পাটচাষিদের মাথায় হাত by সুমী নাসরীন
চলতি মৌসুমে ৬০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা মণ দরে পাটের মূল্য পাচ্ছেন পাটচাষিরা। ভর্তুকি মূল্যে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ক্রয়ের নজির অনেক আছে; কিন্তু ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি কতটা মর্মান্তিক এবং অসহায়ত্ব সেটি কেবল পাটচাষিরাই মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে পারছেন।
অর্ধশতাব্দীর কম সময় আগে বৈশাখী বৃষ্টিতে উপযুক্ত জো (মাটিতে পানির পরিমাণ) পেলে চাষিরা পাট বপন করতেন। এখন সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় সেচের মাধ্যমে সেই কাজটি করতে হয়। চলতি মৌসুমে অনাবৃষ্টির কারণে পাটক্ষেতে একাধিকবার সেচেরও প্রয়োজন হয়েছে। এই সঙ্গে প্রাকৃতিকভাবে মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যাওয়ায় অধিক মূল্যে সার ও কীটনাশক ব্যবহার পাটের পরিচর্যা ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে। শ্রাবণ মাসে বন্যার পানি কিংবা বর্ষণের পানিতে আগে পাটচাষিরা পাটক্ষেতে বা ক্ষেতের অদূরে পাট পচানোর কাজটি সম্পন্ন করতেন। এখন বেড়িবাঁধ আর অপরিকল্পিত স্লুইস গেট, নদীর পানি, খাল-বিলে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। বৃষ্টির অভাবে খানাখন্দকেও পানির দেখা নেই। পাটচাষিদের দুর্ভোগ এমনই চরম পর্যায়ে পেঁৗছেছে যে, কিছু কিছু এলাকায় ক্ষেতের পাট ক্ষেতেই শুকিয়ে গেছে। রিকশাভ্যান, নছিমন-করিমন, গরুর গাড়ি ছাড়াও মাথায় করে ক্ষেতের পাট কয়েক কিলোমিটার দূরে নিয়ে শ্যালো টিউবওয়েলের সাহায্যে পানি তুলে পাট জাগ দিতে হয়েছে চাষিদের। পাট পচানোর জন্য রিবন রেটিং পদ্ধতি একটি কাগুজে হিসাব। চাষিরা সেটি কোনোভাবেই গ্রহণ করতে পারছে না। সুতরাং প্রচলিত পদ্ধতিতে পাট ধোয়া, শুকানো, বাজারজাতকরণে রয়েছে আরও খরচ। এমতাবস্থায় একজন কৃষি শ্রমিকের মজুরি ৩০০ টাকা হলে এক মণ পাটের মূল্য ৬০০ টাকা শুধু অসামঞ্জস্যই নয়, বাস্তবতাবিবর্জিত। সরকারিভাবে পাটের সর্বনিম্নমূল্য ২০০০ টাকা নির্ধারণ করার কথা শোনা গেলেও বাজারে তার কোনো প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বরং বিজেএমসি ক্রয় কেন্দ্রে ১৪০০ টাকা মণ দরে পাট ক্রয় করছে বলে জানা গেছে। কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে এভাবে বঞ্চিত হচ্ছে কেন? কারা এর জন্য দায়ী, সে ব্যাপারে সরকারের উদাসীনতা মোটেই কাম্য নয়।
সরকার কর্তৃক মূল্য নির্ধারণ করা হলেও সেটি দেখভাল ও তদারকি করার দায়িত্ব যাদের, তাদের লাভের অংশ তাহলে কি? হতে পারে দায়িত্বে অবহেলা, নয়তো যে কোনো উপায়ে অতিরিক্ত অর্থ আয়ের ধান্দাবাজিতে সময় ব্যয় করা, ব্যস্ত থাকা। আমরা মনে করি, এর ফলে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষণ্ন হওয়া যতটা না উদ্বেগের বিষয়, পাটচাষিদের দুরবস্থা তার চেয়ে মর্মান্তিক, বেশি উৎকণ্ঠার। বাংলাদেশের জন্য সোনার চেয়ে দামি সোনালি আঁশ পাটকে রক্ষা করতে হলে পাটচাষের উপযোগী পানির প্রাপ্যতা এবং উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পাটের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা আগে দরকার। সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অবহেলা ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
মধুখালী, ফরিদপুর
সরকার কর্তৃক মূল্য নির্ধারণ করা হলেও সেটি দেখভাল ও তদারকি করার দায়িত্ব যাদের, তাদের লাভের অংশ তাহলে কি? হতে পারে দায়িত্বে অবহেলা, নয়তো যে কোনো উপায়ে অতিরিক্ত অর্থ আয়ের ধান্দাবাজিতে সময় ব্যয় করা, ব্যস্ত থাকা। আমরা মনে করি, এর ফলে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষণ্ন হওয়া যতটা না উদ্বেগের বিষয়, পাটচাষিদের দুরবস্থা তার চেয়ে মর্মান্তিক, বেশি উৎকণ্ঠার। বাংলাদেশের জন্য সোনার চেয়ে দামি সোনালি আঁশ পাটকে রক্ষা করতে হলে পাটচাষের উপযোগী পানির প্রাপ্যতা এবং উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পাটের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা আগে দরকার। সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অবহেলা ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
মধুখালী, ফরিদপুর
No comments