মাহে রমজান-সংযম সাধনায় জীবন পবিত্র হোক

বছর ঘুরে আবার এসেছে মাহে রমজান। আজ থেকে শুরু হচ্ছে সংযম সাধনার মাস। সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্যই আজ থেকে একটি মাস সংযম সাধনার। প্রতিবছর এই মাস রহমত, বরকত ও মুক্তির বার্তা নিয়ে আসে। পবিত্র এই মাস বিশ্ব মুসলিমকে শিক্ষা দেয় সংযত-সুন্দর জীবনযাপনের। মুসলিম নর-নারীর কাছে রোজার মাস তাই কাঙ্ক্ষিত।


মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় মুসলিম জনগোষ্ঠী শ্রদ্ধা ও নির্মল ভালোবাসায় বরণ করে এই মাসকে। পবিত্র এই মাসের মধ্যে নিহিত রয়েছে দুনিয়া ও পরকালের অশেষ কল্যাণ। মহান আল্লাহ এই মাসের প্রতিটি দিন ও মুহূর্তকে নির্ধারণ করে দিয়েছেন সংযম সাধনার জন্য।
পবিত্র এই মাসে সেহরি থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহারে বিরত থাকার পাশাপাশি তাগিদ দেওয়া হয়েছে জাগতিক সব বিষয়ে সংযত জীবনাচারের। রোজার মাসে কথায় ও কাজে মিতাচারী হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এটাই রমজান মাসের শিক্ষা। অবিচ্ছিন্ন ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে সংযম সাধনার জন্য নির্ধারিত মাস এই রমজান। সূর্যোদয়ের পূর্বমুহূর্ত থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহারে বিরত থাকা, ইফতার ও সেহরির মধ্যেই মাহে রমজানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সীমাবদ্ধ নয়। সারা দিন রোজা রাখা, যথাসময়ে ইফতার করা, সেহরি খাওয়া, সময়মতো ফরজ ও সুন্নত নামাজ কায়েম করা- এসবের কোনো কোনোটি বাধ্যতামূলক, কোনো কোনোটি বিধেয়। নিজের ও অন্যের ওপর জুলুম করা এবং অপচয় করা থেকে বিরত থাকাই সিয়াম সাধনার অন্যতম প্রধান দাবি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করতে হয়, পবিত্র রমজানে এ বিষয়টি অনেকেরই খেয়াল থাকে না। রোজার মাস এলেই দেখা যায় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী এই মাসে বেশি মুনাফার আশায় আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে বসে থাকে। এবারও বাজারে এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। অনেক নিত্যপণ্য সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি মাহে রমজানের শিক্ষার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। রোজার মাসে সুবিধা বুঝে ভোগ্যপণ্যের অতিরিক্ত মূল্য আদায় করা অন্যায়। অন্যদিকে সিয়াম সাধনার এই মাসে সামর্থ্যবান ও বিত্তশালীদের অনেকেই অপচয় করেন। এটাও সমীচীন নয়। এই মাসে বিভিন্ন মার্কেটে আলোকসজ্জা করা হয়। এটাও এক ধরনের অপচয়। যখন দেশে বিদ্যুতের সংকট, তখন বিপণিবিতানগুলোয় ঈদের বাজারে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার জন্য বাড়তি আলোকসজ্জা একটি বড় ধরনের অপচয়। মানুষের কল্যাণের জন্যই রোজা। এই মাসে মানবতার সেবায় দান করলে অভাবক্লিষ্ট মানুষের কল্যাণ হয়। মানবতা উপকৃত হয়।
রমজানের তাৎপর্য আমাদের প্রত্যেকেরই গভীরভাবে উপলব্ধি করা প্রয়োজন। সিয়াম সাধনার শিক্ষা, এর মাধ্যমে অর্জিত জীবনবোধ যদি জীবনাচরণে প্রতিফলিত হয়, তাহলে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে। এক মাসের সংযম সাধনার ভেতর দিয়ে আমাদের প্রত্যেকের জীবন পরিশুদ্ধ ও পুণ্যস্নাত হোক- এটাই আমাদের প্রার্থনা।

No comments

Powered by Blogger.