বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্তকে স্বাগত ব্যবসায়ী ও বিশিষ্টজনদের

বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ফিরে আসার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন দেশের ব্যবসায়ী মহল ও বিশিষ্টজনেরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্বপ্নের এই সেতু নির্মাণের ফলে সরাসরি দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি হবে।


তাঁদের মতে, এ সেতু নির্মাণের ফলে আমদানি-রফতানিতে ইতিবাচক ধারা সৃষ্টি হবে। খুব সহজেই পণ্য আসবে দেশে। এদিকে পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের ফিরে আসার খবরে মাদারীপুর, শরীয়তপুর, মুন্সীগঞ্জসহ দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলায় খুশির জোয়ার বইছে। আর অর্থনৈতিকভাবে দক্ষিণাঞ্চল আরও শক্তিশালী হবে এমনটা মনে করছেন দেশের বিশিষ্টজনেরা।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিশ্বব্যাংক এক বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশ সরকার বিশ্বব্যাংকের শর্ত সন্তোষজনকভাবে পূরণ করায় এবং ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সম্মত হওয়ায় পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন করবে তারা। আগের চুক্তি অনুযায়ী এ প্রকল্পে ১২০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার কথা রয়েছে বিশ্বব্যাংকের। এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অর্থায়ন স্থগিতের পর কয়েকটি শর্ত দেয় সংস্থাটি, যা পূরণ হয়নি জানিয়ে ঋণচুক্তি বাতিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় তারা। এবং গত ২৯ জুন বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে তাদের প্রতিশ্রুত ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি বাতিল করে। অবশেষে সকল শর্ত পূরণ হলে প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু নির্মাণে আবারও অর্থায়নের ঘোষণা দেয় এ দাতা সংস্থাটি।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, বাঙালীর বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের ফিরে আসার খবরে আমার সাধুবাদ জানাই। বিশ্বব্যাংকের সব শর্ত মেনে নেয়ায় সরকারকেও ধন্যবাদ জানাই। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে রাজধানীর সাথে দক্ষিণাঞ্চলের সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হবে। সেতু নির্মাণ বাস্তবায়ন হলে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে ব্যবসায়ীরা। কেননা, সেতু নির্মাণের ফলে পণ্য আমদানি-রফতানিতে প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে। বেনাপোল বন্দর দিয়ে মালামাল আমদানি-রফতানিতে স্থবিরতা কেটে যাবে।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু জনকণ্ঠকে বলেন, দক্ষিণাঞ্চলবাসীর সঙ্গে দেশের ব্যবসায়ী মহলেরও প্রাণের দাবি ছিল পদ্মা সেতু নির্মাণ। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু অর্থায়নে বিশ্বব্যাংক সম্মত হওয়ায় দেশের ব্যবসায়ী মহল একে সাধুবাদ জানিয়েছে। তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ হলে বিভিন্ন পণ্য খুব সহজেই বেনাপোল বন্দর হয়ে দেশে আসবে। ব্যবসায়ী এ নেতা বলেন, এ সেতু নির্মাণের ফলে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের খবরে মাদারীপুর, শরীয়তপুর, মুন্সীগঞ্জসহ ওইসব এলাকায় খুশির জোয়ার বইছে।
পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে অর্থনৈতিকভাবে দক্ষিণাঞ্চল আরও শক্তিশালী হবে এমনটাই মনে করছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মির্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হলে পণ্য আমদানি-রফতানি বাড়বে। দক্ষিণাঞ্চলবাসীর সঙ্গে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে ব্যবসায়ীরা। তবে এ সেতু নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে সরকার যথেষ্ট সময়ক্ষেপণ করেছে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, ২৯৭ কোটি ডলারে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের ১২০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার কথা। গত বছর সেপ্টেম্বরে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরকারকে চারটি শর্ত বেঁধে দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। তা পূরণ হয়নি বলে অভিযোগ জানিয়ে গত ২৯ জুন ঋণ বাতিল করে সংস্থাটি। এ প্রকল্পে জাইকা ৪১ কোটি ৫০ লাখ ডলার, এডিবি ৬১ কোটি ৫০ লাখ ডলার, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) ১৪ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার চুক্তি রয়েছে। বাকি অর্থের যোগান দেবে সরকার।

No comments

Powered by Blogger.