বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি ॥ রফতানিমুখী শিল্প শুধু নয়, ক্ষুদ্র শিল্পেও বিপর্যয় ডেকে আনবে -পুনর্বিবেচনার দাবি ব্যবসায়ীদের
বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি রফতানিমুখী শিল্পের পাশাপাশি ক্ষুদ্র শিল্পে বিপর্যয় ডেকে আনবে। উত্তর আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপে বাজার সঙ্কুচিত হয়ে আসায় দেশের পোশাক শিল্প এমনিতেই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ অবস্থায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পোশাক শিল্প খাতে আরও অস্থিরতা তৈরি করবে।
অন্যদিকে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি সার্বিক মূল্যস্ফীতি উস্কে দেবে। প্রত্যেকটি ভোগ্যপণ্যের দামে এর প্রভাব পড়বে। রফতানিমুখী শিল্পের জন্য বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
তৈরি পোশাক শিল্প মালিকরা বলছেন, পাইকারি পর্যায়ে ১৭ ভাগ বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। হিসাব করে দেখা গেছে, এতে করে স্থানীয় বাজার থেকে যেসব কাঁচামাল সংগ্রহ করা হয় তার দামও ২০ ভাগ বেড়ে যাবে। বিদ্যুত এবং স্থানীয় কাঁচামাল মিলিয়ে প্রত্যেকটি পণ্যের উৎপাদন খরচে ৩৭ ভাগ প্রভাব পড়বে। কিন্তু এর বিপরীতে ইউরোপ-আমেরিকায় এখন মন্দার কারণে ক্রেতারা পণ্যের দাম কমিয়েছে। ফলে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি অর্জন নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তাঁরা।
ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ বলছেন, সরকার কুইক রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্র দিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন করতে গিয়ে দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু কতটুকু বৃদ্ধি আমাদের দেশের শিল্প-কারখানা সহ্য করতে পারবে তা বিবেচনা করা উচিত। চলতি বছর এখন পর্যন্ত তিনবার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে এভাবে তিনবার পণ্যের দাম বৃদ্ধি করলে ক্রেতাদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়বে বিবেচনায় তৈরি পোশাকের দাম বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়নি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিদ্যুত উৎপাদনে কুইক রেন্টাল নামের অতিমুনাফাখোরদের হাত থেকে বের হয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প নির্মাণ করা উচিত, যাতে বিদ্যুত খাতে স্থিতিশীলতা ফিরে আসে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নই শিল্প উন্নয়নের পূর্বশর্ত। শিল্পোন্নয়ন ছাড়া বেকার সমস্যার সমাধান ও অধিক রফতানি আয় বৃদ্ধি সম্ভব নয়। কিন্তু আমাদের এখানকার দুর্বল অবকাঠামোর কারণে দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে উৎসাহ হারাচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ মাধ্যম রফতানিমুখী শিল্প খাত গত অর্থবছরে ২৪ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। এই খাতে এক কোটির বেশি শ্রমিক-কর্মচারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রায় চার কোটি মানুষ এই শিল্পের ওপর নির্ভর করে। কাজেই যে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সরকারের উচিত চিন্তাভাবনা করা। কিন্তু আমাদের এখানে সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় না। পোশাক শিল্প মালিকরা বলছেন, মূলত উত্তর আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপ আমাদের বড় বাজার। ওসব দেশে ঋণ-সঙ্কট ও দ্বিতীয় অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। ক্রেতা পণ্যের মূল্য হ্রাস করেছে, ক্রেতার রফতানি অর্ডারও আশাব্যঞ্জক নয়, দেশের ব্যাংকগুলোর অতি-উচ্চ সুদহার ক্ষেত্র বিশেষ ১৮ থেকে ২০ ভাগ এবং দুর্বল অবকাঠামোগত অবস্থা বিশেষ করে অপর্যাপ্ত বিদ্যুত ও গ্যাস এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের অভাবে রফতানিমুখী শিল্পের সক্ষমতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। গত মাসে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। আন্তর্জাতিক বাজারেও দেশের রফতানিকারকরা কঠিন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছেন। ঠিক এমন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত হতে পারে না।
এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আব্দুল সালাম মুর্শেদি শুক্রবার বিকেলে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়ায় জনকণ্ঠকে বলেন, শিল্প উৎপাদনে বিদ্যুত এবং গ্যাসের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু আমাদের এখানে তীব্র সঙ্কট চলছে। গ্যাস নিয়ে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ আগে থেকেই ছিল, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দফায় দফায় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশকে এখন প্রতিযোগিতা করে টিকতে হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক মন্দার কারণে তারা উচ্চমূল্যে কোন পণ্য ক্রয়ে আগ্রহী হচ্ছে না। এদিকে বাংলাদেশের নানামুখী সমস্যার কারণে পণ্যের উৎপাদন খরচও কমানো যাচ্ছে না। সবদিক বিবেচনা করে রফতানিমুখী শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমান বলেন, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে শুধু উৎপাদন খরচে একটি প্রভাব পড়ে তা নয়। দেশের বাজার থেকে আমরা যত ধরনের কাঁচামাল ক্রয় করি তার প্রত্যেকটির দাম অন্তত ২০ ভাগ বৃদ্ধি পাবে। এতে আমাদের তৈরি পণ্যের ওপর প্রভাব পড়বে ৩৭ ভাগ। এই পরিমাণ প্রভাব একসঙ্গে শিল্প মালিকরা নিতে পারবে কি না সন্দেহ রয়েছে। আমরা চলতি বছরের রফতানি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি।
বিজিএমইএ সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, শুধু যে বিদ্যুতের দামই বেড়েছে তা নয়, আমাদের কর বেড়েছে ইন্স্যুরেন্স থেকে যে প্রাপ্ত প্রিমিয়াম ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির লাভের জন্য তুলে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি আমাদের ওপর অতিরিক্ত চাপ। সরকার কৃষিতে যেভাবে ভর্তুকি দেয় গার্মেন্টস শিল্পেও তা দেয়া উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিল্প ছাড়া অর্থনীতি কঠিন ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো সম্ভব নয়।
এফবিসিসিআই সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত তিনবার বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। এতে করে দেশী শিল্প সঙ্কটের মধ্যে পড়ার পাশাপাশি বিদেশী উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আগ্রহ হারাবে। তিনি বলেন, সরকারের উচিত হবে উচ্চমূল্যের এই বিদ্যুত খাত থেকে সরে এসে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়ন- যাতে এ খাতে স্থিতিশীলতা ফিরে আসে।
শুধু শিল্পই নয়, ভোগ্যপণ্যের দামও বাড়িয়ে তুলবে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি। প্রত্যেকটি পণ্যের দামই বৃদ্ধি পাবে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বাজারে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক শুক্রবার বিকেলে জনকণ্ঠকে বলেন, প্রত্যেকবার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পর বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। বিদ্যুতের কারণে উৎপাদন খরচ যে পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তা যোগ করেই পণ্যের নতুন মূল্য নির্ধারণ করবে উৎপাদনকারীরা। বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং এ্যান্ড স্টিল মিলস এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ মাসুদ বলেন, সরকার এর আগে শিল্প-কারখানায় ১২ ঘণ্টা বিদ্যুত সংযোগ বন্ধের ঘোষণা দেয়ায় রি-রোলিং মিলগুলো বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল। তখন মিলগুলোর মোট উৎপাদনক্ষমতা মাত্র ত্রিশ থেকে চল্লিশ শতাংশে নেমে এসেছিল। এবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। একদিকে বিদ্যুতের সরবরাহের অনিশ্চয়তা অন্যদিকে দফায় দফায় দাম বৃদ্ধি। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ফলে এখন নতুন করে উৎপাদন খরচ হিসাব করতে হবে।
প্রসঙ্গত, বর্তমান সরকারের সময় ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে শুধু আরইবি গ্রাহকদের বিদ্যুতের মূল্য ৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়। এর পর ২০১০ সালের মার্চে আরইবি ছাড়া অন্যান্য সংস্থার গ্রাহকের গড়ে ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে শতকরা ৫ ভাগ খুচরা দাম বাড়ানো হয়। একই বছরের ডিসেম্বর মাসে ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ বাড়ানো হয়। চলতি বছরে ফেব্রুয়ারি মাসে ৭ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, পহেলা মার্চ ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং সর্বশেষ বৃহস্পতিবার খুচরা দাম আরও ১৫ শতাংশ বাড়ানো হয়।
তৈরি পোশাক শিল্প মালিকরা বলছেন, পাইকারি পর্যায়ে ১৭ ভাগ বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। হিসাব করে দেখা গেছে, এতে করে স্থানীয় বাজার থেকে যেসব কাঁচামাল সংগ্রহ করা হয় তার দামও ২০ ভাগ বেড়ে যাবে। বিদ্যুত এবং স্থানীয় কাঁচামাল মিলিয়ে প্রত্যেকটি পণ্যের উৎপাদন খরচে ৩৭ ভাগ প্রভাব পড়বে। কিন্তু এর বিপরীতে ইউরোপ-আমেরিকায় এখন মন্দার কারণে ক্রেতারা পণ্যের দাম কমিয়েছে। ফলে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি অর্জন নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তাঁরা।
ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ বলছেন, সরকার কুইক রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্র দিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন করতে গিয়ে দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু কতটুকু বৃদ্ধি আমাদের দেশের শিল্প-কারখানা সহ্য করতে পারবে তা বিবেচনা করা উচিত। চলতি বছর এখন পর্যন্ত তিনবার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে এভাবে তিনবার পণ্যের দাম বৃদ্ধি করলে ক্রেতাদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়বে বিবেচনায় তৈরি পোশাকের দাম বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়নি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিদ্যুত উৎপাদনে কুইক রেন্টাল নামের অতিমুনাফাখোরদের হাত থেকে বের হয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প নির্মাণ করা উচিত, যাতে বিদ্যুত খাতে স্থিতিশীলতা ফিরে আসে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নই শিল্প উন্নয়নের পূর্বশর্ত। শিল্পোন্নয়ন ছাড়া বেকার সমস্যার সমাধান ও অধিক রফতানি আয় বৃদ্ধি সম্ভব নয়। কিন্তু আমাদের এখানকার দুর্বল অবকাঠামোর কারণে দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে উৎসাহ হারাচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ মাধ্যম রফতানিমুখী শিল্প খাত গত অর্থবছরে ২৪ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। এই খাতে এক কোটির বেশি শ্রমিক-কর্মচারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রায় চার কোটি মানুষ এই শিল্পের ওপর নির্ভর করে। কাজেই যে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সরকারের উচিত চিন্তাভাবনা করা। কিন্তু আমাদের এখানে সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় না। পোশাক শিল্প মালিকরা বলছেন, মূলত উত্তর আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপ আমাদের বড় বাজার। ওসব দেশে ঋণ-সঙ্কট ও দ্বিতীয় অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। ক্রেতা পণ্যের মূল্য হ্রাস করেছে, ক্রেতার রফতানি অর্ডারও আশাব্যঞ্জক নয়, দেশের ব্যাংকগুলোর অতি-উচ্চ সুদহার ক্ষেত্র বিশেষ ১৮ থেকে ২০ ভাগ এবং দুর্বল অবকাঠামোগত অবস্থা বিশেষ করে অপর্যাপ্ত বিদ্যুত ও গ্যাস এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের অভাবে রফতানিমুখী শিল্পের সক্ষমতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। গত মাসে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। আন্তর্জাতিক বাজারেও দেশের রফতানিকারকরা কঠিন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছেন। ঠিক এমন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত হতে পারে না।
এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আব্দুল সালাম মুর্শেদি শুক্রবার বিকেলে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়ায় জনকণ্ঠকে বলেন, শিল্প উৎপাদনে বিদ্যুত এবং গ্যাসের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু আমাদের এখানে তীব্র সঙ্কট চলছে। গ্যাস নিয়ে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ আগে থেকেই ছিল, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দফায় দফায় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশকে এখন প্রতিযোগিতা করে টিকতে হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক মন্দার কারণে তারা উচ্চমূল্যে কোন পণ্য ক্রয়ে আগ্রহী হচ্ছে না। এদিকে বাংলাদেশের নানামুখী সমস্যার কারণে পণ্যের উৎপাদন খরচও কমানো যাচ্ছে না। সবদিক বিবেচনা করে রফতানিমুখী শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমান বলেন, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে শুধু উৎপাদন খরচে একটি প্রভাব পড়ে তা নয়। দেশের বাজার থেকে আমরা যত ধরনের কাঁচামাল ক্রয় করি তার প্রত্যেকটির দাম অন্তত ২০ ভাগ বৃদ্ধি পাবে। এতে আমাদের তৈরি পণ্যের ওপর প্রভাব পড়বে ৩৭ ভাগ। এই পরিমাণ প্রভাব একসঙ্গে শিল্প মালিকরা নিতে পারবে কি না সন্দেহ রয়েছে। আমরা চলতি বছরের রফতানি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি।
বিজিএমইএ সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, শুধু যে বিদ্যুতের দামই বেড়েছে তা নয়, আমাদের কর বেড়েছে ইন্স্যুরেন্স থেকে যে প্রাপ্ত প্রিমিয়াম ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির লাভের জন্য তুলে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি আমাদের ওপর অতিরিক্ত চাপ। সরকার কৃষিতে যেভাবে ভর্তুকি দেয় গার্মেন্টস শিল্পেও তা দেয়া উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিল্প ছাড়া অর্থনীতি কঠিন ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো সম্ভব নয়।
এফবিসিসিআই সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত তিনবার বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। এতে করে দেশী শিল্প সঙ্কটের মধ্যে পড়ার পাশাপাশি বিদেশী উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আগ্রহ হারাবে। তিনি বলেন, সরকারের উচিত হবে উচ্চমূল্যের এই বিদ্যুত খাত থেকে সরে এসে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়ন- যাতে এ খাতে স্থিতিশীলতা ফিরে আসে।
শুধু শিল্পই নয়, ভোগ্যপণ্যের দামও বাড়িয়ে তুলবে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি। প্রত্যেকটি পণ্যের দামই বৃদ্ধি পাবে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বাজারে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক শুক্রবার বিকেলে জনকণ্ঠকে বলেন, প্রত্যেকবার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পর বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। বিদ্যুতের কারণে উৎপাদন খরচ যে পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তা যোগ করেই পণ্যের নতুন মূল্য নির্ধারণ করবে উৎপাদনকারীরা। বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং এ্যান্ড স্টিল মিলস এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ মাসুদ বলেন, সরকার এর আগে শিল্প-কারখানায় ১২ ঘণ্টা বিদ্যুত সংযোগ বন্ধের ঘোষণা দেয়ায় রি-রোলিং মিলগুলো বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল। তখন মিলগুলোর মোট উৎপাদনক্ষমতা মাত্র ত্রিশ থেকে চল্লিশ শতাংশে নেমে এসেছিল। এবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। একদিকে বিদ্যুতের সরবরাহের অনিশ্চয়তা অন্যদিকে দফায় দফায় দাম বৃদ্ধি। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ফলে এখন নতুন করে উৎপাদন খরচ হিসাব করতে হবে।
প্রসঙ্গত, বর্তমান সরকারের সময় ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে শুধু আরইবি গ্রাহকদের বিদ্যুতের মূল্য ৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়। এর পর ২০১০ সালের মার্চে আরইবি ছাড়া অন্যান্য সংস্থার গ্রাহকের গড়ে ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে শতকরা ৫ ভাগ খুচরা দাম বাড়ানো হয়। একই বছরের ডিসেম্বর মাসে ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ বাড়ানো হয়। চলতি বছরে ফেব্রুয়ারি মাসে ৭ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, পহেলা মার্চ ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং সর্বশেষ বৃহস্পতিবার খুচরা দাম আরও ১৫ শতাংশ বাড়ানো হয়।
No comments