চরাচর-চিরায়ত বাঁশবাগান by বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন
'বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই, মাগো আমার শোলক বলা কাজলাদিদি কই...।' ছেলেবেলায় পড়া যতীন্দ্রনাথ মোহন বাগচীর আবেগাশ্রিত এই কবিতাটি আমাদের নিয়ে যায় গ্রামবাংলার চিরায়ত শীতল পরিবেশে ঘেরা সবুজ সমারোহের কাছে।
সহজেই মনে করিয়ে দেয়- স্মৃতিপটে লেগে থাকা গ্রামীণ নানা রঙের দিনগুলোকে! আমাদের অযত্ন আর অবহেলার কারণে বাঁশ বাগান এখন বিলুপ্তির পথে। কালের বিবর্তনে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যে ভরা কুটির শিল্পের অন্যতম এ উপাদানটি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বনজঙ্গল ও বাঁশঝাড় কেটে এবং আবাদি জমি নষ্ট করে নানা ধরনের ছোট-বড় স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে। ফলে প্রকৃতির আদি নিদর্শনগুলো উজাড় হতে চলেছে। এতে হুমকির মুখে পড়ছে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য। সেই সঙ্গেই লোপ পাচ্ছে বাঁশঝাড়ের ওপর নির্ভর করে থাকা নানা ধরনের জীববৈচিত্র্য।
বাঁশগাছ Gramine পরিবারভুক্ত এক ধরনের বহু বর্ষজীবী কাষ্ঠল ঘাসবিশেষ। অন্যান্য ঘাস থেকে বাঁশের কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, পৃথিবীতে প্রায় এক হাজার ৫০০ প্রজাতির বাঁশ রয়েছে। এর মধ্যে চীন ও ভারতেই জন্মে বাঁশের অধিকসংখ্যক প্রজাতি। প্রজাতিগত বাঁশগাছের আকৃতি বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। মুলি, মাকনা, তেলি বরুয়া, মিতিংগা, ওরা, কালি, ডলু, লতা, পেচা, বরিয়ালা, লাঠি বাঁশসহ ২৭ প্রজাতির বাঁশ আমাদের দেশে পাওয়া যায়। দেশের বনাঞ্চল, টিলা বা পাহাড়ি এলাকা এবং গ্রামাঞ্চলে বাঁশ জন্মে। মানুষের জীবনে বাঁশের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য- জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি। গ্রামাঞ্চলের মানুষ একসময় প্রসূতি মায়ের সন্তানের নাড়ি কাটার জন্য বাঁশের চিকন চাঁচ ব্যবহার করত। অন্যদিকে মৃত ব্যক্তির দাফনে বাঁশ বিরাট ভূমিকা পালন করে। বাড়ি-ঘর, কৃষিকাজ, বেড়া, বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ, বাঁশের সাঁকো, খাঁচা, কুটির শিল্প, কাগজ তৈরির শিল্প, রাস্তাঘাটের বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন, জ্বালানিসহ নানা কাজে বাঁশ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। একসময় গ্রামাঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষের বাড়িতেই দু-চারটি বাঁশবাগান ছিল। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আগে সাংসারিক প্রতিপত্তির মাপকাঠি হিসেবেও ব্যবহার হতো বাঁশবাগান। কোন বংশের কত বিঘা বাঁশ আছে, তা দিয়েই নির্ণয় করা হতো সে বংশের প্রভাব ও পদমর্যাদা।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে কুটির শিল্পের অন্যতম এ উপাদান বাঁশবাগান। পরিবেশের হুমকি প্লাস্টিক সামগ্রী আমাদের বাঁশশিল্পের বাজার দখল করে নিয়েছে। প্রতিযোগিতার বাজারে প্লাস্টিকের সঙ্গে দৌড়াতে পারছে না বাঁশশিল্প। ফলে বাঁশশিল্পকে ঘিরে বেঁচে থাকা শত শত পরিবার টিকে থাকার জন্য তাদের পৈতৃক পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে। বাঁশবন উজাড় হওয়ার ফলে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশশিল্পীরাও। পরিবেশবান্ধব বাঁশের তৈরি ডালা, টুকরি, চাঙ্গারি, করপা, জাপুইন, চালুনি, ঝুড়ি, খাঁচা, কুলা, মোড়া, পাটিসহ বিভিন্ন জিনিসের বিকল্প হয় না আজও। বাঁশের তৈরি ঘর অত্যন্ত আরামদায়ক ও ভূমিকম্পরোধক। আবহমান বাংলা সংগীতের অন্যতম শ্রেষ্ঠযন্ত্র 'বাঁশি' বাঁশ দিয়েই তৈরি হয়। অনেক কালজয়ী বাংলা গান বা যন্ত্রানুষঙ্গ রচিত হয়েছে এই বাঁশিকে অবলম্বন করেই। এ ছাড়া গ্রামবাংলার আরেক ঐতিহ্য লাঠিখেলায়ও বাঁশের প্রয়োজন হতো। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বাঁশকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আমাদের সংস্কৃতির এসব মূল্যবান উপাদান আজ বিলুপ্ত হতে চলেছে।
বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন
বাঁশগাছ Gramine পরিবারভুক্ত এক ধরনের বহু বর্ষজীবী কাষ্ঠল ঘাসবিশেষ। অন্যান্য ঘাস থেকে বাঁশের কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, পৃথিবীতে প্রায় এক হাজার ৫০০ প্রজাতির বাঁশ রয়েছে। এর মধ্যে চীন ও ভারতেই জন্মে বাঁশের অধিকসংখ্যক প্রজাতি। প্রজাতিগত বাঁশগাছের আকৃতি বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। মুলি, মাকনা, তেলি বরুয়া, মিতিংগা, ওরা, কালি, ডলু, লতা, পেচা, বরিয়ালা, লাঠি বাঁশসহ ২৭ প্রজাতির বাঁশ আমাদের দেশে পাওয়া যায়। দেশের বনাঞ্চল, টিলা বা পাহাড়ি এলাকা এবং গ্রামাঞ্চলে বাঁশ জন্মে। মানুষের জীবনে বাঁশের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য- জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি। গ্রামাঞ্চলের মানুষ একসময় প্রসূতি মায়ের সন্তানের নাড়ি কাটার জন্য বাঁশের চিকন চাঁচ ব্যবহার করত। অন্যদিকে মৃত ব্যক্তির দাফনে বাঁশ বিরাট ভূমিকা পালন করে। বাড়ি-ঘর, কৃষিকাজ, বেড়া, বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ, বাঁশের সাঁকো, খাঁচা, কুটির শিল্প, কাগজ তৈরির শিল্প, রাস্তাঘাটের বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন, জ্বালানিসহ নানা কাজে বাঁশ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। একসময় গ্রামাঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষের বাড়িতেই দু-চারটি বাঁশবাগান ছিল। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আগে সাংসারিক প্রতিপত্তির মাপকাঠি হিসেবেও ব্যবহার হতো বাঁশবাগান। কোন বংশের কত বিঘা বাঁশ আছে, তা দিয়েই নির্ণয় করা হতো সে বংশের প্রভাব ও পদমর্যাদা।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে কুটির শিল্পের অন্যতম এ উপাদান বাঁশবাগান। পরিবেশের হুমকি প্লাস্টিক সামগ্রী আমাদের বাঁশশিল্পের বাজার দখল করে নিয়েছে। প্রতিযোগিতার বাজারে প্লাস্টিকের সঙ্গে দৌড়াতে পারছে না বাঁশশিল্প। ফলে বাঁশশিল্পকে ঘিরে বেঁচে থাকা শত শত পরিবার টিকে থাকার জন্য তাদের পৈতৃক পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে। বাঁশবন উজাড় হওয়ার ফলে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশশিল্পীরাও। পরিবেশবান্ধব বাঁশের তৈরি ডালা, টুকরি, চাঙ্গারি, করপা, জাপুইন, চালুনি, ঝুড়ি, খাঁচা, কুলা, মোড়া, পাটিসহ বিভিন্ন জিনিসের বিকল্প হয় না আজও। বাঁশের তৈরি ঘর অত্যন্ত আরামদায়ক ও ভূমিকম্পরোধক। আবহমান বাংলা সংগীতের অন্যতম শ্রেষ্ঠযন্ত্র 'বাঁশি' বাঁশ দিয়েই তৈরি হয়। অনেক কালজয়ী বাংলা গান বা যন্ত্রানুষঙ্গ রচিত হয়েছে এই বাঁশিকে অবলম্বন করেই। এ ছাড়া গ্রামবাংলার আরেক ঐতিহ্য লাঠিখেলায়ও বাঁশের প্রয়োজন হতো। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বাঁশকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আমাদের সংস্কৃতির এসব মূল্যবান উপাদান আজ বিলুপ্ত হতে চলেছে।
বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন
No comments