ভর্তিযুদ্ধ-প্রথম শ্রেণীর ভর্তিতে লটারি চাই by সিদ্দিকুর রহমান খান
প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির জন্য প্রচলিত পরীক্ষাটিকে যদি পরীক্ষা না বলে শিশু নির্যাতনের আয়োজন বলি, তাতে ভুক্তভোগী মানুষমাত্রই একমত পোষণ করবেন। আর এটা তো সবারই জানা যে তদবির-ঘুষ-দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি-ক্ষমতার দাপটসহ এমন কোনো দাওয়া নেই, যার চর্চা কাঙ্ক্ষিত বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য হয় না।
চলমান এই দুর্বিষহ অবস্থা থেকে বিবেকবান ও শিক্ষাসচেতন অভিভাবক-শিক্ষাবিদ-শিক্ষকমাত্রই মুক্তি পেতে চান—এটাও বোধ করি সত্য। অন্য অনেক বিষয়ের মতোই শিক্ষাব্যবস্থাও পরিবর্তনশীল। সুতরাং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অধিকতর শ্রেয় ও গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি অবলম্বন করাই তো সবার কাম্য। ইতিমধ্যে ভিকারুননিসা নূন বিদ্যালয় লটারির মাধ্যমে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ১৪ অক্টোবর প্রথম আলোয় প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে এবং খবরের মূল সুর ছিল—ভর্তি পরীক্ষা বাদ দিয়ে অন্তত প্রথম শ্রেণীতে লটারির পদ্ধতি চালু করা যেতে পারে।
বর্তমান ভর্তি পরীক্ষায় কিছু পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: ১. বয়সের তুলনায় অনেক বেশি কঠিন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়া। এর প্রস্তুতি নিতে শিশুরা নির্যাতিত হচ্ছে এবং পরীক্ষাভীতি তৈরি হচ্ছে। ২. কাঙ্ক্ষিত প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য দুর্নীতি ছাড়াও প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার দাপটে তটস্থ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার মাধ্যমে শুধু সেরা শিশুকেই বাছাই করে ভর্তির নিশ্চয়তা দিতে পারে না। ৩. তুমুল প্রতিযোগিতার কারণে একাধিকবার ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে বছর নষ্ট করে। ৪. নাম-ডাকহীন অনেক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়া শেষ করার পরেও অনেক শিশুকে তার অভিভাবকের পছন্দের প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি করানো হয়। ৫. এর ফলে কেউ পাঁচ বছরে আবার কেউ আট বছরে প্রথম শ্রেণীতে পড়ছে এবং সহপাঠীদের মধ্যে বয়স ও পরিপক্বতার পার্থক্য হচ্ছে। ৬. ভর্তি পরীক্ষার উপযোগী করাতে অভিভাবকদের কোচিংয়ে দৌড়ঝাঁপ, চোখরাঙানি ও গৃহশিক্ষকের ধমক খেয়ে শিশুর শৈশব নষ্ট হচ্ছে। ৭. অনেক অভিভাবক শিশুকে ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করাতে গিয়ে শারীরিক নির্যাতনও করেন এবং পরবর্তী সময়ে অপরাধবোধে ভোগেন।
দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেন এবং বর্তমান বাছাই পরীক্ষার পদ্ধতিটা যে নির্যাতনের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, এসব নিয়ে উদ্বিগ্ন বেশ কয়েকজন অভিভাবক ও শিক্ষকের সঙ্গে আলাপ করেছি গত কয়েক মাসে। সম্মানিত অভিভাবকদের অনেকেই মোটামুটি একমত যে প্রচলিত ব্যবস্থা বাদ দিয়ে নতুন পদ্ধতি হিসেবে লটারির ব্যবস্থাকে গ্রহণ করা যায়। কেউ কেউ অবশ্য লটারিকে অবৈজ্ঞানিকও বলেছেন। আবার বিদ্যালয়ের মান কমে যাবে বলে মত আছে। কারণ হিসেবে বলেছেন, লটারি হলে বেছে বেছে শিশু ভর্তি করা যাবে না। কেউ কেউ বলেছেন, বর্তমান পদ্ধতি বহাল থাকতে হবে; কারণ অপেক্ষাকৃত পরিপক্ব ও মেধাবী শিশু ভর্তি করে পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে ভালো ফলাফলের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।
লটারিতে ভর্তি হলে বিদ্যালয়ের মান কমে যাবে—এমন মতামতদানকারী অভিভাবকদের প্রশ্ন করেছিলাম, বর্তমান ভর্তি পদ্ধতিতে কি সর্বোৎকৃষ্ট শিশুকে বাছাই করা হচ্ছে? জুতসই জবাব মেলেনি। নিচের শ্রেণীতে অপদার্থ, ওপরের শ্রেণীতে যথাযোগ্য—এমন ছাত্র অসংখ্য যুগে যুগে দেশে দেশে। বিশ্বশ্রেষ্ঠ বহু বিজ্ঞানী নিচের ক্লাসে অপদার্থ হিসেবে ভূষিত হয়েছেন।
যাঁরা ‘অবৈজ্ঞানিক’ বলেছেন, তাঁদের কাছে প্রশ্ন রাখি, পাঁচ-ছয় বছরের শিশুর ওপর এই ‘নিপীড়ন’ কোন বিজ্ঞানসিদ্ধ বিষয়? কোনো কিছু না শিখিয়েই একটা শিশুকে কোন যুক্তিতে একটা পরীক্ষায় বসতে বলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ?
বর্তমান পদ্ধতিতে যে পাঁচ-ছয় বছরের কয়েক ডজন শিশুকে একটি অপরিচিত কক্ষের ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে আধা বা এক ঘণ্টার পরীক্ষা নিয়ে তাদের মেধা নির্বাচন—এটাও প্রশ্নবিদ্ধ। হঠাৎ একটি নির্দিষ্ট পরীক্ষার সাহায্যে এসব শিশুর তুলনামূলক মেধার বিচার করা কি আদৌ বৈজ্ঞানিক?
ভর্তি মৌসুমে বিভিন্ন মিডিয়ায় পরীক্ষা হলে ও হলের বাইরে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি-ইচ্ছুক শিশুদের কিছু ছবি দেখা যায়, যা বিবেককে নাড়া দেয় অনেকেরই। ১৬-১৭ বছর বয়সে এসএসসি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়ে প্রথম দিন পরীক্ষা হলে কার কী অবস্থা হয়েছিল, আমাদের অনেকেই তা ভুলে যাইনি।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে, শুধু সেরা শিশু ভর্তি করে পাবলিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করাবে, তাহলে আমার প্রশ্ন, এখানে বিদ্যালয়ের ভূমিকা কী? লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত করে ভালো-খারাপ মিশ্রণে যদি অনেকগুলো বিদ্যালয় কাছাকাছি ফল লাভ করে পাবলিক পরীক্ষায়, তাতে সমমানের ও সমখ্যাতির বিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়বে এবং সবাই ভিকারুননিসা কিংবা আইডিয়ালে ভর্তির জন্য মরিয়া হবে না। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মতো শাখা খুলবে না ভালো বিদ্যালয়গুলো। কয়েক ডজন ভিকারুননিসা ও আইডিয়াল তৈরি হবে।
সব স্কুলের মান কাছাকাছি হলে উন্নত দেশের মতো ‘স্কুল জোনিং’, মানে যার যার এলাকার স্কুলে সংশ্লিষ্ট এলাকার শিক্ষার্থীরা ভর্তি হবে—এমন পদ্ধতি চালু করা যাবে।
বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ওয়াইডব্লিউসিএ, হলিক্রস, এসওএস হারমেন মেইনারসহ কয়েকটি স্কুলে চালু হয়েছে লটারির মাধ্যমে ভর্তি। এসব বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের ওপর রাজনৈতিক চাপ আছে লটারি বাদ দিয়ে স্থানীয় রাজনীতিবিদদের পছন্দের তালিকা অনুযায়ী ভর্তি করানোর। কিন্তু ইতিমধ্যে অন্তত কয়েক হাজার শিশু ও অভিভাবক লটারির সুফল ভোগ করতে শুরু করেছেন বলে জানা যায়। পত্রিকান্তরে জানা গেছে, ভিকারুননিসা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য মোট আসনের ৯০ শতাংশ লটারির মাধ্যমে বাছাই করার চিন্তা করছে।
প্রতিবেশী ভারতের নয়াদিল্লি, পশ্চিমবঙ্গসহ কয়েকটি এলাকায় নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি এবং ইংল্যান্ডে ২০০৮ সাল থেকে প্রচলিত হয়েছে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি। দিনে দিনে এই ব্যবস্থা অধিকতর কার্যকর হয়েছে বলে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়।
আমাদের দেশে লটারির পদ্ধতি দুর্নীতিমুক্ত ও স্বচ্ছ রাখতে বুয়েটের সাহায্য নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
আর মাত্র এক মাস পরই শুরু হবে ২০১১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তির প্রক্রিয়া। পরীক্ষামূলকভাবে যদি সারা দেশের সরকারি ৩১৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লটারির পদ্ধতি চালু হয় এবং পর্যায়ক্রমে যদি দেশের সব বিদ্যালয়ে চালু করা যায়, তাহলে শিশু নির্যাতন বন্ধ হবে; দুর্নীতির মাধ্যমে ভর্তি হয়ে নিষ্পাপ শিশুর শিক্ষাজীবন শুরু হওয়ার এই চলমান প্রক্রিয়া থেমে গিয়ে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে আমাদের আশা।
সিদ্দিকুর রহমান খান: সাংবাদিক।
srkhaan@gmail.com
বর্তমান ভর্তি পরীক্ষায় কিছু পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: ১. বয়সের তুলনায় অনেক বেশি কঠিন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়া। এর প্রস্তুতি নিতে শিশুরা নির্যাতিত হচ্ছে এবং পরীক্ষাভীতি তৈরি হচ্ছে। ২. কাঙ্ক্ষিত প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য দুর্নীতি ছাড়াও প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার দাপটে তটস্থ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার মাধ্যমে শুধু সেরা শিশুকেই বাছাই করে ভর্তির নিশ্চয়তা দিতে পারে না। ৩. তুমুল প্রতিযোগিতার কারণে একাধিকবার ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে বছর নষ্ট করে। ৪. নাম-ডাকহীন অনেক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়া শেষ করার পরেও অনেক শিশুকে তার অভিভাবকের পছন্দের প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি করানো হয়। ৫. এর ফলে কেউ পাঁচ বছরে আবার কেউ আট বছরে প্রথম শ্রেণীতে পড়ছে এবং সহপাঠীদের মধ্যে বয়স ও পরিপক্বতার পার্থক্য হচ্ছে। ৬. ভর্তি পরীক্ষার উপযোগী করাতে অভিভাবকদের কোচিংয়ে দৌড়ঝাঁপ, চোখরাঙানি ও গৃহশিক্ষকের ধমক খেয়ে শিশুর শৈশব নষ্ট হচ্ছে। ৭. অনেক অভিভাবক শিশুকে ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করাতে গিয়ে শারীরিক নির্যাতনও করেন এবং পরবর্তী সময়ে অপরাধবোধে ভোগেন।
দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেন এবং বর্তমান বাছাই পরীক্ষার পদ্ধতিটা যে নির্যাতনের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, এসব নিয়ে উদ্বিগ্ন বেশ কয়েকজন অভিভাবক ও শিক্ষকের সঙ্গে আলাপ করেছি গত কয়েক মাসে। সম্মানিত অভিভাবকদের অনেকেই মোটামুটি একমত যে প্রচলিত ব্যবস্থা বাদ দিয়ে নতুন পদ্ধতি হিসেবে লটারির ব্যবস্থাকে গ্রহণ করা যায়। কেউ কেউ অবশ্য লটারিকে অবৈজ্ঞানিকও বলেছেন। আবার বিদ্যালয়ের মান কমে যাবে বলে মত আছে। কারণ হিসেবে বলেছেন, লটারি হলে বেছে বেছে শিশু ভর্তি করা যাবে না। কেউ কেউ বলেছেন, বর্তমান পদ্ধতি বহাল থাকতে হবে; কারণ অপেক্ষাকৃত পরিপক্ব ও মেধাবী শিশু ভর্তি করে পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে ভালো ফলাফলের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।
লটারিতে ভর্তি হলে বিদ্যালয়ের মান কমে যাবে—এমন মতামতদানকারী অভিভাবকদের প্রশ্ন করেছিলাম, বর্তমান ভর্তি পদ্ধতিতে কি সর্বোৎকৃষ্ট শিশুকে বাছাই করা হচ্ছে? জুতসই জবাব মেলেনি। নিচের শ্রেণীতে অপদার্থ, ওপরের শ্রেণীতে যথাযোগ্য—এমন ছাত্র অসংখ্য যুগে যুগে দেশে দেশে। বিশ্বশ্রেষ্ঠ বহু বিজ্ঞানী নিচের ক্লাসে অপদার্থ হিসেবে ভূষিত হয়েছেন।
যাঁরা ‘অবৈজ্ঞানিক’ বলেছেন, তাঁদের কাছে প্রশ্ন রাখি, পাঁচ-ছয় বছরের শিশুর ওপর এই ‘নিপীড়ন’ কোন বিজ্ঞানসিদ্ধ বিষয়? কোনো কিছু না শিখিয়েই একটা শিশুকে কোন যুক্তিতে একটা পরীক্ষায় বসতে বলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ?
বর্তমান পদ্ধতিতে যে পাঁচ-ছয় বছরের কয়েক ডজন শিশুকে একটি অপরিচিত কক্ষের ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে আধা বা এক ঘণ্টার পরীক্ষা নিয়ে তাদের মেধা নির্বাচন—এটাও প্রশ্নবিদ্ধ। হঠাৎ একটি নির্দিষ্ট পরীক্ষার সাহায্যে এসব শিশুর তুলনামূলক মেধার বিচার করা কি আদৌ বৈজ্ঞানিক?
ভর্তি মৌসুমে বিভিন্ন মিডিয়ায় পরীক্ষা হলে ও হলের বাইরে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি-ইচ্ছুক শিশুদের কিছু ছবি দেখা যায়, যা বিবেককে নাড়া দেয় অনেকেরই। ১৬-১৭ বছর বয়সে এসএসসি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়ে প্রথম দিন পরীক্ষা হলে কার কী অবস্থা হয়েছিল, আমাদের অনেকেই তা ভুলে যাইনি।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে, শুধু সেরা শিশু ভর্তি করে পাবলিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করাবে, তাহলে আমার প্রশ্ন, এখানে বিদ্যালয়ের ভূমিকা কী? লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত করে ভালো-খারাপ মিশ্রণে যদি অনেকগুলো বিদ্যালয় কাছাকাছি ফল লাভ করে পাবলিক পরীক্ষায়, তাতে সমমানের ও সমখ্যাতির বিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়বে এবং সবাই ভিকারুননিসা কিংবা আইডিয়ালে ভর্তির জন্য মরিয়া হবে না। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মতো শাখা খুলবে না ভালো বিদ্যালয়গুলো। কয়েক ডজন ভিকারুননিসা ও আইডিয়াল তৈরি হবে।
সব স্কুলের মান কাছাকাছি হলে উন্নত দেশের মতো ‘স্কুল জোনিং’, মানে যার যার এলাকার স্কুলে সংশ্লিষ্ট এলাকার শিক্ষার্থীরা ভর্তি হবে—এমন পদ্ধতি চালু করা যাবে।
বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ওয়াইডব্লিউসিএ, হলিক্রস, এসওএস হারমেন মেইনারসহ কয়েকটি স্কুলে চালু হয়েছে লটারির মাধ্যমে ভর্তি। এসব বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের ওপর রাজনৈতিক চাপ আছে লটারি বাদ দিয়ে স্থানীয় রাজনীতিবিদদের পছন্দের তালিকা অনুযায়ী ভর্তি করানোর। কিন্তু ইতিমধ্যে অন্তত কয়েক হাজার শিশু ও অভিভাবক লটারির সুফল ভোগ করতে শুরু করেছেন বলে জানা যায়। পত্রিকান্তরে জানা গেছে, ভিকারুননিসা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য মোট আসনের ৯০ শতাংশ লটারির মাধ্যমে বাছাই করার চিন্তা করছে।
প্রতিবেশী ভারতের নয়াদিল্লি, পশ্চিমবঙ্গসহ কয়েকটি এলাকায় নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি এবং ইংল্যান্ডে ২০০৮ সাল থেকে প্রচলিত হয়েছে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি। দিনে দিনে এই ব্যবস্থা অধিকতর কার্যকর হয়েছে বলে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়।
আমাদের দেশে লটারির পদ্ধতি দুর্নীতিমুক্ত ও স্বচ্ছ রাখতে বুয়েটের সাহায্য নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
আর মাত্র এক মাস পরই শুরু হবে ২০১১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তির প্রক্রিয়া। পরীক্ষামূলকভাবে যদি সারা দেশের সরকারি ৩১৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লটারির পদ্ধতি চালু হয় এবং পর্যায়ক্রমে যদি দেশের সব বিদ্যালয়ে চালু করা যায়, তাহলে শিশু নির্যাতন বন্ধ হবে; দুর্নীতির মাধ্যমে ভর্তি হয়ে নিষ্পাপ শিশুর শিক্ষাজীবন শুরু হওয়ার এই চলমান প্রক্রিয়া থেমে গিয়ে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে আমাদের আশা।
সিদ্দিকুর রহমান খান: সাংবাদিক।
srkhaan@gmail.com
No comments