মহাজোট সরকারের এক বছর সাহস ও প্রতিশ্রুতির রূপরেখা by হারুন হাবীব
পাঁচ বছরের একটি নির্বাচিত সরকারের জন্যে প্রথম এক বছর বড় কিছু নয়। এরপরও বলতে হবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গেল এক বছরে আগামী চার বছরের পদযাত্রার একটা রূপরেখা তৈরি করেছে। সে রূপরেখা সকলের কাছে সমানভাবে গ্রহণযোগ্য হয়েছে, বা হবে, এমনটা বলা সমীচীন হবে না।
কেউ কেউ সে রূপরেখায় শঙ্কিত হয়েছেন, ভীতিজনক মনে করেছেন, কারণ এর পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে তাদের ধারার রাজনীতি মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। এই রূপরেখাকে কেউ আবার আখ্যায়িত করছেন ইতিবাচক, এরা মনে করেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মাঝ দিয়ে যে রাষ্ট্রের জন্ম সে রাষ্ট্রকে বাঁচাতে হলে এমনি ভাবেই অগ্রসর হতে হবে, সাহসী পদপে নিতে হবে।
আমি জানিনা, আগামী চার বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার কিভাবে অগ্রসর হবে। প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নীতিনির্ধারণের বাস্তব কি দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে সামনের বছরগুলোতে, আগেভাবে বলা সম্ভবও নয়। তবে একটি বছরের অভিজ্ঞতায় যদ্দুর বোঝা গেছে, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নীতি নির্ধারণ, কৃষি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে নীতির যে ভিত্তি স্থাপিত হবার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, সীমিত বা সীমাবদ্ধ হলেও যে শুরু হয়েছে, হয়তো সে পথেই মহাজোট সরকার তার পরবতর্ী পদপে নিশ্চিত করবে।
এবার আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে এরকম একটি বিজয় অবিস্মরণীয় তো বটেই। কেবল ১৯৭৩ সাল ছাড়া এমন বিজয় আর কোন দল বা জোটের ভাগ্যে জোটেনি। কিন্তু এর পরও বলতে হবে এ নিয়ে কেউ যদি আত্মতুষ্টিতে ভোগেন, ভোগেনও কেউ কেউ, তাহলে সাধুবাদ দেয়া যাবে না মোটেও। তবে মোদ্দাকথা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের মতো রাজনৈতিক দলকে এই বিপদ মাথায় নিয়েই পথ চলতে হবে। সাহসে ভর করে সামনে এগুতে হবে এবং সাথে নিতে হবে সম্ভাব্য প্রতিটি প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল-গোষ্ঠীগুলোকে, যারা পথের ভিন্নতা সত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চিন্তাচেতনায় অভিন্ন । আমি মনে করি, সম্মিলিত সাম্প্রদায়িক শক্তির সর্বাত্মক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সাফল্য নিতে হলে প্রগতিশীলদের বৃহত্তর মোর্চা সব সময়ের দাবি। বলার অপো রাখে না, এ মোর্চার নেতৃত্ব আওয়ামী লীগকেই দিতে হবে।
আজকের লেখাটি মহাজোট সরকারের এক বছরের মূল্যায়ন নয়, নানা েেত্র তার সাফল্য বা ব্যর্থতার খতিয়ানও এটি নয়, বলা যায় সার্বিক অর্থে লেখাটি বর্তমান সরকারের মৌলিক নীতি বা দৃশ্যমান রূপরেখার ওপর ছোট্ট একটি পর্যালোচনা মাত্র। ছোটখাটো যে ব্যর্থতাগুলো আছে, অতি-উৎসাহী তরুণদের একটি অংশের যে বাড়াবাড়ি আছে, আইন অমান্যের প্রতি ঝোক আছে, সেগুলোও বাস্তবতা নিঃসন্দেহে। আশা করি সরকার শক্ত অবস্থান নেবে এসব অপকর্মকে রোধ করতে।
বলতেই হবে ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮-এর সাধারণ নির্বাচনের আগে যে নির্বাচনী ইস্তেহারটি আওয়ামী লীগ প্রচার করেছিল, দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের ভোটারদের সামনে তা এক নতুন দিগন্ত বা সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখিয়েছিল। আগে এ রকম স্বপ্ন আর কোন দল দেখায়নি। একদিকে বিএনপি-জামায়াত জোটের দুঃশাসনের পাঁচ বছর, যেখানে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল দুর্বার দুনর্ীতিযাত্রা ও নানা অপকর্মে, ঠিক তারই বিপরীতে নতুন একটি স্বপ্ন, সুশাসন সমৃদ্ধ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন। ফলে প্রবল জনমর্থনে সিক্ত হয়েছিল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। সে কারণে প্রত্যাশাও বর্তেছে বেশি, আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি। অবশ্য আকাশচুম্বী সেই প্রত্যাশা যেমন ঈর্ষণীয় তেমনি বিপদেরও। আমার বিশ্বাস, সেই প্রত্যাশার আলোকেই নতুন সরকারের কর্মকাণ্ডের সাফল্য ও সমালোচানার ভিত্তি রচিত হয়েছে বিগত একটি বছরে।
এক বছরের সময়টিকে আমি মূলত দুই ভাগে ভাগ করতে ইচ্ছুক। এক. রাজনৈতিক নীতিনির্ধারণ, দুই. অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক।
রাজনৈতিক সম্ভাবনার কথা বলতে গেলে প্রথমেই উঠে আসে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কথা, সুবিচার ও ন্যায়নীতি পুনর্প্রতিষ্ঠার কথা। যে সমাজে ন্যায়নীতি ও আইনের শাসন নেই, নির্মমতার বিরুদ্ধে, বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রতিকার নেই, সে সমাজ বন্য সমাজে পরিণত হয়। কাজেই কয়েক যুগ পর হলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন করে সরকার একদিকে যেমন তার রাজনৈতিক অঙ্গীকার পূরণ করেছে, অন্যদিকে একটি সুবিশাল জাতীয় কলঙ্ক থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্ত করেছে। শুধু তাই নয়, এই বিচারের মাঝ দিয়ে বাংলাদেশের নবযাত্রার দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের মাথায় যে চক্র নব্য-বাংলাদেশের স্বাভাবিক ইতিহাসের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছিল, সেই পুরনো যাত্রাকে পুনর্বার স্থাপিত করা হয়েছে।
এবার জরুরীভাবে প্রয়োজন ১৯৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো। জাতিকে আরেকটি ঐতিহাসিক কলঙ্ক থেকে মুক্তি দিতে এসব ঘৃণ্য অপরাধীর বিচার কেবল সময়ের দাবি নয়, ইতিহাসের দাবি নয়, মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতিতে সম্মান নয়, একই সঙ্গে ছিনতাই হয়ে যাওয়া বাংলাদেশকে পুনরুদ্ধারের দাবি। আমি জানি, এ নিয়ে সরকারের আগ্রহ বা প্রতিশ্রুতি কম নেই। দেশী কিংবা বিদেশী চাপেরও অভাব নেই। কিন্তু এ কাজটি জরুরী। বিলম্বের কারণে নতুন প্রজন্মের একটি তাৎপর্যময় অংশের কাছে ইতোমধ্যেই এমন একটি ধারণা ল্য করেছি যে, শেষ পর্যন্ত এ বিচারটি হয়তো হবে না। তাদের এ ধারণা ভুল প্রমাণিত হোক, এটিই আমি আশা করি।
গেল এক বছরে পঁচাত্তরের ঐতিহাসিক জেলহত্যাসহ ২১ আগস্ট ২০০৪-এর গ্রেনেড হত্যা মামলাগুলোর পুনর্তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার শুরুর একটি উদ্যোগও ল্য করা গেছে। বলতেই হবে উদ্যোগগুলো আরও বেশি সবল ও সচল করতে হবে। আরও দ্রুতবেগে, আরও দতায় সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে সেইসব অপরাধীর বিরুদ্ধে যারা চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দশ ট্রাক অস্ত্র, গ্রেনেড, গোলাবারুদ এনেছিল দেশে। নতুন সরকারের স্থায়িত্বের জন্যে বিএনপি-জামায়াত আমলের এসব ঘৃণ্য অপরাধের সুবিচার সময়ের দাবি
শেখ হাসিনার আগের আমলে প্রথমবারের মতো দেশে খাদ্য উৎপাদনে সাফল্য এসেছিল। এবারেও সয়ম্ভরতা এসেছে বলে শুনেছি। এ ধারা অব্যাহত থাকলে সাধারণ মানুষকে না খেয়ে মরতে হবে না, যা বাংলাদেশের মতো দেশে জরুরী। এরপরও বলতে হবে, উৎপাদক বা কৃষকের ঘরে পণ্যের ন্যায্য মূল্য এখনও পেঁৗছেনি। অসৎ সিন্ডিকেটের কল্যাণে দ্রবমূল্য এখনও চড়া। কখনও কমছে কখনও বাড়ছে। এর স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। অন্যথায় সাধারণ জনজীবন বিপন্ন হবে। মানুষ অস্থিরতা ও আশাভঙ্গে ভুগবে।
ভারত অথবা পড়শি দেশগুলোর সাথে শেখ হাসিনার সরকার সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করতে যাচ্ছে বলে আমার ধারণা। সাম্প্রদায়িকতা ও সস্তা ভারতবিরোধিতা, যা ছিল পাকিস্তান আমলের চিরাচরিত রাজনীতি কৌশল, তাকে পুরোপুরি পরিত্যাগ করার মাঝে নতুন সরকারের রাজনৈতিক দৃঢ়তার দৃষ্টান্ত মিলবে। ধারণা করি সরকার সে পথেই যাচ্ছে। আমাদের কাছে বাংলাদেশ, আমার দেশ বড়। আমাদের জাতীয় স্বার্থ বড়। সে স্বার্থকে রা করতে প্রয়োজন দৃঢ় নীতি-অবস্থান ও অকাট্ট যুক্তি। মানুষকে খেপিয়ে তুলে যারা রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চেয়েছে, তারা না পেরেছে দেশের স্বার্থ রা করতে, না রাখতে পেরেছে সুসম্পর্ক।
কাজেই আজ দিনবদলের দিন। পুরনো অবিশ্বাস থেকে, ইতিহাসের পাপ থেকে সামনে এগুবার দিন। পরস্পর পরস্পরকে দেয়ার এবং নেয়ার দিন। এ দেয়া-নেয়ায় দু'পকেই জিততে হবে। ব্যবসাবাণিজ্য, সামাজিক-সাংস্কৃতিক লেনদেন বাড়াতে হবে। দু' দেশের গণমানুষের সম্পর্ককে গভীরতর করতে হবে। কোন রাজনৈতিক দল বা উগ্রবাদী গোষ্ঠী হুঙ্কার দিল, বায়তুল মোকররমের উত্তর গেট দখল করে, কিংবা পল্টন চত্বরে জনসভা করে প্রতিরোধের ডাক দিল, শেখ হাসিনার সরকার যদি তা দেখে, শুনে থমকে দাঁড়ায়, দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগে, তাহলে না হবে দলের লাভ, না দেশের।
বাংলাদেশে বিদ্যুত ঘাটতি বিস্তর। বিদু্যতের যন্ত্রণায় বিদ্ধ হচ্ছে মানুষ বছরের পর বছর। উৎপাদনও যথাসময়ে করা হয়নি। কোটি কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে এ খাতে। কিছু মানুষ অবৈধ টাকার ওপর ভাসছে। কিন্তু সঙ্কটের সুরাহা হয়নি। সে কারণে ভারত থেকে বিদু্যত আমদানির সিদ্ধান্তটি অনেক আগেই নেয়া উচিত ছিল। বর্তমান সরকার এক বছরেই ভুটান ও ভারত থেকে বিদু্যত আমদানির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি বড় পদপে নিয়েছে। অন্যদিকে ভারত ভূখণ্ডের মাঝ দিয়ে নেপাল ও ভুটানের সাথে সড়কপথে যোগাযোগ স্থাপনের প্রস্তাবটিও যুক্তিসঙ্গত এবং পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বাংলাদেশ লাগোয়া রাজ্যগুলোর সাথে আমাদের ভূমি ব্যবহার করে বিরাট একটি পড়শি জনগোষ্ঠী যদি লাভবান হয় তাহলেই বা আমাদের কতটা তি? প্রশ্নটা হচ্ছে, আমরা দুটি সীমান্ত লাগোয়া দেশ কি ১৯৪৭-এর চেতনাতেই রয়ে যাব নাকি ১৯৭১-এর রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দুই দেশের বন্ধুত্বকে সূদৃঢ় করব?
আমার বিশ্বাস পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মণির নেতৃত্বে তাঁর মন্ত্রণালয় এসব বিষয়ে সাহসী পদপে গ্রহণ করবে। নেপাল, ভারত, ভুটানের সাথে আঞ্চলিক সহযোগিতার ত্রেকে আরও সম্প্রসারিত করতে হবে। পাকিস্তান থেকে আমাদের স্বাধীনতা-উত্তর কালের সম্পদ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। বেশ কয়েক বছর ধরে বেসরকারী খাতে বিরাট উন্নয়ন ঘটে চলেছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, ওষুধ ও অন্যান্য সামগ্রী পৃথিবীর নানা দেশে ব্যবহার হচ্ছে। এ ধারাকে অব্যাহত রাখতে হলে বিশ্বের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের বাজার সৃষ্টি করতে হবে। ভারতের বাজারে বাংলাদেশী পণ্য যাতে সহজে পেঁৗছতে পারে সে ল্যে উদ্যোগী হতে হবে ভারতকেও। এশিয়ান হাইওয়ে নিয়ে ইতোমধ্যেই চিৎকার শুরু হয়েছে। এটুকু্ই শুধু আমার বলার, নিন্দুকের সমালোচনা বা উগ্রবাদীদের চিৎকার যেন অতিজরুরী এ কাজগুলোকে স্তব্ধ না করে।
আমি বলতে বাধ্য, পাঠ্যপুস্তকে মুক্তিযুদ্ধের অবিকৃত ইতিহাস প্রতিস্থাপন করে শেখ হাসিনার সরকার একটি বড় জাতীয় কর্তব্য সম্পাদন করেছে। সকলেই জানবেন, পাঠপুস্তকে ইতিহাস বিকৃতি এবং সাম্প্রদায়িক চেতনা বিস্তার করে কয়েকটি জেনারেশনকে চরম বিভ্রান্ত করার ফলেই পাকিস্তান রাষ্ট্রের অস্তিত্ব আজ চরম বিপন্ন। তালেবানী নীতি কেবল আফগানিস্তান নয় খোদ পাকিস্তানকেও রক্তাক্ত করছে। কাজেই পাঠ্যপুস্তক শুদ্ধির কাজটি করা না হলে আমাদের নতুন প্রজন্ম শুধু বিভ্রান্তই হতো না, ক্রমান্বয়েই তারা মৌলবাদী হতো, ধর্মের নামে সন্ত্রাসে জড়িয়ে পড়ত,সাম্প্রদায়িকতার বেড়াজালে আবদ্ধ হতো। জাতির দুর্ভাগ্য, বিএনপি-জামায়াতের জোট তাদের রাজনৈতিক ফায়দা লাভ করতে পাকিস্তানের পথই অনুসরণ করেছিল !
আগেই বলেছি, আমি এ লেখায় কোন দফাওয়ারি আলোচনায় যাব না। সার্বিক ভাবে এক বছরের মৌলিক কিছু পরিবর্তনের দিকে ঈঙ্গিত করব মাত্র। এর পরও বলতে হয়, নতুন জাতীয় শিানীতি, যা জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনে পাস হওয়ার কথা, তাকে জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই অভিনন্দন জানাই। যতটা আমি জানি, কিছু সীমাবদ্ধতা ছাড়া এ নীতি আধুনিক বিজ্ঞান-প্রযুক্তিমুখী এবং যুগপোযোগী করে তৈরি করা হয়েছে, যা নতুন জেনারেশনকে একদিকে যেমন জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ করবে, অন্যদিকে একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। এখন প্রয়োজন এ নীতির দৃঢ় বাস্তবায়ন। অনেক নীতিই করা হয় কিন্তু তার বাস্তবায়ন হয় না। বর্তমান সরকার অন্তত আরও সামনের চার বছর হাতে পাবে এ নীতি বাস্তবায়ন করতে।
রাজনৈতিক ও সামাজিক সন্ত্রাস দমনে শেখ হাসিনার সরকারের অঙ্গীকার জানা কথা। কিন্তু আমি ল্য করেছি, এবারের এ ব্যাপারে আরও দৃঢ় পদপে নিয়েছে নতুন সরকার। তারা ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে পাশর্্ববর্তী ভারতের মাটিতে যারা তৎপরতা চালায়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। ধর্মের নাম ভাঙ্গিয়ে যারা বোমাবারুদ ব্যবহার করে, জেহাদী স্লোগান দিয়ে যারা ইসলামের অপব্যাখ্যা করে, তাদের বিরুদ্ধে সরকারের ব্যবস্থা একদিকে যেমন কঠোর হতে হবে, অন্যদিকে দুর্ভাগ্যজনক এ পথে কেউ যেন পা না মাড়ায় সেদিকেও নজর দিতে হবে। এ েেত্র 'মটিভেশন প্রোগ্রাম' জরুরী। মাদ্রাসা শিাকে আধুনিকায়ন করার কাজটিও জরুরী। আমি বলব, অতি জরুরী। একশ্রেণীর মোল্লাবাদীর হুঙ্কারে পিছিয়ে আসার সুযোগ নেই।
লেখক : মুক্তিযোদ্ধা, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক
ণ-বটধফ :দদ১৯৭১আথবটধফ. ডমব
আমি জানিনা, আগামী চার বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার কিভাবে অগ্রসর হবে। প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নীতিনির্ধারণের বাস্তব কি দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে সামনের বছরগুলোতে, আগেভাবে বলা সম্ভবও নয়। তবে একটি বছরের অভিজ্ঞতায় যদ্দুর বোঝা গেছে, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নীতি নির্ধারণ, কৃষি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে নীতির যে ভিত্তি স্থাপিত হবার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, সীমিত বা সীমাবদ্ধ হলেও যে শুরু হয়েছে, হয়তো সে পথেই মহাজোট সরকার তার পরবতর্ী পদপে নিশ্চিত করবে।
এবার আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে এরকম একটি বিজয় অবিস্মরণীয় তো বটেই। কেবল ১৯৭৩ সাল ছাড়া এমন বিজয় আর কোন দল বা জোটের ভাগ্যে জোটেনি। কিন্তু এর পরও বলতে হবে এ নিয়ে কেউ যদি আত্মতুষ্টিতে ভোগেন, ভোগেনও কেউ কেউ, তাহলে সাধুবাদ দেয়া যাবে না মোটেও। তবে মোদ্দাকথা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের মতো রাজনৈতিক দলকে এই বিপদ মাথায় নিয়েই পথ চলতে হবে। সাহসে ভর করে সামনে এগুতে হবে এবং সাথে নিতে হবে সম্ভাব্য প্রতিটি প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল-গোষ্ঠীগুলোকে, যারা পথের ভিন্নতা সত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চিন্তাচেতনায় অভিন্ন । আমি মনে করি, সম্মিলিত সাম্প্রদায়িক শক্তির সর্বাত্মক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সাফল্য নিতে হলে প্রগতিশীলদের বৃহত্তর মোর্চা সব সময়ের দাবি। বলার অপো রাখে না, এ মোর্চার নেতৃত্ব আওয়ামী লীগকেই দিতে হবে।
আজকের লেখাটি মহাজোট সরকারের এক বছরের মূল্যায়ন নয়, নানা েেত্র তার সাফল্য বা ব্যর্থতার খতিয়ানও এটি নয়, বলা যায় সার্বিক অর্থে লেখাটি বর্তমান সরকারের মৌলিক নীতি বা দৃশ্যমান রূপরেখার ওপর ছোট্ট একটি পর্যালোচনা মাত্র। ছোটখাটো যে ব্যর্থতাগুলো আছে, অতি-উৎসাহী তরুণদের একটি অংশের যে বাড়াবাড়ি আছে, আইন অমান্যের প্রতি ঝোক আছে, সেগুলোও বাস্তবতা নিঃসন্দেহে। আশা করি সরকার শক্ত অবস্থান নেবে এসব অপকর্মকে রোধ করতে।
বলতেই হবে ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮-এর সাধারণ নির্বাচনের আগে যে নির্বাচনী ইস্তেহারটি আওয়ামী লীগ প্রচার করেছিল, দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের ভোটারদের সামনে তা এক নতুন দিগন্ত বা সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখিয়েছিল। আগে এ রকম স্বপ্ন আর কোন দল দেখায়নি। একদিকে বিএনপি-জামায়াত জোটের দুঃশাসনের পাঁচ বছর, যেখানে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল দুর্বার দুনর্ীতিযাত্রা ও নানা অপকর্মে, ঠিক তারই বিপরীতে নতুন একটি স্বপ্ন, সুশাসন সমৃদ্ধ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন। ফলে প্রবল জনমর্থনে সিক্ত হয়েছিল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। সে কারণে প্রত্যাশাও বর্তেছে বেশি, আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি। অবশ্য আকাশচুম্বী সেই প্রত্যাশা যেমন ঈর্ষণীয় তেমনি বিপদেরও। আমার বিশ্বাস, সেই প্রত্যাশার আলোকেই নতুন সরকারের কর্মকাণ্ডের সাফল্য ও সমালোচানার ভিত্তি রচিত হয়েছে বিগত একটি বছরে।
এক বছরের সময়টিকে আমি মূলত দুই ভাগে ভাগ করতে ইচ্ছুক। এক. রাজনৈতিক নীতিনির্ধারণ, দুই. অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক।
রাজনৈতিক সম্ভাবনার কথা বলতে গেলে প্রথমেই উঠে আসে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কথা, সুবিচার ও ন্যায়নীতি পুনর্প্রতিষ্ঠার কথা। যে সমাজে ন্যায়নীতি ও আইনের শাসন নেই, নির্মমতার বিরুদ্ধে, বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রতিকার নেই, সে সমাজ বন্য সমাজে পরিণত হয়। কাজেই কয়েক যুগ পর হলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন করে সরকার একদিকে যেমন তার রাজনৈতিক অঙ্গীকার পূরণ করেছে, অন্যদিকে একটি সুবিশাল জাতীয় কলঙ্ক থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্ত করেছে। শুধু তাই নয়, এই বিচারের মাঝ দিয়ে বাংলাদেশের নবযাত্রার দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের মাথায় যে চক্র নব্য-বাংলাদেশের স্বাভাবিক ইতিহাসের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছিল, সেই পুরনো যাত্রাকে পুনর্বার স্থাপিত করা হয়েছে।
এবার জরুরীভাবে প্রয়োজন ১৯৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো। জাতিকে আরেকটি ঐতিহাসিক কলঙ্ক থেকে মুক্তি দিতে এসব ঘৃণ্য অপরাধীর বিচার কেবল সময়ের দাবি নয়, ইতিহাসের দাবি নয়, মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতিতে সম্মান নয়, একই সঙ্গে ছিনতাই হয়ে যাওয়া বাংলাদেশকে পুনরুদ্ধারের দাবি। আমি জানি, এ নিয়ে সরকারের আগ্রহ বা প্রতিশ্রুতি কম নেই। দেশী কিংবা বিদেশী চাপেরও অভাব নেই। কিন্তু এ কাজটি জরুরী। বিলম্বের কারণে নতুন প্রজন্মের একটি তাৎপর্যময় অংশের কাছে ইতোমধ্যেই এমন একটি ধারণা ল্য করেছি যে, শেষ পর্যন্ত এ বিচারটি হয়তো হবে না। তাদের এ ধারণা ভুল প্রমাণিত হোক, এটিই আমি আশা করি।
গেল এক বছরে পঁচাত্তরের ঐতিহাসিক জেলহত্যাসহ ২১ আগস্ট ২০০৪-এর গ্রেনেড হত্যা মামলাগুলোর পুনর্তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার শুরুর একটি উদ্যোগও ল্য করা গেছে। বলতেই হবে উদ্যোগগুলো আরও বেশি সবল ও সচল করতে হবে। আরও দ্রুতবেগে, আরও দতায় সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে সেইসব অপরাধীর বিরুদ্ধে যারা চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দশ ট্রাক অস্ত্র, গ্রেনেড, গোলাবারুদ এনেছিল দেশে। নতুন সরকারের স্থায়িত্বের জন্যে বিএনপি-জামায়াত আমলের এসব ঘৃণ্য অপরাধের সুবিচার সময়ের দাবি
শেখ হাসিনার আগের আমলে প্রথমবারের মতো দেশে খাদ্য উৎপাদনে সাফল্য এসেছিল। এবারেও সয়ম্ভরতা এসেছে বলে শুনেছি। এ ধারা অব্যাহত থাকলে সাধারণ মানুষকে না খেয়ে মরতে হবে না, যা বাংলাদেশের মতো দেশে জরুরী। এরপরও বলতে হবে, উৎপাদক বা কৃষকের ঘরে পণ্যের ন্যায্য মূল্য এখনও পেঁৗছেনি। অসৎ সিন্ডিকেটের কল্যাণে দ্রবমূল্য এখনও চড়া। কখনও কমছে কখনও বাড়ছে। এর স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। অন্যথায় সাধারণ জনজীবন বিপন্ন হবে। মানুষ অস্থিরতা ও আশাভঙ্গে ভুগবে।
ভারত অথবা পড়শি দেশগুলোর সাথে শেখ হাসিনার সরকার সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করতে যাচ্ছে বলে আমার ধারণা। সাম্প্রদায়িকতা ও সস্তা ভারতবিরোধিতা, যা ছিল পাকিস্তান আমলের চিরাচরিত রাজনীতি কৌশল, তাকে পুরোপুরি পরিত্যাগ করার মাঝে নতুন সরকারের রাজনৈতিক দৃঢ়তার দৃষ্টান্ত মিলবে। ধারণা করি সরকার সে পথেই যাচ্ছে। আমাদের কাছে বাংলাদেশ, আমার দেশ বড়। আমাদের জাতীয় স্বার্থ বড়। সে স্বার্থকে রা করতে প্রয়োজন দৃঢ় নীতি-অবস্থান ও অকাট্ট যুক্তি। মানুষকে খেপিয়ে তুলে যারা রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চেয়েছে, তারা না পেরেছে দেশের স্বার্থ রা করতে, না রাখতে পেরেছে সুসম্পর্ক।
কাজেই আজ দিনবদলের দিন। পুরনো অবিশ্বাস থেকে, ইতিহাসের পাপ থেকে সামনে এগুবার দিন। পরস্পর পরস্পরকে দেয়ার এবং নেয়ার দিন। এ দেয়া-নেয়ায় দু'পকেই জিততে হবে। ব্যবসাবাণিজ্য, সামাজিক-সাংস্কৃতিক লেনদেন বাড়াতে হবে। দু' দেশের গণমানুষের সম্পর্ককে গভীরতর করতে হবে। কোন রাজনৈতিক দল বা উগ্রবাদী গোষ্ঠী হুঙ্কার দিল, বায়তুল মোকররমের উত্তর গেট দখল করে, কিংবা পল্টন চত্বরে জনসভা করে প্রতিরোধের ডাক দিল, শেখ হাসিনার সরকার যদি তা দেখে, শুনে থমকে দাঁড়ায়, দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগে, তাহলে না হবে দলের লাভ, না দেশের।
বাংলাদেশে বিদ্যুত ঘাটতি বিস্তর। বিদু্যতের যন্ত্রণায় বিদ্ধ হচ্ছে মানুষ বছরের পর বছর। উৎপাদনও যথাসময়ে করা হয়নি। কোটি কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে এ খাতে। কিছু মানুষ অবৈধ টাকার ওপর ভাসছে। কিন্তু সঙ্কটের সুরাহা হয়নি। সে কারণে ভারত থেকে বিদু্যত আমদানির সিদ্ধান্তটি অনেক আগেই নেয়া উচিত ছিল। বর্তমান সরকার এক বছরেই ভুটান ও ভারত থেকে বিদু্যত আমদানির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি বড় পদপে নিয়েছে। অন্যদিকে ভারত ভূখণ্ডের মাঝ দিয়ে নেপাল ও ভুটানের সাথে সড়কপথে যোগাযোগ স্থাপনের প্রস্তাবটিও যুক্তিসঙ্গত এবং পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বাংলাদেশ লাগোয়া রাজ্যগুলোর সাথে আমাদের ভূমি ব্যবহার করে বিরাট একটি পড়শি জনগোষ্ঠী যদি লাভবান হয় তাহলেই বা আমাদের কতটা তি? প্রশ্নটা হচ্ছে, আমরা দুটি সীমান্ত লাগোয়া দেশ কি ১৯৪৭-এর চেতনাতেই রয়ে যাব নাকি ১৯৭১-এর রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দুই দেশের বন্ধুত্বকে সূদৃঢ় করব?
আমার বিশ্বাস পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মণির নেতৃত্বে তাঁর মন্ত্রণালয় এসব বিষয়ে সাহসী পদপে গ্রহণ করবে। নেপাল, ভারত, ভুটানের সাথে আঞ্চলিক সহযোগিতার ত্রেকে আরও সম্প্রসারিত করতে হবে। পাকিস্তান থেকে আমাদের স্বাধীনতা-উত্তর কালের সম্পদ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। বেশ কয়েক বছর ধরে বেসরকারী খাতে বিরাট উন্নয়ন ঘটে চলেছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, ওষুধ ও অন্যান্য সামগ্রী পৃথিবীর নানা দেশে ব্যবহার হচ্ছে। এ ধারাকে অব্যাহত রাখতে হলে বিশ্বের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের বাজার সৃষ্টি করতে হবে। ভারতের বাজারে বাংলাদেশী পণ্য যাতে সহজে পেঁৗছতে পারে সে ল্যে উদ্যোগী হতে হবে ভারতকেও। এশিয়ান হাইওয়ে নিয়ে ইতোমধ্যেই চিৎকার শুরু হয়েছে। এটুকু্ই শুধু আমার বলার, নিন্দুকের সমালোচনা বা উগ্রবাদীদের চিৎকার যেন অতিজরুরী এ কাজগুলোকে স্তব্ধ না করে।
আমি বলতে বাধ্য, পাঠ্যপুস্তকে মুক্তিযুদ্ধের অবিকৃত ইতিহাস প্রতিস্থাপন করে শেখ হাসিনার সরকার একটি বড় জাতীয় কর্তব্য সম্পাদন করেছে। সকলেই জানবেন, পাঠপুস্তকে ইতিহাস বিকৃতি এবং সাম্প্রদায়িক চেতনা বিস্তার করে কয়েকটি জেনারেশনকে চরম বিভ্রান্ত করার ফলেই পাকিস্তান রাষ্ট্রের অস্তিত্ব আজ চরম বিপন্ন। তালেবানী নীতি কেবল আফগানিস্তান নয় খোদ পাকিস্তানকেও রক্তাক্ত করছে। কাজেই পাঠ্যপুস্তক শুদ্ধির কাজটি করা না হলে আমাদের নতুন প্রজন্ম শুধু বিভ্রান্তই হতো না, ক্রমান্বয়েই তারা মৌলবাদী হতো, ধর্মের নামে সন্ত্রাসে জড়িয়ে পড়ত,সাম্প্রদায়িকতার বেড়াজালে আবদ্ধ হতো। জাতির দুর্ভাগ্য, বিএনপি-জামায়াতের জোট তাদের রাজনৈতিক ফায়দা লাভ করতে পাকিস্তানের পথই অনুসরণ করেছিল !
আগেই বলেছি, আমি এ লেখায় কোন দফাওয়ারি আলোচনায় যাব না। সার্বিক ভাবে এক বছরের মৌলিক কিছু পরিবর্তনের দিকে ঈঙ্গিত করব মাত্র। এর পরও বলতে হয়, নতুন জাতীয় শিানীতি, যা জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনে পাস হওয়ার কথা, তাকে জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই অভিনন্দন জানাই। যতটা আমি জানি, কিছু সীমাবদ্ধতা ছাড়া এ নীতি আধুনিক বিজ্ঞান-প্রযুক্তিমুখী এবং যুগপোযোগী করে তৈরি করা হয়েছে, যা নতুন জেনারেশনকে একদিকে যেমন জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ করবে, অন্যদিকে একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। এখন প্রয়োজন এ নীতির দৃঢ় বাস্তবায়ন। অনেক নীতিই করা হয় কিন্তু তার বাস্তবায়ন হয় না। বর্তমান সরকার অন্তত আরও সামনের চার বছর হাতে পাবে এ নীতি বাস্তবায়ন করতে।
রাজনৈতিক ও সামাজিক সন্ত্রাস দমনে শেখ হাসিনার সরকারের অঙ্গীকার জানা কথা। কিন্তু আমি ল্য করেছি, এবারের এ ব্যাপারে আরও দৃঢ় পদপে নিয়েছে নতুন সরকার। তারা ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে পাশর্্ববর্তী ভারতের মাটিতে যারা তৎপরতা চালায়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। ধর্মের নাম ভাঙ্গিয়ে যারা বোমাবারুদ ব্যবহার করে, জেহাদী স্লোগান দিয়ে যারা ইসলামের অপব্যাখ্যা করে, তাদের বিরুদ্ধে সরকারের ব্যবস্থা একদিকে যেমন কঠোর হতে হবে, অন্যদিকে দুর্ভাগ্যজনক এ পথে কেউ যেন পা না মাড়ায় সেদিকেও নজর দিতে হবে। এ েেত্র 'মটিভেশন প্রোগ্রাম' জরুরী। মাদ্রাসা শিাকে আধুনিকায়ন করার কাজটিও জরুরী। আমি বলব, অতি জরুরী। একশ্রেণীর মোল্লাবাদীর হুঙ্কারে পিছিয়ে আসার সুযোগ নেই।
লেখক : মুক্তিযোদ্ধা, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক
ণ-বটধফ :দদ১৯৭১আথবটধফ. ডমব
No comments