সত্য মিথ্যা তর্ক বিতর্ক কুতর্ক by তাওহিদ মিলটন

সরকারি নেতা: গত মেয়াদে আমাদের সরকারের সময়ে দেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে গিয়েছিল।
বিরোধী নেতা: ভাগ্যিস আমরা সময়মতো ক্ষমতায় এসে দেশটাকে ভেসে যাওয়া থেকে রক্ষা করেছিলাম।
সরকারি নেতা: কিন্তু আপনি বোধহয় জানেন না এখন দেশে সত্যিকারের উন্নয়ন চলছে।


বিরোধী নেতা: আপনার কথাটা মিথ্যা।
সরকারি নেতা: প্রমাণ দিন।
বিরোধী নেতা: কী?
সরকারি নেতা: মিথ্যা!
বিরোধী নেতা: এটা প্রমাণ দেওয়ার কী আছে; আমরা জানি, দেশের জনগণ জানে।
সরকারি নেতা: তার মানে আপনারা আর জনগণ যা জানে সবই মিথ্যা!
বিরোধী নেতা: আমি সেটা বলিনি! তারা আপনাদের সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানে না!
সরকারি নেতা: সঠিক কোনটি?
বিরোধী নেতা: যা তারা জানে না!
সরকারি নেতা: তারা কী জানে না!
বিরোধী নেতা: যা সত্যি!
সরকারি নেতা: সেটা কী?
বিরোধী নেতা: সত্যিটা হচ্ছে আপনারা দেশের মানুষকে সত্যিটা জানতে দিচ্ছেন না। যা জানাচ্ছেন তা মিথ্যা!
সরকারি নেতা: আপনি নিশ্চিত?
বিরোধী নেতা: শতভাগ নিশ্চিত!
সরকারি নেতা: কী করে এতটা নিশ্চিত হলেন!
বিরোধী নেতা: কী আশ্চর্য! আমরা কি ক্ষমতায় ছিলাম না নাকি!!
সরকারি নেতা: তার মানে আপনারা ক্ষমতায় গিয়ে জনগণকে অনেক কিছু জানতে দিতেন না?
বিরোধী নেতা: সেটা নিয়ে জনগণের কোনো মাথাব্যথা নেই।
সরকারি নেতা: কেন জনগণের মাথাব্যথা থাকবে না!
বিরোধী নেতা: কী আশ্চর্য! জনগণ যা জানে না তা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা থাকবে কী করে!
সরকারি নেতা: জনগণ কী জানে না?
বিরোধী নেতা: যা তাদের কোনো সরকারই জানতে দেয় না!
সরকারি নেতা: তার মানে স্বীকার করলেন, আপনারা ক্ষমতায় থাকাকালীন জনগণকে এ রকম অনেক কিছু জানতে দেননি!
বিরোধী নেতা: আমরা একা না, আমি সব সরকারের কথাই বলেছি।
সরকারি নেতা: আপনি এক দলের হয়ে অন্য দলের ভেতরের খবর বলেন কী করে!
বিরোধী নেতা: আরে ভাই, বলি বলেই তো আমি এখন অন্য দলে!
সরকারি নেতা: তার মানে আপনি যা করছেন তা আপনার আগের দলের প্রতি প্রতারণা?
বিরোধী নেতা: দেশের জন্য বড় স্বার্থে ছোট ছোট স্বার্থ ত্যাগ করা যায়!
সরকারি নেতা: তার মানে আপনার ধারণা আপনি দেশের জন্য একজন স্বার্থত্যাগী নেতা!
বিরোধী নেতা: ধারণা নয়, সত্যি!
সরকারি নেতা: সে রকমটা তো আমরাও ভাবি!
বিরোধী নেতা: ভাবলেই কি সব হয়ে যায়?
সরকারি নেতা: কিন্তু আপনিও তো বিষয়টা ভেবে নিয়েছেন!
বিরোধী নেতা: আচ্ছা আপনি কেন চাকরি-বাকরি না করে রাজনীতিতে এসেছেন!
সরকারি নেতা: ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল একদিন বড় হয়ে বড় ব্যবসায়ী হব...
বিরোধী নেতা: তার জন্য রাজনীতি বেছে নিলেন! তা ক্ষমতায় গিয়ে কিসের ব্যবসা করছেন? দেশের!
সরকারি নেতা: দেখুন, পলিটিকস ও বিজনেসকে এখন আর আপনি আলাদা করতে পারবেন না।
বিরোধী নেতা: কেন পারব না?
সরকারি নেতা: কারণ বড় বড় ব্যবসায়ীই এখন আপনাদের দলে!
বিরোধী নেতা: আর আপনাদের দলের সবাই এখন বড় বড় ব্যবসায়ী! তফাত এই?
সরকারি নেতা: ঠিক ধরেছেন!
বিরোধী নেতা: কিন্তু সেটা কীভাবে সম্ভব হলো!
সরকারি নেতা: সরকার তার সব সিক্রেট জনগণের সামনে তুলে ধরতে বাধ্য, বিরোধী দলের কাছে নয়!
বিরোধী নেতা: ক্ষমতায় না যাওয়া পর্যন্ত আমিও এখন দেশের একজন মানুষ।
সরকারি নেতা: কিন্তু আপনার মধ্যে ক্ষমতায় যাওয়ার একটা লোভ কাজ করে, অন্য জনগণের সেটা করে না।
বিরোধী নেতা: কিন্তু আমি তো একদিন আবার ক্ষমতায় যাব!
সরকারি নেতা: ক্ষমতায় কেন যাবেন?
বিরোধী নেতা: দেশের মানুষের মঙ্গল করতে। দেশের উন্নয়ন করতে।
সরকারি নেতা: সেটা কি ক্ষমতায় না গিয়ে করা যায় না?
বিরোধী নেতা: সেটা যদি যেত তাহলে আপনারা ক্ষমতায় গেলেন কেন?
সরকারি নেতা: আমরা ক্ষমতায় এসেছি, আপনাদের হাত থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করতে!
বিরোধী নেতা: কিন্তু তার আগেরবার তো আমরাও ক্ষমতায় আসার আগে এই কথাটাই বলেছিলাম! আপনি নকল করছেন!
সরকারি নেতা: একই প্রশ্নের একই উত্তর দুই সময়ে দুজন লিখলে তাকে নকল বলে না।
বিরোধী নেতা: কিন্তু সময়ের আবর্তে একই প্রশ্ন বারবার আসাটাও স্বাভাবিক নয়।
সরকারি নেতা: কিন্তু জনগণের মাথায় নতুন কোনো প্রশ্নের উদ্রেক করার সুযোগ না দেওয়ার কৃতিত্বটা কিন্তু পলিটিশিয়ানদেরই।
বিরোধী নেতা: তার মানে আমরা একে অপরের হাত থেকে দেশ ও দেশের মানুষের বিপর্যয় ঠেকিয়েই দেশের উন্নয়ন করছি।
সরকারি নেতা: ঠিকই ধরেছেন, আমরা বিপর্যয় ঠেকাচ্ছি, আর জনগণ যার যার উন্নয়ন করবে।
বিরোধী নেতা: বাহ! নতুন কিছু শিখলাম!
সরকারি নেতা: শিখে কী হবে?
বিরোধী নেতা: পরেরবার ক্ষমতায় এসে কাজে লাগাব।
সরকারি নেতা: কী শিখলেন!
বিরোধী নেতা: বিরোধী দল তার দলের গোপন কথা সরকারকে বলতে বাধ্য নয়!
সরকারি নেতা: কিন্তু সরকার সে কথা কীভাবে বের করতে হয় সেটা জানে! এখন কী করবেন?
বিরোধী নেতা: আর কি, পরের নির্বাচন আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করব! ক্ষমতায় গিয়ে নতুন যা যা শিখেছি কাজে লাগাব।
সরকারি নেতা: তার মানে আমরা এখনো শিখছি?
বিরোধী নেতা: বিরোধী দল শিখছে ক্ষমতায় গিয়ে কীভাবে বিরোধী দলের মেরুদণ্ড নিয়ে খেলা করা যায়, আর সরকারি দল শিখছে এর পরও কীভাবে মেরুদণ্ড সোজা রাখা যায়।
পাঠক এই চলে আসছে বহু বছর ধরে। আর কত দিন চলবে কে জানে!!

No comments

Powered by Blogger.