ছোটখাটো বিরোধ নিষ্পত্তি হচ্ছে গ্রাম আদালতে, সুফল মিলছে- দেশের সাড়ে তিন শ’ ইউনিয়নে শুরু হয়েছে কার্যক্রম by তৌহিদুর রহমান
আলী হোসেন ও তার ভাই দুলাল মিয়ার মধ্যে জমির গাছ কাটা নিয়ে বিরোধ হয়। এ বিরোধে জড়িয়ে পড়ে দুই ভাইয়ের ছেলেরাও। এ নিয়ে ঘটে হামলা-ভাংচুরের মতো ঘটনা। বিষয়টি শেষপর্যন্ত গ্রাম আদালতে গড়ায়। গ্রাম আদালতে মামলা করেন আলী হোসেন।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মহিনন্দ ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে স্থাপিত গ্রামীণ আদালতে প্রমাণ শেষে অভিযুক্ত দুলাল মিয়া ও তার তিন আত্মীয়ের কাছ থেকে ৭শ’ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় করে মামলাটির নিষ্পত্তি করা হয়। এতে খুশি অভিযুক্ত এবং অভিযোগকারী দুই পক্ষই। এভাবে দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত গ্রাম আদালত প্রতিষ্ঠায় সুফল মিলছে।
দেশের ১৪ জেলার সাড়ে তিন শ’ ইউনিয়নে বিগত তিন বছরে গ্রাম আদালতে মামলা হয়েছে ১৫ হাজার ৭৬০। তবে এসব মামলার মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ১০ হাজার ৭৬৫। বাকি মামলা চলমান রয়েছে। অপরদিকে প্রায় এক হাজার মামলা জেলা আদালত থেকে ফিরিয়ে দিয়ে গ্রাম আদালতে নিষ্পন্ন করতে নির্দেশ দিয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রাথমিকভাবে দেশের ১৪ জেলার পাঁচ শ’ ইউনিয়নে গ্রাম আদালত গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এসব ইউনিয়ন হচ্ছে ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ জেলার ৮ উপজেলার ৩৫ ইউনিয়ন, রাজবাড়ী জেলার ৪ উপজেলার ৩০ ইউনিয়ন, ফরিদপুর জেলার ৬ উপজেলার ৪১ ইউনিয়ন, গোপালগঞ্জ জেলার ৩ উপজেলার ৩০ ইউনিয়ন, রাজশাহী বিভাগের নীলফামারী জেলার ৪ উপজেলার ৩০ ইউনিয়ন, লালমনিরহাট জেলার ৫ উপজেলার ২৫ ইউনিয়ন, রংপুর জেলার ৪ উপজেলার ৩৩ ইউনিয়ন।
সিলেট বিভাগের সিলেট জেলার ৬ উপজেলার ৪২ ইউনিয়ন, মৌলভীবাজার জেলার ৪ উপজেলার ৩০ ইউনিয়ন। চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম জেলার ৬ উপজেলার ৩০ ইউনিয়ন, কক্সবাজার জেলার ৫ উপজেলার ২৫ ইউনিয়ন, বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর জেলার ৪ উপজেলার ২৯ ইউনিয়ন, বরগুনা জেলার ৪ উপজেলার ৩০ ইউনিয়ন, পটুয়াখালী জেলার ৫ উপজেলার ৩১ ইউনিয়ন, খুলনা বিভাগের নড়াইল জেলার ৩ উপজেলার ১৫ ইউনিয়ন, মাগুরা জেলার ২ উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ৪ উপজেলার ৩০ ইউনিয়ন। তবে সরকার থেকে ৫শ’ ইউনিয়নে গ্রাম আদালত গঠনের সিদ্ধান্ত নিলেও পরবর্তীতে দেড় শ’টি কমিয়ে সাড়ে তিন শ’ ইউনিয়নে পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এই সাড়ে তিন শ’ ইউনিয়নে এখন গ্রাম আদালত কার্যক্রম চলছে।
অনাদিকাল ধরে অনানুষ্ঠানিকভাবে ছোটখাটো বিরোধের স্থানীয় মীমাংসা পদ্ধতিকে আনুষ্ঠানিকতা এবং আইনী কাঠামো প্রদানের লক্ষ্যে গ্রাম আদালত আইনকে কার্যকর করার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ ২০০৯ সালে ‘গ্রাম আদালত কার্যক্রম চালু ও শক্তিশালীকরণ’ শীর্র্ষক প্রকল্প গ্রহণ করে। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী (ইউএনডিপি) ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সহযোগিতায় প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের ৩৫০ ইউনিয়নে গ্রাম আদালত কার্যকর করার কাজ চলছে।
গ্রাম আদালতের সুফল বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও গ্রাম আদালত কার্যক্রম চালু ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের পরিচালক কেএম মোজাম্মেল হক জনকণ্ঠ’কে বলেন, জেলা আদালতে প্রতিদিনই মামলার সংখ্যা বাড়ছে। এসব মামলা পরিচালনায় খরচও অনেক। তবে গ্রামের সাধারণ মানুষ স্থানীয় পর্যায়ে গ্রাম আদালতের মাধ্যমে সুবিচার পেতে পারেন। এতে সময় ও অর্থেও অপচয় অনেক কম হবে। তিনি জানান, ইতোমধ্যে গ্রাম আদালত পরিচালনার ফলে সফলতা এসেছে। দেশের সব ইউনিয়নে এ আদালত প্রতিষ্ঠা করতে পারলে আরও সুফল পাওয়া যাবে।
গত ৮ জুন গ্রাম আদালত সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, গ্রাম আদালত ব্যবস্থা দেশের সব ইউনিয়নে চালু করা হবে। এ আদালত উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি আদর্শ মডেলে পরিণত হবে। প্রাথমিকভাবে গ্রাম আদালতে বিচার কার্যক্রম পরিচালনায় কিছু ভুলত্রুটি হতে পারে। তবে ধীরে ধীরে এ প্রক্রিয়া একটি মানসম্মত পর্যায়ে পৌঁছাবে।
দেওয়ানী ও ফৌজদারি ছোট ছোট বিরোধ স্থানীয়ভাবে নিষ্পত্তি করার লক্ষ্যেই ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম আদালত গঠিত হয়েছে। গ্রাম আদালত আইন অনুযায়ী ২৫ হাজার টাকার নিচে এমন দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইনের ২৭ ধারার অপরাধ কম সময়ে অল্প খরচে গ্রাম আদালত নিষ্পত্তি করে থাকে। বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে শান্তি স্থাপন করে বিরোধী পক্ষদ্বয়ের মধ্যে পুনর্মিলন ও সামাজিক ন্যায্যতা সৃষ্টি এই আইনের অন্যতম উদ্দেশ্য। এ ছাড়া প্রত্যন্ত এলাকার অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত, দুস্থ ও সাধারণ নারীদের সম-অধিকার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতেও গ্রাম আদালত কাজ করছে। থানা বা আদালতে না গিয়েই নারী, দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া লোকজন যাতে সুবিচার পেতে পারে, সেটিই গ্রাম আদালতের মূল লক্ষ্য।
উল্লেখ্য, ১৯৭৬ সালের গ্রাম আদালত বিধিমালা অনুযায়ী ২০০৬ সালে গ্রাম আদালত আইন প্রণয়ন করা হয়। গ্রাম আদালত আইনে দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে কতিপয় বিরোধ ও বিবাদের নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গ্রাম আদালত কাজ করে থাকে। গ্রাম আদালত স্বেচ্ছায় আঘাত করা, ক্ষতি সাধন ও অপরাধমূলক অনধিকার প্রবেশ, কলহ বা মারামারির প্ররোচনা, চুরি, অসাধুভাবে সম্পত্তি তসরুপ, গবাদিপশু অনধিকার প্রবেশ আইন ইত্যাদি বিষয়ে মামলা পরিচালনা করতে পারে।
দেশের ১৪ জেলার সাড়ে তিন শ’ ইউনিয়নে বিগত তিন বছরে গ্রাম আদালতে মামলা হয়েছে ১৫ হাজার ৭৬০। তবে এসব মামলার মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ১০ হাজার ৭৬৫। বাকি মামলা চলমান রয়েছে। অপরদিকে প্রায় এক হাজার মামলা জেলা আদালত থেকে ফিরিয়ে দিয়ে গ্রাম আদালতে নিষ্পন্ন করতে নির্দেশ দিয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রাথমিকভাবে দেশের ১৪ জেলার পাঁচ শ’ ইউনিয়নে গ্রাম আদালত গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এসব ইউনিয়ন হচ্ছে ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ জেলার ৮ উপজেলার ৩৫ ইউনিয়ন, রাজবাড়ী জেলার ৪ উপজেলার ৩০ ইউনিয়ন, ফরিদপুর জেলার ৬ উপজেলার ৪১ ইউনিয়ন, গোপালগঞ্জ জেলার ৩ উপজেলার ৩০ ইউনিয়ন, রাজশাহী বিভাগের নীলফামারী জেলার ৪ উপজেলার ৩০ ইউনিয়ন, লালমনিরহাট জেলার ৫ উপজেলার ২৫ ইউনিয়ন, রংপুর জেলার ৪ উপজেলার ৩৩ ইউনিয়ন।
সিলেট বিভাগের সিলেট জেলার ৬ উপজেলার ৪২ ইউনিয়ন, মৌলভীবাজার জেলার ৪ উপজেলার ৩০ ইউনিয়ন। চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম জেলার ৬ উপজেলার ৩০ ইউনিয়ন, কক্সবাজার জেলার ৫ উপজেলার ২৫ ইউনিয়ন, বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর জেলার ৪ উপজেলার ২৯ ইউনিয়ন, বরগুনা জেলার ৪ উপজেলার ৩০ ইউনিয়ন, পটুয়াখালী জেলার ৫ উপজেলার ৩১ ইউনিয়ন, খুলনা বিভাগের নড়াইল জেলার ৩ উপজেলার ১৫ ইউনিয়ন, মাগুরা জেলার ২ উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ৪ উপজেলার ৩০ ইউনিয়ন। তবে সরকার থেকে ৫শ’ ইউনিয়নে গ্রাম আদালত গঠনের সিদ্ধান্ত নিলেও পরবর্তীতে দেড় শ’টি কমিয়ে সাড়ে তিন শ’ ইউনিয়নে পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এই সাড়ে তিন শ’ ইউনিয়নে এখন গ্রাম আদালত কার্যক্রম চলছে।
অনাদিকাল ধরে অনানুষ্ঠানিকভাবে ছোটখাটো বিরোধের স্থানীয় মীমাংসা পদ্ধতিকে আনুষ্ঠানিকতা এবং আইনী কাঠামো প্রদানের লক্ষ্যে গ্রাম আদালত আইনকে কার্যকর করার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ ২০০৯ সালে ‘গ্রাম আদালত কার্যক্রম চালু ও শক্তিশালীকরণ’ শীর্র্ষক প্রকল্প গ্রহণ করে। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী (ইউএনডিপি) ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সহযোগিতায় প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের ৩৫০ ইউনিয়নে গ্রাম আদালত কার্যকর করার কাজ চলছে।
গ্রাম আদালতের সুফল বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও গ্রাম আদালত কার্যক্রম চালু ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের পরিচালক কেএম মোজাম্মেল হক জনকণ্ঠ’কে বলেন, জেলা আদালতে প্রতিদিনই মামলার সংখ্যা বাড়ছে। এসব মামলা পরিচালনায় খরচও অনেক। তবে গ্রামের সাধারণ মানুষ স্থানীয় পর্যায়ে গ্রাম আদালতের মাধ্যমে সুবিচার পেতে পারেন। এতে সময় ও অর্থেও অপচয় অনেক কম হবে। তিনি জানান, ইতোমধ্যে গ্রাম আদালত পরিচালনার ফলে সফলতা এসেছে। দেশের সব ইউনিয়নে এ আদালত প্রতিষ্ঠা করতে পারলে আরও সুফল পাওয়া যাবে।
গত ৮ জুন গ্রাম আদালত সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, গ্রাম আদালত ব্যবস্থা দেশের সব ইউনিয়নে চালু করা হবে। এ আদালত উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি আদর্শ মডেলে পরিণত হবে। প্রাথমিকভাবে গ্রাম আদালতে বিচার কার্যক্রম পরিচালনায় কিছু ভুলত্রুটি হতে পারে। তবে ধীরে ধীরে এ প্রক্রিয়া একটি মানসম্মত পর্যায়ে পৌঁছাবে।
দেওয়ানী ও ফৌজদারি ছোট ছোট বিরোধ স্থানীয়ভাবে নিষ্পত্তি করার লক্ষ্যেই ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম আদালত গঠিত হয়েছে। গ্রাম আদালত আইন অনুযায়ী ২৫ হাজার টাকার নিচে এমন দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইনের ২৭ ধারার অপরাধ কম সময়ে অল্প খরচে গ্রাম আদালত নিষ্পত্তি করে থাকে। বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে শান্তি স্থাপন করে বিরোধী পক্ষদ্বয়ের মধ্যে পুনর্মিলন ও সামাজিক ন্যায্যতা সৃষ্টি এই আইনের অন্যতম উদ্দেশ্য। এ ছাড়া প্রত্যন্ত এলাকার অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত, দুস্থ ও সাধারণ নারীদের সম-অধিকার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতেও গ্রাম আদালত কাজ করছে। থানা বা আদালতে না গিয়েই নারী, দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া লোকজন যাতে সুবিচার পেতে পারে, সেটিই গ্রাম আদালতের মূল লক্ষ্য।
উল্লেখ্য, ১৯৭৬ সালের গ্রাম আদালত বিধিমালা অনুযায়ী ২০০৬ সালে গ্রাম আদালত আইন প্রণয়ন করা হয়। গ্রাম আদালত আইনে দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে কতিপয় বিরোধ ও বিবাদের নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গ্রাম আদালত কাজ করে থাকে। গ্রাম আদালত স্বেচ্ছায় আঘাত করা, ক্ষতি সাধন ও অপরাধমূলক অনধিকার প্রবেশ, কলহ বা মারামারির প্ররোচনা, চুরি, অসাধুভাবে সম্পত্তি তসরুপ, গবাদিপশু অনধিকার প্রবেশ আইন ইত্যাদি বিষয়ে মামলা পরিচালনা করতে পারে।
No comments