মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল-সুন্দর ভবিষ্যতের হাতছানি
মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। বিশেষভাবে অভিনন্দন জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের। তাদের এ কৃতিত্ব পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের জন্য অশেষ আনন্দ-উৎসবের কারণ হয়ে উঠেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হয়েছে গর্বিত। শিক্ষাজীবনের পরবর্তী ধাপগুলোতে এ ধারা বজায় রাখবে, এটাই প্রত্যাশিত।
জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যায় প্রতি বছরেই রেকর্ড হচ্ছে_ এবারও ব্যতিক্রম নয়। মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানের ৮২ হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রী প্রতিটি বিষয়ে ৮০ শতাংশ কিংবা তারও বেশি নম্বর পেয়েছে। এ এক অনন্য অর্জন। শিক্ষার বিস্তৃতিও লক্ষণীয়। এবার ১৪ লাখ ১২ হাজার ছাত্রছাত্রী পরীক্ষা দিয়েছে এবং তাদের মধ্যে ১২ লাখ ১৯ হাজার পাস করেছে। বাংলাদেশ জনবহুল, কিন্তু তারপরও এত বিপুলসংখ্যক ছাত্রছাত্রীর শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অতিক্রমকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখার উপায় নেই। প্রকৃতই বাংলাদেশ শিক্ষিত মানবসম্পদ তৈরির উপযুক্ত ক্ষেত্র হয়ে উঠছে। আমাদের প্রিয় স্বদেশকে আরও সুন্দর ও সমৃদ্ধ করে তোলায় তারা যেন যথাযথ অবদান রাখতে পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টির দায়িত্ব শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সবার। সরকারের যেমন দায় রয়েছে, তেমনি করণীয় সমাজেরও। পাসের হার ৮৬ শতাংশের বেশি, এতে সন্তুষ্টির কারণ রয়েছে। সৃজনশীল পদ্ধতিতে প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের জন্য এখন আর ভীতির কারণ নেই, বরং এর মাধ্যমে মেধাবী ও অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী সবার জন্য নিজেকে ভালোভাবে তুলে ধরার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষকরাও আরও বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন ছাত্রছাত্রীদের গড়ে তোলার জন্য। তবে এখানেই থেমে থাকা চলবে না। এখনও নিচু শ্রেণীগুলোতে যে বিপুলসংখ্যক ছাত্রছাত্রী ঝরে পড়ছে, তা বন্ধ করা চাই। পড়াশোনার মান বাড়ানোর তাগিদও প্রবল। এ জন্য উপযুক্ত শিক্ষক নিয়োগের পাশাপাশি দক্ষ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনেও মনোযোগী হতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। কমিটিগুলোতে দলীয় লোকদের বসানোর কুফল বহু প্রতিষ্ঠানে অনুভূত হচ্ছে। তারা শিক্ষক নিয়োগে প্রভাব বিস্তার করে, দুর্নীতি-অনিয়মে উৎসাহ দেয়। শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য আরও কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে। যেমন_ গ্রামাঞ্চলে যেসব প্রতিষ্ঠানের ফল খারাপ হচ্ছে সেগুলোতে উপযুক্ত শিক্ষক নিয়োগে উদ্যোগ নিতে হবে। গ্রামে মেধাবীরা শিক্ষকতার পেশা নিয়ে তখনই যাবেন যখন পর্যাপ্ত সুবিধা মিলবে। শহর ও গ্রাম সব প্রতিষ্ঠানেই তথ্যপ্রযুক্তি সুবিধাকে পাঠদানের জন্য কাজে লাগানো হচ্ছে। উপযুক্ত শিক্ষক থাকলে এ কাজ আরও ভালোভাবে করা যাবে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের কাজেও মনোযোগী হতে হবে। এ জন্য যেমন বাজেট দরকার তেমনি চাই উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদারকি বাড়ানোও দরকার রয়েছে। নিয়মিত পড়াশোনা হচ্ছে কি-না সেটা দেখতে আরও বেশি বেশি করে পরিদর্শনে যেতে হবে। এর ফলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়ের মধ্যেই সচেতনতা সৃষ্টি হবে। মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য আমাদের আরও আশাবাদী করে তোলে। বিপুলসংখ্যক মেধাবী তরুণ-তরুণী জ্ঞানের মশাল নিয়ে দৃঢ়পণে সামনে এগিয়ে চলছে। তাদের এ চলা বিঘ্নহীন হোক, দেশের কল্যাণ ও মঙ্গলের জন্য তারা থাকুক নিবেদিত_ এটাই কামনা।
No comments