চলে গেলেন হুমায়ূন আহমেদ-তাঁকে স্মরণ করবে জাতি

চলে গেলেন সমসাময়িক বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ। ক্যান্সারের সঙ্গে টানা ১০ মাসের যুদ্ধে হেরে গেলেন তিনি। চিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়েছিলেন। কয়েক দিন আগে থেকেই জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিলেন তিনি। তবু ভক্তদের আশা ছিল, নিউ ইয়র্কের ঝলমলে রোদে আবার জেগে উঠবেন প্রিয় লেখক।


হাতে তুলে নেবেন কলম। আবার লজিক-অ্যান্টিলজিকে সচল হবে মিসির আলী কিংবা হিমু। কিন্তু অসংখ্য ভক্তের মঙ্গল কামনা আর চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ। হুমায়ূন আহমেদ বিদায় নিলেন পৃথিবী থেকে। লেখক হিসেবে পাঠকপ্রিয়তার তুঙ্গে ছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্যে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা সহজে পূরণ হওয়ার নয়।
লেখালেখিতে যখন নিজের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ, তখন সত্যিকার অর্থেই দুর্দিন চলছিল বাংলাদেশের সাহিত্যের। বলার অপেক্ষা রাখে না, তখন বাংলা বইয়ের বাজার অনেকটাই দখল করে নিয়েছিল পাইরেটেড বই। সেই সময়ে হুমায়ূন আহমেদ এলেন অনেকটাই 'হঠাৎ আলোর ঝলকানি' নিয়ে। দেশের সাহিত্যের পাঠকগোষ্ঠী তৈরি হলো। পাঠক মহলে সাড়া পড়ে গেল। দেশের সৃজনশীল প্রকাশনা জগতে রীতিমতো বিপ্লব এনেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। একজন লেখককে ঘিরে যে একটি প্রকাশনা জগৎ সচল থাকতে পারে, সেটা প্রমাণ করেছিলেন তিনি। সৃজনশীলতার যে শাখায়ই হাত দিয়েছেন তিনি, সেখানেই সোনা ফলেছে। গল্প-উপন্যাসের পাশাপাশি লিখেছেন নাটকও। পরবর্তীকালে নির্দেশকের ভূমিকায়ও দেখা গেছে তাঁকে। একজন সফল নির্মাতা হিসেবে তৈরি করেছেন নাটক ও চলচ্চিত্র। দেশের চলচ্চিত্রের দুর্দিনে সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। গল্প-উপন্যাস, নাটক-সিনেমা- সব কিছুতেই পাঠক কিংবা দর্শককে টেনে আনতে পারতেন তিনি।
লেখালেখি শুরু করেছিলেন গত শতাব্দীর ষাটের দশকে। শুরুর উপন্যাস 'নন্দিত নরকে' সমালোচকদের দৃষ্টি কেড়েছিল। পরবর্তীকালে জনপ্রিয় ধারার লেখক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন হুমায়ূন আহমেদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা দিয়ে শুরু করেছিলেন কর্মজীবন। লেখালেখি আর সৃজনশীলতার কারণে অধ্যাপনা ছেড়ে দিতেও ভাবতে হয়নি তাঁকে। গল্প-উপন্যাসের মতোই টিভি নাটকেও নিজস্ব একটি ঘরানা তৈরি করেছিলেন তিনি। ভেঙে দিয়েছিলেন গতানুগতিক টিভি নাটকের ধারণা। 'এইসব দিনরাত্রি', 'বহুব্রীহি', 'অয়োময়', 'কোথাও কেউ নেই' ইত্যাদি ধারাবাহিক নাটক তাঁকে নিয়ে যায় দর্শকপ্রিয়তার শীর্ষে। 'আগুনের পরশমণি', 'শ্যামল ছায়া', 'শ্রাবণ মেঘের দিন', 'দুই দুয়ারী', 'চন্দ্রকথা' ইত্যাদি চলচ্চিত্র নির্মাণ করে হুমায়ূন আহমেদ তাঁর প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন। হুমায়ূন আহমেদের প্রয়াণ বাংলাদেশের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। দেশের প্রকাশনা জগতের পাশাপাশি চলচ্চিত্র ও বৈদ্যুতিক মিডিয়া তাঁর এই অকাল প্রয়াণে ক্ষতিগ্রস্ত হলো। দেশের সাহিত্য ও মিডিয়ার তাঁর কাছ থেকে আরো অনেক কিছু পাওয়ার ছিল। হুমায়ূন আহমেদ এখন সব চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে। তিনি আজ নেই। কিন্তু দেশের সাহিত্য-সংগীত-নাটক-চলচ্চিত্রে তাঁর অবদান অস্বীকার করার মতো নয়। সৃজনশীলতার সব ক্ষেত্রে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। তাঁর এই কীর্তি কখনো মুছে যাওয়ার নয়। এই কীর্তির জন্য তাঁকে চিরকাল স্মরণ করবে বাংলাদেশ, স্মরণ করবে জাতি।

No comments

Powered by Blogger.