পাল্টা হামলার অভিযোগ এটিএন কর্মীদের-সাংবাদিক নেতার ওপর এটিএন বাংলার কর্মীদের হামলা

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে এক সাংবাদিক নেতার ওপর হামলা চালিয়েছেন এটিএন বাংলার একদল সাংবাদিক। তবে এটিএন বাংলার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তাঁরা কারও ওপর হামলা চালাননি। উল্টো তাঁদের ওপরই হামলা হয়েছে।


আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ ঘটনা ঘটে। সাগর-রুনি হত্যার বিচার ও সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে আজ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পূর্বঘোষিত মানববন্ধন কর্মসূচি ছিল।
দুপুর ১২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে মানববন্ধন শুরুর আগে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান বক্তব্য দেন। এ সময় তিনি এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমানকে গ্রেপ্তার এবং তাঁর মালিকানাধীন দুটি চ্যানেলের সাংবাদিকদের মালিকের দোসর বলে আখ্যা দেন। তিনি এটিএন বাংলা ঘেরাও করারও দাবি জানান।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকেরা জানান, জাহাঙ্গীর আলমের বক্তব্য চলাকালে এটিএন বাংলার সাংবাদিক শওকত মিল্টন এমন বক্তব্য দেওয়ার কারণ জানতে চান। বাদানুবাদের একপর্যায়ে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে এটিএন বাংলার কর্মীদের হাতাহাতি হয়। এ সময় এটিএন বাংলার সাংবাদিক জ. ই মামুন, এস এম বাবু, রাহাত মিনহাজসহ কয়েকজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। এটিএন বাংলার কয়েকজন সাংবাদিক জাহাঙ্গীরকে ধাক্কা দিয়ে প্রেসক্লাবের ভেতর নিয়ে যান। এ সময় তাঁকে কিলঘুষি দেওয়া হয়। প্রেসক্লাবের ভেতর থেকে কয়েকজন সাংবাদিক লাঠি হাতে জাহাঙ্গীরের পক্ষ নিয়ে এটিএন বাংলার কর্মীদের পাল্টা ধাওয়া দেন। এ সময় প্রেসক্লাব এলাকায় তুমুল হট্টগোল শুরু হয়। পরে এটিএন বাংলার কর্মীদের জাতীয় প্রেসক্লাবের ভেতর থেকে বের করে দেন সাংবাদিকেরা। সাংবাদিক নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হলে প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে আবারও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
ঘটনার প্রতিবাদে এবং সাগর-রুনী হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সমাবেশ থেকে আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বেলা ১১টায় মানববন্ধন ও সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। মাহফুজুর রহমানের পক্ষে না দাঁড়িয়ে সাগর-রুনী হত্যার বিচারের দাবিতে সাংবাদিকদের আজকের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার জন্য শিল্পীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা।
কর্মসূচিতে বিএফইউজের একাংশের সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে সাংবাদিকদের মধ্যে যে ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে, টক শো করে, মানববন্ধনে হামলা চালিয়ে, শিল্পীদের দিয়ে মানববন্ধন করিয়ে তা নষ্ট করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘এটিএন বাংলার চেয়ারম্যানকে সাংবাদিকেরা দুঃখ প্রকাশ করতে বলেননি। তিনি রুনী সম্পর্কে আপত্তিকর ও মানহানিকর যে বক্তব্য দিয়েছেন, এটা তাঁকে প্রমাণ করতে হবে। এটা প্রমাণ না করতে পারলে সাংবাদিক সমাজ তাঁর বিচার করবে। আর প্রমাণ করতে পারলে সাংবাদিকেরাই তাঁর কাছে ক্ষমা চাইবে।’
এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজের সংবাদকর্মীদের উদ্দেশে ইকবাল সোবহান বলেন, ‘বিবেকের কাছে প্রশ্ন করে আপনাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আপনারা আপনাদের চেয়ারম্যান না সহকর্মী সাগর-রুনির পক্ষে থাকবেন।’
বিএফইউজের অপর অংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, ‘কেন শিল্পী সমাজকে আপনার (এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান) পক্ষে বক্তব্য দেওয়ার জন্য দাঁড় করাতে হবে, টক শো, মানববন্ধন করাতে হবে।’ প্রয়োজনে সাংবাদিক সমাজ এটিএন বাংলা ঘেরাও করবে বলেও জানান তিনি।
বিএফইউজের একাংশের মাহসচিব শওকত মাহমুদ বলেন, সাংবাদিকদের কর্মসূচি কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, এটি অশালীন বক্তব্যের বিরুদ্ধে। চক্রান্তকারীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে মানববন্ধন ভণ্ডুল করার জন্য হামলা চালিয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
এটিএন বাংলার সাংবাদিক ভানু রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘এটা ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। একজন সহকর্মী যদি আমাদের খুনি বলে, তাহলে তা আমাদের আঘাত করে।’
সমাবেশে সাংবাদিক নেতাদের মধ্যে আব্দুল জলিল ভুইয়া, শাহ আলমগীর, আলতাফ মাহমুদ, কামাল উদ্দিন সবুজ, আবদুস শহীদ, ওমর ফারুক, মুহাম্মদ বাকের হোসাইন, নাসিমুন আরা হক, সাখাওয়াত হোসেন, সাজ্জাদ আলম খান, শাবান মাহমুদ প্রমুখ বক্তব্য দেন। তাঁরা প্রত্যেকে ঘটনার নিন্দা জানান এবং এটিএন বাংলার চেয়ারম্যানের বক্তব্য ও সাম্প্রতিক ভূমিকার সমালোচনা করেন।

এটিএন বাংলার সংবাদ সম্মেলন
সাংবাদিক নেতার ওপর হামলার ঘটনা অস্বীকার করেছেন এটিএন বাংলার বার্তাপ্রধান জ. ই. মামুন। আজ সন্ধ্যায় এটিএন বাংলা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘গতকাল মানববন্ধন শুরুর আগেই সাংবাদিক নেতা পরিচয়ে একজন এটিএন বাংলার সাংবাদিকদের খুনি অভিযুক্ত করে এটিএন বাংলার অফিস ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেন। আমাদের একজন সহকর্মী এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ করলে ওই সাংবাদিক নেতা ক্ষিপ্ত ও মারমুখী হয়ে ওঠেন।’
জ ই মামুন বলেন, ‘অন্য সাংবাদিকদের সঙ্গে আমি সেখানে গিয়ে ঘটনা জানার চেষ্টা করি। কিন্তু আকস্মিকভাবে কিছু লোক আমাদের ওপর এসে হামলা চালায়।’
জড়িতদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার: সাংবাদিকদের চারটি ইউনিয়ন, জাতীয় প্রেসক্লাব এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি সাংবাদিক নেতার ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত এটিএন বাংলার সাংবাদিক-কর্মীদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মানববন্ধন শেষে সাংবাদিক নেতাদের যৌথ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন জানান, ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে যাঁরা হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাঁদের নিজ নিজ সংগঠন থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সভায় হামলার ঘটনায় এটিএন বাংলা এবং এটিএন নিউজ যে সংবাদ প্রচার করেছে তা উদ্দেশ্যমূলক, বিভ্রান্তিকর ও অসত্য বলে দাবি করা হয়। সভার বরাত দিয়ে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমানের কিছু ভাড়াটে উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি এই নিন্দনীয় হামলা চালিয়েছে।
সম্প্রতি মাহফুজুর রহমান লন্ডনে সাগর-রুনি হত্যা নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য দেন। সাংবাদিক সমাজ এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে মাহফুজুর রহমানকে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানায়। পরে মাহফুজুর রহমান এ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। গতকাল শনিবার শিল্পী সমাজের ব্যানারে কয়েকজন শিল্পী, পরিচালক ও প্রযোজক মাহফুজুর রহমানের পক্ষে বক্তব্য দেন। কাল সোমবারও জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মাহফুজুর রহমানের পক্ষে শিল্পীদের কর্মসূচি রয়েছে। এসব তত্পরতায় সাংবাদিকেরা আরও বেশি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন।

No comments

Powered by Blogger.