বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি by মোরসালিন মিজান

রোজা শুরু হতে একটু সময় লাগে বটে। তবে শেষ হয়ে যায় চোখের পলকে। এই তো সেদিনের কথা, রমজান মাস শুরু হলো। আর আজ শুক্রবার ১৪তম দিন। অর্থাৎ অর্ধেক সময় পার হয়ে গেছে। বাকি দিনগুলো কেটে যাবে চোখের পলকে। মনে মনে সে অপেক্ষা করছেন অনেকেই। কারণ রোজা শেষে আসবে বহু প্রতীক্ষার ঈদ।


আনন্দের এই দিন উদ্যাপনের ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে এখন। আর এ প্রস্তুতির বড় অংশ জুড়ে আছে হরেক রকমের কেনাকাটা। তবে পছন্দের পোশাকটি খুঁজে নিতে সবচেয়ে বেশি সময় দিতে হয়। প্রথম রোজা থেকেই অনেকে শুরু করে দেন কেনাকাটা। এরপর যত দিন গেছে ততই বেড়েছে ক্রেতা। ভিড় বেড়েছে শপিংমলগুলোতে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, সর্বত্রই উপচেপড়া ভিড়। উৎসবের আমেজ। দেখে মনে হয় ঈদের আর মাত্র দু’একদিন বাকি আছে। এত তাড়াহুড়া করার কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, ফ্যাশন হাউসগুলোর ঈদের সকল কালেকশন মার্কেটে চলে এসেছে। নতুন নতুন ডিজাইনের জামাকাপড়ে ভরে গেছে দোকানগুলো। অভিজাত শপিংমল থেকে শুরু করে ফুটপাথ পর্যন্ত দিন রাত চলছে কেনাকাটা। বসুন্ধরা শপিং মল, শপার্স ওয়ার্ল্ড, পিঙ্ক সিটি, বিশাল সেন্টার, ইস্টার্ন প্লাজা, রাপা প্লাজা, আজিজ সুপার মার্কেট কোথাও ক্রেতার অভাব নেই। রাত আটটায় মার্কেট বন্ধ রাখার নির্দেশ আগেই শিথিল করা হয়েছিল। এখন ধরা বাধা কোন নিয়ম নেই। ফলে মধ্য রাত পর্যন্ত খোলা থাকছে বহু মার্কেট। রাজধানীর ফুটপাথগুলোও দারুন জমে উঠেছে। এসব দোকানে সব শ্রেণীর ক্রেতা উঁকি দিলেও আয়োজনটি মূলত নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য।
এদিকে যে ক’দিন রোজা সে ক’দিন চলবে ইফতার। সবাই রোজা রাখেন না। তাতে কি, ইফতারে শামিল হতে বাধা নেই কোন! তাই শুধু মুসলমান সম্প্রদায়ের নয়, বরং সকল সম্প্রদায়ের মানুষ ইফতারের সময়টা দারুন আনন্দে কাটাচ্ছেন। ইফতার বাজারও বরাবরের মতো রমরমা। রাজধানীর প্রায় সব বাসাতেই রকমারি আইটেম থাকে। এর পরও কিছু বাইরে থেকে কিনে নেয়া এখন সংস্কৃতির অংশ। বিশেষ করে বাড়ির কর্তা ব্যক্তিরা আনন্দ নিয়ে কাজটি করছেন। গাড়ি নিয়ে অনেকেই চলে যাচ্ছেন পুরনো ঢাকার চকবাজারে। সারা দেশে সুনাম আছে এমন আইটেম কৌতূহল নিয়ে কিনছেন তাঁরা। বিভিন্ন রকমের কাবাব কিনছেন। চকের পরপরই আলোচনায় আছে বেইলী রোডের ইফতার বাজার। এখানেও আইটেমের শেষ নেই। রেস্তরাঁ এবং রেস্তরাঁর বাইরে পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় লেগে যাচ্ছে ক্রেতার। মজার ব্যাপার হচ্ছে, একেবারে অলি গলিতেও ইফতার বিক্রির ব্যবস্থা আছে। যে যার মতো ছোলা পেঁয়াজু ভেজে নিয়ে আসছে। ভাল মন্দ দেখার সুযোগ নেই। কিনছেন সবাই।
সব মিলিয়ে সত্যি অন্য রকম ব্যাপার। তবে এতসব ব্যাপারের মাঝে যেন রোজার মূল উদ্দেশ্যটি হারিয়ে না যায় সে দিকে খেয়াল রাখা খুব জরুরী। কারণ অনাহারী মানুষের কষ্ট উপলব্ধি করার সুযোগ করে দিতেই রোজা। আমরা কি পারছি তাঁদের কষ্টটুকু উপলব্ধি করতে? যদি পারি তবে আমাদের আচরণের কি কোন পরিবর্তন এসেছে? বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে হবে। নিজের সঙ্গে নিজের কথা বলতে হবে। সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। আর তা পারলেই কেবল সার্থক হবে রোজা রাখা। দীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনা স্বার্থক হোকÑ আমাদের তাই চাওয়া।

No comments

Powered by Blogger.