শ্রদ্ধাঞ্জলি-অন্তরে-বাহিরে সৎ একজন মানুষ by মূহ. আব্দুর রহীম খান
ড. নীলিমা ইব্রাহিমকে স্মরণ করা দরকার এই কারণে যে তিনি সৎ ছিলেন অন্তরে-বাহিরে। তাঁর সমগ্র কর্ম, চিন্তা-চেতনা, আরাধনাজুড়ে ছিল মানুষের কল্যাণ। মানুষের চেয়ে বড় কিছুতে তিনি বিশ্বাস করতেন না। এ পৃথিবীতেই তিনি দৃপ্ত পদভারে মুখরিত করে গেছেন দীর্ঘ ৮১ বছর। আজ তাঁর দশম মৃত্যুবার্ষিকী।
প্রগতি ও মুক্তবুদ্ধি আন্দোলনের অন্যতম প্রধান পথিকৃৎ এ মানুষটি শুধু একজন প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, গবেষক, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট কিংবা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নারীনেত্রীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন শোষিত, নির্যাতিত ও মেহনতি মানুষের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর।
বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষপর্বে ষাটের দশকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ফুলার রোডে অবস্থিত তাঁর বাড়িটি সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী ত্যাগী ছাত্র ও নেতা-কর্মীদের নিরাপদ অভয়ারণ্য। জননীর মতো স্নেহ, মমতায় তিনি তাঁদের আপন সন্তানের মতোই আগলে রেখেছিলেন—নিজ সন্তান উপবাসে সারা রাত ছটফট করেছেন, কিন্তু এঁরা কোনো দিন অভুক্ত থাকেননি। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে এঁদের প্রায় প্রত্যেকেই মন্ত্রী হয়েছেন, ডাকসাইটে জাতীয় নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন, ক্ষমতার আস্বাদনে ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন। গত ৪০ বছরে এ দেশে কোটিপতি হয়েছেন প্রায় ২৪ হাজার জন, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ ও সবচেয়ে বিশ্বস্তজন হওয়া সত্ত্বেও মৃত্যুর আগ মুহূর্তেও তিনি লাখপতি হওয়ার গৌরব অর্জনে সক্ষম হননি। আসলে কোনো কিছুর প্রত্যাশায় কিংবা কোনো কিছু প্রাপ্তির জন্য তিনি কিছু করেননি।
তিনি রাজনীতি করেননি এবং কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টও ছিলেন না। ১৯৭৪ সালের শেষার্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তাঁকে সরাসরি প্রশ্ন করেছিলেন, ‘রাজনীতি করবেন?’ তিনি স্পষ্ট জবাব দিয়েছিলেন, ‘না।’ ‘কেন?’ ‘বুঝি না, আমি মাস্টার, হ্যাঁ বললে হ্যাঁ আর না বললে না বুঝি। আমার পক্ষে রাজনীতি করা সম্ভব নয়।’ বঙ্গবন্ধু গম্ভীর হয়ে উঠে দাঁড়িয়েছিলেন, অনুরোধ করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে। বঙ্গবন্ধু জানিয়েছিলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তিনি অনেক টাকা বরাদ্দ করেছেন, কারও ওপর নির্ভর করতে পারছেন না, তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব তিনি (ড. নীলিমা ইব্রাহিম) নিলে বঙ্গবন্ধু অনেকটা আশ্বস্ত হতে পারতেন। তিনি সবিনয়ে সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, বলেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধু, প্রথমত আমি শিক্ষক হিসেবে মরতে চাই। শেষ যাত্রার সম্মানটুকুর প্রতি আমার লোভ...।’ এ ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় নিহত রাষ্ট্রপতি-জায়া বেগম আইভি রহমান ও বর্তমান রাষ্ট্রপতি স্বয়ং। মনে হয়, তাঁর আশঙ্কা অমূলক ছিল না, তবে মৃত্যুর পর একজন শিক্ষক হিসেবে তাঁর অসংখ্য ছাত্রছাত্রী অন্তর থেকে সব শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা ঢেলে তাঁকে শেষ সম্মানটুকু জানিয়েছিলেন।
নীলিমা ইব্রাহিম ১৯৫৬ সালের জুন মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগ দেন। জন্মতারিখ সম্পর্কে মাতার এফিডেভিট উপেক্ষা করে ম্যাট্রিক পাসের সময় বয়স ১৬ বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট ১৯৭৯ সালের ৩০ জুন তাঁর অবসর ঘোষণা করে। অতঃপর ১৯৭৯ সালের ১ জুলাই থেকে ১৯৮২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত তিনি বাংলা বিভাগের সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে শিক্ষকতা জীবনের সমাপ্তি টানেন। লক্ষণীয়, জাতির পিতাকে নৃশংসভাবে হত্যার পর এ দেশে যে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়, তার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর প্রতি যে আচরণ করেছে, তা কোনো দৃষ্টিকোণ থেকেই সম্মানজনক ছিল না। মিথ্যা অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন কর্তৃপক্ষ বারবার তাঁকে মানসিকভাবে উৎপীড়নের চেষ্টা করেছে, যদিও কোনো অভিযোগই পরে প্রমাণিত হয়নি।
যে মানুষগুলো এখন দেশ পরিচালনা করছেন, তাঁরা সবাই জানেন, এ দেশের স্বাধিকার আন্দোলন, মুক্তিসংগ্রাম, নারীসমাজের জাগরণ—সমাজের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে শুভ বোধ সৃষ্টিতে তাঁর কী অবদান—তাঁরা যে কেন এতটা নির্লিপ্ত! এ মানুষগুলো যখন অবসর নেবেন কিংবা নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবেন, তখন নীলিমা ইব্রাহিম কে ছিলেন, এ পরিচয়টুকু তুলে ধরার মতো কেউ থাকবে না।
বাংলা ভাষা এবং সাহিত্যের উন্নয়ন ও বিকাশে নীলিমা ইব্রাহিম কী করেছেন, জেনারেল টিক্কা খানের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দেশের মাটিতে বসে তিনি কীভাবে মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করেছেন, স্বাধীনতার পর ধর্ষিত হতভাগ্য নারীদের পুনর্বাসনের জন্য, সতীর্থ অধ্যাপকদের লাশ খুঁজে পাওয়ার জন্য, শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান নির্মাণের জন্য, জাতির পিতার জন্মদিনটি জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে উদ্যাপনের জন্য, কিংবা স্বাধীনতা-উত্তর নাট্য আন্দোলনকে অঙ্কুরোদ্গম অবস্থা থেকে মহীরুহে পরিণত করার জন্য তিনি কী করেছেন, তা বিস্মৃতির অতল অন্ধকারে হারিয়ে যাবে।
ইদানীংকালে চেয়ার দখলকারী মানুষগুলো চেয়ারগুলোর চেয়ে ছোট হয়ে যাচ্ছে। সম্মানিত মানুষগুলোকে অসম্মানিত করার একটা অশুভ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। পুরো সমাজটাই কেমন যেন অপরাধগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে। কত কায়দা করে মিথ্যা কথা বলা যায়, কত অনৈতিকভাবে দ্রুত বিত্ত-বৈভবের মালিক হওয়া যায় এবং কত রকম উপায়ে মানুষ খুন ও গুম করা যায়, প্রতিনিয়ত তার অনুশীলন চলছে। মহা অমানিশার অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়ার এ মুহূর্তে নীলিমা ইব্রাহিমের মতো একজন মানুষের বড় প্রয়োজন ছিল।
নীলিমা ইব্রাহিম নানা পরিচয়ে বিধৃত—শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, সমাজসেবী, সংস্কৃতিবিদ, সংস্কৃতিসেবী, নারী সংগঠক ও মুক্তবুদ্ধির চিন্তক। কোন পরিচয়ের চেয়ে কোন পরিচয় বড়, সেটা নির্ণয় করা খুবই কঠিন। তাঁর অপরাধ ছিল, তিনি অনেককে পেছনে ফেলে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিলেন ব্যক্তিগত জ্ঞান ও প্রজ্ঞাকে সম্বল করে। সত্য ও ন্যায়ের প্রতি স্থির, অবিচল এ মানুষটি দেশ, জাতি, সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি ইত্যাদি যাবতীয় ধারণাকে নিজের মতো করে বিশ্লেষণ করেছিলেন। নিজের কণ্ঠকে উচ্চারিত করেছিলেন স্বতন্ত্রভাবে। শুচিশুদ্ধ, রুচিঋদ্ধ, মমতাস্নিগ্ধ সর্বদা মায়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ এ মানুষটি সারা জীবন মঙ্গলের, কল্যাণের, মানবিকতার, অসাম্প্রদায়িক চেতনার এবং শুভবুদ্ধির প্রদীপ জ্বেলেছেন। তাঁর কীর্তি, তাঁর স্মৃতি, চিরজাগরূক করে রাখতে কারও কি একটু ইচ্ছে হয় না?
মূহ. আব্দুর রহীম খান
প্রয়াত ড. নীলিমা ইব্রাহিমের সর্বকনিষ্ঠ জামাতা
বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষপর্বে ষাটের দশকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ফুলার রোডে অবস্থিত তাঁর বাড়িটি সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী ত্যাগী ছাত্র ও নেতা-কর্মীদের নিরাপদ অভয়ারণ্য। জননীর মতো স্নেহ, মমতায় তিনি তাঁদের আপন সন্তানের মতোই আগলে রেখেছিলেন—নিজ সন্তান উপবাসে সারা রাত ছটফট করেছেন, কিন্তু এঁরা কোনো দিন অভুক্ত থাকেননি। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে এঁদের প্রায় প্রত্যেকেই মন্ত্রী হয়েছেন, ডাকসাইটে জাতীয় নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন, ক্ষমতার আস্বাদনে ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন। গত ৪০ বছরে এ দেশে কোটিপতি হয়েছেন প্রায় ২৪ হাজার জন, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ ও সবচেয়ে বিশ্বস্তজন হওয়া সত্ত্বেও মৃত্যুর আগ মুহূর্তেও তিনি লাখপতি হওয়ার গৌরব অর্জনে সক্ষম হননি। আসলে কোনো কিছুর প্রত্যাশায় কিংবা কোনো কিছু প্রাপ্তির জন্য তিনি কিছু করেননি।
তিনি রাজনীতি করেননি এবং কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টও ছিলেন না। ১৯৭৪ সালের শেষার্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তাঁকে সরাসরি প্রশ্ন করেছিলেন, ‘রাজনীতি করবেন?’ তিনি স্পষ্ট জবাব দিয়েছিলেন, ‘না।’ ‘কেন?’ ‘বুঝি না, আমি মাস্টার, হ্যাঁ বললে হ্যাঁ আর না বললে না বুঝি। আমার পক্ষে রাজনীতি করা সম্ভব নয়।’ বঙ্গবন্ধু গম্ভীর হয়ে উঠে দাঁড়িয়েছিলেন, অনুরোধ করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে। বঙ্গবন্ধু জানিয়েছিলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তিনি অনেক টাকা বরাদ্দ করেছেন, কারও ওপর নির্ভর করতে পারছেন না, তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব তিনি (ড. নীলিমা ইব্রাহিম) নিলে বঙ্গবন্ধু অনেকটা আশ্বস্ত হতে পারতেন। তিনি সবিনয়ে সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, বলেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধু, প্রথমত আমি শিক্ষক হিসেবে মরতে চাই। শেষ যাত্রার সম্মানটুকুর প্রতি আমার লোভ...।’ এ ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় নিহত রাষ্ট্রপতি-জায়া বেগম আইভি রহমান ও বর্তমান রাষ্ট্রপতি স্বয়ং। মনে হয়, তাঁর আশঙ্কা অমূলক ছিল না, তবে মৃত্যুর পর একজন শিক্ষক হিসেবে তাঁর অসংখ্য ছাত্রছাত্রী অন্তর থেকে সব শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা ঢেলে তাঁকে শেষ সম্মানটুকু জানিয়েছিলেন।
নীলিমা ইব্রাহিম ১৯৫৬ সালের জুন মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগ দেন। জন্মতারিখ সম্পর্কে মাতার এফিডেভিট উপেক্ষা করে ম্যাট্রিক পাসের সময় বয়স ১৬ বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট ১৯৭৯ সালের ৩০ জুন তাঁর অবসর ঘোষণা করে। অতঃপর ১৯৭৯ সালের ১ জুলাই থেকে ১৯৮২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত তিনি বাংলা বিভাগের সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে শিক্ষকতা জীবনের সমাপ্তি টানেন। লক্ষণীয়, জাতির পিতাকে নৃশংসভাবে হত্যার পর এ দেশে যে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়, তার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর প্রতি যে আচরণ করেছে, তা কোনো দৃষ্টিকোণ থেকেই সম্মানজনক ছিল না। মিথ্যা অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন কর্তৃপক্ষ বারবার তাঁকে মানসিকভাবে উৎপীড়নের চেষ্টা করেছে, যদিও কোনো অভিযোগই পরে প্রমাণিত হয়নি।
যে মানুষগুলো এখন দেশ পরিচালনা করছেন, তাঁরা সবাই জানেন, এ দেশের স্বাধিকার আন্দোলন, মুক্তিসংগ্রাম, নারীসমাজের জাগরণ—সমাজের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে শুভ বোধ সৃষ্টিতে তাঁর কী অবদান—তাঁরা যে কেন এতটা নির্লিপ্ত! এ মানুষগুলো যখন অবসর নেবেন কিংবা নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবেন, তখন নীলিমা ইব্রাহিম কে ছিলেন, এ পরিচয়টুকু তুলে ধরার মতো কেউ থাকবে না।
বাংলা ভাষা এবং সাহিত্যের উন্নয়ন ও বিকাশে নীলিমা ইব্রাহিম কী করেছেন, জেনারেল টিক্কা খানের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দেশের মাটিতে বসে তিনি কীভাবে মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করেছেন, স্বাধীনতার পর ধর্ষিত হতভাগ্য নারীদের পুনর্বাসনের জন্য, সতীর্থ অধ্যাপকদের লাশ খুঁজে পাওয়ার জন্য, শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান নির্মাণের জন্য, জাতির পিতার জন্মদিনটি জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে উদ্যাপনের জন্য, কিংবা স্বাধীনতা-উত্তর নাট্য আন্দোলনকে অঙ্কুরোদ্গম অবস্থা থেকে মহীরুহে পরিণত করার জন্য তিনি কী করেছেন, তা বিস্মৃতির অতল অন্ধকারে হারিয়ে যাবে।
ইদানীংকালে চেয়ার দখলকারী মানুষগুলো চেয়ারগুলোর চেয়ে ছোট হয়ে যাচ্ছে। সম্মানিত মানুষগুলোকে অসম্মানিত করার একটা অশুভ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। পুরো সমাজটাই কেমন যেন অপরাধগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে। কত কায়দা করে মিথ্যা কথা বলা যায়, কত অনৈতিকভাবে দ্রুত বিত্ত-বৈভবের মালিক হওয়া যায় এবং কত রকম উপায়ে মানুষ খুন ও গুম করা যায়, প্রতিনিয়ত তার অনুশীলন চলছে। মহা অমানিশার অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়ার এ মুহূর্তে নীলিমা ইব্রাহিমের মতো একজন মানুষের বড় প্রয়োজন ছিল।
নীলিমা ইব্রাহিম নানা পরিচয়ে বিধৃত—শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, সমাজসেবী, সংস্কৃতিবিদ, সংস্কৃতিসেবী, নারী সংগঠক ও মুক্তবুদ্ধির চিন্তক। কোন পরিচয়ের চেয়ে কোন পরিচয় বড়, সেটা নির্ণয় করা খুবই কঠিন। তাঁর অপরাধ ছিল, তিনি অনেককে পেছনে ফেলে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিলেন ব্যক্তিগত জ্ঞান ও প্রজ্ঞাকে সম্বল করে। সত্য ও ন্যায়ের প্রতি স্থির, অবিচল এ মানুষটি দেশ, জাতি, সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি ইত্যাদি যাবতীয় ধারণাকে নিজের মতো করে বিশ্লেষণ করেছিলেন। নিজের কণ্ঠকে উচ্চারিত করেছিলেন স্বতন্ত্রভাবে। শুচিশুদ্ধ, রুচিঋদ্ধ, মমতাস্নিগ্ধ সর্বদা মায়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ এ মানুষটি সারা জীবন মঙ্গলের, কল্যাণের, মানবিকতার, অসাম্প্রদায়িক চেতনার এবং শুভবুদ্ধির প্রদীপ জ্বেলেছেন। তাঁর কীর্তি, তাঁর স্মৃতি, চিরজাগরূক করে রাখতে কারও কি একটু ইচ্ছে হয় না?
মূহ. আব্দুর রহীম খান
প্রয়াত ড. নীলিমা ইব্রাহিমের সর্বকনিষ্ঠ জামাতা
No comments