পুলিশ সিগন্যাল! by মাহফুজুর রহমান মানিক
রাস্তায় নামলেই নগরবাসী ট্রাফিক জ্যাম আর ট্রাফিক সিগন্যালের সম্মুখীন হন। কাউকে যদি প্রশ্ন করা হয় এই দুটির মধ্যে কোনটি বেশি বিরক্তিকর? একজন জবাব দিলেন, ট্রাফিক জ্যাম। আসলেই কি ট্রাফিক জ্যাম? ধরা যাক কেউ একজন গাড়িতে বসে আছেন।
তার সামনে বিশাল জ্যাম, তিনি জানেন এটি ছাড়তে ২০ মিনিট কিংবা ৩০ মিনিট লাগবে এবং এখান থেকে বাঁচার আপাত কোনো উপায় নেই। আবার একই ব্যক্তি চার রাস্তাবিশিষ্ট মোড়ের এক রাস্তায় গাড়িতে বসে আছেন। তার সামনে গাড়ি নেই অথবা কয়েকটা আছে। সামনে পুলিশ তার একটা হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কিংবা সিগন্যালে লাল আলো জ্বলছে। অন্য রাস্তাগুলো দিয়ে একটার পর একটা যানবাহন যাচ্ছে। এমনকি ইতিমধ্যে কোনো রাস্তা দিয়ে দু'বার করে যানবাহন যাচ্ছে। ২০ মিনিট প্রায় শেষ। গাড়িতে বসে আছেন তো আছেনই। পুলিশেরও খবর নেই, সিগন্যালের লাল বাতিটাও জ্বলে আছে। এবার সহিহ উত্তরটা কী হবে? নিশ্চয়ই ট্রাফিক সিগন্যাল।
ঠিক এই প্রশ্নটা দিয়ে ব্লগেও একটা পোস্ট দেওয়া হলো। দু'জন ব্লগার জবাব দিলেন, দুটিই বিরক্তিকর। একজন বললেন, দুটিই আমার সয়ে গেছে। তবে সবচেয়ে বিরক্তিকর ট্রাফিক পুলিশ। তিনি অবশ্য আরেকটা কথা বলেছেন, সেটা দিয়েই লেখাটা শেষ হবে।
ঢাকা শহরের ট্রাফিক সিগন্যালের অবস্থা আসলে এই রকমই। কয়েকটা রাস্তার ক্ষেত্রে তো এটি অবধারিত যে, সহজেই পুলিশ ছাড়তেই চায় না। বিশেষ করে পান্থপথ দিয়ে যারা কারওয়ান বাজার হয়ে এফডিসির সামনে আসেন তারা ভালোই বলতে পারবেন। এমনকি কোনো কোনো সময় পুলিশ অকারণেই ৩০ মিনিট পর্যন্তও আটকিয়ে রাখেন। এখন যেহেতু পুরোটাই পুলিশের মর্জির ওপর নির্ভর করতে হয়, তার মানে ঢাকা শহরে এখন আর ট্রাফিক সিগন্যাল নেই; আছে পুলিশ সিগন্যাল। যেটা আসলেই বিরক্তিকর।
যদিও ট্রাফিক সিগন্যাল বাস্তবে নেই, তা ব্যাখ্যা করার দরকার পড়ে না। আসলে ট্রাফিক সিগন্যাল মানে কী? বিশ্বের সব আধুনিক শহরের উদাহরণ টেনে বললে, স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল। যেটা লাল-নীল-সবুজ বাতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। যেটা ১৮৬৮ সালে ইংল্যান্ডে শুরু হয়েছিল। আমাদের দেশে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০৫ সালে রাজধানীতে প্রথম স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যালের কাজ শুরু হয়। ২০০৯ সাল পর্যন্ত পরিবহন চালকসহ সংশ্লিষ্টদের সচেতন করতে কয়েক দফায় বিশাল অঙ্কের টাকা খরচ করা হয়। এ নিয়ে আইনও হয়েছে, না মানলে চালকদের বিরুদ্ধে এক হাজার টাকা জরিমানা এবং তিন মাসের ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল।
২০১০ সালের প্রথমদিকে এ নিয়ে বেশ তোড়জোড় চালানো হয়। ওই বছরের ৪ জানুয়ারি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ জানায়, ট্রাফিক আইন অমান্য করায় ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় ২৪ ঘণ্টায় ৬০৩টি মামলা করে তারা। সেই তোড়জোড় এখন কতটা আছে, নগরবাসী সেটা ভালোই বলতে পারবেন। তবে এখন সে আইন যানবাহনচালকরা দূরে থাক খোদ পুলিশই মানছে কি-না যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল এখানেই অসার। যেখানে পুলিশের হাতের ইশারায় যানবাহন চলাচল করে; যেখানে লালবাতি জ্বললেও পুলিশের ক্ষমতায় যানবাহন চলতে পারে; যেখানে পুলিশ নিজেই সিগন্যালের সময় নিয়ন্ত্রণ করে, সেখানে পিক-অফপিক সময় বিবেচনা করে বিভিন্ন রুটে ট্রাফিক সিগন্যালের সময় নিয়ন্ত্রণ করেই দিলেই-বা কী। পুলিশই সর্বেসর্বা। সুতরাং আমাদের সিগন্যালকে ট্রাফিক সিগন্যাল না বলে পুলিশ সিগন্যাল বললে কি একেবারে অত্যুক্তি হবে?
পুলিশকে ইঙ্গিত করে ওই ব্লগারের মন্তব্যের করা শেষাংশ_ মাঝে মধ্যে মনে হয় রাস্তার মোড়ে এসব তালগাছ দাঁড়িয়ে না থাকলে যানজট আরেকটু কম হতো।
mahfuz.manik@gmail.com
ঠিক এই প্রশ্নটা দিয়ে ব্লগেও একটা পোস্ট দেওয়া হলো। দু'জন ব্লগার জবাব দিলেন, দুটিই বিরক্তিকর। একজন বললেন, দুটিই আমার সয়ে গেছে। তবে সবচেয়ে বিরক্তিকর ট্রাফিক পুলিশ। তিনি অবশ্য আরেকটা কথা বলেছেন, সেটা দিয়েই লেখাটা শেষ হবে।
ঢাকা শহরের ট্রাফিক সিগন্যালের অবস্থা আসলে এই রকমই। কয়েকটা রাস্তার ক্ষেত্রে তো এটি অবধারিত যে, সহজেই পুলিশ ছাড়তেই চায় না। বিশেষ করে পান্থপথ দিয়ে যারা কারওয়ান বাজার হয়ে এফডিসির সামনে আসেন তারা ভালোই বলতে পারবেন। এমনকি কোনো কোনো সময় পুলিশ অকারণেই ৩০ মিনিট পর্যন্তও আটকিয়ে রাখেন। এখন যেহেতু পুরোটাই পুলিশের মর্জির ওপর নির্ভর করতে হয়, তার মানে ঢাকা শহরে এখন আর ট্রাফিক সিগন্যাল নেই; আছে পুলিশ সিগন্যাল। যেটা আসলেই বিরক্তিকর।
যদিও ট্রাফিক সিগন্যাল বাস্তবে নেই, তা ব্যাখ্যা করার দরকার পড়ে না। আসলে ট্রাফিক সিগন্যাল মানে কী? বিশ্বের সব আধুনিক শহরের উদাহরণ টেনে বললে, স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল। যেটা লাল-নীল-সবুজ বাতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। যেটা ১৮৬৮ সালে ইংল্যান্ডে শুরু হয়েছিল। আমাদের দেশে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০৫ সালে রাজধানীতে প্রথম স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যালের কাজ শুরু হয়। ২০০৯ সাল পর্যন্ত পরিবহন চালকসহ সংশ্লিষ্টদের সচেতন করতে কয়েক দফায় বিশাল অঙ্কের টাকা খরচ করা হয়। এ নিয়ে আইনও হয়েছে, না মানলে চালকদের বিরুদ্ধে এক হাজার টাকা জরিমানা এবং তিন মাসের ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল।
২০১০ সালের প্রথমদিকে এ নিয়ে বেশ তোড়জোড় চালানো হয়। ওই বছরের ৪ জানুয়ারি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ জানায়, ট্রাফিক আইন অমান্য করায় ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় ২৪ ঘণ্টায় ৬০৩টি মামলা করে তারা। সেই তোড়জোড় এখন কতটা আছে, নগরবাসী সেটা ভালোই বলতে পারবেন। তবে এখন সে আইন যানবাহনচালকরা দূরে থাক খোদ পুলিশই মানছে কি-না যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল এখানেই অসার। যেখানে পুলিশের হাতের ইশারায় যানবাহন চলাচল করে; যেখানে লালবাতি জ্বললেও পুলিশের ক্ষমতায় যানবাহন চলতে পারে; যেখানে পুলিশ নিজেই সিগন্যালের সময় নিয়ন্ত্রণ করে, সেখানে পিক-অফপিক সময় বিবেচনা করে বিভিন্ন রুটে ট্রাফিক সিগন্যালের সময় নিয়ন্ত্রণ করেই দিলেই-বা কী। পুলিশই সর্বেসর্বা। সুতরাং আমাদের সিগন্যালকে ট্রাফিক সিগন্যাল না বলে পুলিশ সিগন্যাল বললে কি একেবারে অত্যুক্তি হবে?
পুলিশকে ইঙ্গিত করে ওই ব্লগারের মন্তব্যের করা শেষাংশ_ মাঝে মধ্যে মনে হয় রাস্তার মোড়ে এসব তালগাছ দাঁড়িয়ে না থাকলে যানজট আরেকটু কম হতো।
mahfuz.manik@gmail.com
No comments