চরাচর-কুয়াকাটা সৈকত by আলম শাইন
সাগরকন্যা' খ্যাত কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের অবস্থান দেশের দক্ষিণাঞ্চলে। ঢাকা থেকে এ স্থানের দূরত্ব ৩২০ কিলোমিটার। পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলি ইউনিয়নে সৈকতটির অবস্থান। এ স্থানের নামকরণ নিয়ে আছে চমকপ্রদ তথ্য।
১৭৮৪ সালে রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন বার্মা (মিয়ানমার) থেকে এসে এ অঞ্চলে বসবাস শুরু করে। অতঃপর তারা সুপেয় জলের সন্ধানে এখানে একটি কুয়া কাটে। সেই থেকে এ অঞ্চলের নাম হয় কুয়াকাটা। এ সৈকতটির দৈর্ঘ্যও কম নয়। প্রায় ১৮ কিলোমিটার। কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত বিশেষ একটি কারণে খ্যাতি বহন করে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, এ খ্যাতি ছড়িয়েছে ভিনদেশের পর্যটকদের কাছেও। সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় আর কোনো সমুদ্রসৈকত থেকে সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত দেখা যায় না। যা দেখা যায় কুয়াকাটা থেকে। ব্যাপারটা বিরল বটে। সমুদ্রের পেট চিরে জ্বলন্ত আগুনের গোলকটি যখন হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে বিরতি নিয়ে ফের সমুদ্রে মিলিয়ে যায়, তখন কুয়াকাটাকে মনে হয় নৈসর্গিক একটি স্থান। এমন নয়নাভিরাম দৃশ্য নিজ চোখে না দেখলে উপলব্ধি করা যায় না। দৃশ্যটি ভালোভাবে উপভোগ করতে হলে পর্যটকদের ঝাউবনের কাছে যেতে হবে। সেটাই সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত দেখার উত্তম স্থান। এ ছাড়া রয়েছে পরিযায়ী পাখিসহ দেশীয় হরেক রকম পাখির আনাগোনা, যা দেখে পাখিপ্রেমীদেরও মন ভরে যাবে। এখানে আছে সৈকতজুড়ে নারিকেল বাগান। এসব মনহরণকারী দৃশ্য দেখে পর্যটকরা নিমেষেই ভুলে যাবে শহরের কোলাহলের কথা। সমুদ্র জলে নামলে তো আর কথাই নেই, নিমেষেই লাগবে চিত্তে বিনোদন। আরেকটি বাড়তি আকর্ষণ হচ্ছে এখানকার ইকোপার্ক। নাম 'কুয়াকাটা ইকোপার্ক'। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে প্রায় দুই কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য বানানো হয়েছে। গঙ্গামতির কাছে সাড়ে তিন হাজার একর জায়গা নিয়ে ইকোপার্কটি দাঁড়িয়ে আছে। এ পার্কে কাগজে-কলমে ৪৫ হাজার গাছ লাগানোর রেকর্ড রয়েছে। তবে এলাকাবাসীর দাবি, গাছের সংখ্যা ৪৫ হাজারের অনেক কম। পার্কটির অবস্থান ভাঙনকবলিত এলাকায় হওয়ায় প্রকল্পটি বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ইকোপার্কটি তৈরির সময় সেখানে ভূমি উন্নয়ন, ইকোপার্কের মূল ফটক, অ্যাপ্রোচ রোড, ফিডার রোড, পিকনিক স্পট, টয়লেট, কার পার্কিং, আরসিসি ফ্রেমের দেয়াল, হাঁটার পথ, ব্রিজ, টিউবওয়েল ও লেক উন্নয়ন করা হয়। এতে পর্যটক বেড়েছে। এত কিছু করার পরও প্রকট একটি সমস্যা রয়ে গেছে। সেটি হচ্ছে যাতায়াত ব্যবস্থা। বড়ই নাজুক। রাস্তার বেহাল অবস্থা দেখলে পর্যটকরা দ্বিতীয়বার কুয়াকাটামুখী হতে চান না। এ বেহালদশা ঘুচিয়ে দিতে আমরা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এতে বিপুল পমিাণ দেশি-বিদেশি মুদ্রা রাজস্ব খাতে যোগ হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। তা ছাড়া দেশের বাইরের পর্যটকদের কাছে আমাদের মুখ উজ্জ্বল হবে।
আলম শাইন
আলম শাইন
No comments