পাঠকের মন্তব্য: অনলাইন থেকে-আগামী নির্বাচনের পর তিতাসকে লাকড়ি বেচতে হবে!

প্রথম আলোর অনলাইনে (prothom-alo.com) প্রতিদিন রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, খেলা, প্রযুক্তি ও ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে পাঠকের মতামত প্রকাশিত হয়। তাঁদের এ মতামত চিন্তার খোরাক জোগায় অন্যদের। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন বিষয়ে পাঠকদের কিছু মন্তব্য ঈষৎ সংক্ষেপিত আকারে ছাপা হলো।


মন্ত্রীরা কখনো দুর্নীতি করেন না!
আসিফ নজরুল তাঁর ‘সময়চিত্র’ কলামে গত শনিবার দেশের অবস্থা তুলে ধরেছেন। এ সম্পর্কে আলভি লিখেছেন: আজকের এ দিনে চমৎকার একটি নিবন্ধ লেখার জন্য ধন্যবাদ। ১৭৫৭ সালের এ দিনে মীরজাফরের কারণে পলাশীর আম্রকাননে বাঙালির স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। আবার ৬৩ বছর আগে একই দিনে পাকিস্তানিদের হাত থেকে মুক্তি লাভের জন্য আওয়ামী লীগ নামের একটি রাজনৈতিক দলের সূর্যোদয় ঘটেছিল। ঘটনাবহুল এ ঐতিহাসিক দিনে দুদক আজ কোন পথে, মীরজাফরের পথে, না বঙ্গবন্ধুর নীতি-আদর্শে গড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পথে, না বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের পথে?
এম শওকত আলী: আসলেই বাংলাদেশ যে দুর্নীতিপ্রিয় দেশ, সেটা অনেকবারই অনেকভাবে প্রমাণ করেছে শাসককুল। দুর্নীতির ব্যাপারে কালো-ধলো নেই; সবাই কঠোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। সবচেয়ে মর্মান্তিক ব্যাপার হচ্ছে যে আমাদের জনগণ দুর্নীতিবাজদের অনেককেই চেনা সত্ত্বেও তাদেরকেই ভোট দিয়ে চলেছে। তাই জনগণ যে দেশে দুর্নীতির পরোক্ষ মদদদাতা, সে দেশে দুর্নীতি কীভাবে কমতে পারে—তা নিশ্চয়ই গবেষণার বিষয়।
প্রভাবশালী খেলাপিদের গ্যাসলাইন কাটা হয় না
গত শুক্রবার প্রথম আলোতে প্রধান শিরোনাম ছিল এটি। পাঠকদের মধ্যে মো. রাশেদ আলম লিখেছেন: শুধু প্রভাবশালীদের কথা বললে ভুল হবে, প্রকৃত সত্য হচ্ছে, সঠিক সময়ে যে নির্ধারিত ঘুষের টাকা তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাতে তুলে দিতে পারবে—সে যত বড় খেলাপি হোক না কেন, তার গ্যাসলাইনের কিছুই হবে না। আর যদি ঘুষ না দেন, তবে যত সঠিক সময়ে গ্যাস বিল দেন না কেন, আপনার গ্যাস পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আমি তিতাসের একজন তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীকে চিনি, যে ধানমন্ডি ৫ নম্বরের ২৬০০ বর্গফুটের ডুপলেক্স ফ্ল্যাটের মালিক। আছে তিনটি গাড়ি।
সৈয়দ আহমেদ বাঁধন: নেতাদের মুখের সামনে মাইক ধরলেই শুধু শুধু বড় বড় বুলি। আর তিতাসের পাওনা প্রায় ১৫০ কোটি বাকি। এভাবে যদি সাংসদেরাও তিতাসের বাকির খাতা বড় করেন, তাহলে তো আগামী নির্বাচনের পর তিতাসকে লাকড়ি বেচতে হবে!
মহিবুর রহমান: সাধারণ জনগণের তো কোনো ক্ষমতা থাকে না, তাই যত বিপদ সাধারণ জনগণের। প্রভাবশালী লোকদের কিছুই হবে না। অথচ আজ দেশের কোটি কোটি টাকা যাচ্ছে কোথায়? আমরা বেশি কিছু বলতে পারি না। কেননা, আমাদের কোনো প্রভাবশালী লোক নেই।
নির্বাচন কমিশন নিজেকে ক্ষমতাধর মনে করছে
গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর এ শীর্ষ সংবাদে পাঠকেরা ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। মহতাফ হোসাইন লিখেছেন:
গৃহপালিত ময়না-শালিক দেখেছেন? ময়না, শালিক ইত্যাদি পাখি কথা বলে ঠিকই। কিন্তু যদি খুব ভালো করে লক্ষ করেন, দেখবেন, আপনি যে কথা বলবেন, সে শুধু ওইটুকুই বলে। অতিরিক্ত কোনো কিছু সে যোগ করতে পারে না। আমাদের গৃহপালিত নির্বাচন কমিশনের একই অবস্থা। তাদের ‘পালনকারী’ সরকার পর্দার অন্তরালে বসে যা বলে, তারা তা-ই বলে এবং করে। সরকারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী তারা যতই বলুক, আমরা স্বাধীন, তা তারা জনগণকে বোকা ভেবে বলতেই পারে, কিন্তু আদপেই কি জনগণ বোকা?
মাসুদ রানা: ডিজিটাল যুগে অ্যানালগ নির্বাচন কমিশন দিয়ে ভালো কিছু হওয়ার নয়। আমাদের দেশের মানুষ অনেক ভালো। যদি থানা নির্বাচন অফিস ও পরিসংখ্যান অফিসগুলোকে কাজে লাগানো যায়, তাহলে জনগণনা ও ভোটার তালিকা নিয়ে কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়। সব তথ্য দেশের জন্য আইনপ্রয়োগকারী বাহিনী, আয়কর অফিস, ব্যাংক, বিমা সবাই ব্যবহার করবে। কমিশন নীতিমালা করবে, কথা কম বলবে। আমরা এমন নির্বাচন কমিশন চাই ।
মাহফুজ বুলবুল: ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনটা নির্বিবাদে করে দেখান তো, নির্বাচন কমিশন কতটা শক্তিশালী!
আন্দোলনে সাড়া পাওয়া যায় না
বিএনপির মহাসচিবের এই বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। এ সম্পর্কে আবীর বড়ুয়া লিখেছেন: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কথায় বোঝা যায়, ন্যায়বিচার তখনই হবে যখন শুধু বিচারের রায় তাঁদের পক্ষে যাবে। আর এ নিশ্চয়তা বিচারক দিতে পারলেই তাঁরা আদালতে যাবেন।
সাহাবুদ্দীন আহমেদ: সংবিধান সংশোধন বা আইন প্রণয়ন আদালতের কাজ না, সংবিধান সংশোধন করবে সংসদ। তাই বর্তমান সংসদই পারে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল করতে। এটা সম্পূর্ণ সরকারি দলের সদিচ্ছার ব্যাপার। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখন বিএনপির একার দাবি নয়, এটা এখন গণমানুষের দাবি। সরকার যদি মানুষের ভাষা বুঝতে পারে, তাহলে আর আদালতের দোহাই দেওয়ার দরকার কি?
মো. রবিউল আলম: আমার আফসোস ট্রাফিক সমস্যা, যানজট, গ্যাসের চাহিদা, বিদ্যুৎ সমস্যা, সড়ক দুর্ঘটনা—এসব নিয়ে ফখরুল সাহেবদের ও বিরোধী দলকে কখনো সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে দেখলাম না। আশা করি, ভবিষ্যতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পাশাপাশি জনগণের সমস্যা নিয়েও আপনারা আন্দোলন করবেন।
বারাকাত হোসাইন: কলকাতায় ট্রামের ভাড়া পাঁচ পয়সা ভাড়া বাড়লে শহর অচল হয়ে পড়ে। এ দেশে তেমনটি হয় না। জনগণের সমস্যা নিয়ে আন্দোলন করলে সেভাবে জনগণের সাড়া পাওয়া যায় না। আসলেই কথাটা সত্য। এ দেশের মানুষের সহ্য ক্ষমতা অনেক বেশি। তা না হলে আমাদের সরকারগুলো এত অপকর্ম করে কীভাবে টিকে থাকে।
শতাধিক ছাত্রকে বেত মারলেন অধ্যক্ষ
এ শিক্ষকের ব্যাপারে প্রথম আলোর পাঠকেরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। কেউ কেউ একে স্বাভাবিক বলে মনে করেন। তবে অনেকেই শিক্ষার্থীদের এই শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি সমর্থন করেননি। এ সম্পর্কে মো. শফিকুল ইসলাম লিখেছেন: শিক্ষকের বেতের আঘাতে যখন কোনো ছাত্রকে হাসপাতাল পর্যন্ত যেতে হয়—তখন সেই অস্বাভাবিক মানুষটি কি আর শিক্ষক থাকেন? মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আমার প্রশ্ন।
রায়হান: অধ্যক্ষ বলেন, ‘বাবার আসন থেকে মেরেছি।’ বাবার আসন থেকে মারলে আবার পেটানোর পর প্রতিটি শ্রেণীকক্ষে গিয়ে অধ্যক্ষ সাংবাদিকদের কিছু না বলার জন্য হুমকি দেন কেন? উল্টো অনুতপ্ত হওয়া উচিত ছিল তাঁর।
মনোয়ার হোসাইন: ২১ বছর আগে পড়তাম ক্লাস থ্রিতে। আমাদের শ্রদ্ধেয় কার্ত্তিক স্যার ছিলেন, উনার পদ্ধতি ছিল না—পড়ুয়াদের সবাইকে সামনে নিয়ে গোল করে দাঁড় করাতেন। এরপর দুই-তিনটা বেত একসঙ্গে করে পেছনে ঘুরতেন আর বেত্রাঘাত করতেন। ওহ! সে কী মার! যতক্ষণ বেত ঠিক থাকত উনি চালিয়ে যেতেন। উনার সেই বেতের দাগ শরীরে এখন কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না, তবে যা শিখিয়েছেন এখনো মগজে গেঁথে আছে। তখন মোটেও ভালো লাগত না। কিন্তু এখন মনে হয় আমাদের শরীরের সেই লাল দাগগুলো বড়ই আশীর্বাদ ছিল। সুতরাং, এ যুগে এসে শিক্ষকের হাতের সেই আশীর্বাদের বস্তুটি কেড়ে নেওয়ার আগে ভেবে দেখা উচিত।
মো. আবুজর গিফারি: স্কুলে কখনো ইউনিফরমের একটুকু বাদ গেলে আমরা কত মার খেয়েছি। তখন শিক্ষকেরা ভালো ছিলেন, অভিভাবকেরাও ভালো ছিলেন। আমরাও কিছু মনে করতাম না। আর এখন সব কেমন জানি হয়ে গেছে।
আসাদুল্লাহ: মন্তব্য করতে ভালো লাগে না, তবু কিছু বলি, শিক্ষকেরা মারতে পারেন তবে কারণটা দেখতে হবে। সবাই তো একসঙ্গে অপরাধ করেনি। আর করলে কি একই অপরাধ করেছে। কিছু কিছু বিষয় নিয়ে মারলে হতো, কোচিং নিয়ে মারা অনেক বড় অপরাধ। বাবা হওয়া এত সহজ নয় জনাব, বাবা মারতে পারে সেটা নিজের জন্য নয়, বাচ্চার ভালোর জন্য।
(পাঠকের মতামত বিস্তারিত পড়তে ও আপনার মতামত জানাতে ভিজিট করুন prothom-alo.com)

No comments

Powered by Blogger.