রাজনীতি-ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না by ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল
বাংলাদেশ ও বাঙালির ইতিহাসে দীর্ঘতম অংশ আলোকিত করেছেন জাতির জনক বঙ্গবল্পুব্দ শেখ মুজিবুর রহমান। মানবজাতি ও সভ্যতার সর্বোত্তম কৃতিত্ব হলো রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। বাঙালির ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম কাজটি করেছেন বঙ্গবল্পুব্দ। তাই তো তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি।
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। ঘোরতর অন্ধকার, বেদনা ও বিষাদের দিন। বাঙালির ইতিহাসের এ অন্ধকার সময়ের খলনায়কদের উদ্দেশ্য ব্যক্ত করতে গিয়ে যে বিষয়গুলো আমাদের ভাবিত করে তার মধ্যে মোটাদাগের কয়েকটি উল্লেখ করা যেতে পারে_ প্রথমত, ঘাতকচক্রের লক্ষ্য ছিল বাঙালির স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করা এবং সাম্প্রদায়িক পাক সংস্কৃতির পুনঃপ্রবর্তন। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের সমন্বিত প্রগতির চাকাকে প্রতিহত করা। তৃতীয়ত, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের গ্গ্নানির প্রতিশোধ নেওয়ার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান নেতৃত্ব নিশ্চিহ্ন করা। চতুর্থত, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী রাজাকার চক্রের রাজত্ব কায়েম করা। অর্থাৎ সমগ্র জাতিকে পাকিস্তানি সাম্প্রদায়িক পরিবেশ-পরিস্থিতিতে ফিরিয়ে নেওয়া। এ রাজাকার-স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের উত্থানের মাধ্যমে সত্যি সত্যিই বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে কালো ছায়ার বিস্তার ঘটেছিল।
১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড মানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা করা। এ হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং রাজাকারদের রাষ্ট্রীয় পদে পদায়ন পাকাপোক্ত হয়। আসলে ১৫ আগস্ট খালেদা-নিজামীদের নবচৈতন্যের দিন। পাকিস্তানি চেতনা পুনর্জন্মের দিন।
ঘাতকরা মধ্য আগস্টে নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর জেলখানায় ৩ নভেম্বর খন্দকার মোশতাকের মদদে চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করে। বাংলাদেশের চেতনাকে ধ্বংস করার কর্মযজ্ঞে নিয়োজিত থাকে। বিরাজনীতি প্রক্রিয়া শুরু করে ক্ষমতা গ্রহণ করে উর্দি পরা জেনারেল দম্ভে বিভোর হয়ে ঘোষণা করেন_ 'আমি রাজনীতিকদের রাজনীতি করার পথ জটিল করে তুলব।' পরে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বিস্তার করতে থাকেন ষড়যন্ত্রের জাল। সেনাছাউনিতে বসে প্রশাসনের সহায়তায় গড়ে তোলেন বাংলাদেশের চেতনাবিরোধী রাজনৈতিক দল। একে একে ধ্বংস করেন বাংলাদেশের শাসনতন্ত্রের চার মৌলনীতি। শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধা নিধনযজ্ঞ।
নৌবিহারের নামে মেধাবী ছাত্রদের রাজনীতিতে টানার পাঁয়তারা চলে। লাখ লাখ যুবককে দুর্নীতির পঙ্কিল পথে ঠেলে দেওয়া হয়। এ যুবকদের মধ্যে হাটবাজার ইজারা দিয়ে সূচনা করা হয় দলীয় সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির সংস্কৃতি। সংগঠিত করা হয় সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকদের, যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের শুধু বিরোধিতাই করেননি, সরাসরি জড়িত ছিলেন হত্যা, লুট, ধর্ষণ ও জনপদে অগি্নসংযোগে। মন্ত্রিসভায় নিয়োগ দেওয়া হয় রাজাকার, আলবদরের পোষক স্বাধীনতাবিরোধী হানাদার বাহিনীর এ দেশীয় যুদ্ধাপরাধীদের।
হাজার বছর ধরে অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জনমানসে যে মৈত্রী ও সম্প্রীতি গড়ে উঠেছে নিজামী-মুজাহিদরা তা ছিন্ন করার জন্য বিভিন্ন নামে জঙ্গি সংগঠন সৃষ্টি করেন। বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য শুরু হয় জিহাদি তৎপরতা। সারাদেশে একই দিনে, একই সময়ে বোমা ফাটানোর মাধ্যমে জানান দেয় নিজামী-মুজাহিদদের অপশক্তির বিস্তৃতি ও সামর্থ্যের কথা। কাঁধে চড়া পাকিস্তানি ভূতে আক্রান্ত জঙ্গিরা তৎকালীন জোট সরকারের মদদে ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সভায় গ্রেনেড হামলা চালায়। উদ্দেশ্য শেখ হাসিনাকে হত্যা করা। অলৌকিকভাবে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। আইভি রহমানসহ ২৪ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী নির্মমভাবে নিহত হন সেই গ্রেনেড হামলায়। আহত হন শত শত মানুষ। দায় এড়াতে সাজানো হয় জজ মিয়া নাটক। তার পরের কাহিনী সবার জানা। ১৯৭৫-পরবর্তী সরকারগুলোর সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাংক, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল ও কোচিং সেন্টারে বিনিয়োগ হয়েছে লাখো-কোটি টাকা। বিনিয়োগকৃত এ টাকার মুনাফা অর্থায়ন হয়েছে জঙ্গি ও জিহাদি কর্মকাণ্ডে।
বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতিতে ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পর কতগুলো নিষ্ঠুর ও লজ্জাজনক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। ১৫ আগস্টের জাতীয় শোক দিবসে জন্মদিন ও আনন্দ-উৎসবের প্রচলন। এমন দিনে কেক কাটা কতই না অমানবিক। বিবেকবান মানুষ বলতে পারেন কি একজন মানুষের কয়টি জন্মদিন হতে পারে? আমরা দেখতে পাই খালেদা জিয়ার তিন-তিনটি জন্মদিন। শিক্ষাজীবনের দলিলপত্রে একটি জন্মদিন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্রীয় ঘোষণাপত্রে একটা জন্মদিন এবং ১৫ আগস্টে সর্বশেষ জন্মদিন। এতে স্বাভাবিকভাবেই প্রতীয়মান হয়, ১৫ আগস্ট যারা জন্মদিন হিসেবে কেক কাটতে পারেন তারাই ১৫ আগস্ট ট্র্যাজেডি মঞ্চায়নে জড়িত ছিলেন। তাই তো তারা জাতীয় শোক দিবসে জন্মোৎসব পালন করে উলঙ্গ উল্লাসে মেতে ওঠেন। এটাই তো ইতিহাসের নিষ্ঠুর রসিকতা। তবে ইতিহাস কাউকেই ক্ষমা করে না।
হত্যা ও ষড়যন্ত্রের খলনায়করা তলিয়ে যাবে ইতিহাসের আবর্জনায়। বাঙালি জাতি তাদের হাজার বছরের স্বপ্নের পুরুষ জাতির পিতা বঙ্গবল্পুব্দ শেখ মুজিবুর রহমানকে হৃদয়ের মন্দিরে অধিষ্ঠিত করেছে। অনন্তকাল বাঙালি হৃদয়ে অম্লান থাকবে তার স্মৃতি। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে কাঁদবে প্রতিটি বাঙালি যুগ যুগ ধরে এবং অনাদিকাল।
ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বীরপ্রতীক
সংসদ সদস্য
১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড মানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা করা। এ হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং রাজাকারদের রাষ্ট্রীয় পদে পদায়ন পাকাপোক্ত হয়। আসলে ১৫ আগস্ট খালেদা-নিজামীদের নবচৈতন্যের দিন। পাকিস্তানি চেতনা পুনর্জন্মের দিন।
ঘাতকরা মধ্য আগস্টে নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর জেলখানায় ৩ নভেম্বর খন্দকার মোশতাকের মদদে চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করে। বাংলাদেশের চেতনাকে ধ্বংস করার কর্মযজ্ঞে নিয়োজিত থাকে। বিরাজনীতি প্রক্রিয়া শুরু করে ক্ষমতা গ্রহণ করে উর্দি পরা জেনারেল দম্ভে বিভোর হয়ে ঘোষণা করেন_ 'আমি রাজনীতিকদের রাজনীতি করার পথ জটিল করে তুলব।' পরে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বিস্তার করতে থাকেন ষড়যন্ত্রের জাল। সেনাছাউনিতে বসে প্রশাসনের সহায়তায় গড়ে তোলেন বাংলাদেশের চেতনাবিরোধী রাজনৈতিক দল। একে একে ধ্বংস করেন বাংলাদেশের শাসনতন্ত্রের চার মৌলনীতি। শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধা নিধনযজ্ঞ।
নৌবিহারের নামে মেধাবী ছাত্রদের রাজনীতিতে টানার পাঁয়তারা চলে। লাখ লাখ যুবককে দুর্নীতির পঙ্কিল পথে ঠেলে দেওয়া হয়। এ যুবকদের মধ্যে হাটবাজার ইজারা দিয়ে সূচনা করা হয় দলীয় সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির সংস্কৃতি। সংগঠিত করা হয় সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকদের, যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের শুধু বিরোধিতাই করেননি, সরাসরি জড়িত ছিলেন হত্যা, লুট, ধর্ষণ ও জনপদে অগি্নসংযোগে। মন্ত্রিসভায় নিয়োগ দেওয়া হয় রাজাকার, আলবদরের পোষক স্বাধীনতাবিরোধী হানাদার বাহিনীর এ দেশীয় যুদ্ধাপরাধীদের।
হাজার বছর ধরে অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জনমানসে যে মৈত্রী ও সম্প্রীতি গড়ে উঠেছে নিজামী-মুজাহিদরা তা ছিন্ন করার জন্য বিভিন্ন নামে জঙ্গি সংগঠন সৃষ্টি করেন। বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য শুরু হয় জিহাদি তৎপরতা। সারাদেশে একই দিনে, একই সময়ে বোমা ফাটানোর মাধ্যমে জানান দেয় নিজামী-মুজাহিদদের অপশক্তির বিস্তৃতি ও সামর্থ্যের কথা। কাঁধে চড়া পাকিস্তানি ভূতে আক্রান্ত জঙ্গিরা তৎকালীন জোট সরকারের মদদে ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সভায় গ্রেনেড হামলা চালায়। উদ্দেশ্য শেখ হাসিনাকে হত্যা করা। অলৌকিকভাবে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। আইভি রহমানসহ ২৪ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী নির্মমভাবে নিহত হন সেই গ্রেনেড হামলায়। আহত হন শত শত মানুষ। দায় এড়াতে সাজানো হয় জজ মিয়া নাটক। তার পরের কাহিনী সবার জানা। ১৯৭৫-পরবর্তী সরকারগুলোর সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাংক, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল ও কোচিং সেন্টারে বিনিয়োগ হয়েছে লাখো-কোটি টাকা। বিনিয়োগকৃত এ টাকার মুনাফা অর্থায়ন হয়েছে জঙ্গি ও জিহাদি কর্মকাণ্ডে।
বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতিতে ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পর কতগুলো নিষ্ঠুর ও লজ্জাজনক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। ১৫ আগস্টের জাতীয় শোক দিবসে জন্মদিন ও আনন্দ-উৎসবের প্রচলন। এমন দিনে কেক কাটা কতই না অমানবিক। বিবেকবান মানুষ বলতে পারেন কি একজন মানুষের কয়টি জন্মদিন হতে পারে? আমরা দেখতে পাই খালেদা জিয়ার তিন-তিনটি জন্মদিন। শিক্ষাজীবনের দলিলপত্রে একটি জন্মদিন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্রীয় ঘোষণাপত্রে একটা জন্মদিন এবং ১৫ আগস্টে সর্বশেষ জন্মদিন। এতে স্বাভাবিকভাবেই প্রতীয়মান হয়, ১৫ আগস্ট যারা জন্মদিন হিসেবে কেক কাটতে পারেন তারাই ১৫ আগস্ট ট্র্যাজেডি মঞ্চায়নে জড়িত ছিলেন। তাই তো তারা জাতীয় শোক দিবসে জন্মোৎসব পালন করে উলঙ্গ উল্লাসে মেতে ওঠেন। এটাই তো ইতিহাসের নিষ্ঠুর রসিকতা। তবে ইতিহাস কাউকেই ক্ষমা করে না।
হত্যা ও ষড়যন্ত্রের খলনায়করা তলিয়ে যাবে ইতিহাসের আবর্জনায়। বাঙালি জাতি তাদের হাজার বছরের স্বপ্নের পুরুষ জাতির পিতা বঙ্গবল্পুব্দ শেখ মুজিবুর রহমানকে হৃদয়ের মন্দিরে অধিষ্ঠিত করেছে। অনন্তকাল বাঙালি হৃদয়ে অম্লান থাকবে তার স্মৃতি। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে কাঁদবে প্রতিটি বাঙালি যুগ যুগ ধরে এবং অনাদিকাল।
ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বীরপ্রতীক
সংসদ সদস্য
No comments