তদন্ত কমিটির তদন্ত কতটা গ্রহণযোগ্য?-আদালত চত্বরের ঘটনা

গত ২৯ মে পুরান ঢাকার আদালত চত্বরে এক বিচারপ্রার্থী তরুণী ও তাঁর মা-বাবার প্রতি পুলিশের আচরণ ছিল ন্যক্কারজনক। অথচ তদন্ত কমিটি পুলিশের আচরণ নিছক অপেশাদারি উল্লেখ করে তাদের অপরাধ হালকা করার চেষ্টা করেছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।


ঘটনার দিন ওই তরুণী মাকে নিয়ে যখন বাবার মোটরসাইকেলে করে আদালত চত্বরের বাইরে আসছিলেন, তখনই কতিপয় পুলিশ সদস্য তাঁদের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে তাঁরা তিনজনকে পুলিশ ক্লাবে নিয়ে গিয়ে মারধর করেন। এ সময় এক পুলিশ সদস্য তরুণীকে একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে তাঁর শ্লীলতাহানি করেন এবং গলার চেইন ছিনিয়ে নেন বলে তিনি সেখানে উপস্থিত আইনজীবী ও সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন। এরপর পুলিশ কোতোয়ালি থানায় নিয়ে গিয়ে তাঁদের আরেক দফা হেনস্তা করে। পরে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামালের হস্তক্ষেপে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ ঘটনার পর একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের নির্দেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবের (পুলিশ অনুবিভাগ) নেতৃত্বে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। শুক্রবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে আদালত প্রাঙ্গণে বিচারপ্রার্থী তরুণী ও তাঁর মা-বাবাকে প্রহার করাকে বেআইনি আখ্যায়িত করলেও তরুণীর শ্লীলতাহানির প্রমাণ পায়নি বলে জানানো হয়েছে। তারা কীভাবে প্রমাণ পাবে? তারা আক্রমণকারীর বক্তব্যকে সত্য বলে ধরে নিলেও অগ্রাহ্য করেছে আক্রান্ত তরুণীর জবানবন্দি।
তদন্ত কমিটি অপরাধীদের গুরু পাপকে লঘু করে দেখলেও আক্রান্ত তরুণী ও তাঁর মা সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছে, তা অনৈতিক ও অমানবিক। কমিটির মতে, বিচারপ্রার্থী তরুণী ও তাঁর মা নাকি ‘সহজ-সরল নন’ এবং থানার পুলিশ ও মামলা-মোকদ্দমা সম্পর্কেও তাঁরা অবহিত। এই মন্তব্য দ্বারা তদন্ত কমিটি কী বোঝাতে চাইছে? মামলা-মোকদ্দমা, থানা-পুলিশ সম্পর্কে জানাটা কি অন্যায়? যদি তাঁরা পুলিশের নির্যাতনের প্রতিকার না চাইতেন, তাহলেই কি তদন্ত কমিটির কাছে মা-মেয়ে সহজ-সরল বলে প্রতিভাত হতো?
তদন্ত কমিটির এই অসম্পূর্ণ, একপেশে ও পক্ষপাতদুষ্ট তদন্ত প্রতিবেদন আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।

No comments

Powered by Blogger.