সেতু প্রকল্পের অনিয়ম-বিশ্বব্যাংক ও দুদকের যৌথ তদন্ত এবার by মোশতাক আহমদ

বিশ্বব্যাংকের শর্ত মেনে শেষ পর্যন্ত দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাদের তদন্তদলে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি রাখার পক্ষে সিদ্ধান্ত নিল। সংস্থাটির এক বা একাধিক প্রতিনিধিকে সঙ্গে নিয়ে দুদক পদ্মা সেতু প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ নতুন করে তদন্ত করবে।


দুদক কর্মকর্তারা জানান, বিশ্বব্যাংকের শর্তের বিষয়টি মাথায় রেখে দুই সপ্তাহ আগেই দুদকের তদন্তদল পুনর্গঠন করা হয়। বর্তমান তদন্তদলের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে দুদকের আরো দুজন উপপরিচালককে। নতুন করে গঠিত তদন্তদলে থাকবেন বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীসহ এ পর্যন্ত যাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তাঁদেরকে আবারও বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদের সামনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলেও দুদকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সূত্রটি আরো জানায়, তারা সপ্তাহ দুয়েক আগেই আভাস পায় বিশ্বব্যাংক আবারও পদ্মা সেতু ্রকল্পে ফিরবে। এর পরই দুদক তদন্ত দল পুনর্গঠন করে।
তবে এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমানের কাছে জানতে চাইলে গতকাল শুক্রবার রাতে তিনি কালের কণ্ঠকে সংক্ষেপে বলেন, ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। এ তদন্ত অব্যাহত থাকবে। পুরনোদের নতুন করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কি না, এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তদন্তের সময় বিশ্বব্যাংকের কোনো প্রতিনিধি থাকবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
দুদক সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে দুদকের তদন্ত দলের সঙ্গে প্রতিনিধি দিতে চেয়েছিল বিশ্বব্যাংক। এজন্য তারা চলতি বছরের শুরুতে দুদকে একটি প্রস্তাবও দেয়। কিন্তু তা দুদক আইনের পরিপন্থী হওয়ায় দুদক তা ফিরিয়ে দিয়েছিল। এরপর দুর্নীতির অভিযোগ তুলে গত ২৯ জুন বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিল করে দিলে সংবাদ সম্মেলন করেন দুদক চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক 'আনস্যাটিসফাইট রেসপনস'-এর যে অভিযোগ এনে পদ্মা সেতুর ঋণচুক্তি বাতিল করেছে, তা সঠিক বলে মনে করে না দুদক।
এত কিছুর পরও কেন দুদকের অনুসন্ধানকাজে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি থাকবে- এমন প্রশ্নের জবাবে গতকাল দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে দুদক তার অবস্থান থেকে সরে এসেছে।
জানা যায়, সপ্তাহ দুয়েক পুনর্গঠিত কমিটিতে আরো দুজন উপ-পরিচালককে যোগ করা হয়। তাঁরা হলেন গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী ও আবদুল্লাহ আল জাহিদ।
পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে কানাডার পুলিশও তদন্ত করছে। এ বিষয়ে দুদক প্রতিনিধি দলের কানাডা যাওয়ারও কথা ছিল। কিন্তু বিশ্বব্যাংক ফিরে আসার সম্ভাবনায় এখন দুদক কানাডায় প্রতিনিধি না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মূল সেতু নির্মাণ ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন স্থগিতের পর বিষয়টি তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। প্রথম দফা তদন্তের পর গত ২ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে দুদক জানিয়েছিল, মূল সেতু নির্মাণে প্রাক-যোগ্য প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে কোনো রকম দুর্নীতি হয়নি। তবে পরামর্শক নিয়োগে অনিয়ম নিয়ে দুদক অনুসন্ধান চালাবে বলে জানিয়েছিল।
গত বছর সেপ্টেম্বরে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর তা অনুসন্ধানের জন্য সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। এক্ষেত্রে অনুসন্ধানকাজ দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। একটি পদ্মা সেতু নির্মাণে পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়া ও অপরটি ঠিকাদার নিয়োগ (মূল প্রকল্প) সংক্রান্ত। পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়ে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় দুদকের উপ-পরিচালক (তৎকালীন সহকারী পরিচালক) মির্জা জাহিদুল আলমকে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগে দুর্নীতির ঘটনা অনুসন্ধানের দায়িত্ব পান উপ-পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী। অনুসন্ধান শেষে উপ-পরিচালক শিবলী চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে অভিযোগটি নথিভুক্ত করার সুপারিশ জানিয়ে কমিশনে প্রতিবেদন জমা দেন। সে অনুযায়ী ঠিকাদার নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগটি নথিভুক্ত হয়।
কিন্তু পরামর্শক নিয়োগে অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। এজন্য দুদকের উপ-পরিচালক মীর জয়নুল আবেদিন শিবলী ও মির্জা জাহিদুল আলমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

No comments

Powered by Blogger.