চরাচর-হারিয়ে যাচ্ছে মোরগ লড়াই by শরাফত হোসেন
চারপাশে জড়ো হয়ে হাততালি দিচ্ছে হাজারো মানুষ। তাদের তৈরি বৃত্তে প্রাণপণ লড়ে যাচ্ছে দুটি মোরগ। মোরগের লড়াই দেখতে আশপাশের গ্রাম থেকে ছুটে আসত মানুষ। এ খেলাকে কেন্দ্র করে তৈরি হতো উৎসবমুখর পরিবেশ। গ্রামবাংলার সচরাচর এই চিত্র সময়ের বিবর্তনে এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না।
ঐতিহ্যবাহী খেলা হিসেবে মোরগ লড়াইয়ের সুখ্যাতি থাকলেও লড়াইয়ের মোরগ এবং খেলার ঐতিহ্য- দুই-ই হারিয়ে যেতে বসেছে। মোগল আমল থেকেই বাংলাদেশসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় মোরগ লড়াই ছিল খুবই প্রসিদ্ধ খেলা। সাধারণ আদিবাসী ও কৃষিভিত্তিক সমাজে এ খেলাটি খুবই আকর্ষণীয় এবং ঐতিহ্যবাহী খেলা হিসেবেই বিবেচিত ছিল। শুধু এ দেশেই নয়, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মধ্যপ্রাচ্য ও ব্রাজিলে এ খেলাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ত সবার মধ্যে। তুরস্ক, আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ায় মোরগ লড়াই প্রায় জাতীয় পর্যায়ের খেলার অন্তর্ভুক্ত।
বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল এলাকায় এখনো মোরগ লড়াইয়ের ঐতিহ্য টিকে আছে, যদিও এর গৌরব দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। মোগল আমল থেকে শুরু করে দেওয়ানরা এ খেলা চালু রাখে। এখন স্থানীয় অধিবাসীরাই এর আয়োজন করে। একটি মোরগকে অন্য মোরগের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলে লড়াই বাধানো হয়। হার-জিতের মধ্য দিয়ে মোরগের দাম ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। লম্বা পা, ইগলের মতো চোখ, কম পালকের দুর্লভ প্রজাতির হাসলি মোরগ বাংলাদেশে লড়াইয়ের জন্য সেরা। মোরগের নিজস্ব ফ্লাইং কিকের স্টাইলগুলোকে মানুষ বিভিন্ন নামে চিত্রিত করে। যেমন- 'নিম', 'কড়ি', 'বাড়ি', 'ফাক', 'ছুট', 'কর্নার'- এগুলো বিভিন্ন আঘাতের নাম। চট্টগ্রামের বনাঞ্চলে আরেকটি বুনো মোরগ পাওয়া যায়, যার নাম 'আছিল'। অসম্ভব তেজি ও যোদ্ধা-প্রকৃতির মোরগ, দারুণ উড়তে পারে এরা। এদের পেছনের আঙুলটি এক ইঞ্চির বেশি লম্বা, দেখতে সূচালো পেরেকের মতো।
ভারতের বালেশ্বর এবং উত্তর উড়িষ্যার জনপদে মোরগ লড়াই খুবই জনপ্রিয় ও প্রসিদ্ধ খেলা। এ খেলা এখানে বীভৎস কায়দায় খেলানো হয়। মোরগের পায়ে স্টেইনলেস স্টিলের নখ ও ছোট্ট ছুরি বা ব্লেড-জাতীয় ধারালো অস্ত্র কায়দা করে বসানো হয়। কখনো বুঝে ওঠার আগেই মাথা থেকে দেহ, দেহ থেকে পা মুহূর্তের মধ্যেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। একটি মোরগ নিহত না হওয়া পর্যন্ত এ লড়াই চলে। ১৯৬০ সালে ভারত সরকার 'পশুক্লেশ নিবারণ আইন' পাস করে মোরগ লড়াই নিষিদ্ধ করে।
চীন দেশে মোরগ একটি সম্মানের প্রতীক। সে দেশে ১২টি চান্দ্ররাশিতে এক বছর হয়। তার মধ্যে একটি চান্দ্ররাশির নাম মোরগ। চীনারা বিশ্বাস করে, মোরগের পাঁচটি গুণের কারণে সবার কাছে আদর ও সম্মানের প্রাণী। তাদের ধারণা, 'মোরগের লাল ঝুঁটি পাণ্ডিত্যের লক্ষণ', 'সে শত্রুকে প্রতিহত করতে ভয় পায় না', 'সে দয়ালু, তাই খাবার অন্যকে দেয়', 'সে প্রত্যুষে সবার ঘুম ভাঙায়' এবং 'যথাসময়েই সে তার দায়িত্ব পালন করে'। চীনের কিংবদন্তি নেতা মাও সে তুং আধুনিক চীনের স্বপ্ন দেখে ঐতিহাসিক কবিতায় উদ্ধৃতি দিয়েছেন, 'মোরগের জোরালো ডাক চীনা জনগণের জন্য এনেছে মুক্তি ও স্বাধীনতা'। এ কথাটি চীনে প্রবাদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মোরগ নিয়ে পৃথিবীর বহু দেশে ছড়িয়ে আছে রাজ্যের সব উপকথা ও কাহিনী।
শরাফত হোসেন
বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল এলাকায় এখনো মোরগ লড়াইয়ের ঐতিহ্য টিকে আছে, যদিও এর গৌরব দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। মোগল আমল থেকে শুরু করে দেওয়ানরা এ খেলা চালু রাখে। এখন স্থানীয় অধিবাসীরাই এর আয়োজন করে। একটি মোরগকে অন্য মোরগের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলে লড়াই বাধানো হয়। হার-জিতের মধ্য দিয়ে মোরগের দাম ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। লম্বা পা, ইগলের মতো চোখ, কম পালকের দুর্লভ প্রজাতির হাসলি মোরগ বাংলাদেশে লড়াইয়ের জন্য সেরা। মোরগের নিজস্ব ফ্লাইং কিকের স্টাইলগুলোকে মানুষ বিভিন্ন নামে চিত্রিত করে। যেমন- 'নিম', 'কড়ি', 'বাড়ি', 'ফাক', 'ছুট', 'কর্নার'- এগুলো বিভিন্ন আঘাতের নাম। চট্টগ্রামের বনাঞ্চলে আরেকটি বুনো মোরগ পাওয়া যায়, যার নাম 'আছিল'। অসম্ভব তেজি ও যোদ্ধা-প্রকৃতির মোরগ, দারুণ উড়তে পারে এরা। এদের পেছনের আঙুলটি এক ইঞ্চির বেশি লম্বা, দেখতে সূচালো পেরেকের মতো।
ভারতের বালেশ্বর এবং উত্তর উড়িষ্যার জনপদে মোরগ লড়াই খুবই জনপ্রিয় ও প্রসিদ্ধ খেলা। এ খেলা এখানে বীভৎস কায়দায় খেলানো হয়। মোরগের পায়ে স্টেইনলেস স্টিলের নখ ও ছোট্ট ছুরি বা ব্লেড-জাতীয় ধারালো অস্ত্র কায়দা করে বসানো হয়। কখনো বুঝে ওঠার আগেই মাথা থেকে দেহ, দেহ থেকে পা মুহূর্তের মধ্যেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। একটি মোরগ নিহত না হওয়া পর্যন্ত এ লড়াই চলে। ১৯৬০ সালে ভারত সরকার 'পশুক্লেশ নিবারণ আইন' পাস করে মোরগ লড়াই নিষিদ্ধ করে।
চীন দেশে মোরগ একটি সম্মানের প্রতীক। সে দেশে ১২টি চান্দ্ররাশিতে এক বছর হয়। তার মধ্যে একটি চান্দ্ররাশির নাম মোরগ। চীনারা বিশ্বাস করে, মোরগের পাঁচটি গুণের কারণে সবার কাছে আদর ও সম্মানের প্রাণী। তাদের ধারণা, 'মোরগের লাল ঝুঁটি পাণ্ডিত্যের লক্ষণ', 'সে শত্রুকে প্রতিহত করতে ভয় পায় না', 'সে দয়ালু, তাই খাবার অন্যকে দেয়', 'সে প্রত্যুষে সবার ঘুম ভাঙায়' এবং 'যথাসময়েই সে তার দায়িত্ব পালন করে'। চীনের কিংবদন্তি নেতা মাও সে তুং আধুনিক চীনের স্বপ্ন দেখে ঐতিহাসিক কবিতায় উদ্ধৃতি দিয়েছেন, 'মোরগের জোরালো ডাক চীনা জনগণের জন্য এনেছে মুক্তি ও স্বাধীনতা'। এ কথাটি চীনে প্রবাদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মোরগ নিয়ে পৃথিবীর বহু দেশে ছড়িয়ে আছে রাজ্যের সব উপকথা ও কাহিনী।
শরাফত হোসেন
No comments