অবশেষে বিশ্ব ব্যাংকের ॥ সেই ঘোষণা- ০ ওয়াশিংটন থেকে প্রচারিত বিবৃতির মাধ্যমে পদ্মা সেতুতে ফিরল- ০ দুর্নীতির বিরুদ্ধে ফের কঠোর হুঁশিয়ারি- ০ ফেব্রুয়ারিতে কাজ শুরু : অর্থমন্ত্রী- ০ দাতাদের সঙ্গে সরকারের বৈঠক কাল by হামিদ-উজ-জামান মামুন
অবশেষে সেই কাক্সিক্ষত ঘোষণা এলো, যেটির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল বাংলাদেশের সাড়ে ১৫ কোটি মানুষ। পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। শুক্রবার সকালে এক বিবৃতির মধ্য দিয়ে বিষয়টি পরিষ্কার করে সংস্থাটি। তবে পিছু ছাড়েনি শর্ত।
নতুনভাবে তিনটি শর্ত দিয়ে বিশ্বব্যাংক আবারও হুঁশিয়ারির সুরে বলেছে এ প্রকল্পে যে কোন ধরনের দুর্নীতির বাপ্যারে কোন ছাড় দেয়া হবে না। তবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বলেছে, দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত চলবে। অন্যদিকে দূরত্ব কমাতে আগামীকাল রবিবার দাতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ও সমঝোতার নায়ক ড. গওহর রিজভী ওয়াশিংটন থেকে ফিরলেই সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হবে বলে জানা গেছে।
এর আগে শুক্রবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, আজকের দিনটি (শুক্রবার) বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত খুশির দিন। বিশ্বব্যাংক ফিরে এসেছে, জাইকা, এডিবি ও আইডিবি সবাই মিলে সেতুটি বাস্তবায়ন করব। অর্থনীতির গতিটা অব্যাহত থাকবে। যেভাবে চলছে সেভাবে থাকবে। বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, আমি সব সময় চেয়েছি বিশ্বব্যাংক এখানে ফিরে আসুক। এতে দেশকে যে বদনাম দেয়া হয়েছে, সেটি সঠিক নয়, এটি প্রমাণিত হবে। অবশেষে এ প্রকল্পটি চালু হবে। একটি বছর হারিয়েছি। অনেক ঝামেলা গেছে। আশা করছি মাঠ পর্যায়ে ফেব্রুয়ারিতে কাজ শুরু করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাতিলকৃত ঋণ চুক্তি কিভাবে পুনর্বহাল হবে সেটি তাদের ব্যাপার। এ বিষয়ে আমার জানা নেই। সম্ভবত বিশ্বব্যাংকের জন্যও এটি নতুন অভিজ্ঞতা।
বিবৃতিতে বিশ্বব্যাংক বলেছে, সরকার নতুনভাবে বাস্তবায়নের পূর্বশর্ত হিসেবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপসমূহ গ্রহণে সম্মত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সেতুর নির্মাণ কাজে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য প্রকল্পে নতুন ক্রয় ব্যবস্থায় অধিকতর ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের সুযোগ। সুষ্ঠু, অবাধ ও দ্রুত তদন্ত কাজ চালিয়ে যাওয়া এবং তদন্ত পর্যালোচনা করে সরকার ও বিশ্বব্যাংকের কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য প্রদানের জন্য একটি স্বাধীন এক্সটারনাল প্যানেল গঠন করা। সরকারের সম্মত ব্যবস্থাগুলোর সন্তোষজনক বাস্তবায়ন এবং বিশ্বব্যাংকের গবর্নিংবডির সহায়তায় বিশ্বব্যাংক পদ্মা বহুমুখী সেতুতে নতুন করে সম্পৃক্ত হতে রাজি হয়েছে।
ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বিশ্বব্যাংক আরও বলেছে, বিশ্বব্যাংক গত ২৯ জুন, ২০১২ তারিখে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের জন্য ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের ঋণ বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিল। এর আগে বিশ্বব্যাংকের ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিট পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ বাংলাদেশ সরকারের কাছে পেশ করেছিল এবং এই প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট থাকার উদ্দেশে বিশ্বব্যাংক সরকারের উদ্যোগে বাস্তবায়নের জন্য কয়েকটি সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ চিহ্নিত করেছিল, যা বাংলাদেশ সরকার পূরণ করতে পারেনি। এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে, যেসব সরকারী কর্মকর্তা ও সরকারী ব্যক্তিবর্গের (আমলা ও রাজনৈতিক নিয়োগপ্রাপ্ত) বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সরকারী দায়িত্ব থেকে তাঁদের ছুটি প্রদান। এই অভিযোগ তদন্তের জন্য বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি বিশেষ তদন্ত দল নিয়োগ। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত বিশ্বব্যাংকের নিয়োগকৃত একটি প্যানেলের কাছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সকল তথ্যের পূর্ণ ও পর্যাপ্ত প্রবেশাধিকারে সরকারের সম্মতি প্রদান, যাতে এই প্যানেল তদন্তের অগ্রগতি, ব্যাপকতা ও সুষ্ঠুতার ব্যাপারে উন্নয়নসহযোগীদের নির্দেশনা দিতে পারে এবং বিকল্প বাস্তবায়ন ব্যবস্থার বিষয়ে একমত হওয়া, যাতে বিশ্বব্যাংক ও সহযোগী দাতারা প্রকল্পের ক্রয় কর্মকা- আরও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের সুযোগ পায়।
ঋণ বাতিলের পর বাংলাদেশ সরকার উপরোল্লিখিত পদক্ষেপসমূহ পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ সরকার দুর্নীতির যে প্রমাণ বিশ্বব্যাংক চিহ্নিত করেছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছে। বিশ্বব্যাংক মনে করে যে, প্রকল্পে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহভাজন সকল সরকারী ব্যক্তিকে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সরকারী দায়িত্ব থেকে ছুটি দেয়া হয়েছে এবং একটি অবাধ ও সুষ্ঠু তদন্ত চলছে। এ সকল পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানানোর সময় বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংককে পদ্মা বহুমুখী সেতুতে অর্থায়নের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করে। এ প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংক ফিরতে সম্মত হয়েছে।
বিশ্বব্যাংক বলেছে, তারা পদ্মা সেতু প্রকল্পে যে কোন ধরনের দুর্নীতির ব্যাপারে কোন ছাড় দেবে না এবং যে কোন অবৈধ কর্মকা-ের বিরুদ্ধে তাদের কঠোর অবস্থানের কখনও পরিবর্তন হবে না। যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের জনগণের জন্য অপার সম্ভাবনা ও সুপরিবর্তন আনবে। সরকারী অর্থের স্বচ্ছ ব্যবহার, প্রকল্পের যথাযথ বাস্তবায়ন এবং একটি আধুনিক ও উন্নতমানের সেতু, যা দেশের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে। এটি বাংলাদেশের জনগণের অধিকার ও প্রাপ্য।
সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ফিরে এলেও দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত চলবে। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সরকারের সমঝোতা হয়েছে। এখন বিশ্বব্যাংক মনোনীত বিশেষজ্ঞ দল আসবে এবং টার্মস অব রেফারেন্স অনুযায়ী দুদক কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের শর্ত অনুযায়ী পদ্মা সেতু প্রকল্পে তথ্য প্রদানের চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। এখন শুধু সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের অপেক্ষা।
অন্যদিকে পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে দাতাদের সঙ্গে সৃষ্ট দূরত্ব কমাতে ব্যাপক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে সরকার। এ লক্ষ্যে লোকাল কন্সালটেটিভ গ্রুপের (এলসিজি) বৈঠক ডাকা হয়েছে। আগামীকাল রবিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে কো-চেয়ারের দায়িত্ব পালন করবেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব ইকবাল মাহমুদ এবং ইউএনডিপির আবাসিক প্রধান নীল ওয়াকার। বৈঠকে বৈদেশিক সহায়তার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি যৌথ সহযোগিতা কৌশলপত্রের (জেসিএস) এ্যাকশন প্ল্যান পাস করা হবে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে জটিলতা শুরু হওয়ার পর থেকেই ঘন ঘন এলসিজি বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে ইআরডির পক্ষ থেকে। এর ফলে দাতাদের সঙ্গে এখন পর্যন্ত তেমন কোন দূরত্ব সৃষ্টি হয়নি। দূরে থাকলে শত্রুতা বাড়ে, ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ থাকে। সরকারের পক্ষ থেকে দাতাদের সেই সুযোগ দেয়া হয়নি।
সূত্র জানায়, বৈঠকে বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, কাউন্সিলর ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফর সাউথ এশিয়া, অস্ট্রেলিয়ান এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট, সিডা, ডেনমার্ক সরকারের পক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত প্রতিনিধি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মান সরকারের পক্ষে প্রতিনিধি, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, জাপান সরকারের পক্ষে জাইকার প্রতিনিধি, কোরিয়া সরকারের পক্ষে প্রতিনিধি, নেদারল্যান্ডস সরকারের পক্ষে প্রতিনিধি, নরওয়ে সরকারের পক্ষে প্রতিনিধি, স্পেন সরকার, সুইডেন সরকার, সুইজারল্যান্ড সরকার এবং ইউনাইটেড কিংডমের পক্ষে বাংলাদেশ প্রতিনিধি, ইউনাইটেড নেশন্সের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত আবাসিক সমন্বয়কারী, ইউনাইটেড স্টেটসের পক্ষে সহকারী মিশন পরিচালকসহ অন্য দাতাদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর ঋণ চুক্তি বাতিলের পর গত ৯ জুলাই অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিশেষ এলসিজি বৈঠক। ওই বৈঠকে বিশেষ আমন্ত্রণে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বৈঠকে তিনি পদ্মা সেতু নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরার পাশাপাশি এ পরিস্থিতিতে দাতাদের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন। বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, দাতাদের সামনে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে জাতীয় সংসদে যে ব্যাখা দেয়া হয়েছিল, সেটিই তুলে ধরা হয় দাতাদের সামনে।
ওই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও অংশ নেয়নি বিশ্বব্যাংকের কোন প্রতিনিধি। এর কারণ সম্পর্কে সংস্থাটির বাংলাদেশ অফিস থেকে জানানো হয়েছিল, কান্ট্রি ডিরেক্টর এ্যালেন গোল্ডস্টেইন ওয়াশিংটনে থাকায় আর কোন প্রতিনিধি অংশ নেননি।
এর আগে শুক্রবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, আজকের দিনটি (শুক্রবার) বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত খুশির দিন। বিশ্বব্যাংক ফিরে এসেছে, জাইকা, এডিবি ও আইডিবি সবাই মিলে সেতুটি বাস্তবায়ন করব। অর্থনীতির গতিটা অব্যাহত থাকবে। যেভাবে চলছে সেভাবে থাকবে। বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, আমি সব সময় চেয়েছি বিশ্বব্যাংক এখানে ফিরে আসুক। এতে দেশকে যে বদনাম দেয়া হয়েছে, সেটি সঠিক নয়, এটি প্রমাণিত হবে। অবশেষে এ প্রকল্পটি চালু হবে। একটি বছর হারিয়েছি। অনেক ঝামেলা গেছে। আশা করছি মাঠ পর্যায়ে ফেব্রুয়ারিতে কাজ শুরু করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাতিলকৃত ঋণ চুক্তি কিভাবে পুনর্বহাল হবে সেটি তাদের ব্যাপার। এ বিষয়ে আমার জানা নেই। সম্ভবত বিশ্বব্যাংকের জন্যও এটি নতুন অভিজ্ঞতা।
বিবৃতিতে বিশ্বব্যাংক বলেছে, সরকার নতুনভাবে বাস্তবায়নের পূর্বশর্ত হিসেবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপসমূহ গ্রহণে সম্মত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সেতুর নির্মাণ কাজে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য প্রকল্পে নতুন ক্রয় ব্যবস্থায় অধিকতর ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের সুযোগ। সুষ্ঠু, অবাধ ও দ্রুত তদন্ত কাজ চালিয়ে যাওয়া এবং তদন্ত পর্যালোচনা করে সরকার ও বিশ্বব্যাংকের কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য প্রদানের জন্য একটি স্বাধীন এক্সটারনাল প্যানেল গঠন করা। সরকারের সম্মত ব্যবস্থাগুলোর সন্তোষজনক বাস্তবায়ন এবং বিশ্বব্যাংকের গবর্নিংবডির সহায়তায় বিশ্বব্যাংক পদ্মা বহুমুখী সেতুতে নতুন করে সম্পৃক্ত হতে রাজি হয়েছে।
ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বিশ্বব্যাংক আরও বলেছে, বিশ্বব্যাংক গত ২৯ জুন, ২০১২ তারিখে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের জন্য ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের ঋণ বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিল। এর আগে বিশ্বব্যাংকের ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিট পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ বাংলাদেশ সরকারের কাছে পেশ করেছিল এবং এই প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট থাকার উদ্দেশে বিশ্বব্যাংক সরকারের উদ্যোগে বাস্তবায়নের জন্য কয়েকটি সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ চিহ্নিত করেছিল, যা বাংলাদেশ সরকার পূরণ করতে পারেনি। এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে, যেসব সরকারী কর্মকর্তা ও সরকারী ব্যক্তিবর্গের (আমলা ও রাজনৈতিক নিয়োগপ্রাপ্ত) বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সরকারী দায়িত্ব থেকে তাঁদের ছুটি প্রদান। এই অভিযোগ তদন্তের জন্য বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি বিশেষ তদন্ত দল নিয়োগ। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত বিশ্বব্যাংকের নিয়োগকৃত একটি প্যানেলের কাছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সকল তথ্যের পূর্ণ ও পর্যাপ্ত প্রবেশাধিকারে সরকারের সম্মতি প্রদান, যাতে এই প্যানেল তদন্তের অগ্রগতি, ব্যাপকতা ও সুষ্ঠুতার ব্যাপারে উন্নয়নসহযোগীদের নির্দেশনা দিতে পারে এবং বিকল্প বাস্তবায়ন ব্যবস্থার বিষয়ে একমত হওয়া, যাতে বিশ্বব্যাংক ও সহযোগী দাতারা প্রকল্পের ক্রয় কর্মকা- আরও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের সুযোগ পায়।
ঋণ বাতিলের পর বাংলাদেশ সরকার উপরোল্লিখিত পদক্ষেপসমূহ পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ সরকার দুর্নীতির যে প্রমাণ বিশ্বব্যাংক চিহ্নিত করেছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছে। বিশ্বব্যাংক মনে করে যে, প্রকল্পে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহভাজন সকল সরকারী ব্যক্তিকে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সরকারী দায়িত্ব থেকে ছুটি দেয়া হয়েছে এবং একটি অবাধ ও সুষ্ঠু তদন্ত চলছে। এ সকল পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানানোর সময় বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংককে পদ্মা বহুমুখী সেতুতে অর্থায়নের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করে। এ প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংক ফিরতে সম্মত হয়েছে।
বিশ্বব্যাংক বলেছে, তারা পদ্মা সেতু প্রকল্পে যে কোন ধরনের দুর্নীতির ব্যাপারে কোন ছাড় দেবে না এবং যে কোন অবৈধ কর্মকা-ের বিরুদ্ধে তাদের কঠোর অবস্থানের কখনও পরিবর্তন হবে না। যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের জনগণের জন্য অপার সম্ভাবনা ও সুপরিবর্তন আনবে। সরকারী অর্থের স্বচ্ছ ব্যবহার, প্রকল্পের যথাযথ বাস্তবায়ন এবং একটি আধুনিক ও উন্নতমানের সেতু, যা দেশের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে। এটি বাংলাদেশের জনগণের অধিকার ও প্রাপ্য।
সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ফিরে এলেও দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত চলবে। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সরকারের সমঝোতা হয়েছে। এখন বিশ্বব্যাংক মনোনীত বিশেষজ্ঞ দল আসবে এবং টার্মস অব রেফারেন্স অনুযায়ী দুদক কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের শর্ত অনুযায়ী পদ্মা সেতু প্রকল্পে তথ্য প্রদানের চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। এখন শুধু সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের অপেক্ষা।
অন্যদিকে পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে দাতাদের সঙ্গে সৃষ্ট দূরত্ব কমাতে ব্যাপক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে সরকার। এ লক্ষ্যে লোকাল কন্সালটেটিভ গ্রুপের (এলসিজি) বৈঠক ডাকা হয়েছে। আগামীকাল রবিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে কো-চেয়ারের দায়িত্ব পালন করবেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব ইকবাল মাহমুদ এবং ইউএনডিপির আবাসিক প্রধান নীল ওয়াকার। বৈঠকে বৈদেশিক সহায়তার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি যৌথ সহযোগিতা কৌশলপত্রের (জেসিএস) এ্যাকশন প্ল্যান পাস করা হবে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে জটিলতা শুরু হওয়ার পর থেকেই ঘন ঘন এলসিজি বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে ইআরডির পক্ষ থেকে। এর ফলে দাতাদের সঙ্গে এখন পর্যন্ত তেমন কোন দূরত্ব সৃষ্টি হয়নি। দূরে থাকলে শত্রুতা বাড়ে, ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ থাকে। সরকারের পক্ষ থেকে দাতাদের সেই সুযোগ দেয়া হয়নি।
সূত্র জানায়, বৈঠকে বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, কাউন্সিলর ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফর সাউথ এশিয়া, অস্ট্রেলিয়ান এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট, সিডা, ডেনমার্ক সরকারের পক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত প্রতিনিধি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মান সরকারের পক্ষে প্রতিনিধি, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, জাপান সরকারের পক্ষে জাইকার প্রতিনিধি, কোরিয়া সরকারের পক্ষে প্রতিনিধি, নেদারল্যান্ডস সরকারের পক্ষে প্রতিনিধি, নরওয়ে সরকারের পক্ষে প্রতিনিধি, স্পেন সরকার, সুইডেন সরকার, সুইজারল্যান্ড সরকার এবং ইউনাইটেড কিংডমের পক্ষে বাংলাদেশ প্রতিনিধি, ইউনাইটেড নেশন্সের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত আবাসিক সমন্বয়কারী, ইউনাইটেড স্টেটসের পক্ষে সহকারী মিশন পরিচালকসহ অন্য দাতাদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর ঋণ চুক্তি বাতিলের পর গত ৯ জুলাই অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিশেষ এলসিজি বৈঠক। ওই বৈঠকে বিশেষ আমন্ত্রণে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বৈঠকে তিনি পদ্মা সেতু নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরার পাশাপাশি এ পরিস্থিতিতে দাতাদের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন। বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, দাতাদের সামনে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে জাতীয় সংসদে যে ব্যাখা দেয়া হয়েছিল, সেটিই তুলে ধরা হয় দাতাদের সামনে।
ওই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও অংশ নেয়নি বিশ্বব্যাংকের কোন প্রতিনিধি। এর কারণ সম্পর্কে সংস্থাটির বাংলাদেশ অফিস থেকে জানানো হয়েছিল, কান্ট্রি ডিরেক্টর এ্যালেন গোল্ডস্টেইন ওয়াশিংটনে থাকায় আর কোন প্রতিনিধি অংশ নেননি।
No comments