শুভাঢ্যা খাল-দখলদারিত্বের অবসান হবে না?
রাজধানীর নদী-খাল ও জলাশয়গুলো নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অবসান হচ্ছে না কিছুতেই। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা, নাগরিক সমাজের তৎপরতা, পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর নিরন্তর কর্মসূচির পরও থেমে নেই দখল-পুনর্দখল, দূষণসহ নানা ক্ষতিকর তৎপরতা। এক শুভাঢ্যা খাল নিয়ে কয়েক বছরে যা হয়েছে তা পর্যালোচনা করলেই বেরিয়ে আসতে পারে জলাশয় নিয়ে ক্ষমতাবানদের অপতৎপরতার ইতিহাস।
বুড়িগঙ্গার শাখা শুভাঢ্যা। একসময় এ খাল দিয়ে বয়ে যেত স্বচ্ছ জলের ধারা। নৌকা চলত সমানে। বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরীর সংযোগ ঘটায় বলে এ খালের গুরুত্বও ছিল অপরিসীম। কিন্তু প্রতিটি সরকারের আমলেই রাজনৈতিক ক্ষমতাধরদের রোষের শিকার হয়েছে এ খাল। দু'ধারের জমি দখল করে একে বানানো হয়েছে জীর্ণশীর্ণ। বিএনপি আমলে বিএনপিপন্থি দখলদাররা এগিয়ে এসেছে শুভাঢ্যা দখলে। আওয়ামী লীগ আমলে আওয়ামীপন্থিরা। মাঝে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শুধু ব্যতিক্রম দেখা গেছে। তখন শুভাঢ্যা দখলমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন করে ছবির মতো সাজানো হয়েছিল। সে ছবি ছবিই থেকে গেছে। নতুন যে ছবি প্রকাশিত হয়েছে সমকালের পাতায় সেদিকে তাকানো যায় না। শুভাঢ্যা নতুন করে শুশ্রূষা পায়নি। বরং পুনর্দখল হয়ে গেছে এর দুই পাড়। খাল পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। নৌকা চলার উপায় নেই। পানি দূষিত ও দুর্গন্ধময়। শুধু দলীয় লোকেরাই নয়, সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও খাল দখলের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। এ অবস্থায় শুভাঢ্যা পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন বাস্তবে আনা সত্যিই খুব কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিহাসের ব্যাপার হলো, খাল খনন ও সংস্কারের নামে লোপাট হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। খাল খননের দায়িত্ব যাদের দেওয়া হয়েছে তাদের ভূমিকা বিতর্কিত। শুভাঢ্যা পুনরুদ্ধার জরুরি। পুনরুদ্ধারের জন্য দরকার খনন। কিন্তু শুধু খননে কি কাজ হবে? দু'ধারের দখলদারদের না সরালে খনন আবার ভরাট হবে, আবার দূষণ ও দুর্গন্ধ ছড়াবে। আর দু'ধারের দখলদারদের সরাতে হলে চাই সরকারের কঠোর মনোভাব। দখলদারদের প্রতি শৈথিল্য দেখালে খাল আর ফেরত আসবে না। প্রশ্ন হলো, শুভাঢ্যা উদ্ধারে সেই আন্তরিক উদ্যোগের দেখা কি কখনও মিলবে?
No comments