হুমায়ূন আহমেদের ব্যতিক্রমী শিল্পশস্য- যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ by পিয়াস মজিদ
খুন করে খুনীর এহেন কাজলবিলাসকে আর যাই হোক বিকার বলা যাবে না কোনমতে। কারণ স্ত্রী রুবাকে খুন করে স্বামী মিজান বেঁচে থাকার বা পালাবার সমস্ত সম্ভাবনা উপেক্ষা করে স্বেচ্ছায় নিজেকে ছুড়ে দিয়েছে পঞ্চমীর চাঁদের নিচে। ডুবে যাওয়ার আগে ক্ষীণতোয়া চন্দ্রধারায় যে মিজানের চেহারা ভেসে ওঠে সে তো খুনী নয়, প্রবল প্রেমিক।
মৃতা প্রেয়সীকে সুন্দরের আচ্ছাদনে ভরে তুলতে যে এত ব্যাকুল সে কেন খুনের পথে পা বাড়াল?
ছোটখাটো এই উপন্যাসে কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ আসলে যেন বলতে চাইলেন বিকীর্ণ আঁধারের গর্ভে ডুব দিয়ে কেউ কেউ সাক্ষাত পেতে চায় মৃত্যু নামক নিপুণ শিল্পের। আর এই উপন্যাসের মিজান সাহেবের জন্যে তা অলীক নয়, কারণ শৈশবে তার মুখোমুখি হয়েছে মায়ের মর্মান্তিক মৃত্যু। মৃত্যু স্বাভাবিক কিন্তু মৃত্যুর একটা অস্বাভাবিক রূপ মায়ের মৃত্যুর সূত্রে তিনি বহন করে চলছিলেন। যে মৃত্যুকে কোনভাবে মেনে নেয়া যায় না। পরোপকারী মা কুকুরের কামড়ে জলাতঙ্ক রোগে ভুগে পানির তৃষ্ণা নিয়ে ধুঁকতে ধুঁকতে মারা গেল। মিজানের বয়স তখন মাত্র সাত বছর। অপরাধহীন মাকে যখন ‘নিয়তি’ নামক অদৃশ্য কেউ এভাবে জলাতঙ্কের বেশে এসে খুন করে যায় তখন তার শিশুসন্তানের চেতনায় খুন সমাজের আর দশটা মানুষের চেয়ে একটু ভিন্নভাবে ধরা দেবে এটাই স্বাভাবিক। মিজান সাহেবের ক্ষেত্রেও ঘটেছে ঠিক তাই।
হুমায়ূন আহমেদ গভীর মানবিক সংবেদে দৃষ্টি প্রক্ষেপণ করেছেন উপন্যাসের আপাত খুনী চরিত্র মিজানের উপর। যে আলোতে ধরা পড়ে একটা গোপন সত্য-স্ত্রী রুবাকে খুন করে মিজান সাহেব আসলে মৃত্যুকে বাজিয়ে দেখতে চেয়েছেন। যে মৃত্যু তার নির্দয় সরূপে হাজির হয়েছিল তার মার কাছে তাকে ঠেকানোর সাধ্য তার ছিল না কিন্তু এবার একটা পরিকল্পিত হত্যাকা-ের মাধ্যমে মিজান সাহেব যেন বলতে চাইলেনÑ
‘মৃত্যু, তোমাকে আমি ঠেকাতে না পারলেও ডেকে আনতে পারি এমনকি তা যদি হয় প্রিয় স্ত্রীর মৃত্যু।’
লক্ষ্যযোগ্য বিষয় হচ্ছে ঠেকাতে না পারা মৃত্যু আর ডেকে আনা মৃত্যু উভয়ের ভিকটিম কিন্তু প্রায় নির্দোষ মানুষ। দু’জনেই আপনজন। একান্ত আপন মার অন্যায় মৃত্যুকে যেন মিজান দুই হাত দেখালেন অপর আপনজন স্ত্রীর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে।
২.
যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ
মরিবার হল তার সাধ...
স্ত্রী রুবাকে খুনের মধ্য দিয়ে স্বামী মিজান তো মরিবার সাধই ব্যক্ত করল। বেঁচে থাকার সুযোগকে অগ্রাহ্য করে আলিঙ্গন করলেন নিজের সম্ভাব্য মৃত্যুশাস্তিকে। হয়তো জ্যোৎস্নার মধ্যে ভূত দেখেছিলেন তিনি। সাদা চোখে সবাই দেখে না। দেখে সে-ই যার কাছে জীবন আর মৃত্যু কোন ভিন্ন তাৎপর্য ধরা দেয় না। অনেকটা জ্যোৎস্নায় ভূত দেখার মতোই মৃত বাবা হাজির হন সদ্য খুন করা ছেলে মিজানের কাছে। স্ত্রীকে হত্যা করে মিজান যখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় তখন তাকে দিশা দিয়ে যান বাবা। বিপদ থেকে সন্তানকে বাঁচানোই তো পিতা-মাতার ধর্ম। মিজান সাহেবের বাবাও যেন নিষ্ঠার সঙ্গে তাঁর সে ধর্ম পালন করলেনÑ
...মানুষ যখন ভয়াবহ কোন সমস্যায় পড়ে তখন স্বপ্নে সে রিলিফ পায়। এও এক ধরনের ‘রিলিফ।’ আমাকে সাময়িক রিলিফ দেবার জন্য আমার বাবা আজহার উদ্দিন সাহেব চলে এসেছেন। কেমন স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলছেনÑ‘তোকে সাহায্য করতে এসেছিÑহা হা হা।’ (পৃ. ৫৭)
স্বপ্নে না বাস্তবে মিজান সাহেবের বাবা আজহারউদ্দিন এসেছেন এই মীমাংসা খুব জরুরী কিছু না। বড় কথা হলোÑতিনি বাবা হয়ে ছেলেকে বলেনÑ যা সত্য তা পুলিশের কাছে প্রকাশ করতে। ছেলে আশঙ্কা প্রকাশ করেÑ তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে, ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেবে। বাবা ছেলেকে বরাভয় দিয়ে বলে, ‘ভয়ের কি আছে। ভয়ের কিছু নেই। মানুষের প্রধান কাজ হলো ভয়কে জয় করতে শেখা।’
এই নির্ভয়ের গান যে গায় সে তো আসলে বাবা আজহারউদ্দিন নয়, সে তো মিজান সাহেবেরই সংগুপ্ত স্বরূপ। স্ত্রী রুবাকে হত্যামুহূর্তের সময়খ-টিতে এই স্বরূপ লোপ পেয়েছিল তার। হত্যাকা-ের একটি রাত না পেরুতেই ফিরে আসে তার লুপ্ত চেতনাবোধ। জাগ্রত চেতনার বলে নিজের সম্ভাব্য শাস্তির চিন্তা গৌণ হয়ে যায়। তখন যেন নিজেকেই মৃত্যুর দিকে ধাবিত করতে ব্যাকুল হয়ে ওঠে মিজান। তাই সুন্দর করে মৃতা রুবাকে সাজায় সে। বেনারসি শাড়ি পরায়, গহনা পরায়। এমনকি চোখে কাজল পরাতেও ভুলে না সে। তারপর ফোন করে পুলিশকে জানায় তার অপরাধের কথা। স্ত্রীহত্যার দায় স্বীকার করে নিজেকে গ্রেফতারের আবেদন করে। মা ও স্ত্রীর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে একটি অন্য মাত্রার মৃত্যুর সাক্ষাত পেতে যেন ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল সে। এই মৃত্যুচক্র ভেদ করার ক্ষমতা ব্যক্তি মিজান সাহেবের নেই। কোন মানুষেরই নেই।
হুমায়ূন আহমেদ মানবতাবাদী লেখক। মৃত্যুময় এ ক্ষীণকায় উপন্যাসে শেষপর্যন্ত তাই তিনি মানুষের মৃত্যুঞ্জয়ী সত্তার বিজয়গানই ধ্বনিত করেন। সেই মানুষের গল্পই তিনি বলতে চেয়েছেন যে শৈশব দেখা অন্য এক মৃত্যুর অসুন্দর বোধকে শেষপর্যন্ত নিজের ডেকে আনা মৃত্যুর মধ্য দিয়ে চিরতরে বিনাশ করতে চেয়েছে।
৩.
হুমায়ূন আহমেদের বিপুলা সৃষ্টির ভিড়ে যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ যেন এক অনাদৃত রতœ। তাঁর অন্ধ পাঠকের অনেকের কাছেই এই বইটির সংবাদ নেই বললেই চলে। আমাদেরও মত তাই। আরও আক্ষেপের বিষয় এমন একটি অনন্য উপন্যাসের নাম বাংলাদেশের কথাসাহিত্যকেন্দ্রিত আলোচনা-সমালোচনায়ও বিরলদৃষ্ট। তবে এসব কিছুতেই এর গৌরব হ্রাস পায় না। কারণ হুমায়ূন আহমেদের অভিনব হাস্যরস, একান্ত নিজস্ব ভাষা আর অনায়াস গল্প তৈরির ক্ষমতা ইত্যাদি সবকিছুর উপস্থিতির বাইরেও এখানে আছে মানুষের অস্তিত্বিক সংকট ও মুক্তির শিল্পরেখা। মৃত্যু আর জীবনের দ্বন্দ্বের ছায়াপাত যেমন এর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যাপ্ত তেমনি মানুষমনের চেতনাবচেতন পরিস্থিতির সন্ধানও এখানে পাওয়া যাবে।
প্রকৃত শিল্পী বলেই হুমায়ূন আহমেদ পাঠকের হাতে মৃত্যু থেকে বাঁচার কোন টোটকা সমাধান ধরিয়ে দেননি বরং পাঠককে উপর্যুক্ত আখ্যানের তীব্র গতিবেগে ভ্রমণ করিয়ে এমনতর উপলব্ধির সামনে দাঁড় করিয়েছেন যে জগতের সবচেয়ে বিচিত্র সৃষ্টি মানুষ। যে মানুষ মৃত্যুকে ভয় পেতে পেতে মৃত্যুকে জয় করতে শেখে। অমৃতস্য পুত্র মানুষের কথাই তো এই আখ্যানের আদি-অন্ত জুড়ে পরিব্যাপ্ত। যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ-এ হুমায়ূন আহমেদের সেই মানুষের কথা বলেছেন। ডুবে যাওয়া পঞ্চমীর চাঁদও সেই কথাই বলে।
ছোটখাটো এই উপন্যাসে কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ আসলে যেন বলতে চাইলেন বিকীর্ণ আঁধারের গর্ভে ডুব দিয়ে কেউ কেউ সাক্ষাত পেতে চায় মৃত্যু নামক নিপুণ শিল্পের। আর এই উপন্যাসের মিজান সাহেবের জন্যে তা অলীক নয়, কারণ শৈশবে তার মুখোমুখি হয়েছে মায়ের মর্মান্তিক মৃত্যু। মৃত্যু স্বাভাবিক কিন্তু মৃত্যুর একটা অস্বাভাবিক রূপ মায়ের মৃত্যুর সূত্রে তিনি বহন করে চলছিলেন। যে মৃত্যুকে কোনভাবে মেনে নেয়া যায় না। পরোপকারী মা কুকুরের কামড়ে জলাতঙ্ক রোগে ভুগে পানির তৃষ্ণা নিয়ে ধুঁকতে ধুঁকতে মারা গেল। মিজানের বয়স তখন মাত্র সাত বছর। অপরাধহীন মাকে যখন ‘নিয়তি’ নামক অদৃশ্য কেউ এভাবে জলাতঙ্কের বেশে এসে খুন করে যায় তখন তার শিশুসন্তানের চেতনায় খুন সমাজের আর দশটা মানুষের চেয়ে একটু ভিন্নভাবে ধরা দেবে এটাই স্বাভাবিক। মিজান সাহেবের ক্ষেত্রেও ঘটেছে ঠিক তাই।
হুমায়ূন আহমেদ গভীর মানবিক সংবেদে দৃষ্টি প্রক্ষেপণ করেছেন উপন্যাসের আপাত খুনী চরিত্র মিজানের উপর। যে আলোতে ধরা পড়ে একটা গোপন সত্য-স্ত্রী রুবাকে খুন করে মিজান সাহেব আসলে মৃত্যুকে বাজিয়ে দেখতে চেয়েছেন। যে মৃত্যু তার নির্দয় সরূপে হাজির হয়েছিল তার মার কাছে তাকে ঠেকানোর সাধ্য তার ছিল না কিন্তু এবার একটা পরিকল্পিত হত্যাকা-ের মাধ্যমে মিজান সাহেব যেন বলতে চাইলেনÑ
‘মৃত্যু, তোমাকে আমি ঠেকাতে না পারলেও ডেকে আনতে পারি এমনকি তা যদি হয় প্রিয় স্ত্রীর মৃত্যু।’
লক্ষ্যযোগ্য বিষয় হচ্ছে ঠেকাতে না পারা মৃত্যু আর ডেকে আনা মৃত্যু উভয়ের ভিকটিম কিন্তু প্রায় নির্দোষ মানুষ। দু’জনেই আপনজন। একান্ত আপন মার অন্যায় মৃত্যুকে যেন মিজান দুই হাত দেখালেন অপর আপনজন স্ত্রীর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে।
২.
যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ
মরিবার হল তার সাধ...
স্ত্রী রুবাকে খুনের মধ্য দিয়ে স্বামী মিজান তো মরিবার সাধই ব্যক্ত করল। বেঁচে থাকার সুযোগকে অগ্রাহ্য করে আলিঙ্গন করলেন নিজের সম্ভাব্য মৃত্যুশাস্তিকে। হয়তো জ্যোৎস্নার মধ্যে ভূত দেখেছিলেন তিনি। সাদা চোখে সবাই দেখে না। দেখে সে-ই যার কাছে জীবন আর মৃত্যু কোন ভিন্ন তাৎপর্য ধরা দেয় না। অনেকটা জ্যোৎস্নায় ভূত দেখার মতোই মৃত বাবা হাজির হন সদ্য খুন করা ছেলে মিজানের কাছে। স্ত্রীকে হত্যা করে মিজান যখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় তখন তাকে দিশা দিয়ে যান বাবা। বিপদ থেকে সন্তানকে বাঁচানোই তো পিতা-মাতার ধর্ম। মিজান সাহেবের বাবাও যেন নিষ্ঠার সঙ্গে তাঁর সে ধর্ম পালন করলেনÑ
...মানুষ যখন ভয়াবহ কোন সমস্যায় পড়ে তখন স্বপ্নে সে রিলিফ পায়। এও এক ধরনের ‘রিলিফ।’ আমাকে সাময়িক রিলিফ দেবার জন্য আমার বাবা আজহার উদ্দিন সাহেব চলে এসেছেন। কেমন স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলছেনÑ‘তোকে সাহায্য করতে এসেছিÑহা হা হা।’ (পৃ. ৫৭)
স্বপ্নে না বাস্তবে মিজান সাহেবের বাবা আজহারউদ্দিন এসেছেন এই মীমাংসা খুব জরুরী কিছু না। বড় কথা হলোÑতিনি বাবা হয়ে ছেলেকে বলেনÑ যা সত্য তা পুলিশের কাছে প্রকাশ করতে। ছেলে আশঙ্কা প্রকাশ করেÑ তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে, ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেবে। বাবা ছেলেকে বরাভয় দিয়ে বলে, ‘ভয়ের কি আছে। ভয়ের কিছু নেই। মানুষের প্রধান কাজ হলো ভয়কে জয় করতে শেখা।’
এই নির্ভয়ের গান যে গায় সে তো আসলে বাবা আজহারউদ্দিন নয়, সে তো মিজান সাহেবেরই সংগুপ্ত স্বরূপ। স্ত্রী রুবাকে হত্যামুহূর্তের সময়খ-টিতে এই স্বরূপ লোপ পেয়েছিল তার। হত্যাকা-ের একটি রাত না পেরুতেই ফিরে আসে তার লুপ্ত চেতনাবোধ। জাগ্রত চেতনার বলে নিজের সম্ভাব্য শাস্তির চিন্তা গৌণ হয়ে যায়। তখন যেন নিজেকেই মৃত্যুর দিকে ধাবিত করতে ব্যাকুল হয়ে ওঠে মিজান। তাই সুন্দর করে মৃতা রুবাকে সাজায় সে। বেনারসি শাড়ি পরায়, গহনা পরায়। এমনকি চোখে কাজল পরাতেও ভুলে না সে। তারপর ফোন করে পুলিশকে জানায় তার অপরাধের কথা। স্ত্রীহত্যার দায় স্বীকার করে নিজেকে গ্রেফতারের আবেদন করে। মা ও স্ত্রীর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে একটি অন্য মাত্রার মৃত্যুর সাক্ষাত পেতে যেন ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল সে। এই মৃত্যুচক্র ভেদ করার ক্ষমতা ব্যক্তি মিজান সাহেবের নেই। কোন মানুষেরই নেই।
হুমায়ূন আহমেদ মানবতাবাদী লেখক। মৃত্যুময় এ ক্ষীণকায় উপন্যাসে শেষপর্যন্ত তাই তিনি মানুষের মৃত্যুঞ্জয়ী সত্তার বিজয়গানই ধ্বনিত করেন। সেই মানুষের গল্পই তিনি বলতে চেয়েছেন যে শৈশব দেখা অন্য এক মৃত্যুর অসুন্দর বোধকে শেষপর্যন্ত নিজের ডেকে আনা মৃত্যুর মধ্য দিয়ে চিরতরে বিনাশ করতে চেয়েছে।
৩.
হুমায়ূন আহমেদের বিপুলা সৃষ্টির ভিড়ে যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ যেন এক অনাদৃত রতœ। তাঁর অন্ধ পাঠকের অনেকের কাছেই এই বইটির সংবাদ নেই বললেই চলে। আমাদেরও মত তাই। আরও আক্ষেপের বিষয় এমন একটি অনন্য উপন্যাসের নাম বাংলাদেশের কথাসাহিত্যকেন্দ্রিত আলোচনা-সমালোচনায়ও বিরলদৃষ্ট। তবে এসব কিছুতেই এর গৌরব হ্রাস পায় না। কারণ হুমায়ূন আহমেদের অভিনব হাস্যরস, একান্ত নিজস্ব ভাষা আর অনায়াস গল্প তৈরির ক্ষমতা ইত্যাদি সবকিছুর উপস্থিতির বাইরেও এখানে আছে মানুষের অস্তিত্বিক সংকট ও মুক্তির শিল্পরেখা। মৃত্যু আর জীবনের দ্বন্দ্বের ছায়াপাত যেমন এর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যাপ্ত তেমনি মানুষমনের চেতনাবচেতন পরিস্থিতির সন্ধানও এখানে পাওয়া যাবে।
প্রকৃত শিল্পী বলেই হুমায়ূন আহমেদ পাঠকের হাতে মৃত্যু থেকে বাঁচার কোন টোটকা সমাধান ধরিয়ে দেননি বরং পাঠককে উপর্যুক্ত আখ্যানের তীব্র গতিবেগে ভ্রমণ করিয়ে এমনতর উপলব্ধির সামনে দাঁড় করিয়েছেন যে জগতের সবচেয়ে বিচিত্র সৃষ্টি মানুষ। যে মানুষ মৃত্যুকে ভয় পেতে পেতে মৃত্যুকে জয় করতে শেখে। অমৃতস্য পুত্র মানুষের কথাই তো এই আখ্যানের আদি-অন্ত জুড়ে পরিব্যাপ্ত। যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ-এ হুমায়ূন আহমেদের সেই মানুষের কথা বলেছেন। ডুবে যাওয়া পঞ্চমীর চাঁদও সেই কথাই বলে।
No comments