বিশ্বব্যাংকের প্রত্যাবর্তন-সতর্কবার্তা স্মরণ রাখুন

'ফিরছে বিশ্বব্যাংক'_ নানা সূত্র থেকে পাওয়া এ খবরটি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়ই ঢাকার বাতাসে বইয়ে দিয়েছিল স্বস্তির বার্তা। অনলাইন পত্রিকা, টেলিভিশন আর সংবাদপত্রের পাতায় ছিল ইতিবাচক ও আশাবাদী এই সংবাদেরই গুরুত্ব। অবশেষে নিশ্চিত খবর মিলল শুক্রবার সকালে।


বিশ্বব্যাংকের তরফে পদ্মা সেতু প্রকল্পে প্রত্যাবর্তনের দাফতরিক বিবৃতি দেশের সব মহলকে আশ্বস্ত করল। অত্যন্ত আকাঙ্ক্ষিত এ বিবৃতি অবসান ঘটিয়েছে অনেক জল্পনা-কল্পনা ও অনিশ্চয়তার। দেশের বৃহত্তম উন্নয়ন উদ্যোগ_ পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ফিরে আসার সিদ্ধান্তকে আর সবার মতো আমরাও সাধুবাদ ও স্বাগত জানাই। পদ্মা সেতু এ দেশে স্বপ্নের সেতু হিসেবে আখ্যায়িত। এ সেতু বাস্তবায়িত হলে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সড়ক ও রেল যোগাযোগে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে বিপুল অবদানের কথা চিন্তা করেই মহাজোট সরকার তাদের নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে এ সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছিল। ক্ষমতাসীন হওয়ার পর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেতু নির্মাণের আনুষঙ্গিক কাজও শুরু করেছিল। ২৯১ কোটি ডলারে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা হয়েছিল। বিশ্বব্যাংক, জাইকা, এডিবি, আইডিবি_ এই চার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঋণ সহায়তা চুক্তিও হয়েছিল। কিন্তু কাজ শুরুর এক পর্যায়ে গুরুতর অভিযোগ তুলে বেঁকে বসে বিশ্বব্যাংক। তাদের প্রতিশ্রুত ১২০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। প্রথমে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরকারকে তার বিহিত করার আহ্বান জানায় প্রতিষ্ঠানটি; সরকারের পদক্ষেপ সন্তোষজনক না হওয়ায় এ বছরের ২৯ জুন ঋণচুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেয় বিশ্বব্যাংক। সে ঘোষণার পর নানা বিকল্প প্রস্তাব এসেছে পদ্মা সেতু নির্মাণে। কিন্তু অভিজ্ঞ মহল বিকল্প প্রস্তাবে সম্মতি দেননি। জানিয়েছিলেন, বিশ্বব্যাংক ঋণ না দিলে এত ব্যয়বহুল পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন সহজসাধ্য হবে না, এমনকি দেশের উন্নয়নে সেতুর ব্যবহার লাভজনকও হবে না। ফলে বিশ্বব্যাংককে ফেরানোর দিকেই বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। আশার কথা, শেষ পর্যন্ত সরকারের আন্তরিকতা ও বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতামূলক মনোভাবের কারণেই সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটল। সেতু প্রকল্পের শুরুতেই বিশ্বব্যাংক যে বার্তা দিয়েছে তা দুর্নীতিমুক্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের চূড়ান্ত তাগিদ থেকে এসেছে। শুধু বিশ্বব্যাংক নয়, নাগরিকরাও আশা করেন বৃহত্তম এ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দুর্নীতিমুক্ত হোক। আর দুর্নীতি বিষয়ে সরকারের কঠোর ও কার্যকর দৃষ্টিভঙ্গিই প্রত্যাশিত। প্রত্যাবর্তনের ঘোষণা দিয়ে প্রচারকৃত দাফতরিক বিবৃতিতে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেছে এবং এ বিষয়ে তাদের সচেতনতা ও সতর্কতা জারি থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছে। এ দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক। আমরা মনে করি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনা, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে। শেষ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে সরকারের একটি নৈতিক বিজয়ও অর্জিত হলো। খুব স্পষ্ট যে, এ সরকারের মেয়াদে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হবে না। কিন্তু সরকার সেতু নির্মাণের ভিত্তি ভূমিটি রচনা করতে যথেষ্ট আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছে। সৎ ও দক্ষ হওয়া সত্ত্বেও পদ্মা সেতুর স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানকে ছুটিতে যেতে হয়েছে। বৃহত্তর স্বার্থে তার এ ত্যাগের বিশেষ মূল্য রয়েছে। আগামীতে যে সরকারের অধীনেই এ সেতু নির্মাণের কাজ হোক, তাদের কাছ থেকেও দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক কর্মকাণ্ড প্রত্যাশিত। ভবিষ্যতেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সব রকমের তৎপরতা বহাল রাখতে হবে। পদ্মা সেতু নিয়ে ইতিমধ্যে পানি অনেক ঘোলা হয়েছে, নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, নানামুখী গুজব ও জল্পনা-কল্পনায় বাতাসও ভারি হয়েছে যথেষ্ট। এর ফলে সেতু প্রকল্পটি গতি হারিয়ে একেবারে সম্ভাবনাহীন হয়ে পড়েছিল। শেষ পর্যন্ত গতি পেল পদ্মা সেতু প্রকল্প। নতুন উদ্যমে শুরু হোক বিপুল কর্মযজ্ঞ। সম্ভব দ্রুততম সময়ে শেষ হোক এর কাজ। ভুলের পুনরাবৃত্তি এড়িয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নে স্বপ্নের এ সেতুর বিপুল ভূমিকা পরিণতি পাক।

No comments

Powered by Blogger.