ধর্ম-স্বাগত মাহে রমজান by আবদুস সবুর খান
দীর্ঘ ১১ মাসের প্রতীক্ষার পর রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের সওগাত নিয়ে বিশ্ব মোমিন-মুসলমানের দ্বারে আবারও এসে উপস্থিত হয়েছে সাম্য, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতির মাস, ভ্রাতৃত্ব, মানবিকতা, ত্যাগ, সংযম ও আত্মশুদ্ধির মাস মাহে রমজান। খোশ আমদেদ মাহে রমজান, আহলান ওয়া সাহলান মাহে রমজান।
এ মাসেই মহান আল্লাহ মহাগ্রন্থ আল কোরআন নাজিল করেছেন আর মুমিন-মুসলমানের জন্য সিয়াম সাধনা তথা রোজাকে ফরজ করেছেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে তিনি নিজেই ঘোষণা করেছেন, ‘রমজান মাস, এতে মানুষের পথপ্রদর্শক ও সত্পথের স্পষ্ট নিদর্শন এবং ন্যায় ও অন্যায়ের মীমাংসারূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। অতএব, তোমাদের মধ্যে যে এ মাস পাবে সে যেন এ মাসে অবশ্যই রোজা রাখে।’ (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৩)
আরবি বর্ষপঞ্জির নবম মাস রমজান। এই মাসে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে বিধায় এ মাসের গুরুত্ব অন্যান্য মাসের তুলনায় অনেক বেশি। এই মাসে এমন এক মহিমান্বিত রাত রয়েছে, যেটি মর্যাদার দিক থেকে হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ঘোষণা করেছেন, ‘মহিমান্বিত রাত হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।’ (সূরা কদর, আয়াত ৩)
মহান রাব্বুল আলামিন এই মাসে রোজাদারদের জন্য নেক আমল বা ভালো কাজ করার উত্তম সুযোগ করে দিয়েছেন এবং মুমিনদের ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করার জন্য নেক আমলের সওয়াব ১০ থেকে ৭০ গুণ পর্যন্ত বর্ধিত করার ঘোষণাও দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে উল্লেখ হয়েছে, যে ব্যক্তি এ মাসে কোনো নফল কাজ করল সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজই আদায় করল। আর যে এ মাসে কোনো ফরজ আদায় করল সে যেন অন্য মাসে ৭০টি ফরজ আদায় করল। এ মাসের গুরুত্ব সম্পর্কে অপর এক হাদিসে রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘এ মাসে বেহেশতের দরজাগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো তালাবদ্ধ থাকে আর শয়তানকে (তার সহচরদেরসহ) শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখা হয়। (বুখারি ও মুসলিম)
রোজাদারের মর্যাদা উল্লেখ করে হাদিস শরিফে রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘রোজাদারের নিদ্রা ইবাদতের সমতুল্য, তার চুপ থাকা তসবিহ পাঠের সমতুল্য, সে সামান্য ইবাদতে অন্য সময় অপেক্ষা অধিকতর সওয়াবের অধিকারী হয়। ঈমান ও এহতেসাবের সঙ্গে যে ব্যক্তি রোজা রাখে তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ আর রোজাদারের মর্যাদা সম্পর্কে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, ‘মানুষ যত প্রকার নেক কাজ করে আমি তার সওয়াব ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ বৃদ্ধি করে দিই। কিন্তু রোজা এই নিয়মের বাইরে। রোজার সওয়াব একই নিয়মে সীমাবদ্ধ বা সীমিত নয়। রোজার সওয়াবের পুরস্কার স্বয়ং আমি প্রদান করব। অথবা আমি নিজেই রোজার সওয়াবের পুরস্কার।’
মাহে রমজানের এত গুরুত্ব ও ফজিলত বলেই প্রিয় নবী (সা.) সব সময়, বিশেষ করে রজব মাসে এই বলে মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করতেন, হে আল্লাহ! রজব ও শাবান মাসে তুমি আমাদের বরকত দাও। আর রমজান মাস পর্যন্ত আমাদের পৌঁছে দাও। রাসুল (সা.)-এর প্রিয় উম্মতেরাও তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সারা বছর অধীর আগ্রহে এই মাসটির আগমনের অপেক্ষায় থাকে। আর শাবান মাসের শেষে সন্ধ্যায় পশ্চিম আকাশে মাহে রমজানের সোনালি চাঁদের ঝিলিকে তাদের অন্তরে আনন্দের হিল্লোল বয়ে যেতে থাকে। খুশির জোয়ারে ভরে ওঠে মুমিনের হূদয়। এই বরকতময় মাসে পৌঁছানোর সৌভাগ্য লাভ করে তারা মহান আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে থাকে। আনন্দচিত্তে মাহে রমজানকে স্বাগত জানায়, খোশ আমদেদ মাহে রমজান।
গতকাল সন্ধ্যায় পশ্চিম আকাশে পবিত্র মাহে রমজানের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর থেকেই আমাদের দেশের মুসলিমদের মধ্যে আনন্দের জোয়ার বইতে শুরু করেছে। গত রাত থেকেই এশার নামাজের পর মসজিদে মসজিদে শুরু হয়েছে পবিত্র রমজান মাসের অন্যতম অনুষঙ্গ খতমে তারাবিহর জামাত। আগামী এক মাস শেষ রাতে ঘুম থেকে উঠে পরিবারের সমর্থ প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যরা রোজা রাখার জন্য সেহির খাবেন, এই আনন্দে শরিক হওয়া থেকে শিশুরাও বাদ পড়তে চায় না। অনেকে বাবা-মায়ের আপত্তি সত্ত্বেও আজ প্রথম রোজাটি রেখেছে। তারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবে কখন ইফতারের সময় হবে। মসজিদে মসজিদে ধ্বনিত হবে মাগরিবের আজান আর তারাও পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে রোজাদারের সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত ইফতারে শামিল হবে।
রমজানের আগমনে সারা দেশে ধর্মীয় আবহ বিরাজ করছে। সরকার রোজাদারদের সম্মানে অফিসের নতুন সময়সূচি নির্ধারণ করেছে। এ মাসের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আমরা যেন আত্মশুদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি গরিব-দুঃখী মানুষের ক্ষুধা-দারিদ্র্যের যন্ত্রণা সম্যক উপলব্ধি করে তাদের প্রতি সাহায্য-সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারি, মাহে রমজানের প্রথম দিনে মহান আল্লাহর দরবারে এই প্রার্থনা হোক আমাদের সবার।
ড. আবদুস সবুর খান: সহযোগী অধ্যাপক, ফারসি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
আরবি বর্ষপঞ্জির নবম মাস রমজান। এই মাসে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে বিধায় এ মাসের গুরুত্ব অন্যান্য মাসের তুলনায় অনেক বেশি। এই মাসে এমন এক মহিমান্বিত রাত রয়েছে, যেটি মর্যাদার দিক থেকে হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ঘোষণা করেছেন, ‘মহিমান্বিত রাত হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।’ (সূরা কদর, আয়াত ৩)
মহান রাব্বুল আলামিন এই মাসে রোজাদারদের জন্য নেক আমল বা ভালো কাজ করার উত্তম সুযোগ করে দিয়েছেন এবং মুমিনদের ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করার জন্য নেক আমলের সওয়াব ১০ থেকে ৭০ গুণ পর্যন্ত বর্ধিত করার ঘোষণাও দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে উল্লেখ হয়েছে, যে ব্যক্তি এ মাসে কোনো নফল কাজ করল সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজই আদায় করল। আর যে এ মাসে কোনো ফরজ আদায় করল সে যেন অন্য মাসে ৭০টি ফরজ আদায় করল। এ মাসের গুরুত্ব সম্পর্কে অপর এক হাদিসে রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘এ মাসে বেহেশতের দরজাগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো তালাবদ্ধ থাকে আর শয়তানকে (তার সহচরদেরসহ) শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখা হয়। (বুখারি ও মুসলিম)
রোজাদারের মর্যাদা উল্লেখ করে হাদিস শরিফে রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘রোজাদারের নিদ্রা ইবাদতের সমতুল্য, তার চুপ থাকা তসবিহ পাঠের সমতুল্য, সে সামান্য ইবাদতে অন্য সময় অপেক্ষা অধিকতর সওয়াবের অধিকারী হয়। ঈমান ও এহতেসাবের সঙ্গে যে ব্যক্তি রোজা রাখে তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ আর রোজাদারের মর্যাদা সম্পর্কে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, ‘মানুষ যত প্রকার নেক কাজ করে আমি তার সওয়াব ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ বৃদ্ধি করে দিই। কিন্তু রোজা এই নিয়মের বাইরে। রোজার সওয়াব একই নিয়মে সীমাবদ্ধ বা সীমিত নয়। রোজার সওয়াবের পুরস্কার স্বয়ং আমি প্রদান করব। অথবা আমি নিজেই রোজার সওয়াবের পুরস্কার।’
মাহে রমজানের এত গুরুত্ব ও ফজিলত বলেই প্রিয় নবী (সা.) সব সময়, বিশেষ করে রজব মাসে এই বলে মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করতেন, হে আল্লাহ! রজব ও শাবান মাসে তুমি আমাদের বরকত দাও। আর রমজান মাস পর্যন্ত আমাদের পৌঁছে দাও। রাসুল (সা.)-এর প্রিয় উম্মতেরাও তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সারা বছর অধীর আগ্রহে এই মাসটির আগমনের অপেক্ষায় থাকে। আর শাবান মাসের শেষে সন্ধ্যায় পশ্চিম আকাশে মাহে রমজানের সোনালি চাঁদের ঝিলিকে তাদের অন্তরে আনন্দের হিল্লোল বয়ে যেতে থাকে। খুশির জোয়ারে ভরে ওঠে মুমিনের হূদয়। এই বরকতময় মাসে পৌঁছানোর সৌভাগ্য লাভ করে তারা মহান আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে থাকে। আনন্দচিত্তে মাহে রমজানকে স্বাগত জানায়, খোশ আমদেদ মাহে রমজান।
গতকাল সন্ধ্যায় পশ্চিম আকাশে পবিত্র মাহে রমজানের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর থেকেই আমাদের দেশের মুসলিমদের মধ্যে আনন্দের জোয়ার বইতে শুরু করেছে। গত রাত থেকেই এশার নামাজের পর মসজিদে মসজিদে শুরু হয়েছে পবিত্র রমজান মাসের অন্যতম অনুষঙ্গ খতমে তারাবিহর জামাত। আগামী এক মাস শেষ রাতে ঘুম থেকে উঠে পরিবারের সমর্থ প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যরা রোজা রাখার জন্য সেহির খাবেন, এই আনন্দে শরিক হওয়া থেকে শিশুরাও বাদ পড়তে চায় না। অনেকে বাবা-মায়ের আপত্তি সত্ত্বেও আজ প্রথম রোজাটি রেখেছে। তারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবে কখন ইফতারের সময় হবে। মসজিদে মসজিদে ধ্বনিত হবে মাগরিবের আজান আর তারাও পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে রোজাদারের সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত ইফতারে শামিল হবে।
রমজানের আগমনে সারা দেশে ধর্মীয় আবহ বিরাজ করছে। সরকার রোজাদারদের সম্মানে অফিসের নতুন সময়সূচি নির্ধারণ করেছে। এ মাসের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আমরা যেন আত্মশুদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি গরিব-দুঃখী মানুষের ক্ষুধা-দারিদ্র্যের যন্ত্রণা সম্যক উপলব্ধি করে তাদের প্রতি সাহায্য-সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারি, মাহে রমজানের প্রথম দিনে মহান আল্লাহর দরবারে এই প্রার্থনা হোক আমাদের সবার।
ড. আবদুস সবুর খান: সহযোগী অধ্যাপক, ফারসি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments