শেখ হাসিনা ’১৫ সালের পর কী ধরনের বিশ্ব চাই তার দিকনির্দেশনা দেবেন -প্রধানমন্ত্রীর সফর সম্পর্কে জাতিসংঘে স্থায়ী প্রতিনিধি ড. মোমেন

জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শান্তির মডেল ‘ইমপাওয়ারিং পিপ্ল’ এবং ‘মানসিক প্রতিবন্ধী’ বিষয়টি রেজ্যুলেশন আকারে গ্রহণ করা হবে। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তাঁর বাংলায় প্রদত্ত বক্তব্যে ২০১৫ সালের পর কী ধরনের বিশ্ব দেখতে চাই- তার ওপর দিকনির্দেশনা দেবেন।


গতবারের অধিবেশনে জনগণকে ক্ষমতায়নের ওপর যে বক্তব্য তিনি রেখেছিলেন তার পরিপ্রেক্ষিতে এবার প্রধানমন্ত্রীর আগমন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ অনেক রাষ্ট্রের কাছে। তিনি তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের কণ্ঠস্বর হিসেবে উন্নত বিশ্বের নজর কেড়েছেন বিশেষভাবে। তার বক্তব্য আগামীতে টেকসই উন্নয়ন (এসডিজি) প্রণয়নসহ বিভিন্নক্ষেত্রে দিকদর্শন হিসেবে গ্রহণ করা হবে। জাতিসংঘের চলতি ৬৭তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক আগমন উপলক্ষে ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকাল) নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন।
তিনি বলেছেন, এবারের অধিবেশনে ১শ’ ২৯টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা অংশ নিচ্ছেন। একই সঙ্গে ১শ’ ৯৩টি সদস্য দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। এবারের জাতিসংঘ সাধারণ সভার মূল ধারণা (থিম) হচ্ছে ‘সমঝোতার ভিত্তিতে বিরোধ নিষ্পত্তি।’ এ ছাড়া আইনের শাসন, শান্তির সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেয়া, শান্তি উন্নয়ন, শিক্ষার প্রসার, মানুষের পুষ্টির নিশ্চয়তা, প্রতিবন্ধীদের মানসিক বিকাশসহ মানবসভ্যতার উন্নয়ন অগ্রযাত্রার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণদানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে অংশ নেবেন। এসব ইস্যুতে তিনি প্রধান বক্তা অথবা সভাপতিত্ব করবেন। প্রধানমন্ত্রী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ফার্স্টলেডি মিশেল ওবামার আমন্ত্রিত পার্টিতে যোগ দেবেন। তবে আনুষ্ঠানিক কোন বৈঠকের সম্ভাবনা নেই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের আমন্ত্রণে একটি সভায়ও অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। হিলারির সঙ্গেও আনুষ্ঠানিক কোন বৈঠক হবে না বলে উল্লেখ করেন ড. মোমেন। বার্তা সংস্থা এনার এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন আরও বলেন, গত দু’বছরে মর্যাদাসম্পন্ন দুটি এ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার তেমন সম্ভাবনা নেই। এমনকি এখন পর্যন্ত এ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্তির লক্ষ্যে কোন মনোনয়ন পেয়েছেন বলেও জানতে পারিনি। তবে বেশ ক’টি গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশনে শেখ হাসিনা ‘গেস্ট অব অনর’ হিসেবে বক্তব্য রাখবেন- এটিও কম গৌরবের নয়- উল্লেখ করেন ড. মোমেন। তিনি বলেন, প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে ৬৩ জন আসছেন। ব্যবসায়ীদের একটি টিমও আসছেন তার সঙ্গে নিজেদের খরচে। সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালক ছিলেন।
মিশনের প্রেস সেক্রেটারি মামুন-অর-রশিদ। শেখ হাসিনার কর্মসূচীর সমন্বয়কারী মিশনের কাউন্সিলর মোঃ তৌহিদুল ইসলাম বার্তা সংস্থা এনার প্রশ্নের জবাবে বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ৩০টিরও অধিক সেশনে অংশ নেবেন। প্রধানমন্ত্রী কতটি সেশনে অংশ নিতে হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে মিসর, সেনেগাল, কুয়েত, মিয়ানমারসহ বেশ ক’টি দেশের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে অধিবেশনের মূল কর্মসূচীর ফাঁকে।
নিউইয়র্কে আসার পরদিন ২৪ সেপ্টেম্বর সকালে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সদর দফতরে ‘আইনের শাসন’ বিষয়ক এক শীর্ষ সম্মেলনে মূল বক্তব্য রাখবেন অর্থাৎ তার মতামতের আলোকেই পরে সকলে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন। এদিন বিকেলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের আমন্ত্রণে ‘অংশিদারিত্বে সমতার ভিত্তিতে ভবিষ্যত’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেবেন শেখ হাসিনা। পরদিন ২৫ আগস্ট সকালে মহাসচিব বান কি-মুনের অভ্যর্থনায় অংশ নেবেন। সকাল ৯টায় সাধারণ অধিবেশনের সূচনা পর্বে উপস্থিত থাকবেন। সে সময় অন্যদের মধ্যে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁর বক্তব্য উপস্থাপন করবেন। এদিন অপরাহ্ণ ৪টায় বিশ্বে শান্তির সংস্কৃতিকে আরও জোরদার করার জন্য উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন।
২৬ সেপ্টেম্বর সকালে ম্যানহাটানে এশিয়া সোসাইটির মিলনায়তনে ‘জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলা’ শীর্ষক এক আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের শিক্ষার অভূতপূর্ব উন্নয়নে সরকারের বিশেষ অবদানের তথ্য তুলে ধরবেন শেখ হাসিনা আরেকটি অনুষ্ঠানে।
২৭ সেপ্টেম্বর সকালে ম্যানহাটানে হান্টার কলেজ মিলনায়তনে ‘অটিজম’ সম্পর্কিত এক আলোচনায় তিনি বক্তব্য রাখবেন। সন্ধ্যা ৮টার পর জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের বক্তব্য উপস্থাপন করবেন শেখ হাসিনা।
মুসলিম বিদ্বেষী কংগ্রেসম্যান হিসেবে পরিচিত রিপাবলিকান পিটার কিংয়ের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে ড. এ কে মোমেন বলেন, কংগ্রেসম্যান পিটার কিং হচ্ছেন হাউজে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কমিটির চেয়ারম্যান। তার সঙ্গে সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের সাফল্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আলোচনা করবেন ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে।
২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বিশ্ববিখ্যাত টাইমস স্কোয়ার সংলগ্ন হোটেল ম্যারিয়ট মারকুইজে প্রবাসীদের প্রদত্ত সংবর্ধনায় বক্তব্য রাখবেন শেখ হাসিনা। ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকার উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক ত্যাগের আগে অপরাহ্ন ৪টায় নিউইয়র্কের সাংবাদিকদের সঙ্গে মিলিত হবেন প্রধানমন্ত্রী। সে সময় সাম্প্রতিক পরিস্থিতির আলোকে তিনি বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেবেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মিশনের মিনিস্টার (কালচারাল) অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ, নবাগত ইকোনমিক মিনিস্টার বিডি মিত্র এবং কাউন্সিলর সামিয়া আঞ্জুম। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রীর জাতিসংঘ সফরের সংবাদ কভার করতে নিজ উদ্যোগে কমপক্ষে ২০ সাংবাদিক নিউইয়র্কে এসেছেন। এ ছাড়া আরও ১০ জনের মতো রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীর তালিকায়।

No comments

Powered by Blogger.