অস্ত্রবাজি-বিএনপি এগোচ্ছে! by এ কে এম জাকারিয়া
বিরোধী দল মনে হয় এগোচ্ছে। এক-এগারোর ধাক্কা এবং পরে নির্বাচনে বাজেভাবে হেরে গিয়ে অনেকটা যেন খেই হারিয়ে ফেলেছিল দলটি। একটু একটু করে তারা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। গত রোববার অস্ত্রবাজি, ককটেলবাজি, লাঠিবাজি ও ইটপাটকেলবাজির মধ্য দিয়ে যুবদলের মাধ্যমে বিএনপি ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রমাণ রেখেছে।
এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর অভিজ্ঞতা যে তাদের আগে ছিল না, এমন নয়। তবে মাঝে চেপে যাওয়া ছাড়া কোনো পথ ছিল না তাদের। বিরোধী দলে গেলে এটা মেনে নিতে হয়। তবে অভ্যাস বলে কথা, নিজেরা নিজেরা মারামারি করে হলেও প্র্যাকটিসটা রাখা জরুরি!
গত আগস্ট মাসে বরিশাল বিএনপির বিরোধ নিয়ে ঢাকায় দলের প্রধান অফিসে হাতাহাতি ও পিরিচ-গ্লাস ছোড়াছুড়ি করে রক্তাক্ত হয়েছে নিজেরা নিজেরা। তবে এখন সরকারি দল ও তাদের সহযোগীদের সময়। তারা যা করার তা করছে। গত কিছুদিনে পাবনায় করেছে, নাটোরে করেছে। সরকারি দল ও তাদের লোকজন এত কিছু করছে, পত্রপত্রিকায় ছবি ছাপা হচ্ছে; বিরোধী দল ও তাদের সহযোগীরা কিছুই করবে না, তা তো হয় না!
সরকারি দলের লোকজন বেছে নিয়েছিল পাবনা ও নাটোরকে, বিরোধী দল বেছে নিল কুমিল্লাকে। সরকারি দলের লোকজন প্রতিপক্ষ হিসেবে বেছে নিয়েছিল প্রশাসন ও বিরোধী দলকে। কিন্তু প্রশাসন বা সরকারি দলের লোকজনকে প্রতিপক্ষ বানানোর মতো অবস্থায় এখনো যায়নি বিরোধী দলের লোকজন। তাই তারা বেছে নিয়েছে নিজেদের দলের লোকজনকেই। কুমিল্লায় দক্ষিণ জেলা যুবদলের সম্মেলন হবে, সেখানকার বিএনপির দুই নেতা প্রস্তুত হয়ে গেলেন কার কত শক্তি তা দেখাতে। মুখে কালো কাপড় বেঁধে পিস্তল, এলজি, রিভলবার নিয়ে গোলাগুলি করে, ককটেল ছুড়ে তাদের লোকজন ভালোই দেখাল! পত্রপত্রিকায় এসবের ছবি ছাপা হয়েছে এবং প্রথম পাতাতেই। টিভি চ্যানেলগুলোও ভালো সময় দিয়েছে দৃশ্যগুলো দেখাতে। পিছিয়ে পড়া বিরোধী দল কিছুটা হলেও এগোল!
অস্ত্রবাজির শক্তি-সামর্থ্য ও ঐতিহ্য যে নষ্ট হয়ে যায়নি, বিরোধী দল যে একেবারে ফুরিয়ে যায়নি, নিজেরা নিজেরা মারামারি করে হলেও তা বুঝিয়ে দিয়েছে। গত আগস্ট মাসে বিএনপি অফিসে মারামারি শুরু হয়েছিল হাতাহাতি দিয়ে, পরে কাজে লাগায় টেবিলে থাকা পিরিচ ও গ্লাস। আর কুমিল্লায় অস্ত্র ও ককটেল। দুই মাসে ভালোই উন্নতি করেছে দলটি! বিরোধী দলের ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। তাই সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের যেসব যোগ্যতা থাকতে হয়, সেসব যে তাদেরও রয়েছে, জনগণকে তা আবার একটু জানান দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছিল। তা না হলে জনগণ হয়তো ভাবতে শুরু করত, সরকারি দল হওয়ার যোগ্যতা বিএনপি হারাতে বসেছে। বর্তমান সরকারি দলের লোকজনের কাজকর্মে এটা মনে হতে শুরু করেছিল যে এ ধরনের কাজে শুধু আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের লোকজনই পারদর্শী। কুমিল্লা বিএনপির দুই নেতাকে ধন্যবাদ, আপনারা আমাদের সেই ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন।
অস্ত্রবাজি ও ককটেলবাজি হলেও যুবদলের সম্মেলন হয়েছে ঠিকমতোই। সেখানে বক্তব্য দিয়েছেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি। তিনি যখন সম্মেলনে যোগ দিতে কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড় এলাকার টাউন হলে ঢুকছিলেন, তখন যুবদলের একটি পক্ষ তার গাড়িবহর লক্ষ্য করে ককটেল ছুড়ে মেরেছে। পুরো এই ঘটনায় রাজনৈতিকভাবেও একটু এগোনোর সুযোগ পেয়েছে বিরোধী পক্ষ। যুবদলের সভাপতি তাঁর ভাষণে বলেছেন, ‘আমি এসেছি, বাজি তো ফুটবেই। দেশ এখন বাজিকরদের দখলে। আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের অন্য দলগুলোর নেতা-কর্মীরাই বাইরে বাজি ফুটিয়েছেন। তাঁরা বাজি ফুটিয়ে আমাদের বরণ করে নিয়েছেন। তাই যুবদলের নেতাদের বাজিকরমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হবে।’ কুমিল্লা বিএনপির দুই নেতা নিশ্চয়ই দলের পক্ষ থেকে পুরস্কৃত হবেন! কারণ তাঁরা নিজেরা অস্ত্রবাজিতে জড়িয়ে না পড়লে আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের নেতা-কর্মীদের দায়ী করে এমন বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ পেতেন কোথায় যুবদলের সভাপতি? আর ‘বাজিকরদের’ হাত থেকে দেশ মুক্ত করার দায়িত্ব যে যুবদলের নেতারা নিয়ে নিয়েছেন, সেটাও আমাদের অজানা থাকত। এমন একটি সৃজনশীল বক্তৃতার উদ্ধৃতি পড়া থেকেও আমরা বঞ্চিত হতাম। কুমিল্লা বিএনপির দুই নেতার প্রতি আবারও কৃতজ্ঞতা!
যেকোনো ঘটনারই নানা দিক থাকে। কুমিল্লার ঘটনারও আছে। পাবনা ও নাটোরের ঘটনার পর সরকারি দল ও তাদের লোকজনের প্রতি পুলিশের পক্ষপাতের যে সন্দেহ আমাদের মনে দেখা দিয়েছিল, এ ঘটনা তা অনেকটাই দূর করেছে। কুমিল্লায় বিএনপি ও যুবদলের এই অস্ত্রবাজির পর মনে হচ্ছে, পুলিশ শুধু সরকারি দলের প্রতিই নরম নয়, বিরোধী দলের প্রতিও সমান নমনীয়। মুখোশ পরে দিনদুপুরে অস্ত্রবাজি হলো, পত্রিকাগুলো ছবি ছাপতে পারল, কিন্তু পুলিশ কাউকেই ধরতে পারল না। নিরপেক্ষতা দেখানোর জন্য পুলিশকেও আমাদের সাধুবাদ!
এ কে এম জাকারিয়া: সাংবাদিক।
akmzakaria@gmail.com
গত আগস্ট মাসে বরিশাল বিএনপির বিরোধ নিয়ে ঢাকায় দলের প্রধান অফিসে হাতাহাতি ও পিরিচ-গ্লাস ছোড়াছুড়ি করে রক্তাক্ত হয়েছে নিজেরা নিজেরা। তবে এখন সরকারি দল ও তাদের সহযোগীদের সময়। তারা যা করার তা করছে। গত কিছুদিনে পাবনায় করেছে, নাটোরে করেছে। সরকারি দল ও তাদের লোকজন এত কিছু করছে, পত্রপত্রিকায় ছবি ছাপা হচ্ছে; বিরোধী দল ও তাদের সহযোগীরা কিছুই করবে না, তা তো হয় না!
সরকারি দলের লোকজন বেছে নিয়েছিল পাবনা ও নাটোরকে, বিরোধী দল বেছে নিল কুমিল্লাকে। সরকারি দলের লোকজন প্রতিপক্ষ হিসেবে বেছে নিয়েছিল প্রশাসন ও বিরোধী দলকে। কিন্তু প্রশাসন বা সরকারি দলের লোকজনকে প্রতিপক্ষ বানানোর মতো অবস্থায় এখনো যায়নি বিরোধী দলের লোকজন। তাই তারা বেছে নিয়েছে নিজেদের দলের লোকজনকেই। কুমিল্লায় দক্ষিণ জেলা যুবদলের সম্মেলন হবে, সেখানকার বিএনপির দুই নেতা প্রস্তুত হয়ে গেলেন কার কত শক্তি তা দেখাতে। মুখে কালো কাপড় বেঁধে পিস্তল, এলজি, রিভলবার নিয়ে গোলাগুলি করে, ককটেল ছুড়ে তাদের লোকজন ভালোই দেখাল! পত্রপত্রিকায় এসবের ছবি ছাপা হয়েছে এবং প্রথম পাতাতেই। টিভি চ্যানেলগুলোও ভালো সময় দিয়েছে দৃশ্যগুলো দেখাতে। পিছিয়ে পড়া বিরোধী দল কিছুটা হলেও এগোল!
অস্ত্রবাজির শক্তি-সামর্থ্য ও ঐতিহ্য যে নষ্ট হয়ে যায়নি, বিরোধী দল যে একেবারে ফুরিয়ে যায়নি, নিজেরা নিজেরা মারামারি করে হলেও তা বুঝিয়ে দিয়েছে। গত আগস্ট মাসে বিএনপি অফিসে মারামারি শুরু হয়েছিল হাতাহাতি দিয়ে, পরে কাজে লাগায় টেবিলে থাকা পিরিচ ও গ্লাস। আর কুমিল্লায় অস্ত্র ও ককটেল। দুই মাসে ভালোই উন্নতি করেছে দলটি! বিরোধী দলের ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। তাই সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের যেসব যোগ্যতা থাকতে হয়, সেসব যে তাদেরও রয়েছে, জনগণকে তা আবার একটু জানান দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছিল। তা না হলে জনগণ হয়তো ভাবতে শুরু করত, সরকারি দল হওয়ার যোগ্যতা বিএনপি হারাতে বসেছে। বর্তমান সরকারি দলের লোকজনের কাজকর্মে এটা মনে হতে শুরু করেছিল যে এ ধরনের কাজে শুধু আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের লোকজনই পারদর্শী। কুমিল্লা বিএনপির দুই নেতাকে ধন্যবাদ, আপনারা আমাদের সেই ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন।
অস্ত্রবাজি ও ককটেলবাজি হলেও যুবদলের সম্মেলন হয়েছে ঠিকমতোই। সেখানে বক্তব্য দিয়েছেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি। তিনি যখন সম্মেলনে যোগ দিতে কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড় এলাকার টাউন হলে ঢুকছিলেন, তখন যুবদলের একটি পক্ষ তার গাড়িবহর লক্ষ্য করে ককটেল ছুড়ে মেরেছে। পুরো এই ঘটনায় রাজনৈতিকভাবেও একটু এগোনোর সুযোগ পেয়েছে বিরোধী পক্ষ। যুবদলের সভাপতি তাঁর ভাষণে বলেছেন, ‘আমি এসেছি, বাজি তো ফুটবেই। দেশ এখন বাজিকরদের দখলে। আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের অন্য দলগুলোর নেতা-কর্মীরাই বাইরে বাজি ফুটিয়েছেন। তাঁরা বাজি ফুটিয়ে আমাদের বরণ করে নিয়েছেন। তাই যুবদলের নেতাদের বাজিকরমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হবে।’ কুমিল্লা বিএনপির দুই নেতা নিশ্চয়ই দলের পক্ষ থেকে পুরস্কৃত হবেন! কারণ তাঁরা নিজেরা অস্ত্রবাজিতে জড়িয়ে না পড়লে আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের নেতা-কর্মীদের দায়ী করে এমন বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ পেতেন কোথায় যুবদলের সভাপতি? আর ‘বাজিকরদের’ হাত থেকে দেশ মুক্ত করার দায়িত্ব যে যুবদলের নেতারা নিয়ে নিয়েছেন, সেটাও আমাদের অজানা থাকত। এমন একটি সৃজনশীল বক্তৃতার উদ্ধৃতি পড়া থেকেও আমরা বঞ্চিত হতাম। কুমিল্লা বিএনপির দুই নেতার প্রতি আবারও কৃতজ্ঞতা!
যেকোনো ঘটনারই নানা দিক থাকে। কুমিল্লার ঘটনারও আছে। পাবনা ও নাটোরের ঘটনার পর সরকারি দল ও তাদের লোকজনের প্রতি পুলিশের পক্ষপাতের যে সন্দেহ আমাদের মনে দেখা দিয়েছিল, এ ঘটনা তা অনেকটাই দূর করেছে। কুমিল্লায় বিএনপি ও যুবদলের এই অস্ত্রবাজির পর মনে হচ্ছে, পুলিশ শুধু সরকারি দলের প্রতিই নরম নয়, বিরোধী দলের প্রতিও সমান নমনীয়। মুখোশ পরে দিনদুপুরে অস্ত্রবাজি হলো, পত্রিকাগুলো ছবি ছাপতে পারল, কিন্তু পুলিশ কাউকেই ধরতে পারল না। নিরপেক্ষতা দেখানোর জন্য পুলিশকেও আমাদের সাধুবাদ!
এ কে এম জাকারিয়া: সাংবাদিক।
akmzakaria@gmail.com
No comments