মিসরের জেনারেলরা কী ভূমিকা রাখবেন তা একজনই জানেন by রবার্ট বয়ার
মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারক তাঁর গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান ওমর সুলাইমানকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নিয়োগ দিয়েছেন। এ নিয়োগের কারণ মিসরের উত্তপ্ত রাজপথকে প্রশমিত করা নয়, বরং অন্য যে কারো চেয়ে তিনি মিসরের সেনাবাহিনীকে ভালো চেনেন।
সাবেক এ জেনারেল তাঁর ক্যারিয়ারের পুরো সময়টা মিসরের কর্মকর্তাদের একাট্টা করে রেখেছেন। তিনি মনেপ্রাণে মিসরের সেনাকর্মকর্তাদের জীবনী আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করেছেন। নিখুঁতভাবে তিনি ধরে ফেলেছেন, কোন কর্মকর্তা সরকারের প্রতি অনুগত এবং কোন কর্মকর্তা অনুগত নন। ১৯৫২ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজতন্ত্র উৎখাতের পর থেকে যে-ই সামরিক স্বৈরশাসক হিসেবে রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে থাকুক না কেন, তার জন্য এ ক্যাটালগ খুবই প্রয়োজনীয়। আর এ কারণেই মিসরের জনগণসহ অন্য সবাই এখন একটি প্রশ্নে দ্বিধান্বিত যে আসলে এরপর কী ঘটতে যাচ্ছে।
মিসর সম্পর্কে যাঁরা খোঁজখবর রাখেন তাঁরা সবাই জানেন, দেশটির জেনারেলরা সবাই নিজেদের মধ্যে পরামর্শসভা (কাউন্সেল) করে থাকেন। তাঁরা জানেন যে কারো মধ্যে যদি সামান্য স্বাধীন চিন্তা আসে, অথবা বিদ্রোহের চিন্তা আসে তাহলে দ্রুত, বিনা দ্বিধায় তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হবে। সে কারণেই বিশ্বের কোনো গোয়েন্দা সংস্থা নেই, যাঁরা মিসরের সেনা স্বৈরশাসনের মুখোশ উন্মোচন করবে।
আমি ধারণা করি, সুলাইমান তাঁর কর্মজীবনের ৮০ শতাংশ সময় কাটিয়েছেন মিসরের কর্নেল থেকে জেনারেল পর্যন্ত সবাইকে পর্যবেক্ষণ করে, যাঁরা ট্যাঙ্কবাহিনীকে আদেশ দিতে পারেন প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ ঘিরে ফেলতে। সুলাইমানের কাছে প্রত্যেক কর্মকর্তার ফোনে আড়িপাতা ছিল। তিনি জানতেন কে অধীনস্থ আর কে নন, কে দেশের বাইরে যাচ্ছেন এবং কে থাকছেন। তিনি সঠিকভাবে জানতেন কে ঘুষ গ্রহণ করছেন এবং কিভাবে কত অর্থ ঘুষ গ্রহণ করছেন। সব কর্মকর্তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার এটাই ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় অস্ত্র। মিসরে ১৯৫০ সাল থেকেই অব্যাহতভাবে ইসলামী জঙ্গিদের হুমকি রয়েছে। কিন্তু সুলাইমান এবং তাঁর পূর্বসূরিরা সবাই জানতেন, সেনা অভ্যুত্থানের কাছে এ হুমকি অতি নগণ্য, মশার কামড়ের মতো।
হিসাবের অন্য দিকটি হলো, মিসরের কর্মকর্তারা ভালো করেই জানেন সেখানকার পরিবেশ অনুযায়ী তাঁরা কতটা দুর্বলতার মুখে আছেন। সুলাইমানের কাছে বন্দিত্বের বিষয়টি তাঁরা সরাসরি প্রত্যক্ষ না করলেও অবস্থা কতটা নৈরাশ্যজনক সে সম্পর্কে শুনেছেন। সে অনুযায়ী একজন অফিসার অন্য একজনের সঙ্গে কখনো খোলামেলা কথা বলেন না। কারণ যেকোনো মুহূর্তে সুলাইমানের কাছে খবর চলে যেতে পারে। বিশেষ করে তারা বিদেশি কূটনীতিকদের অতি সচেতনভাবে এড়িয়ে চলেন। তাই এ কথা এখনই বলা যাবে না যে মিসরের কমান্ডার ইন চিফের ভাগ্য শেষ কিনারায় এসে পেঁৗছেছে। কিন্তু আমি মনে করি, সেনাকর্তারা অন্তত গর্ত থেকে বের হতে শুরু করেছেন। তাঁরা সরব হচ্ছেন, প্রশ্ন করছেন। একনায়কত্বকে কিভাবে টিকিয়ে রাখা যাবে_তা নিয়ে ভাবছেন। আমি আগেই বলেছি, এটি আমার ধারণা মাত্র।
ওয়াশিংটনের জন্য সমস্যা হলো, মিসরের জেনারেলরা সবশেষে আমেরিকার সঙ্গে কথা বলবে। এটা আমরা ধরে নিতে পারি। কারণ মিসরে খুব কম কর্মকর্তাই আছেন, যিনি উইকিলিকসের কূটনৈতিক সংবাদ পড়েননি। যদি মিসরের সেনাবাহিনী মুবারককে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলে, তাহলে সব ঘটনার পর অভিনন্দন জানানো ছাড়া আমেরিকার আর কী করার থাকবে? কারণ এতকাল দেয়ালের পেছনে ঘুপচি মেরে লুকিয়ে থাকার পর আমেরিকা এখন বুঝতে পারছে না কিভাবে মিসরীয় সেনাবাহিনীকে সহায়তা দেওয়া যেতে পারে। সুতরাং এখন আমাদের শুধু অপেক্ষা করতে হবে। নজর রাখতে হবে। কিন্তু এমন লোকের ব্যাপারে মনোযোগ দেবেন না যিনি আপনাকে বলবেন, 'এমনটা হবে আমি আপনাকে আগেই বলেছিলাম।' তাঁরা কী জানে?
লেখক : মধ্যপ্রাচ্যে নিযুক্ত সিআইএ-র সাবেক ফিল্ড অফিসার।
গোয়েন্দাবিষয়ক কলামিস্ট। টাইম পত্রিকা থেকে ভাষান্তর : মহসীন হাবিব
মিসর সম্পর্কে যাঁরা খোঁজখবর রাখেন তাঁরা সবাই জানেন, দেশটির জেনারেলরা সবাই নিজেদের মধ্যে পরামর্শসভা (কাউন্সেল) করে থাকেন। তাঁরা জানেন যে কারো মধ্যে যদি সামান্য স্বাধীন চিন্তা আসে, অথবা বিদ্রোহের চিন্তা আসে তাহলে দ্রুত, বিনা দ্বিধায় তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হবে। সে কারণেই বিশ্বের কোনো গোয়েন্দা সংস্থা নেই, যাঁরা মিসরের সেনা স্বৈরশাসনের মুখোশ উন্মোচন করবে।
আমি ধারণা করি, সুলাইমান তাঁর কর্মজীবনের ৮০ শতাংশ সময় কাটিয়েছেন মিসরের কর্নেল থেকে জেনারেল পর্যন্ত সবাইকে পর্যবেক্ষণ করে, যাঁরা ট্যাঙ্কবাহিনীকে আদেশ দিতে পারেন প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ ঘিরে ফেলতে। সুলাইমানের কাছে প্রত্যেক কর্মকর্তার ফোনে আড়িপাতা ছিল। তিনি জানতেন কে অধীনস্থ আর কে নন, কে দেশের বাইরে যাচ্ছেন এবং কে থাকছেন। তিনি সঠিকভাবে জানতেন কে ঘুষ গ্রহণ করছেন এবং কিভাবে কত অর্থ ঘুষ গ্রহণ করছেন। সব কর্মকর্তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার এটাই ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় অস্ত্র। মিসরে ১৯৫০ সাল থেকেই অব্যাহতভাবে ইসলামী জঙ্গিদের হুমকি রয়েছে। কিন্তু সুলাইমান এবং তাঁর পূর্বসূরিরা সবাই জানতেন, সেনা অভ্যুত্থানের কাছে এ হুমকি অতি নগণ্য, মশার কামড়ের মতো।
হিসাবের অন্য দিকটি হলো, মিসরের কর্মকর্তারা ভালো করেই জানেন সেখানকার পরিবেশ অনুযায়ী তাঁরা কতটা দুর্বলতার মুখে আছেন। সুলাইমানের কাছে বন্দিত্বের বিষয়টি তাঁরা সরাসরি প্রত্যক্ষ না করলেও অবস্থা কতটা নৈরাশ্যজনক সে সম্পর্কে শুনেছেন। সে অনুযায়ী একজন অফিসার অন্য একজনের সঙ্গে কখনো খোলামেলা কথা বলেন না। কারণ যেকোনো মুহূর্তে সুলাইমানের কাছে খবর চলে যেতে পারে। বিশেষ করে তারা বিদেশি কূটনীতিকদের অতি সচেতনভাবে এড়িয়ে চলেন। তাই এ কথা এখনই বলা যাবে না যে মিসরের কমান্ডার ইন চিফের ভাগ্য শেষ কিনারায় এসে পেঁৗছেছে। কিন্তু আমি মনে করি, সেনাকর্তারা অন্তত গর্ত থেকে বের হতে শুরু করেছেন। তাঁরা সরব হচ্ছেন, প্রশ্ন করছেন। একনায়কত্বকে কিভাবে টিকিয়ে রাখা যাবে_তা নিয়ে ভাবছেন। আমি আগেই বলেছি, এটি আমার ধারণা মাত্র।
ওয়াশিংটনের জন্য সমস্যা হলো, মিসরের জেনারেলরা সবশেষে আমেরিকার সঙ্গে কথা বলবে। এটা আমরা ধরে নিতে পারি। কারণ মিসরে খুব কম কর্মকর্তাই আছেন, যিনি উইকিলিকসের কূটনৈতিক সংবাদ পড়েননি। যদি মিসরের সেনাবাহিনী মুবারককে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলে, তাহলে সব ঘটনার পর অভিনন্দন জানানো ছাড়া আমেরিকার আর কী করার থাকবে? কারণ এতকাল দেয়ালের পেছনে ঘুপচি মেরে লুকিয়ে থাকার পর আমেরিকা এখন বুঝতে পারছে না কিভাবে মিসরীয় সেনাবাহিনীকে সহায়তা দেওয়া যেতে পারে। সুতরাং এখন আমাদের শুধু অপেক্ষা করতে হবে। নজর রাখতে হবে। কিন্তু এমন লোকের ব্যাপারে মনোযোগ দেবেন না যিনি আপনাকে বলবেন, 'এমনটা হবে আমি আপনাকে আগেই বলেছিলাম।' তাঁরা কী জানে?
লেখক : মধ্যপ্রাচ্যে নিযুক্ত সিআইএ-র সাবেক ফিল্ড অফিসার।
গোয়েন্দাবিষয়ক কলামিস্ট। টাইম পত্রিকা থেকে ভাষান্তর : মহসীন হাবিব
No comments