সকলেই শুধায়, কেমন আছি আমরা by আতাউস সামাদ
ঘরের বাইরে গেলেই কেউ না কেউ প্রশ্ন করেন, ‘দেশের অবস্থা কেমন? কী হচ্ছে দেশে?’ আমিও যাদের ওয়াকিবহাল বলে মনে করি তাদের কারও সঙ্গে দেখা হলে জিজ্ঞাসা করি, ‘আমরা কেমন অবস্থায় আছি? কোন দিকে যাচ্ছি?’ বাস্তবত এখন প্রায় সবাই অন্য সবাইকে এই একই প্রশ্ন করছেন।
‘প্রায় সবাই’ কথাটি ব্যবহার করলাম এ কারণে যে, যারা ক্ষমতায় আছেন, সরকার চালাচ্ছেন, সবাইকে হুকুম করে বেড়াতে পারেন এবং নানান সরকারি সুবিধা নিজেরা ভোগ করেন এবং নিজের খাতিরের লোকদের মধ্যে তা বিলি করেন—তারা ভালোই আছেন। তারা এও মনে করেন যে, দেশটাও তাদের মতোই ভালো আছে। তাই তারা সারাক্ষণই উচ্চকণ্ঠে বলে চলেছেন যে, দেশের মানুষ খুব ভালো আছে এবং তাদের অবস্থা দিন দিন আরও ভালো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইদানীং বলেছেন, সরকারের যারা সমালোচক, যারা নিন্দুক, তারা নগরভিত্তিক কিছু সমস্যার নজির দেখিয়ে বলেন, দেশের অবস্থা ভালো নেই, কিন্তু তারা গ্রামে গিয়ে দেখে না যে সেখানকার মানুষ কত সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে আছে। ইদানীং রাজধানী ঢাকা ও দেশের আরও অনেক জায়গায় কখনও পুলিশ আর কখনও ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য ও অন্য নেতাদের নির্দেশে তাদের পেটোয়া বাহিনী সাংবাদিকদের ওপর অকথ্য শরীরিক নির্যাতন করার পর সমালোচনার ঝড় উঠলে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী মন্তব্য করেছেন যে, সাংবাদিকরা আগের চেয়ে ভালো আছেন। কালের কণ্ঠ পত্রিকায় অনলাইন মতামত জরিপে বেশির ভাগ মতদানকারী (১৩৩৮ জনের মধ্যে ৫৮.৪৫%) তার মন্তব্য সঠিক বলে অভিহিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও বলেছেন যে, সাংবাদিকরা আগের চেয়ে এখন অনেক ভালো আছেন, তারা স্বাধীনভাবে লেখালেখি করছেন। তিনি এও বলেছেন যে, সাংবাদিকদের মধ্যে অনেকের পেটের ভাত হজম হয় না সরকারের সমালোচনা করে কিছু না লিখলে। তিনি এও অভিযোগ করেছেন যে, রোজই তিনি এমন কিছু খবর পড়েন যেগুলো ভুল অথবা যেগুলো খোঁজখবর নিয়ে লেখা হয়নি।
দেশের প্রতিটি সংবাদপত্রে প্রতিদিন যত খবর প্রকাশিত হয় বা সম্প্রচার মাধ্যমে প্রচার করা হয় তার প্রত্যেকটিই একেবারে নিখুঁত বা সঠিক তথ্যনির্ভর এমন দাবি আমিও করি না। কিন্তু এটুকু বলব যে, বেশিরভাগ খবরই সঠিক তথ্যনির্ভর হয়। মতামত যারা দেন তাদের কথা একটু ভিন্ন, কারণ তারা যা ভালো মনে করেন তাই বলেন। সংবিধানে সেই স্বাধীনতা দেয়া আছে। কিন্তু এক্ষেত্রেও একটা কথা মনে রাখা দরকার যে, এসব ক্ষেত্রে সরকার-সমর্থকরা তাদের মন্তব্যে বিরোধী দলগুলোকে তুলোধুনো করেন, বিরোধীরা তাদের যতখানি সমালোচনা করেন তার সমানই অথবা কিছুটা বেশি। প্রধানমন্ত্রী বা তার মন্ত্রী ও উপদেষ্টারা এই সত্যটা এড়িয়ে যান। এক্ষেত্রে তাদের নজরে বস্তুনিষ্ঠতার সংজ্ঞা অক্লেশে পাল্টে যায়। আর আমাদের মুশকিলটা হচ্ছে ক্ষমতাসীনরা মেনে নিন বা না নিন সাংবাদিকদের মাথায়, মুখে, পিঠে লাঠির ঘায়ের দাগ ও পুলিশের সবুট লাথি খাবার অপমানে মনের ভেতর যে তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে তাতো বাস্তবিক, ওগুলো তো কাল্পনিক নয়।
এসব কথা লিখছি বলে কেউ সমালোচনা করতে পারেন যে, পুরনো গীতই গেয়ে চলেছি। আসলে তা নয়। পুরনো আঘাতের ব্যথাটার ওপর লাঠির বাড়ি নতুন করে পড়েছে বলে যন্ত্রণায় বেশি কাতর হয়ে পড়েছি আমরা। এই সঙ্গে বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো চলমান বিভীষিকার সঙ্গে যোগ হয়েছে গুম আতঙ্ক। কোনো কোনো সাংবাদিক একটু সাহস করে সমাধান হয় নাই এমন রহস্য নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে নিজের বা স্বজনের ‘নিখোঁজ’ হয়ে যাওয়ার হুমকি পাচ্ছেন কর্কশ কণ্ঠধারীদের কাছ থেকে ফোনে। আর আমার দেশ পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে যে, গোবিন্দগঞ্জে সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম জয় ১০ দিন ধরে নিখোঁজ আছেন। যেদিন থেকে তার খোঁজ নেই সেদিনই তিনি আগে একবার সন্ত্রাসীদের হামলায় পড়েছিলেন। দোয়া করতে থাকব তিনি যেন অচিরেই সুস্থদেহে ফেরত আসেন। তবে আমাদের এসব কান্নাকাটি যাতে কেউ অহেতুক মনে না করেন সেজন্য সবার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার-এর ২০১১-১২ সালের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রিপোর্টের দিকে। এই রিপোর্টে ১৭৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান উপরের দিক থেকে ১২৯ নম্বরে। রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের অবস্থান নিচের দিকে নেমে গেছে। উল্লেখ্য, গত ২০১০ সালে এই প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল উপর থেকে ১২৬ নম্বরে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সম্পর্কে দেশের ভেতরে যেহেতু দুটি ভিন্ন মতের অস্তিত্ব রয়েছে সে জন্য তৃতীয় একটি পক্ষের মতামত হিসেবে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার (RSF)-এর প্রতিবেদন উল্লেখ করলাম। অবশ্য আজকের এ লেখায় এই প্রসঙ্গান্তরে যাওয়ার আগে দেশের ভেতরের অপর একটি অভিমত উল্লেখ করি, কারণ এটি খুবই প্রাসঙ্গিক।
এই অভিমতটি শ্রদ্ধেয় সাংবাদিক এবিএম মূসার, যিনি এই বৃদ্ধ বয়সে এবং অসুস্থতার মাঝেও গণমাধ্যমে দেশের নানা সমস্যা সম্পর্কে তার বিশ্লেষণ ও মত দিয়ে চলেছেন। কিছুকাল আগে তিনি বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, এখন লেখার ও বলার স্বাধীনতা আছে কিন্তু সংবাদ বা মন্তব্যটি প্রকাশিত হওয়ার পরদিন প্রতিবেদক বা ভাষ্যকারের যে কী হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।’
আর মাত্র দিন কয়েকের মধ্যে ২০১২-১৩ অর্থবছরের জন্য জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। দেশের অর্থনীতিতে কিছু সমস্যা থাকার কথা। অর্থনীতি কিছুটা চাপে পড়ার ব্যাপারটা তিনি এরই মধ্যে স্বীকার করেছেন, কিন্তু তবুও তিনি বলবেন, দেশ এগিয়ে চলেছে, বিশ্বমন্দার মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হলেও যতখানি হয়েছে তা প্রশংসনীয়। বিশ্বব্যাংকও ভালো-মন্দ মিলিয়ে কিছু বলেছে। তারা মন্তব্য করেছে, বিশ্বমন্দার মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ঈর্ষণীয়, তবে তা এশীয় গড় প্রবৃদ্ধির চেয়ে কম।
অর্থনীতির পরিসংখ্যানগত হিসাব-নিকাশ যাই হোক না কেন, আমজনতা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করবে তারা কতটুকু আয় করতে পারছে আর জীবনযাত্রার জন্য তাদের কত ব্যয় করতে হচ্ছে। কথায় বলে, পেটে খেলে পিঠে সয়। বর্তমান বাস্তবতা হচ্ছে, পেটে যথেষ্ট পড়ছে না। খরচ যত বেড়েছে আয় তত বাড়েনি। খরচের মধ্যে কেবল খাদ্যের দাম নয় সেই সঙ্গে চিকিত্সা, যাতায়াত, বস্ত্র, আশ্রয় ও শিক্ষার জন্য যা ব্যয় হয় সেটাও ধরতেই হয়। এই অতি সম্প্রতি খাদ্যসামগ্রীর দাম নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে আর বাড়িভাড়া, চিকিত্সা, যাতায়াত খরচ এবং শিক্ষার ব্যয়ও বেড়েছে। জীবনযাত্রা নিয়ে উত্কণ্ঠার সীমা নেই। কর্মসংস্থান কমে যাওয়ায় নতুন ও পুরাতন দুই শ্রেণীর বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। পরিস্থিতি আসলে আদৌ স্বস্তিদায়ক নয়। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে গত নভেম্বরে প্রকাশিত UNDP’র মানব উন্নয়ন সূচক প্রতিবেদনটি স্মরণ করা যেতে পারে। এতে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল বিশ্বের ২০১টি দেশের মধ্যে ওপর দিক থেকে ১৪৬তম, বলা যায়, তলানির দিকেই। ওই প্রতিবেদনে দিনে মার্কিন ১ ডলার ২৫ সেন্ট-এর চেয়ে কম আয় বাংলাদেশে এমন লোকের সংখ্যা ছিল দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৪৯.৬ ভাগ অর্থাত্ প্রায় অর্ধেক। চারদিকের অবস্থা দেখে আশঙ্কা হচ্ছে, এই পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে গত কয়েক মাসে।
এদিকে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও দ্বন্দ্ব চলছে। জেল-জুলুম, জেলগেটে পুনরায় গ্রেফতার—এসব চলছেই। সঙ্গে চলছে সংলাপ-সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা, যা এখনও মনে হয় নাটক বা প্রহসন। সামগ্রিকভাবে এই অবস্থায় আতঙ্কিত জনগণ তো স্বাভাবিকভাবেই একজন আরেকজনকে প্রশ্ন করবে, ‘কেমন আছি আমরা, কোথায় যাচ্ছি?’
আতাউস সামাদ: প্রখ্যাত সাংবাদিক।
দেশের প্রতিটি সংবাদপত্রে প্রতিদিন যত খবর প্রকাশিত হয় বা সম্প্রচার মাধ্যমে প্রচার করা হয় তার প্রত্যেকটিই একেবারে নিখুঁত বা সঠিক তথ্যনির্ভর এমন দাবি আমিও করি না। কিন্তু এটুকু বলব যে, বেশিরভাগ খবরই সঠিক তথ্যনির্ভর হয়। মতামত যারা দেন তাদের কথা একটু ভিন্ন, কারণ তারা যা ভালো মনে করেন তাই বলেন। সংবিধানে সেই স্বাধীনতা দেয়া আছে। কিন্তু এক্ষেত্রেও একটা কথা মনে রাখা দরকার যে, এসব ক্ষেত্রে সরকার-সমর্থকরা তাদের মন্তব্যে বিরোধী দলগুলোকে তুলোধুনো করেন, বিরোধীরা তাদের যতখানি সমালোচনা করেন তার সমানই অথবা কিছুটা বেশি। প্রধানমন্ত্রী বা তার মন্ত্রী ও উপদেষ্টারা এই সত্যটা এড়িয়ে যান। এক্ষেত্রে তাদের নজরে বস্তুনিষ্ঠতার সংজ্ঞা অক্লেশে পাল্টে যায়। আর আমাদের মুশকিলটা হচ্ছে ক্ষমতাসীনরা মেনে নিন বা না নিন সাংবাদিকদের মাথায়, মুখে, পিঠে লাঠির ঘায়ের দাগ ও পুলিশের সবুট লাথি খাবার অপমানে মনের ভেতর যে তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে তাতো বাস্তবিক, ওগুলো তো কাল্পনিক নয়।
এসব কথা লিখছি বলে কেউ সমালোচনা করতে পারেন যে, পুরনো গীতই গেয়ে চলেছি। আসলে তা নয়। পুরনো আঘাতের ব্যথাটার ওপর লাঠির বাড়ি নতুন করে পড়েছে বলে যন্ত্রণায় বেশি কাতর হয়ে পড়েছি আমরা। এই সঙ্গে বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো চলমান বিভীষিকার সঙ্গে যোগ হয়েছে গুম আতঙ্ক। কোনো কোনো সাংবাদিক একটু সাহস করে সমাধান হয় নাই এমন রহস্য নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে নিজের বা স্বজনের ‘নিখোঁজ’ হয়ে যাওয়ার হুমকি পাচ্ছেন কর্কশ কণ্ঠধারীদের কাছ থেকে ফোনে। আর আমার দেশ পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে যে, গোবিন্দগঞ্জে সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম জয় ১০ দিন ধরে নিখোঁজ আছেন। যেদিন থেকে তার খোঁজ নেই সেদিনই তিনি আগে একবার সন্ত্রাসীদের হামলায় পড়েছিলেন। দোয়া করতে থাকব তিনি যেন অচিরেই সুস্থদেহে ফেরত আসেন। তবে আমাদের এসব কান্নাকাটি যাতে কেউ অহেতুক মনে না করেন সেজন্য সবার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার-এর ২০১১-১২ সালের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রিপোর্টের দিকে। এই রিপোর্টে ১৭৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান উপরের দিক থেকে ১২৯ নম্বরে। রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের অবস্থান নিচের দিকে নেমে গেছে। উল্লেখ্য, গত ২০১০ সালে এই প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল উপর থেকে ১২৬ নম্বরে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সম্পর্কে দেশের ভেতরে যেহেতু দুটি ভিন্ন মতের অস্তিত্ব রয়েছে সে জন্য তৃতীয় একটি পক্ষের মতামত হিসেবে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার (RSF)-এর প্রতিবেদন উল্লেখ করলাম। অবশ্য আজকের এ লেখায় এই প্রসঙ্গান্তরে যাওয়ার আগে দেশের ভেতরের অপর একটি অভিমত উল্লেখ করি, কারণ এটি খুবই প্রাসঙ্গিক।
এই অভিমতটি শ্রদ্ধেয় সাংবাদিক এবিএম মূসার, যিনি এই বৃদ্ধ বয়সে এবং অসুস্থতার মাঝেও গণমাধ্যমে দেশের নানা সমস্যা সম্পর্কে তার বিশ্লেষণ ও মত দিয়ে চলেছেন। কিছুকাল আগে তিনি বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, এখন লেখার ও বলার স্বাধীনতা আছে কিন্তু সংবাদ বা মন্তব্যটি প্রকাশিত হওয়ার পরদিন প্রতিবেদক বা ভাষ্যকারের যে কী হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।’
আর মাত্র দিন কয়েকের মধ্যে ২০১২-১৩ অর্থবছরের জন্য জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। দেশের অর্থনীতিতে কিছু সমস্যা থাকার কথা। অর্থনীতি কিছুটা চাপে পড়ার ব্যাপারটা তিনি এরই মধ্যে স্বীকার করেছেন, কিন্তু তবুও তিনি বলবেন, দেশ এগিয়ে চলেছে, বিশ্বমন্দার মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হলেও যতখানি হয়েছে তা প্রশংসনীয়। বিশ্বব্যাংকও ভালো-মন্দ মিলিয়ে কিছু বলেছে। তারা মন্তব্য করেছে, বিশ্বমন্দার মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ঈর্ষণীয়, তবে তা এশীয় গড় প্রবৃদ্ধির চেয়ে কম।
অর্থনীতির পরিসংখ্যানগত হিসাব-নিকাশ যাই হোক না কেন, আমজনতা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করবে তারা কতটুকু আয় করতে পারছে আর জীবনযাত্রার জন্য তাদের কত ব্যয় করতে হচ্ছে। কথায় বলে, পেটে খেলে পিঠে সয়। বর্তমান বাস্তবতা হচ্ছে, পেটে যথেষ্ট পড়ছে না। খরচ যত বেড়েছে আয় তত বাড়েনি। খরচের মধ্যে কেবল খাদ্যের দাম নয় সেই সঙ্গে চিকিত্সা, যাতায়াত, বস্ত্র, আশ্রয় ও শিক্ষার জন্য যা ব্যয় হয় সেটাও ধরতেই হয়। এই অতি সম্প্রতি খাদ্যসামগ্রীর দাম নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে আর বাড়িভাড়া, চিকিত্সা, যাতায়াত খরচ এবং শিক্ষার ব্যয়ও বেড়েছে। জীবনযাত্রা নিয়ে উত্কণ্ঠার সীমা নেই। কর্মসংস্থান কমে যাওয়ায় নতুন ও পুরাতন দুই শ্রেণীর বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। পরিস্থিতি আসলে আদৌ স্বস্তিদায়ক নয়। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে গত নভেম্বরে প্রকাশিত UNDP’র মানব উন্নয়ন সূচক প্রতিবেদনটি স্মরণ করা যেতে পারে। এতে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল বিশ্বের ২০১টি দেশের মধ্যে ওপর দিক থেকে ১৪৬তম, বলা যায়, তলানির দিকেই। ওই প্রতিবেদনে দিনে মার্কিন ১ ডলার ২৫ সেন্ট-এর চেয়ে কম আয় বাংলাদেশে এমন লোকের সংখ্যা ছিল দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৪৯.৬ ভাগ অর্থাত্ প্রায় অর্ধেক। চারদিকের অবস্থা দেখে আশঙ্কা হচ্ছে, এই পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে গত কয়েক মাসে।
এদিকে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও দ্বন্দ্ব চলছে। জেল-জুলুম, জেলগেটে পুনরায় গ্রেফতার—এসব চলছেই। সঙ্গে চলছে সংলাপ-সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা, যা এখনও মনে হয় নাটক বা প্রহসন। সামগ্রিকভাবে এই অবস্থায় আতঙ্কিত জনগণ তো স্বাভাবিকভাবেই একজন আরেকজনকে প্রশ্ন করবে, ‘কেমন আছি আমরা, কোথায় যাচ্ছি?’
আতাউস সামাদ: প্রখ্যাত সাংবাদিক।
No comments