পবিত্র কোরআনের আলো-কার্যকারণ শৃঙ্খলে চালিত আল্লাহর সৃষ্টিজগৎ

১১৬. ওয়াক্বালুত্তাখাজাল্লাহু ওয়ালাদান সোবহা-নাহু, বাল লাহু মা-ফিস্ ছামা-ওয়াতি ওয়াল আরদ্বি, কুল্লুঁল্লাহু ক্বা-নিতু-ন। ১১৭. বাদিউস ছামা-ওয়াতি ওয়াল আরদ্বি, ওয়া ইজা কাদ্বা আমরান ফাইন্নামা ইয়াক্বুলু লাহু 'কুন' ফায়াকূন।


১১৮. ওয়াক্বালাল্লাজিনা লা-ইয়া'লামূনা লাও লা ইউকাল্লেমুনাল্লাহু আও তা'তী-না আয়াতুন, কাজালিকা ক্বালাল্লাজিনা মিন ক্বাবলিহিম মিছলা ক্বাউলিহিম, তাশাবাহাত ক্বুলুবুহুম, ক্বাদ বাইয়ান্নাল আয়াতি লিক্বাওমিইঁউকি্বনূন। (সুরা বাকারা, আয়াত-১১৬-১১৮)

অনুবাদ
১১৬. খ্রিস্টানরা বলে, আল্লাহ তায়ালা (ঈসাকে) নিজের সন্তানরূপে গ্রহণ করেছেন। (অথচ) পবিত্রতা একান্তভাবে আল্লাহর। বরং আকাশমণ্ডলী এবং পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই তাঁর। সব কিছুই তাঁর শাশ্বত আনুগত্যের অধীন।
১১৭. আকাশমণ্ডলী এবং পৃথিবীর তিনি স্রষ্টা, যখন তিনি কোনো একটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, তখন শুধু বলেন, 'হও' আর সঙ্গে সঙ্গেই তা হয়ে যায়।
১১৮. যারা প্রকৃত জ্ঞান রাখে না তারা বলে, আল্লাহ নিজে আমাদের সঙ্গে কথা বলেন না কেন, অথবা এমন কোনো নিদর্শন আমাদের সামনে হাজির করতে পারেন, যাতে আমরা দেখতে পারি। এদের আগের লোকেরা এমন কথা বলত যা তারা বলছে, এদের অন্তঃকরণ একই রকম, যারা দৃঢ়বিশ্বাসী তাদের জন্য আমি আমার নিদর্শনগুলো সুস্পষ্ট করে পেশ করে রেখেছি।

ব্যাখ্যা
১১৬ নম্বর আয়াতে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের একটি ভ্রান্ত বিশ্বাস খণ্ডন করা হয়েছে। মারিয়াম পুত্র ঈসা বা তাদের ভাষায় যিশুকে তারা আল্লাহর পুত্র বলে সম্বোধন করে। কিন্তু তাদের এমন ধারণা এক বিরাট বিভ্রান্তি। এটা আল্লাহর পরিচয়ের সঙ্গে একেবারেই সংগতিপূর্ণ নয়। আল্লাহর পরিচয় কোনো অবস্থায়ই ব্যক্তি আল্লাহ বা বস্তু আল্লাহ নয়। আল্লাহ তায়ালা ব্যক্তিবৈশিষ্ট্য বা বস্তুবৈশিষ্ট্য থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র। তিনি জন্মগ্রহণ করেননি এবং জন্ম দেন না। মারিয়াম পুত্র ঈসা (আ.)-কে আল্লাহর পুত্র বলে খ্রিস্টানরা আল্লাহর পরিচয় কলুষিত করে।
১১৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা তাঁর সৃষ্টির প্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ ও সাবলীলভাবে বর্ণনা করেছেন। পুরো জগৎ তাঁর সৃষ্টি। তিনি যখন সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নেন তখন বলেন, 'হয়ে যাও' আর অমনি হয়ে যায়। এমনি করেই তিনি বিশ্বজগতে তাঁর সৃষ্টি করার প্রকৃতিকে ব্যক্ত করেছেন। আল্লাহর নির্দেশে বিশ্বজগৎ চলে তার প্রকৃতি অনুযায়ী। বীজ থেকে চারা, চারা থেকে গাছ, গাছ থেকে ফুল ও ফল, ফল থেকে বীজ, এমনিভাবে প্রকৃতির নিয়মে চলে আল্লাহর সৃষ্টিজগৎ। সৃষ্টির সিদ্ধান্তে তিনি স্থির করেছেন প্রকৃতির শাশ্বত কার্যকারণ শৃঙ্খল। এই শৃঙ্খলের ভেতর দিয়ে প্রকাশিত হয় তাঁর বিধান, 'হয়ে যাও'। আর এমনভাবেই সব হয়ে যায়। আমরা দেখতে পাই, আল্লাহর সৃষ্টির বিধান চির বিকাশমান ও শাশ্বত। আল্লাহর একক এবং এক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিশ্বজগৎ সামনের দিকে এগিয়ে চলছে।
১১৮ নম্বর আয়াতে অজ্ঞ লোকদের একটি উদ্ভট প্রশ্নের জবাব দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ সম্পর্কে যাদের ধারণা নেই বা ভুল ধারণা আছে তারা বলে, আল্লাহ তো চাইলে আমাদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন, তাঁর নিদর্শন সরাসরি দেখাতে পারেন। এ উক্তির জবাবে আল্লাহ তায়ালা বলেন, এ রকম অজ্ঞ লোক আগেও ছিল, এখনো আছে। ওদের অন্তঃকরণ এমনই। কিন্তু যারা বুদ্ধিমান তারা আল্লাহর নিদর্শনগুলো ঠিকই বোঝে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.