বাতিল হোক অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা by শরীফুল ইসলাম রুকন

ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় আসা বর্তমান সরকার অনলাইনভিত্তিক সংবাদপত্রের জন্য 'অনলাইন গণমাধ্যম পরিচালনা খসড়া নীতিমালা ২০১২' প্রবর্তন করেছে, যা অক্টোবর মাসের মধ্যে চূড়ান্ত হবে বলে তথ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।


অনলাইন সংশ্লিষ্টদের মতামত না নিয়ে করায় এবং এতে নানা অসঙ্গতি-অস্পষ্টতা থাকায় এই খসড়া নীতিমালা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা অব্যাহত আছে। এই নীতিমালা প্রণয়ন প্রক্রিয়া সরকার এমনভাবে করেছে যে, যাতে অনলাইন গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের কোনো অংশগ্রহণ ছিল না। গত ১২ সেপ্টেম্বর তথ্য মন্ত্রণালয় কয়েকটি অনলাইন গণমাধ্যম প্রতিনিধিকে ডেকে প্রস্তাবিত নীতিমালা সরবরাহ করে এবং এ বিষয়ে ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাদের মতামত জানাতে বলে।
প্রশ্ন জাগে, তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যুক্তিযুক্ত আলোচনা না করে এবং কাদের ইন্ধনে এ রকম বিকাশমান একটি সেক্টরকে নীতিমালার নামে সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছে। কমিউনিটি রেডিও নীতিমালার আদলে প্রণয়ন করা অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালাটি পড়লে বোঝা যাবে, প্রস্তাবিত নীতিমালায় লাইসেন্স ফি, নবায়ন ফি, অনুমোদন গ্রহণ, জরিমানা, শাস্তি ইত্যাদি বিষয়ে সুস্পষ্ট আইনি পদক্ষেপের কথা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই খসড়া নীতিমালা যারা করেছেন তারা অনলাইনের 'অ' বোঝেন কিনা আমার সন্দেহ। কারণ, যে কোনো নীতিমালা কিংবা আইনে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সংজ্ঞা দেওয়াটা কাঠামোগত দিক থেকে বাধ্যতামূলক। কিন্তু প্রস্তাবিত অনলাইন গণমাধ্যম পরিচালনা নীতিমালায় 'অনলাইন গণমাধ্যম' বলতে কী বোঝায়, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণা দেওয়া হয়নি।
অনলাইন গণমাধ্যমের লাখো-কোটি টাকা আয় নেই যে, সরকারকে রেজিস্ট্রেশনের জন্য ৫ লাখ টাকা ও প্রতি বছর ৫০ হাজার টাকা করে দেবে। অনলাইনে বিজ্ঞাপন প্রদানের ধারা এখনও আমাদের দেশে গড়ে ওঠেনি। করপোরেট হাউসগুলো এই সেক্টরে তেমন একটা বিনিয়োগ করছে না। দু'একটি ছাড়া বেশিরভাগ অনলাইন গণমাধ্যমই তরুণদের সৃষ্টি। যেখানে স্টাফদের বেতন ও বিদেশি বড় সার্ভারের ব্যয় মেটাতে গিয়ে অনলাইন পত্রিকাগুলো হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে রেজিস্ট্রেশন বাবদ এত টাকা অনলাইন গণমাধ্যম জগৎকে মরুময় করে তুলবে।
পত্রিকার ডিক্লারেশন নেওয়ার জন্য প্রকাশককে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হয়; কিন্তু এর বিপরীতে কোনো জামানত অথবা কর নেওয়া হয় না। উপরন্তু ডিক্লারেশন নেওয়ার পর নির্ধারিত মেয়াদ (৩ মাস) অতিবাহিত হলে সরকারি বিজ্ঞাপনের জন্য তালিকাভুক্ত করা হয় এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিজ্ঞাপন প্রদান করা হয়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বেশিরভাগ অনলাইন সংবাদপত্রের মালিকরা নিজেদের পকেটের টাকা দিয়ে অতিকষ্টে পত্রিকা প্রকাশনা অব্যাহত রেখেছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলে ক্ষমতায় আসা সরকারের দায়িত্ব হবে, এ ধরনের নীতিমালা দ্রুত বাতিল করে অনলাইন গণমাধ্যমের বিকাশ ত্বরান্বিত করা।
sharifulislam.news@yahoo.com
 

No comments

Powered by Blogger.