বর্ধিত ভ্রমণ কর নিয়ে হট্টগোল
আকাশপথে বিদেশ ভ্রমণের জন্য বর্ধিত কর আদায় করা নিয়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানকর্মী ও যাত্রীদের মধ্যে এখন প্রায় প্রতিদিনই হট্টগোল হচ্ছে। এ কারণে বিমানের ফ্লাইটও বিলম্বিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একজন কর্মকর্তা জানান, ১৯ দিন ধরে এ পরিস্থিতি চলছে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একজন কর্মকর্তা জানান, ১৯ দিন ধরে এ পরিস্থিতি চলছে।
তবু বিমান সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ কিংবা ফোনে বা অন্য কোনোভাবে বিষয়টি যাত্রীদের জানানোর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, এ সুযোগে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য যাত্রীপ্রতি ৫০০ টাকা করে মাশুল আদায় করা হচ্ছে বলে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।
কানাডা থেকে মোস্তফা মনোয়ার নামের এক ব্যক্তি প্রথম আলোকে ই-মেইলে জানান, কানাডা যাওয়ার সময় তাঁর মায়ের কাছ থেকে পদ্মা সেতুর মাশুলের কথা বলে ৫০০ টাকা রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক শামীমা আলমগীর বলেন, দুই সন্তান নিয়ে তিনি ১৫ জুলাই ভোরে ঢাকা থেকে ইতিহাদ এয়ারওয়েজে দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্র যান। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এয়ারলাইনসের কাউন্টার থেকে বলা হয়, পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য জনপ্রতি ৫০০ টাকা করে মাশুল দিতে হবে। মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ না করে বাড়তি এ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে শামীমার কাছ থেকে আর টাকা নেওয়া হয়নি।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, সবচেয়ে বেশি হট্টগোল হচ্ছে বাংলাদেশ বিমানের কাউন্টারের সামনে। প্রবাসী অনেক শ্রমিকের কাছে ৫০০ টাকা থাকেও না। তাঁরা বিদায় জানাতে আসা স্বজনদের কাছ থেকে ধার করে এ টাকা পরিশোধ করেন।
বাংলাদেশ বিমানের কুয়েতগামী ফ্লাইটের যাত্রী আয়নাল বিশ্বাস অভিযোগ করেন, গত বুধবার বোর্ডিং পাস নিতে গেলে তাঁর কাছ থেকে ৫০০ টাকা নেওয়া হয়। অবশ্য টিকিট ‘রি-কনফার্ম’ হয়নি বলে তিনি ওই দিন যেতে পারেননি। তাঁকে বলা হয়, পরে যাওয়ার সময় আর এ টাকা দিতে হবে না। মালয়েশিয়াগামী আরেক যাত্রী নূর আলম বলেন, তাঁর কাছ থেকেও পদ্মা সেতুর কথা বলে ৫০০ টাকা নেওয়া হয়।
বিষয়টি বিমানের যাত্রীদের আগাম অবহিত করার দায়িত্ব বাংলাদেশ বিমানের বিক্রয় ও বিপণন শাখার। এ শাখার পরিচালকের বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে বলা হয়, তিনি ব্যাংকক আছেন।
বিমানের মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয়) আবদুল্লাহ আল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, সরকার ভ্রমণ কর বাড়িয়েছে, যা ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে। যেসব যাত্রী ১ জুলাইয়ের আগে টিকিট কিনেছেন, তাঁদের কাছ থেকে বর্ধিত ভ্রমণ কর নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি যাত্রীদের আগাম জানালে বা গণমাধ্যমে প্রচার করা হলে এ নিয়ে প্রতিদিন বিমানবন্দরে হট্টগোল হতো না—এ কথা স্বীকার করে বিমানের এই মহাব্যবস্থাপক বলেন, এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে তিনি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বলবেন।
জানা গেছে, চলতি বাজেটে সরকার আকাশপথে ভ্রমণ কর ২০০ থেকে ৫০০ টাকা বাড়িয়েছে। এর মধ্যে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় আগে ভ্রমণ কর ছিল আড়াই হাজার টাকা, তা এখন তিন হাজার টাকা করা হয়েছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোয় ভ্রমণ কর আগে ছিল ৮০০ টাকা, তা ২০০ টাকা বাড়ানো হয়। আর আগে যেসব দেশে ভ্রমণে এক হাজার ৮০০ টাকা দিতে হতো, তা এখন দুই হাজার করা হয়েছে।
No comments