দক্ষিণ সুদানে শ্রমবাজার খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা, এমওইউ সই by ফিরোজ মান্না
দক্ষিণ সুদানে কৃষি জমি লিজ ও কৃষি শ্রমিক নিয়োগের বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে সফররত প্রতিনিধি দল। সে দেশের কৃষি মন্ত্রণালয়ে এই স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এর ফলে দক্ষিণ সুদানে শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়েছে।
বাংলাদেশ সময় বুধবার মধ্যরাতে এই চুক্তিটি হয়েছে বলে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের প্রতিনিধি দলের আগামী ৫ আগস্ট দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, গত ২৮ জুলাই প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল দক্ষিণ সুদানে গেছে। প্রতিনিধি দল সে দেশের প্রেসিডেন্ট, কৃষিমন্ত্রীসহ উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছে। উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল দক্ষিণ সুদানে অবস্থান করছে। সে দেশে বাংলাদেশের কৃষি শ্রমিক পাঠানো, জমি লিজসহ বেশ কয়েকটি ইস্যু নিয়ে প্রতিনিধি দল সে দেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছে। এই বাজারটি খুলতে পারলে এক থেকে দেড় লাখ কৃষি শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে। সদ্য স্বাধীন দেশটি পুনর্গঠন করতে নতুন সরকার ব্যাপক উন্নয়ন কাজ হাতে নিয়েছে। এতে জাতিসংঘ সহযোগিতা দিচ্ছে। দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের পর গত বছর দেশটি স্বাধীন হয়। তেলসমৃদ্ধ দেশটি পুনর্গঠনে বিপুলসংখ্যক জনশক্তির প্রয়োজন রয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দলের দক্ষিণ সুদান সফর সফল বলে অভিহিত করেছেন ওই মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের প্রতিনিধি দলে রয়েছেন বিএমইটির মহাপরিচালক বেগম শামছুন নাহার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিজি (আফ্রিকা) আল্লামা সিদ্দিকী, কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জমশেদ আহমেদ, কেনিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, মন্ত্রীর পিএস আশরাফুল ইসলাম বাবুল ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা। ৫ আগস্ট দেশে ফিরে বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন দক্ষিণ সুদানে জনশক্তি রফতানির ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলন করবেন।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, দক্ষিণ সুদানে প্রতিনিধি দল বেশ কয়েকটি সংস্থার সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেছে। প্রতিনিধি দল সুদানে বাংলাদেশী দক্ষ-অদক্ষ কৃষি শ্রমিক প্রেরণ, সে দেশের কৃষি জমি লিজ নিয়ে শেয়ারভিত্তিক উৎপাদন, সুদানের কৃষি শ্রমিকদের ট্রেনিং প্রদানসহ শ্রমবাজার সম্প্রসারণ ও দু’দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সে দেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা করেছে।
বিএমইটির সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে হংকংয়ে এক লাখের বেশি নারী কর্মী নিয়োগের বিষয়ে সে দেশ থেকে একটি প্রতিনিধি দলের ঢাকায় আসার কথা রয়েছে। তারা বিএমইটির সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করবে বলে জানানো হয়েছে। এক লাখ মহিলা শ্রমিক নিয়োগের বিষয়ে বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) সঙ্গে হংকং কর্তৃপক্ষ একটি এমওইউ স্বাক্ষর করেছে। খুব শীঘ্রই চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। হংকং কর্তৃপক্ষ নিজ খরচে ‘হাউস কিপার’ পদে এই শ্রমিকদের নেবে। মাসিক বেতন দেবে ৪৯০ মার্কিন ডলার। তারা একদিন সাপ্তাহিক ছুটিও ভোগ করতে পারবেন। থাকবে চিকিৎসা বীমা। নিয়োগ কর্তা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে তাদের দুই মাসের প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়ে যাবে। এখানে কোন শ্রমিককে একটি টাকাও ব্যয় করতে হবে না। এক বছরের মধ্যে এক লাখ নারী শ্রমিক হংকং যেতে পারলে ভবিষ্যতে আরও কর্মী সেখানে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান নারী শ্রমিকদের হংকং নেবে। তাই মধ্যস্বত্ব ভোগী কেউ থাকবে না। সম্প্রতি উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল হংকং সফর করে জনশক্তির নতুন বাজারটি সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ডিজি বেগম সামছুন নাহার দক্ষিণ সুদান যাওয়ার আগে বলেন, দক্ষিণ সুদানের শ্রমবাজারটি ধরতে পারলে এক থেকে দেড় লাখ কৃষি কর্মী পাঠানো সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি নতুন শ্রমবাজরের সঙ্গে আমাদের চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান সরকার বেশ কয়েকটি নতুন শ্রমবাজার খুঁজে পেয়েছে। বাজারগুলো চালু হলে কয়েক লাখ শ্রমিক চাকরি নিয়ে বিভিন্ন দেশে যেতে পারবেন। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা প্রায় শেষ। সৌদি আরবও খুলে যাবে। অবশ্য এখন কিছু কিছু কর্মী সৌদি যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। নতুন বাজারগুলোর মধ্যে রয়েছে, সুইডেন, আলজিরিয়া, এ্যাঙ্গোলা ও কঙ্গো। দক্ষিণ আফ্রিকার বাজারে ইতোমধ্যেই লোক পাঠানো শুরু হয়েছে। এর বাইরে নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সুদান, গ্রীস, লাইবেরিয়া, তানজানিয়া, এস্তোনিয়া, আজারবাইজান, নাইজিরিয়া, বোতসোয়ানা, সিয়েরালিওন, পূর্ব ইউরোপের কয়েকটি দেশে বাজার সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
No comments