সরকারকে সমঝোতার পথে আসার আহ্বান বিএনপির

অগণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা না দেয়ার জন্যই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায়ে ৪২ দিন আগে সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার কথা বলা হয়েছে।


তাহলে ওই সময়ের সরকারে যারা মন্ত্রী থাকবেন তারা কি নির্বাচিত? তিনি সরকারকে নির্বাচিত অনির্বাচিতের ধুয়া না তুলে সমঝোতার পথে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন এখনও সময় আছে। আলোচনায় বসে দেশকে সংঘাত, অস্থিরতা ও অস্থিতিশীলতা থেকে রক্ষা করুন। শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর ধানম-ির উইংস সেন্টারে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ব্রিটিশ ল স্টুডেন্টস এলায়েন্স নামক একটি সংগঠন আয়োজিত ‘মানবাধিকার পরিস্থিতি ও তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে দেয়া আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায়ের সমালোচনা করে তিনি বলেন, পৃথিবীর কোথাও এমন নজির দেখিনি যে সংক্ষিপ্ত রায়ের উল্টোটা পূর্ণাঙ্গ রায়ে দেয়া হয়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে এখন কোন মানবাধিকার নেই। এটা এখন কোন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তো নয়ই, বরং সম্পূর্ণ পুলিশী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। হরতাল চলাকালে বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও জয়নুল আবদিন ফারুককে মধ্যযুগীয় বর্বরতার মতো পেটানো হয়েছে। অথচ কি বিচিত্র এই দেশ পুলিশ রিপোর্ট দিয়েছে ফারুককে পেটানোর কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ইলিয়াস আলী তার গাড়ি চালক, চৌধুরী আলম, আমিনুল ইসলামসহ অসংখ্য মানুষকে গুম করা হয়েছে। কিন্তু এখনও তাদের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমরাও চাইনি। কিন্তু ১৯৯৬ সালে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করেছিল। তখন কমনওয়েলথ মহাসচিব স্যার নিনিয়ান স্টিফেন মধ্যস্থতা করতে এসেছিলেন। তিনি বলেছিলেন দুই দলের পাঁচজন করে এমপি নিয়ে একটি সরকার গঠন করা হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ তা মেনে না নিয়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছিল। আমরা সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখার জন্য বাধ্য হয়ে একটি নির্বাচন করেছিলাম। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আইন পাস করেছিলাম। সেই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এখন কেউ কথা বলেনি। কেউ বাতিল করার জন্য আন্দোলনও করেনি। এমনকি সংবিধান সংশোধনের জন্য গঠিত কমিটির কাছে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে গিয়ে বলে এসেছিল তারাও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে। কিন্তু আদালতের একটি সংক্ষিপ্ত রায়কে ব্যবহার করে তারা সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, সরকার দেশকে ব্যর্থ ও পরনির্ভরশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার সকল ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই করে ফেলেছে। তারা ভারতকে ট্রানজিট দিয়েছে। পরিবর্তে তিস্তার পানিসহ কিছু আনতে পারেনি।
তরুণ ব্যারিস্টারদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা শুধু তরুণই নন, আইনের সঙ্গেও সংশ্লিষ্ট। আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামে জনগণকে সম্পৃক্ত করার কাজে আপনাদের এগিয়ে আসতে হবে। আমি আপনাদের মতো উচ্চ শিক্ষিতদের রাজনীতির প্রতি আকর্ষণ দেখে উজ্জীবিত হয়েছি। আমি তরুণ প্রজন্মের রাজনীতির প্রতি অনীহা দেখে উদ্বিগ্ন ছিলাম। কিন্তু আজ সাহস পেলাম।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি জাবেদুল ইসলাম জাবেদ। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম, ব্যারিস্টার রাগিব রউফ চৌধুরী, ব্যারিস্টার এজাজ কবির, ব্যারিস্টার সাকিব মাহবুব রাফি ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমদ।

No comments

Powered by Blogger.