সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ-সব ভালো তার, শেষ ভালো যার by মাসুদা ভাট্টি
বর্তমান সরকারের মেয়াদ আর বছরখানেক বাকি। এ সময়ে সরকারকে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় আরও বেশি সতর্ক ও সচেতন হতে হবে। এ মুহূর্তের কিছু উল্লেখযোগ্য অবস্থার কথা যদি আলোচনা করি তাহলে প্রথমেই আসবে তৈরি পোশাক শিল্পে অস্থিরতার বিষয়টি।
আমরা জানি, কয়েক বছর ধরেই এ লাভজনক খাতকে অস্থিতিশীল করার জন্য দেশের ভেতর ও বাইরে বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়া চলছে। সরকার যে তা দমনে খুব সফলতার পরিচয় দিয়েছে তা নয় বরং বিভিন্ন সময়ে সরকার সাময়িকভাবে এ অচলাবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছে
যে কোনো দেশেই নির্বাচিত সরকারের শেষ সময়টা নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে এই সময় সরকার ব্যস্ত থাকে আগামী নির্বাচনে তাদের পক্ষে ভোট নিয়ে আসার মতো বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে। অন্যদিকে বিরোধী দল ব্যস্ত হয়ে ওঠে কী করে সরকারকে তার গতিপথ থেকে বের করে এনে বেহাল করা যায় এবং তারাও নানামুখী কর্মসূচি দিয়ে ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে। এটাই স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়; কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতি কয়েকটি কারণে আসলে স্বাভাবিক হয়েও স্বাভাবিক নয়। আজকে সেসব পরিস্থিতি নিয়েই আলোচনা করতে চাইছি।
নব্বই সালে বাংলাদেশ নতুন করে গণতন্ত্রে প্রবেশের পর থেকে এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত প্রায় প্রতিটি নির্বাচনেই পরাজিত পক্ষ দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে নানাভাবে ব্যাহত করে এসেছে। এ ক্ষেত্রে কেউ কারও চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে সে কথা বলার উপায় নেই। সরকার পক্ষও যে স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক আচরণ করেছে বিরোধী দলের সঙ্গে, সে কথাও জোর দিয়ে বলার উপায় নেই। কিন্তু বিরোধী দলই আসলে সংসদ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখে সংসদীয় গণতন্ত্রকে প্রায় তামাশার পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। বর্তমান সরকারকে আগের সরকারগুলোর তুলনায়, এমনকি ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগের তুলনায়ও বেশ কার্যকর সরকার বলতে হবে। কিন্তু বিরোধী দলের সঙ্গে আচরণে এ সরকারকে মোটেও পাস মার্ক দেওয়া যাবে না। আবার বিরোধী দলও এ ক্ষেত্রে একেবারেই ফেল। তারা নিজেদের এতটাই দূরে সরিয়ে এনেছে যে, জনগণের প্রয়োজনেও তাদের পাশে পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে বর্তমানে মানুষ যখন পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও দ্রব্যমূল্যের কারণে হাঁসফাঁস করছে তখন বিরোধী দল আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের জন্য। এমনকি তারা সম্পূর্ণভাবে দেশের মানুষের মানসিকতার বাইরে গিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়েছে, যা আসলে তাদের এক ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যে রাজনৈতিক দল জনগণের মনের আশা-আকাঙ্ক্ষার তোয়াক্কা করে না তাদের অবস্থা কেমন হতে পারে তা তো আমরা মুসলিম লীগকে দিয়েই জানি। বিএনপির সে রকম কিছু হোক তা কেউই চাইবে না, ভালো হোক মন্দ হোক দেশে একটি বিরোধী দল প্রয়োজন এবং সেটা গণতন্ত্রের স্বার্থেই।
বর্তমান সরকারের মেয়াদ আর বছরখানেক বাকি। এ সময়ে সরকারকে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় আরও বেশি সতর্ক ও সচেতন হতে হবে। এ মুহূর্তের কিছু উল্লেখযোগ্য অবস্থার কথা যদি আলোচনা করি তাহলে প্রথমেই আসবে তৈরি পোশাক শিল্পে অস্থিরতার বিষয়টি। আমরা জানি, কয়েক বছর ধরেই এ লাভজনক খাতকে অস্থিতিশীল করার জন্য দেশের ভেতর ও বাইরে বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়া চলছে। সরকার যে তা দমনে খুব সফলতার পরিচয় দিয়েছে তা নয় বরং বিভিন্ন সময়ে সরকার সাময়িকভাবে এ অচলাবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছে কিংবা বিবদমান পক্ষগুলোকে শান্ত করার চেষ্টা করেছে। ভেতরে ভেতরে আগুন ঠিকই জ্বলেছে। অন্তর্নিহিত কারণ যা-ই থাকুক না কেন, এর ফলে পুরো তৈরি পোশাক শিল্পই হুমকির মুখে পড়েছে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে তার বিরূপ প্রভাব পড়ছে_ এটাই সত্য। দেশের ওপর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব খুব একটা পড়েনি। কারণ সভ্য মানুষকে পোশাক পরতেই হয়। ফলে এ শিল্পের ওপর আঘাত এলেও তা তেমন একটা তীব্র ছিল না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে আমরা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতির জন্য কাজ করে চলেছি। মালিক পক্ষ দোষ দিচ্ছে শ্রমিকদের, শ্রমিকরা দোষ দিচ্ছে মালিক পক্ষের।
অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বিরোধী দলকে এ শিল্পে অস্থিরতার জন্য দায়ী করা হয়েছে। আমার মনে হয় না এ দাবি ধোপে টেকে, কারণ বিরোধী দল যদি সরকার-বিরোধিতার জন্য এ অশান্তি তৈরি করেও থাকে সরকারের উচিত তা কঠোর হাতে দমন করা। সব পক্ষকে খুশি করা যায় না_ এই বোধ আমাদের সবারই থাকতে হবে এবং সরকারকেও সেটা ভেবেই কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। কথায় কথায় শ্রমিকরা মারমুখী হয়ে রাস্তায় নেমে দেশের সম্পদ ধ্বংস করবে আর পুলিশ তাদের পেটাবে_ এ দৃশ্য দেখতে দেখতে তো চোখ পচে গেল। অন্যদিকে মালিক পক্ষও কেবল নিজেদের মুনাফা দেখবে আর শ্রমিকদের 'দাস' হিসেবে ব্যবহার করবে, সেদিনও তো আমরা পেছনে ফেলেই এসেছি। যে কোনো সুস্থ বিবেকবান মানুষই মনে করে, এ সমস্যার সমাধান রয়েছে। তবে হ্যাঁ, এ সমস্যার মধ্যে ইন্ধনদাতা ও রাষ্ট্রবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকেও সরকারকেই দমন করতে হবে। এদের নিয়ন্ত্রণ করে বিবদমান পক্ষগুলোকে নিয়ে সরকার যদি অবিলম্বে আলোচনায় না বসে তাহলে দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতির অবস্থা যে কী দাঁড়াবে তা ভেবে শঙ্কিত বোধ করছি।
ওদিকে মিয়ানমারের বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন প্রদেশে যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা দেখা দিয়েছে, তাতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে_ এও মনুষ্যসৃষ্ট সমস্যা এবং মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশ হিসেবে এ সমস্যা নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন জানাতে পারে কেবল, তার বাইরে এ বিপুলসংখ্যক শরণার্থীকে আশ্রয় দিতে গেলে যে মানবিক বিপর্যয়ের শিকার বাংলাদেশ হবে তা সামাল দেওয়ার কোনো ইনফ্রাস্ট্রাকচার বাংলাদেশের নেই। অতীতে এ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ বিভিন্ন কারণেই বিপদগ্রস্ত হয়েছে। এখন সময় এসেছে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের। অনেকেই হয়তো এ শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার মানবিক দিকটি নিয়ে কথা তুলবেন; কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন বিষয়। আমার মনে হয়, এখানে সব পক্ষকেই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি বিচার করতে হবে।
মোট কথা, এ মুহূর্তে ক্ষমতাসীন সরকারের সামনে বেশকিছু আতঙ্কজনক সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে দেশের ভেতরের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ করতে না পারাটাও একটি ইস্যু। এ অবস্থায় সরকারের কেবল বিরোধী দলের রাজনীতিকে টেক্কা দেওয়াটাই বড় ইস্যু নয়, এটা সরকারকে তো বুঝতে হবেই, সঙ্গে সঙ্গে জনগণকেও বোঝাতে হবে সরকার আসলে জনগণের সঙ্গেই আছে। মানুষের ভেতর থেকে একবার সরতে শুরু করলে বানের পানির মতো সেখানে কেবল বিরোধিতাই প্রবেশ করে, তাদের ফিরিয়ে আনা তখন অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ে। কথায় বলে, 'সব ভালো তার, শেষ ভালো যার'। সরকার যদি এই প্রবাদ বাক্যটিকে এ মুহূর্তের করণীয় নির্ধারণে প্রাধান্য দেয়, তাহলে নিশ্চয়ই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে।
মাসুদা ভাট্টি : সম্পাদক, একপক্ষ
masuda.bhatti@gmail.com
যে কোনো দেশেই নির্বাচিত সরকারের শেষ সময়টা নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে এই সময় সরকার ব্যস্ত থাকে আগামী নির্বাচনে তাদের পক্ষে ভোট নিয়ে আসার মতো বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে। অন্যদিকে বিরোধী দল ব্যস্ত হয়ে ওঠে কী করে সরকারকে তার গতিপথ থেকে বের করে এনে বেহাল করা যায় এবং তারাও নানামুখী কর্মসূচি দিয়ে ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে। এটাই স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়; কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতি কয়েকটি কারণে আসলে স্বাভাবিক হয়েও স্বাভাবিক নয়। আজকে সেসব পরিস্থিতি নিয়েই আলোচনা করতে চাইছি।
নব্বই সালে বাংলাদেশ নতুন করে গণতন্ত্রে প্রবেশের পর থেকে এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত প্রায় প্রতিটি নির্বাচনেই পরাজিত পক্ষ দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে নানাভাবে ব্যাহত করে এসেছে। এ ক্ষেত্রে কেউ কারও চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে সে কথা বলার উপায় নেই। সরকার পক্ষও যে স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক আচরণ করেছে বিরোধী দলের সঙ্গে, সে কথাও জোর দিয়ে বলার উপায় নেই। কিন্তু বিরোধী দলই আসলে সংসদ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখে সংসদীয় গণতন্ত্রকে প্রায় তামাশার পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। বর্তমান সরকারকে আগের সরকারগুলোর তুলনায়, এমনকি ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগের তুলনায়ও বেশ কার্যকর সরকার বলতে হবে। কিন্তু বিরোধী দলের সঙ্গে আচরণে এ সরকারকে মোটেও পাস মার্ক দেওয়া যাবে না। আবার বিরোধী দলও এ ক্ষেত্রে একেবারেই ফেল। তারা নিজেদের এতটাই দূরে সরিয়ে এনেছে যে, জনগণের প্রয়োজনেও তাদের পাশে পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে বর্তমানে মানুষ যখন পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও দ্রব্যমূল্যের কারণে হাঁসফাঁস করছে তখন বিরোধী দল আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের জন্য। এমনকি তারা সম্পূর্ণভাবে দেশের মানুষের মানসিকতার বাইরে গিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়েছে, যা আসলে তাদের এক ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যে রাজনৈতিক দল জনগণের মনের আশা-আকাঙ্ক্ষার তোয়াক্কা করে না তাদের অবস্থা কেমন হতে পারে তা তো আমরা মুসলিম লীগকে দিয়েই জানি। বিএনপির সে রকম কিছু হোক তা কেউই চাইবে না, ভালো হোক মন্দ হোক দেশে একটি বিরোধী দল প্রয়োজন এবং সেটা গণতন্ত্রের স্বার্থেই।
বর্তমান সরকারের মেয়াদ আর বছরখানেক বাকি। এ সময়ে সরকারকে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় আরও বেশি সতর্ক ও সচেতন হতে হবে। এ মুহূর্তের কিছু উল্লেখযোগ্য অবস্থার কথা যদি আলোচনা করি তাহলে প্রথমেই আসবে তৈরি পোশাক শিল্পে অস্থিরতার বিষয়টি। আমরা জানি, কয়েক বছর ধরেই এ লাভজনক খাতকে অস্থিতিশীল করার জন্য দেশের ভেতর ও বাইরে বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়া চলছে। সরকার যে তা দমনে খুব সফলতার পরিচয় দিয়েছে তা নয় বরং বিভিন্ন সময়ে সরকার সাময়িকভাবে এ অচলাবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছে কিংবা বিবদমান পক্ষগুলোকে শান্ত করার চেষ্টা করেছে। ভেতরে ভেতরে আগুন ঠিকই জ্বলেছে। অন্তর্নিহিত কারণ যা-ই থাকুক না কেন, এর ফলে পুরো তৈরি পোশাক শিল্পই হুমকির মুখে পড়েছে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে তার বিরূপ প্রভাব পড়ছে_ এটাই সত্য। দেশের ওপর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব খুব একটা পড়েনি। কারণ সভ্য মানুষকে পোশাক পরতেই হয়। ফলে এ শিল্পের ওপর আঘাত এলেও তা তেমন একটা তীব্র ছিল না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে আমরা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতির জন্য কাজ করে চলেছি। মালিক পক্ষ দোষ দিচ্ছে শ্রমিকদের, শ্রমিকরা দোষ দিচ্ছে মালিক পক্ষের।
অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বিরোধী দলকে এ শিল্পে অস্থিরতার জন্য দায়ী করা হয়েছে। আমার মনে হয় না এ দাবি ধোপে টেকে, কারণ বিরোধী দল যদি সরকার-বিরোধিতার জন্য এ অশান্তি তৈরি করেও থাকে সরকারের উচিত তা কঠোর হাতে দমন করা। সব পক্ষকে খুশি করা যায় না_ এই বোধ আমাদের সবারই থাকতে হবে এবং সরকারকেও সেটা ভেবেই কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। কথায় কথায় শ্রমিকরা মারমুখী হয়ে রাস্তায় নেমে দেশের সম্পদ ধ্বংস করবে আর পুলিশ তাদের পেটাবে_ এ দৃশ্য দেখতে দেখতে তো চোখ পচে গেল। অন্যদিকে মালিক পক্ষও কেবল নিজেদের মুনাফা দেখবে আর শ্রমিকদের 'দাস' হিসেবে ব্যবহার করবে, সেদিনও তো আমরা পেছনে ফেলেই এসেছি। যে কোনো সুস্থ বিবেকবান মানুষই মনে করে, এ সমস্যার সমাধান রয়েছে। তবে হ্যাঁ, এ সমস্যার মধ্যে ইন্ধনদাতা ও রাষ্ট্রবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকেও সরকারকেই দমন করতে হবে। এদের নিয়ন্ত্রণ করে বিবদমান পক্ষগুলোকে নিয়ে সরকার যদি অবিলম্বে আলোচনায় না বসে তাহলে দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতির অবস্থা যে কী দাঁড়াবে তা ভেবে শঙ্কিত বোধ করছি।
ওদিকে মিয়ানমারের বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন প্রদেশে যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা দেখা দিয়েছে, তাতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে_ এও মনুষ্যসৃষ্ট সমস্যা এবং মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশ হিসেবে এ সমস্যা নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন জানাতে পারে কেবল, তার বাইরে এ বিপুলসংখ্যক শরণার্থীকে আশ্রয় দিতে গেলে যে মানবিক বিপর্যয়ের শিকার বাংলাদেশ হবে তা সামাল দেওয়ার কোনো ইনফ্রাস্ট্রাকচার বাংলাদেশের নেই। অতীতে এ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ বিভিন্ন কারণেই বিপদগ্রস্ত হয়েছে। এখন সময় এসেছে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের। অনেকেই হয়তো এ শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার মানবিক দিকটি নিয়ে কথা তুলবেন; কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন বিষয়। আমার মনে হয়, এখানে সব পক্ষকেই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি বিচার করতে হবে।
মোট কথা, এ মুহূর্তে ক্ষমতাসীন সরকারের সামনে বেশকিছু আতঙ্কজনক সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে দেশের ভেতরের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ করতে না পারাটাও একটি ইস্যু। এ অবস্থায় সরকারের কেবল বিরোধী দলের রাজনীতিকে টেক্কা দেওয়াটাই বড় ইস্যু নয়, এটা সরকারকে তো বুঝতে হবেই, সঙ্গে সঙ্গে জনগণকেও বোঝাতে হবে সরকার আসলে জনগণের সঙ্গেই আছে। মানুষের ভেতর থেকে একবার সরতে শুরু করলে বানের পানির মতো সেখানে কেবল বিরোধিতাই প্রবেশ করে, তাদের ফিরিয়ে আনা তখন অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ে। কথায় বলে, 'সব ভালো তার, শেষ ভালো যার'। সরকার যদি এই প্রবাদ বাক্যটিকে এ মুহূর্তের করণীয় নির্ধারণে প্রাধান্য দেয়, তাহলে নিশ্চয়ই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে।
মাসুদা ভাট্টি : সম্পাদক, একপক্ষ
masuda.bhatti@gmail.com
No comments