রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে দুর্নীতির ব্যাপকতায় উদ্বেগ টিআইবির

রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। ঢাকায় গত শনিবার টিআইবির সদস্যদের বার্ষিক সভা শেষে প্রকাশিত ঘোষণাপত্রে এই উদ্বেগের কথা বলা হয়।


ঘোষণাপত্রে দুর্নীতি প্রতিরোধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। একই সঙ্গে দুর্নীতির মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে স্বতন্ত্র বিচার বেঞ্চ গঠনের দাবি জানিয়েছে টিআইবি।
টিআইবির বার্ষিক এই সভায় পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের করা দুর্নীতির অভিযোগ, রেলওয়েতে নিয়োগ নিয়ে সম্প্রতি ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ ও বিভিন্ন সরকারি নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় অর্থ লেনদেনের অভিযোগের স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করা হয়। একই সঙ্গে সুন্দরবনসহ দেশের অন্যান্য সংরক্ষিত বনাঞ্চল, ভূমিসম্পদ ও তেল-গ্যাসসহ সব ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের ক্রয়-প্রক্রিয়ায় সব ধাপে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
বার্ষিক সদস্য সভায় টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক চেয়ারপারসন এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, টিআইবি বাংলাদেশের কয়েকটি অঞ্চলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোয় সততার অঙ্গীকারনামা নামে একটি কার্যক্রম শুরু করেছে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতিমুক্ত ঘোষণা করা যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের বর্তমান চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল নিজ নিজ অবস্থান থেকে সাহসের সঙ্গে দুর্নীতি মোকাবিলায় এগিয়ে আসতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
সভায় অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবির সদস্য রোকেয়া আফজাল রহমান ও এ টি এম শামসুল হুদা। ট্রাস্টি বোর্ডের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য মো. নুরুদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় সঞ্চালনা করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। সভার শুরুতে টিআইবির সাবেক দুই চেয়ারপারসন স্যামসন এইচ চৌধুরী ও অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সভার ঘোষণাপত্রে দ্বান্দ্বিক রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে সুষ্ঠু বিচারিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পন্ন করা ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পূর্ণ বাস্তবায়নের দাবি করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাম্প্রতিক ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চাঁদাবাজি, টেন্ডার দখল ও পরিবেশবিনাশী কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করা হয়। দেশজুড়ে যোগাযোগ খাতের বেহাল অবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করে যোগাযোগ খাতের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হয়।
টিআইবির এই সভায় অর্থনীতিতে কালোটাকার প্রভাব নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করে নিত্য ব্যবহার্য পণ্যের মূল্য ক্রয়সীমার মধ্যে রাখতে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের প্রভাব হ্রাসে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও পুঁজিবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ সুরক্ষার আহ্বান জানানো হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় গঠিত সব তহবিলের ব্যবহারে এবং এ-সংক্রান্ত প্রকল্পের সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে বাস্তবায়ন-প্রক্রিয়ার সব ধাপে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।
এ ছাড়া সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সংলাপের মাধ্যমে সব বিরোধপূর্ণ বিষয়ের সমাধানে রাজনৈতিক মতৈক্যের ওপর গুরুত্বারোপ এবং সব আদিবাসী, প্রতিবন্ধী ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকারের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছেন টিআইবির সদস্যরা।

No comments

Powered by Blogger.