি হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব স্পষ্ট করে তুলেছে। জলবায়ু পরিবর্তন সারাবিশ্বে খুব দ্রুত ঘটে চলছে। এভাবে সুমেরু অঞ্চলের বরফ গলতে থাকলে তা বিশ্ব পরিবেশের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, শিল্প কারখানার সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে কার্বন নির্গমন বেড়েই চলেছে। ফলে বরফ গলাও বাড়ছে। সম্পর্কের বরফ গললে মানুষ স্বস্তি পেতে পারে, কিন্তু সুমেরু অঞ্চলের বরফ গলা পৃথিবীবাসীকে ঠেলে দিচ্ছে অস্থির সময়ের দিকে। এর ক্ষতিকর প্রভাব সবচেয়ে বেশি ভোগাবে অনুন্নত দেশগুলোকে।
বরফ গলার ক্ষতিকর প্রভাব এরই মধ্যে টের পাওয়া যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বজুড়েই গরমের নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে। ইউরোপের ৫০০ বছরের ইতিহাসে গ্রীষ্মকালের স্থায়িত্ব এত দীর্ঘ হয়নি। গত ১০০ বছরের মধ্যে যুক্তরাজ্যে গত এপ্রিল মাসে সবচেয়ে বেশি গরম পড়েছে। বাংলাদেশেও অন্য বছরের তুলনায় গরম পড়েছে বেশি। অন্যদিকে গত ৬ বছরে সুমেরু অঞ্চলের উষ্ণতা বাড়ার পরিমাণ হিসাবে রেখে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ২১০০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১.৬ মিটার বেড়ে যেতে পারে। এসবই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বরফ গলার ক্ষতিকর দিক। সম্পর্কের বরফ গলাতে উদ্যোগের প্রয়োজন পড়ে, তেমনই সুমেরু অঞ্চলের বরফ গলা থামাতেও প্রয়োজন পরিবেশ আন্দোলনের মতো উদ্যোগ।
 

No comments

Powered by Blogger.