সৌদিতে আটক ৪০০ 'রোহিঙ্গা' ফেরত আনার চাপে বাংলাদেশ by মেহেদী হাসান
সৌদি আরবে অবস্থানরত প্রায় ৪০০ লোক নিজেদের অব্যাহতভাবে রোহিঙ্গা বলে দাবি করলেও তাদের পাসপোর্ট বাংলাদেশের। মিয়ানমারের কর্মকর্তারাও তাদের নিজেদের দেশের নাগরিক হিসেবে মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। ফলে নানা অপরাধে কারাগারে আটক ওই ব্যক্তিদের ফেরত আনার জন্য সৌদি সরকার বাংলাদেশকেই চাপ দিয়ে যাচ্ছে।
সৌদি সরকারের দাবি, ওই ব্যক্তিরা যেহেতু বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী, তাই বাংলাদেশকে ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করে তাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। ঢাকায় কূটনৈতিক সূত্রগুলো সৌদি আরবে কয়েক শ রোহিঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কের জটিলতার কথা স্বীকার করে বলেছে, বিষয়টি অনেক বছর ধরে ঝুলে আছে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো অগ্রগতির জন্য এই জটিলতা নিরসনের চেষ্টা চলছে।
এদিকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের কাছে আটক হওয়া কথিত বাংলাদেশিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মিয়ানমারের নাগরিক বলে সরেজমিন পরিদর্শনের সময় সরকারি কর্মকর্তারা নিশ্চিত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ থেকে কতসংখ্যক রোহিঙ্গা সৌদি আরব গেছে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট কূটনীতিকরা ধারণা করছেন, এ সংখ্যা কয়েক হাজার পর্যন্ত হতে পারে। তাদের বেশির ভাগই মক্কা, মদিনা ও জেদ্দায় অবস্থান করছে। বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পরপরই সত্তরের দশকের শেষ দিকে এবং আশির দশকের শুরুর দিকে সৌদি আরবে অবস্থানরত অনেক রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেওয়া হয়। ১৯৯২ সালের পর বাংলাদেশে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ফলে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী রোহিঙ্গার সংখ্যাও বেড়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কূটনীতিক গত বুধবার কালের কণ্ঠকে বলেন, সৌদি সরকার মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে থাকে। এ সুযোগে বাংলাদেশিদেরও কেউ কেউ সৌদি আরবে গিয়ে নিজেকে 'রোহিঙ্গা' বলে দাবি করে সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু এতে করে আরো জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, সৌদি সরকার পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনার নিরাপত্তার স্বার্থে আটক প্রায় ৪০০ জনের নামে ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশকে বারবার অনুরোধ জানিয়ে আসছে। ওই ব্যক্তিরা নিজেদের রোহিঙ্গা বলে দাবি করলেও মিয়ানমারের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা মিয়ানমারের নাগরিক নয়। এরপর বাংলাদেশের ওপর চাপ আরো বাড়িয়ে সৌদি সরকার বলেছে, তাদের বেশির ভাগই বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরবে গিয়েছিল।
গত মার্চে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির সৌদি আরব সফরের সময় এ বিষয়ে আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। জানা গেছে, বিভিন্ন অপরাধে সাজা ভোগের পর প্রায় ৪০০ লোক বর্তমানে মক্কা ও জেদ্দায় বহিষ্কার হওয়ার অপেক্ষায় আছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, জেদ্দায় বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. নাজমুল ইসলাম গত জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মক্কা অঞ্চলের প্রধান মোহাম্মদ এ তায়েবের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের মূল বিষয় ছিল রোহিঙ্গা বলে দাবিদার ব্যক্তিদের নামে ট্রাভেল পারমিট দিয়ে তাদেরকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো আরো জানায়, ওই বৈঠকে রাষ্ট্রদূত তায়েব বাংলাদেশ ও সৌদি সম্পর্কের স্বার্থে এই ইস্যুটি দ্রুত সমাধানের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি আরো বলেছেন, সৌদি আরবে অবস্থানরত বাংলাদেশি কর্মীদের আকামা নবায়ন এবং নতুন করে ভিসা ইস্যুর বিষয়টিও ওই ৪০০ ব্যক্তিকে ফিরিয়ে আনার সঙ্গে সম্পর্কিত।
নাগরিকত্বযুক্ত পাসপোর্টের কারণেই সমস্যা : কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের অনেকের হাতেই এখন বাংলাদেশের পাসপোর্ট রয়েছে, যা এ দেশের নাগরিকরাই পেয়ে থাকে। অথচ পাকিস্তান সে দেশ থেকে সৌদি আরবে যাওয়া রোহিঙ্গাদের 'নাগরিকত্ববিহীন বিশেষ পাসপোর্ট' দিয়েছে। সৌদি আরবে বাংলাদেশ মিশন থেকেও ২০০২ সালে সরকারকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, পাকিস্তানের অনুরূপ ব্যবস্থা অবলম্বন করার জন্য। তাতে করে রোহিঙ্গাদের অপকর্মের দায়ভার বাংলাদেশিদের ওপর পড়বে না। আবার রোহিঙ্গাদের ফেরত আনার দায়িত্বও বাংলাদেশের ওপর বর্তাবে না। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে রোহিঙ্গাদের যেকোনো ধরনের পাসপোর্ট দেওয়ার প্রস্তাব নাকচ করা হয়। সূত্র জানায়, ভবিষ্যৎ জটিলতা এড়াতেই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা : প্রায় ৪০০ ব্যক্তিকে ফিরিয়ে আনার ইস্যুতে বাংলাদেশ তৃতীয় পক্ষের সঙ্গে কাজ করছে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে কাজ করে এমন সংস্থার সঙ্গেও সরকার এ ব্যাপারে কথা বলেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশা করছে, সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে।
আন্দামানে আটক বাংলাদেশিদের মধ্যেও রোহিঙ্গা : সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি আটক হওয়া কথিত বাংলাদেশিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রোহিঙ্গা রয়েছে বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে। সংশ্লিষ্ট এক কূটনীতিক কালের কণ্ঠকে জানান, গত বছরের মাঝামাঝি বাংলাদেশি কর্মকর্তারা ভারতে গিয়ে আটক ওই ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন। আটক ব্যক্তিদের অনেকে নিজেকে রোহিঙ্গা বলে স্বীকার করেছে। আবার অনেকে তাদের ঠিকানা হিসেবে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলোর ঠিকানা দিয়েছে। ওই কূটনীতিক জানান, বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের পর অন্যত্র যাওয়ার পথে তারা আটক হয়েছে। বাংলাদেশি না হলে তাদের ফিরিয়ে আনা হবে না বলে তিনি জানান।
এদিকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের কাছে আটক হওয়া কথিত বাংলাদেশিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মিয়ানমারের নাগরিক বলে সরেজমিন পরিদর্শনের সময় সরকারি কর্মকর্তারা নিশ্চিত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ থেকে কতসংখ্যক রোহিঙ্গা সৌদি আরব গেছে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট কূটনীতিকরা ধারণা করছেন, এ সংখ্যা কয়েক হাজার পর্যন্ত হতে পারে। তাদের বেশির ভাগই মক্কা, মদিনা ও জেদ্দায় অবস্থান করছে। বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পরপরই সত্তরের দশকের শেষ দিকে এবং আশির দশকের শুরুর দিকে সৌদি আরবে অবস্থানরত অনেক রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেওয়া হয়। ১৯৯২ সালের পর বাংলাদেশে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ফলে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী রোহিঙ্গার সংখ্যাও বেড়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কূটনীতিক গত বুধবার কালের কণ্ঠকে বলেন, সৌদি সরকার মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে থাকে। এ সুযোগে বাংলাদেশিদেরও কেউ কেউ সৌদি আরবে গিয়ে নিজেকে 'রোহিঙ্গা' বলে দাবি করে সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু এতে করে আরো জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, সৌদি সরকার পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনার নিরাপত্তার স্বার্থে আটক প্রায় ৪০০ জনের নামে ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশকে বারবার অনুরোধ জানিয়ে আসছে। ওই ব্যক্তিরা নিজেদের রোহিঙ্গা বলে দাবি করলেও মিয়ানমারের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা মিয়ানমারের নাগরিক নয়। এরপর বাংলাদেশের ওপর চাপ আরো বাড়িয়ে সৌদি সরকার বলেছে, তাদের বেশির ভাগই বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরবে গিয়েছিল।
গত মার্চে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির সৌদি আরব সফরের সময় এ বিষয়ে আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। জানা গেছে, বিভিন্ন অপরাধে সাজা ভোগের পর প্রায় ৪০০ লোক বর্তমানে মক্কা ও জেদ্দায় বহিষ্কার হওয়ার অপেক্ষায় আছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, জেদ্দায় বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. নাজমুল ইসলাম গত জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মক্কা অঞ্চলের প্রধান মোহাম্মদ এ তায়েবের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের মূল বিষয় ছিল রোহিঙ্গা বলে দাবিদার ব্যক্তিদের নামে ট্রাভেল পারমিট দিয়ে তাদেরকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো আরো জানায়, ওই বৈঠকে রাষ্ট্রদূত তায়েব বাংলাদেশ ও সৌদি সম্পর্কের স্বার্থে এই ইস্যুটি দ্রুত সমাধানের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি আরো বলেছেন, সৌদি আরবে অবস্থানরত বাংলাদেশি কর্মীদের আকামা নবায়ন এবং নতুন করে ভিসা ইস্যুর বিষয়টিও ওই ৪০০ ব্যক্তিকে ফিরিয়ে আনার সঙ্গে সম্পর্কিত।
নাগরিকত্বযুক্ত পাসপোর্টের কারণেই সমস্যা : কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের অনেকের হাতেই এখন বাংলাদেশের পাসপোর্ট রয়েছে, যা এ দেশের নাগরিকরাই পেয়ে থাকে। অথচ পাকিস্তান সে দেশ থেকে সৌদি আরবে যাওয়া রোহিঙ্গাদের 'নাগরিকত্ববিহীন বিশেষ পাসপোর্ট' দিয়েছে। সৌদি আরবে বাংলাদেশ মিশন থেকেও ২০০২ সালে সরকারকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, পাকিস্তানের অনুরূপ ব্যবস্থা অবলম্বন করার জন্য। তাতে করে রোহিঙ্গাদের অপকর্মের দায়ভার বাংলাদেশিদের ওপর পড়বে না। আবার রোহিঙ্গাদের ফেরত আনার দায়িত্বও বাংলাদেশের ওপর বর্তাবে না। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে রোহিঙ্গাদের যেকোনো ধরনের পাসপোর্ট দেওয়ার প্রস্তাব নাকচ করা হয়। সূত্র জানায়, ভবিষ্যৎ জটিলতা এড়াতেই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা : প্রায় ৪০০ ব্যক্তিকে ফিরিয়ে আনার ইস্যুতে বাংলাদেশ তৃতীয় পক্ষের সঙ্গে কাজ করছে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে কাজ করে এমন সংস্থার সঙ্গেও সরকার এ ব্যাপারে কথা বলেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশা করছে, সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে।
আন্দামানে আটক বাংলাদেশিদের মধ্যেও রোহিঙ্গা : সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি আটক হওয়া কথিত বাংলাদেশিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রোহিঙ্গা রয়েছে বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে। সংশ্লিষ্ট এক কূটনীতিক কালের কণ্ঠকে জানান, গত বছরের মাঝামাঝি বাংলাদেশি কর্মকর্তারা ভারতে গিয়ে আটক ওই ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন। আটক ব্যক্তিদের অনেকে নিজেকে রোহিঙ্গা বলে স্বীকার করেছে। আবার অনেকে তাদের ঠিকানা হিসেবে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলোর ঠিকানা দিয়েছে। ওই কূটনীতিক জানান, বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের পর অন্যত্র যাওয়ার পথে তারা আটক হয়েছে। বাংলাদেশি না হলে তাদের ফিরিয়ে আনা হবে না বলে তিনি জানান।
No comments