কালের আয়নায়-কম খাওয়ার উপদেশ :সে যুগে এবং এ যুগে by আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী
দেশে খাদ্যমূল্য, খাদ্যে ভেজাল ইত্যাদি সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য বাণিজ্যমন্ত্রী কর্নেল (অব.) ফারুক খান জনসাধারণকে কম খাওয়ার উপদেশ দিতে গিয়ে যে বিতর্ক ও সমালোচনার জালে জড়িয়েছেন তা থেকে এখনও মুক্ত হতে পারেননি। দলমত নির্বিশেষে অনেকেই তার সমালোচনা করছেন।
কেউ কেউ তির্যক ভঙ্গিতে বলেছেন, খাদ্য সংক্রান্ত সমস্যা এড়ানোর জন্য যদি কম খেতে হয়, তাহলে রাস্তা দুর্ঘটনা, লঞ্চ দুর্ঘটনায় মৃত্যু এড়ানোর জন্য বাসে, গাড়িতে, লঞ্চে চলা বন্ধ করতে হয়। বিদ্যুৎ সমস্যা এড়ানোর জন্য বিদ্যুৎ ব্যবহার বন্ধ করে ঘরে ঘরে, অফিস, আদালতে মোমবাতি জ্বালাতে হয়।
আমার যত দূর মনে পড়ে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সব মন্ত্রীকেই সংযত হয়ে কথা বলার এবং কম কথা বলার উপদেশ দিয়েছিলেন। মনে হয় না তার অনেক মন্ত্রীই সেই উপদেশে কান দিয়েছেন। দেশের মানুষকে কম খাওয়ার উপদেশ না দিয়ে মন্ত্রী যদি নিজে কম কথা বলার অভ্যাস রপ্ত করতেন, তাহলে শুধু তিনি নন, তার মতো আরও কয়েকজন মন্ত্রী সম্ভবত দায়িত্ব পালনে নিজেদের অনভিজ্ঞতা ও ব্যর্থতা অনেকটাই ঢাকা দিতে পারতেন।
বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যদের একটা বড় অংশের সমস্যা হচ্ছে দায়িত্ব পালনে অনভিজ্ঞতা এবং সেই অনভিজ্ঞতা দূর করার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত তাদের অনাগ্রহ অথবা অক্ষমতা। ফলে তারা অনেকেই বেশি কথা বলে নিজেদের ত্রুটি ঢাকা দিতে চান। যে বিষয়ে তার কথা বলার দরকার নেই, সে বিষয়ে তিনি কথা বলেন এবং বেশি কথা বলেন। আবার যে বিষয়টি যার নয়, তিনি সে বিষয়ে নাক ঢোকান। বাণিজ্যমন্ত্রী খাদ্য বিষয়ে, খাদ্যমন্ত্রী বাণিজ্য বিষয়ে, কৃষিমন্ত্রী শিক্ষা বিষয়ে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পররাষ্ট্র বিষয়ে যদি কথা বলেন, তাহলে যা হয়, বাংলাদেশে এখন বহু ক্ষেত্রে তাই হচ্ছে।
শেরেবাংলা ফজলুল হক বলেছেন, 'সরকার পরিচালনায় ব্যর্থতা আসে বহু ক্ষেত্রে, মন্ত্রী ও উচ্চ সরকারি কর্মচারীদের অনভিজ্ঞতা এবং অদক্ষতা থেকে। এই অনভিজ্ঞতা ও অদক্ষতা ঢাকা দেওয়ার জন্য তাদের মধ্যে বাচালতা দেখা দেয়। তিনি তার একটি উদাহরণ দিয়েছিলেন। ব্রিটিশ আমলে তিনি যখন অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী, তখন একবার বরিশালে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দেয়। বরিশালের ডিসি (তখন বলা হতো ডি এম বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট) ছিলেন বিলেত থেকে নবাগত এক তরুণ ইংরেজ। বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাস, খাদ্যরীতি কোনো কিছু সম্পর্কেই তার অভিজ্ঞতা তখনও পাকা হয়নি। হক সাহেব তাকে নির্দেশ দিলেন, জেলায় খাদ্য সংকটের কারণ অনুসন্ধান করে প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কয়েকদিন পর প্রধানমন্ত্রীর দফতরে রিপোর্ট পাঠালেন যে, তিনি নিজে তদন্ত করে জেনেছেন, বরিশালের গরিব মানুষরা অত্যন্ত বেশি খায় বলে এই খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। তিনি তাদের কম খাওয়ার উপদেশ দিয়েছেন।
হক সাহেব রিপোর্ট পেয়ে বিস্মিত হয়েছেন। যে দেশের মানুষ দু'বেলা পেটপুরে দুটি ভাত খেতে পায় না, তারা বেশি খাচ্ছে হতেই পারে না। তিনি নিজে গেলেন বরিশাল সফরে। খরা ও অনাবৃষ্টিতে সেবার বরিশালে খাদ্যশস্যের উৎপাদন খুব কম হয়েছিল। যথাসময়ে সেই ঘাটতি পূরণের ব্যবস্থা হয়নি। হক সাহেব ইংরেজ জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে জিজ্ঞাসা করলেন, 'তুমি কী করে জানলে বরিশালের মানুষ বেশি খায় বলে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে?' ম্যাজিস্ট্রেট বললেন, 'আমি কয়েকটা গ্রাম ঘুরে তদন্ত করেছি। গরিবদের জিজ্ঞাসা করেছি, তোমরা কী খাও? তারা সকলেই বলেছে, কোনো রকমে দু'মুঠো ডাল-ভাত খায়। আমি শুনে অবাক হয়েছি, খাদ্য সংকটের সময় তারা এত বেশি খায় কেন? আমি তাদের বলেছি, এ সময় তোমরা দুটি খাদ্য এক সঙ্গে খেও না। হয় ডাল খাও, না হয় ভাত খাও। দুটি খাদ্য এক সঙ্গে খেলে তো খাদ্য সমস্যা দেখা দেবেই।'
বরিশালের অনাহারক্লিষ্ট মানুষকে এই কম খাওয়ার উপদেশ দিয়েছিলেন চলি্লশের দশকের গোড়ায় ব্রিটিশ আমলে এক ব্রিটিশ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। আর এই একুশ শতকের গোড়ায় স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষকে খাদ্য সমস্যা ও খাদ্যে ভেজাল এড়ানোর জন্য কম খাওয়ার উপদেশ দিলেন এ দেশেরই একজন মন্ত্রী। এ ধরনের অসংলগ্ন উক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর কি তাকে পদত্যাগের পরামর্শ দেওয়া উচিত? প্রধানমন্ত্রীর কী করা উচিত তা আমি জানি না। তবে বিলেতে বসবাস করি বলে এ দেশের একটা উদাহরণ দিতে পারি।
ব্রিটেনে মার্গারেট থ্যাচারের সরকারের আমলে তার এক মহিলা মন্ত্রী ছিলেন এডউইনাকারি (এরশাদ সরকারের আমলে তিনি বাংলাদেশ সফর করেছেন এবং সফর শেষে লন্ডনে ফিরে এসে বাংলাদেশি কমিউনিটির সভায় শাড়ি পরে আসতেন)। ব্রিটেনে তখন ডিমে এক ধরনের দূষিত ভাইরাস ঢুকে তা বিষাক্ত করে ফেলেছে। ডিম খেলে পাকস্থলীর রোগ হয়। রোগ মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়েছিল। কিছু লোকের মৃত্যুও হয়েছিল। লোকে ডিম খাওয়া বন্ধ করেছিল।
সরকার ডিম দূষিত হওয়ার কারণ জানতে অনুসন্ধান কমিটি বসাল। প্রথমে ধরা হয়েছিল ব্রিটিশ ডিম নয়, বাইরে থেকে আমদানিকৃত ডিমই দূষিত জিনিস দ্বারা সংক্রমিত। এ সময় মন্ত্রী এডউইনাকারি একটি বেফাঁস কথা বলে ফেলেছিলেন। তিনি ব্রিটিশ ডিম ব্যবসায়ীদের দোষারোপ করে বলেছিলেন, তাদের ডিমও দূষিত এবং এ ব্যাপারে তারা আগে সতর্ক হয়নি। ব্রিটেনের ডিম ব্যবসায়ীরা তার ওপর ভীষণ চটে গেল। তার নাম দিল বমম-সরহরংঃবৎ বা আণ্ডামন্ত্রী। মন্ত্রিসভা থেকে তার পদত্যাগ দাবি করল। এই একটি সামান্য কথাকে কেন্দ্র করে ব্রিটেনে বিক্ষোভের ঝড় দেখা দিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী থ্যাচারের নির্দেশে এডউইনাকারিকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল।
আমার সন্দেহ নেই, বাংলাদেশে যদি গণতান্ত্রিক ব্রিটেনের এই নীতি অনুসৃত হতো, তাহলে বেফাঁস ও বেফজুল কথা বলার জন্য বর্তমান মন্ত্রিসভায় অনেক মন্ত্রীকেই পদত্যাগ করতে হতো। বাংলাদেশে এ ধরনের পদত্যাগের উদাহরণ একদম নেই তা নয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে একবার তার দলের ও নেত্রীর মনোপূত নয় এমন একটি উক্তি করে মন্ত্রিপদ থেকে ইস্তফা দিতে হয়েছিল। আমি জনসাধারণকে কম খাওয়ায় অপ্রয়োজনীয় ও অসঙ্গত উপদেশ দেওয়ার জন্য মন্ত্রী কর্নেল ফারুক খানের পদত্যাগ দাবি করি না। যেটা দাবি করি, এই মন্ত্রিসভায় একটা গুরুত্বপূর্ণ রদবদল এবং উপদেষ্টা ও মন্ত্রিপরিষদ নিয়ে দ্বৈতশাসনের অবসান। কেবল আনুগত্য নয়, অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার মন্ত্রিসভা পুনর্গঠন করুন এবং মন্ত্রীদের বলে দিন, তারা তাদের স্ব-স্ব মন্ত্রকের দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করুন। দেশবাসীকে অহরহ ও অহেতুক উপদেশ দেওয়ার এখতিয়ার তাদের নেই।
অবিভক্ত বাংলায় ১৩৫০ বঙ্গাব্দে (১৯৪২-৪৩) দুর্ভিক্ষে ৫০ লাখ লোকের মৃত্যু হয়েছিল। বাজারে খাদ্যশস্যই ছিল না, সামান্য যা ছিল তা ছিল অগি্নমূল্য। এ সময় কম খেয়ে কি দুর্ভিক্ষ ঠেকানো যেত? কিংবা পঞ্চাশের দুর্ভিক্ষের পর অসাধু ব্যবসায়ীদের গুদামে লুকিয়ে রাখা চাল, গম, যা তখন পচে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, তা যখন বাজারে ছাড়া হলো এবং সারাদেশে পেটের পীড়া, কলেরা ও অন্যান্য রোগে দলে দলে নরনারী মারা যেতে লাগল, তখন সেই বিষাক্ত খাদ্য এড়ানোর কোনো সুযোগ ছিল কি, না কম খেয়ে সেই খাদ্যের বিষক্রিয়া থেকে বাঁচা যেত? সুখাদ্যের অভাবেই মানুষ অখাদ্য-কুখাদ্য খায়। বেশি খায় না।
বাংলাদেশে এখন খাদ্য ঘাটতি নেই। আছে চড়া খাদ্যমূল্য। সরকার তাদের অব্যবস্থাপনা এবং অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে এই খাদ্যমূল্যের ঊর্ধ্বর্গতি রোধ করতে পারছে না। আর খাদ্যে ভেজাল? তা এখন সামগ্রিক ব্যাধি হিসেবে দেখা দিয়েছে। এমন কোনো খাদ্য এবং পানীয় নেই, যাতে ভেজাল মিশ্রণ হয় না। এমনকি জীবন রক্ষাকারী ওষুধ পর্যন্ত ভেজাল থেকে মুক্ত নয়। আমি এ বছরের গোড়ায় ঢাকায় থাকার সময় একবার টুঙ্গিপাড়া যাচ্ছি। পথে পানির তেষ্টা পাওয়ায় ডাব কিনলাম। ভাবলাম, এখানে বোতলের পানিতেও বিশ্বাস নেই। ডাবের পানি খেয়ে তেষ্টা মেটাই। এই পানিতে ভেজাল মেশানোর কোনো উপায় নেই। আমার গাড়ির ড্রাইভার বলল, স্যার, ডাবের পানিতেও এখন ভেজাল। সুচের সাহায্যে ডাব ফুটো করে তাতে অদ্ভুত কৌশলে বাইরের পানি ঢুকিয়ে ডাবের পানির সঙ্গে মেশানো হয়।
এখন মন্ত্রী ফারুক সাহেবই বলুন, আমার সঙ্গের বোতলের পানিতে বিশ্বাস নেই। ডাবের পানিতেও ভেজাল। এখন আমি কী করব? গ্রীষ্মের দাবদাহে তৃষ্ণায় বুক ফেটে যাচ্ছে। তখন ওই বোতলের অথবা ডাবের পানি না পান করে উপায় কী? বেশি পান করার তো কথাই ওঠে না। কম পান করেও জান বাঁচানোর কোনো অবকাশ থাকে কি?
বহুকাল আগে দুর্ভিক্ষপীড়িত প্যারিসে মানুষ রুটির অভাবে না খেয়ে মরছে শুনে রাজশকটে বসে এক রানী বলেছিলেন, রুটি নেই তো কী হয়েছে, ওরা কেক খায় না কেন? এটা বিশ্বে রাজরানীর যুগের কথা। আর এই গণতান্ত্রিক সভ্যতার চরম বিকাশের যুগে বাংলাদেশের এক দেশি মন্ত্রীর মুখে শুনতে হচ্ছে, আপনারা কম খান না কেন? আজ যে দেশে ভেজালমুক্ত কোনো খাদ্যই নেই, যা আছে তা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে, সেখানে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত জনগণের মন্ত্রী জনগণকে বলছেন, আপনারা কম খান। দেশে ভেজালমুক্ত কোনো খাদ্য এবং পানীয়ই আছে কি, যা মানুষ কম খাবে বা বাছবিচার করে খাবে?
পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশে চালের উৎপাদন বাড়ানোর কোনো কার্যকর প্রকল্প হাতে না নিয়ে আইয়ুব সরকার জনসাধারণকে উপদেশ দিয়েছিল, চালের বদলে ভুট্টা খাও। বাঙালিকে খাদ্যাভ্যাস বদলাতে হবে। চালের বদলে ভুট্টা খেতে হবে। আসল মতলব ছিল, পশ্চিম পাকিস্তানে উৎপাদিত ভুট্টা ও গমের বাজার তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সম্প্রসারিত করা। সে সময় বাঙালিকে জোর করে ভুট্টা খাওয়াতে গিয়ে পাবনায় রায়ট হয়। গণবিক্ষোভ দমনের জন্য পুলিশকে গুলি চালাতে হয়। সে আন্দোলনে আওয়ামী লীগ নেতা ক্যাপ্টেন মনসুর আলী গ্রেফতার হয়েছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর শেখ হাসিনার প্রথম সরকারের আমলেই তো এ কথা প্রমাণিত হয়েছে যে, ভাতের বদলে বিকল্প খাদ্যের দরকার নেই এ দেশের মানুষের। কৃষি উৎপাদন বাড়িয়েই হাসিনা সরকার চাল ঘাটতির দেশকে উদ্বৃত্ত চালের দেশে পরিণত করেছে। বন্যা, খরা বা কোনো প্রাকৃতিক কারণে চালের ঘাটতি দেখা দিলে তখন শুধু চাল আমদানি করতে হয়।
অতি মুনাফার জন্য খাদ্য ঘাটতি সৃষ্টির চেয়েও অনেক বড় অপরাধ খাদ্যে ভেজাল মেশানো। এটা নৈতিক এবং সামাজিক বড় অপরাধ। খাদ্য কম খেয়ে এই অপরাধ দমন করা যায় না, সমস্যার সমাধান করা যায় না। বাংলাদেশে এই খাদ্যে ভেজাল দেওয়ার ব্যাপারটি এখন এমন চরম আকার ধারণ করেছে যে, কঠোর হস্তে এই অপরাধ দমনের জন্য সরকার এগিয়ে না এলে এই সমস্যার সমাধান হবে না। খাদ্যে ভেজালদানকারীরা শুধু মানবতার শত্রু নয়, তারা গণহত্যাকারী। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার অব্যবহিত পর ভোজ্যতেলের সংকটের সময় ভেজাল মিশ্রিত তেল বাজার ছেয়ে ফেলায় সেই তেল খেয়ে এক বছরে দু'লাখ লোক পঙ্গু এবং ১০ হাজারের মতো নরনারী নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিল বলে এক বেসরকারি হিসাবে জানা গিয়েছিল। তখন কোনো মন্ত্রী বলেননি, আপনারা কম তেল খান।
অন্যান্য জরুরি সংকট মোকাবেলার মতো খাদ্যে ভেজাল মেশানোর সমস্যাটিকেও সরকার জরুরিভাবে মোকাবেলা করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। দরকার হলে এ ব্যাপারে একটি আলাদা মন্ত্রক তৈরি করে একজন যোগ্য ও অভিজ্ঞ মন্ত্রীর ওপর এই সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব দিন। সর্বাগ্রে মন্ত্রীদের প্রধানমন্ত্রী কম কথা বলার নির্দেশ দিন। এখনও সময় আছে তার মন্ত্রিসভায় কথা বলার মন্ত্রী নয়, কিছু কাজের মন্ত্রী নিয়োগ দিন।
লন্ডন, ১৯ আগস্ট ২০১১, শুক্রবার
আমার যত দূর মনে পড়ে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সব মন্ত্রীকেই সংযত হয়ে কথা বলার এবং কম কথা বলার উপদেশ দিয়েছিলেন। মনে হয় না তার অনেক মন্ত্রীই সেই উপদেশে কান দিয়েছেন। দেশের মানুষকে কম খাওয়ার উপদেশ না দিয়ে মন্ত্রী যদি নিজে কম কথা বলার অভ্যাস রপ্ত করতেন, তাহলে শুধু তিনি নন, তার মতো আরও কয়েকজন মন্ত্রী সম্ভবত দায়িত্ব পালনে নিজেদের অনভিজ্ঞতা ও ব্যর্থতা অনেকটাই ঢাকা দিতে পারতেন।
বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যদের একটা বড় অংশের সমস্যা হচ্ছে দায়িত্ব পালনে অনভিজ্ঞতা এবং সেই অনভিজ্ঞতা দূর করার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত তাদের অনাগ্রহ অথবা অক্ষমতা। ফলে তারা অনেকেই বেশি কথা বলে নিজেদের ত্রুটি ঢাকা দিতে চান। যে বিষয়ে তার কথা বলার দরকার নেই, সে বিষয়ে তিনি কথা বলেন এবং বেশি কথা বলেন। আবার যে বিষয়টি যার নয়, তিনি সে বিষয়ে নাক ঢোকান। বাণিজ্যমন্ত্রী খাদ্য বিষয়ে, খাদ্যমন্ত্রী বাণিজ্য বিষয়ে, কৃষিমন্ত্রী শিক্ষা বিষয়ে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পররাষ্ট্র বিষয়ে যদি কথা বলেন, তাহলে যা হয়, বাংলাদেশে এখন বহু ক্ষেত্রে তাই হচ্ছে।
শেরেবাংলা ফজলুল হক বলেছেন, 'সরকার পরিচালনায় ব্যর্থতা আসে বহু ক্ষেত্রে, মন্ত্রী ও উচ্চ সরকারি কর্মচারীদের অনভিজ্ঞতা এবং অদক্ষতা থেকে। এই অনভিজ্ঞতা ও অদক্ষতা ঢাকা দেওয়ার জন্য তাদের মধ্যে বাচালতা দেখা দেয়। তিনি তার একটি উদাহরণ দিয়েছিলেন। ব্রিটিশ আমলে তিনি যখন অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী, তখন একবার বরিশালে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দেয়। বরিশালের ডিসি (তখন বলা হতো ডি এম বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট) ছিলেন বিলেত থেকে নবাগত এক তরুণ ইংরেজ। বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাস, খাদ্যরীতি কোনো কিছু সম্পর্কেই তার অভিজ্ঞতা তখনও পাকা হয়নি। হক সাহেব তাকে নির্দেশ দিলেন, জেলায় খাদ্য সংকটের কারণ অনুসন্ধান করে প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কয়েকদিন পর প্রধানমন্ত্রীর দফতরে রিপোর্ট পাঠালেন যে, তিনি নিজে তদন্ত করে জেনেছেন, বরিশালের গরিব মানুষরা অত্যন্ত বেশি খায় বলে এই খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। তিনি তাদের কম খাওয়ার উপদেশ দিয়েছেন।
হক সাহেব রিপোর্ট পেয়ে বিস্মিত হয়েছেন। যে দেশের মানুষ দু'বেলা পেটপুরে দুটি ভাত খেতে পায় না, তারা বেশি খাচ্ছে হতেই পারে না। তিনি নিজে গেলেন বরিশাল সফরে। খরা ও অনাবৃষ্টিতে সেবার বরিশালে খাদ্যশস্যের উৎপাদন খুব কম হয়েছিল। যথাসময়ে সেই ঘাটতি পূরণের ব্যবস্থা হয়নি। হক সাহেব ইংরেজ জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে জিজ্ঞাসা করলেন, 'তুমি কী করে জানলে বরিশালের মানুষ বেশি খায় বলে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে?' ম্যাজিস্ট্রেট বললেন, 'আমি কয়েকটা গ্রাম ঘুরে তদন্ত করেছি। গরিবদের জিজ্ঞাসা করেছি, তোমরা কী খাও? তারা সকলেই বলেছে, কোনো রকমে দু'মুঠো ডাল-ভাত খায়। আমি শুনে অবাক হয়েছি, খাদ্য সংকটের সময় তারা এত বেশি খায় কেন? আমি তাদের বলেছি, এ সময় তোমরা দুটি খাদ্য এক সঙ্গে খেও না। হয় ডাল খাও, না হয় ভাত খাও। দুটি খাদ্য এক সঙ্গে খেলে তো খাদ্য সমস্যা দেখা দেবেই।'
বরিশালের অনাহারক্লিষ্ট মানুষকে এই কম খাওয়ার উপদেশ দিয়েছিলেন চলি্লশের দশকের গোড়ায় ব্রিটিশ আমলে এক ব্রিটিশ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। আর এই একুশ শতকের গোড়ায় স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষকে খাদ্য সমস্যা ও খাদ্যে ভেজাল এড়ানোর জন্য কম খাওয়ার উপদেশ দিলেন এ দেশেরই একজন মন্ত্রী। এ ধরনের অসংলগ্ন উক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর কি তাকে পদত্যাগের পরামর্শ দেওয়া উচিত? প্রধানমন্ত্রীর কী করা উচিত তা আমি জানি না। তবে বিলেতে বসবাস করি বলে এ দেশের একটা উদাহরণ দিতে পারি।
ব্রিটেনে মার্গারেট থ্যাচারের সরকারের আমলে তার এক মহিলা মন্ত্রী ছিলেন এডউইনাকারি (এরশাদ সরকারের আমলে তিনি বাংলাদেশ সফর করেছেন এবং সফর শেষে লন্ডনে ফিরে এসে বাংলাদেশি কমিউনিটির সভায় শাড়ি পরে আসতেন)। ব্রিটেনে তখন ডিমে এক ধরনের দূষিত ভাইরাস ঢুকে তা বিষাক্ত করে ফেলেছে। ডিম খেলে পাকস্থলীর রোগ হয়। রোগ মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়েছিল। কিছু লোকের মৃত্যুও হয়েছিল। লোকে ডিম খাওয়া বন্ধ করেছিল।
সরকার ডিম দূষিত হওয়ার কারণ জানতে অনুসন্ধান কমিটি বসাল। প্রথমে ধরা হয়েছিল ব্রিটিশ ডিম নয়, বাইরে থেকে আমদানিকৃত ডিমই দূষিত জিনিস দ্বারা সংক্রমিত। এ সময় মন্ত্রী এডউইনাকারি একটি বেফাঁস কথা বলে ফেলেছিলেন। তিনি ব্রিটিশ ডিম ব্যবসায়ীদের দোষারোপ করে বলেছিলেন, তাদের ডিমও দূষিত এবং এ ব্যাপারে তারা আগে সতর্ক হয়নি। ব্রিটেনের ডিম ব্যবসায়ীরা তার ওপর ভীষণ চটে গেল। তার নাম দিল বমম-সরহরংঃবৎ বা আণ্ডামন্ত্রী। মন্ত্রিসভা থেকে তার পদত্যাগ দাবি করল। এই একটি সামান্য কথাকে কেন্দ্র করে ব্রিটেনে বিক্ষোভের ঝড় দেখা দিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী থ্যাচারের নির্দেশে এডউইনাকারিকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল।
আমার সন্দেহ নেই, বাংলাদেশে যদি গণতান্ত্রিক ব্রিটেনের এই নীতি অনুসৃত হতো, তাহলে বেফাঁস ও বেফজুল কথা বলার জন্য বর্তমান মন্ত্রিসভায় অনেক মন্ত্রীকেই পদত্যাগ করতে হতো। বাংলাদেশে এ ধরনের পদত্যাগের উদাহরণ একদম নেই তা নয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে একবার তার দলের ও নেত্রীর মনোপূত নয় এমন একটি উক্তি করে মন্ত্রিপদ থেকে ইস্তফা দিতে হয়েছিল। আমি জনসাধারণকে কম খাওয়ায় অপ্রয়োজনীয় ও অসঙ্গত উপদেশ দেওয়ার জন্য মন্ত্রী কর্নেল ফারুক খানের পদত্যাগ দাবি করি না। যেটা দাবি করি, এই মন্ত্রিসভায় একটা গুরুত্বপূর্ণ রদবদল এবং উপদেষ্টা ও মন্ত্রিপরিষদ নিয়ে দ্বৈতশাসনের অবসান। কেবল আনুগত্য নয়, অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার মন্ত্রিসভা পুনর্গঠন করুন এবং মন্ত্রীদের বলে দিন, তারা তাদের স্ব-স্ব মন্ত্রকের দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করুন। দেশবাসীকে অহরহ ও অহেতুক উপদেশ দেওয়ার এখতিয়ার তাদের নেই।
অবিভক্ত বাংলায় ১৩৫০ বঙ্গাব্দে (১৯৪২-৪৩) দুর্ভিক্ষে ৫০ লাখ লোকের মৃত্যু হয়েছিল। বাজারে খাদ্যশস্যই ছিল না, সামান্য যা ছিল তা ছিল অগি্নমূল্য। এ সময় কম খেয়ে কি দুর্ভিক্ষ ঠেকানো যেত? কিংবা পঞ্চাশের দুর্ভিক্ষের পর অসাধু ব্যবসায়ীদের গুদামে লুকিয়ে রাখা চাল, গম, যা তখন পচে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, তা যখন বাজারে ছাড়া হলো এবং সারাদেশে পেটের পীড়া, কলেরা ও অন্যান্য রোগে দলে দলে নরনারী মারা যেতে লাগল, তখন সেই বিষাক্ত খাদ্য এড়ানোর কোনো সুযোগ ছিল কি, না কম খেয়ে সেই খাদ্যের বিষক্রিয়া থেকে বাঁচা যেত? সুখাদ্যের অভাবেই মানুষ অখাদ্য-কুখাদ্য খায়। বেশি খায় না।
বাংলাদেশে এখন খাদ্য ঘাটতি নেই। আছে চড়া খাদ্যমূল্য। সরকার তাদের অব্যবস্থাপনা এবং অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে এই খাদ্যমূল্যের ঊর্ধ্বর্গতি রোধ করতে পারছে না। আর খাদ্যে ভেজাল? তা এখন সামগ্রিক ব্যাধি হিসেবে দেখা দিয়েছে। এমন কোনো খাদ্য এবং পানীয় নেই, যাতে ভেজাল মিশ্রণ হয় না। এমনকি জীবন রক্ষাকারী ওষুধ পর্যন্ত ভেজাল থেকে মুক্ত নয়। আমি এ বছরের গোড়ায় ঢাকায় থাকার সময় একবার টুঙ্গিপাড়া যাচ্ছি। পথে পানির তেষ্টা পাওয়ায় ডাব কিনলাম। ভাবলাম, এখানে বোতলের পানিতেও বিশ্বাস নেই। ডাবের পানি খেয়ে তেষ্টা মেটাই। এই পানিতে ভেজাল মেশানোর কোনো উপায় নেই। আমার গাড়ির ড্রাইভার বলল, স্যার, ডাবের পানিতেও এখন ভেজাল। সুচের সাহায্যে ডাব ফুটো করে তাতে অদ্ভুত কৌশলে বাইরের পানি ঢুকিয়ে ডাবের পানির সঙ্গে মেশানো হয়।
এখন মন্ত্রী ফারুক সাহেবই বলুন, আমার সঙ্গের বোতলের পানিতে বিশ্বাস নেই। ডাবের পানিতেও ভেজাল। এখন আমি কী করব? গ্রীষ্মের দাবদাহে তৃষ্ণায় বুক ফেটে যাচ্ছে। তখন ওই বোতলের অথবা ডাবের পানি না পান করে উপায় কী? বেশি পান করার তো কথাই ওঠে না। কম পান করেও জান বাঁচানোর কোনো অবকাশ থাকে কি?
বহুকাল আগে দুর্ভিক্ষপীড়িত প্যারিসে মানুষ রুটির অভাবে না খেয়ে মরছে শুনে রাজশকটে বসে এক রানী বলেছিলেন, রুটি নেই তো কী হয়েছে, ওরা কেক খায় না কেন? এটা বিশ্বে রাজরানীর যুগের কথা। আর এই গণতান্ত্রিক সভ্যতার চরম বিকাশের যুগে বাংলাদেশের এক দেশি মন্ত্রীর মুখে শুনতে হচ্ছে, আপনারা কম খান না কেন? আজ যে দেশে ভেজালমুক্ত কোনো খাদ্যই নেই, যা আছে তা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে, সেখানে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত জনগণের মন্ত্রী জনগণকে বলছেন, আপনারা কম খান। দেশে ভেজালমুক্ত কোনো খাদ্য এবং পানীয়ই আছে কি, যা মানুষ কম খাবে বা বাছবিচার করে খাবে?
পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশে চালের উৎপাদন বাড়ানোর কোনো কার্যকর প্রকল্প হাতে না নিয়ে আইয়ুব সরকার জনসাধারণকে উপদেশ দিয়েছিল, চালের বদলে ভুট্টা খাও। বাঙালিকে খাদ্যাভ্যাস বদলাতে হবে। চালের বদলে ভুট্টা খেতে হবে। আসল মতলব ছিল, পশ্চিম পাকিস্তানে উৎপাদিত ভুট্টা ও গমের বাজার তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সম্প্রসারিত করা। সে সময় বাঙালিকে জোর করে ভুট্টা খাওয়াতে গিয়ে পাবনায় রায়ট হয়। গণবিক্ষোভ দমনের জন্য পুলিশকে গুলি চালাতে হয়। সে আন্দোলনে আওয়ামী লীগ নেতা ক্যাপ্টেন মনসুর আলী গ্রেফতার হয়েছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর শেখ হাসিনার প্রথম সরকারের আমলেই তো এ কথা প্রমাণিত হয়েছে যে, ভাতের বদলে বিকল্প খাদ্যের দরকার নেই এ দেশের মানুষের। কৃষি উৎপাদন বাড়িয়েই হাসিনা সরকার চাল ঘাটতির দেশকে উদ্বৃত্ত চালের দেশে পরিণত করেছে। বন্যা, খরা বা কোনো প্রাকৃতিক কারণে চালের ঘাটতি দেখা দিলে তখন শুধু চাল আমদানি করতে হয়।
অতি মুনাফার জন্য খাদ্য ঘাটতি সৃষ্টির চেয়েও অনেক বড় অপরাধ খাদ্যে ভেজাল মেশানো। এটা নৈতিক এবং সামাজিক বড় অপরাধ। খাদ্য কম খেয়ে এই অপরাধ দমন করা যায় না, সমস্যার সমাধান করা যায় না। বাংলাদেশে এই খাদ্যে ভেজাল দেওয়ার ব্যাপারটি এখন এমন চরম আকার ধারণ করেছে যে, কঠোর হস্তে এই অপরাধ দমনের জন্য সরকার এগিয়ে না এলে এই সমস্যার সমাধান হবে না। খাদ্যে ভেজালদানকারীরা শুধু মানবতার শত্রু নয়, তারা গণহত্যাকারী। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার অব্যবহিত পর ভোজ্যতেলের সংকটের সময় ভেজাল মিশ্রিত তেল বাজার ছেয়ে ফেলায় সেই তেল খেয়ে এক বছরে দু'লাখ লোক পঙ্গু এবং ১০ হাজারের মতো নরনারী নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিল বলে এক বেসরকারি হিসাবে জানা গিয়েছিল। তখন কোনো মন্ত্রী বলেননি, আপনারা কম তেল খান।
অন্যান্য জরুরি সংকট মোকাবেলার মতো খাদ্যে ভেজাল মেশানোর সমস্যাটিকেও সরকার জরুরিভাবে মোকাবেলা করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। দরকার হলে এ ব্যাপারে একটি আলাদা মন্ত্রক তৈরি করে একজন যোগ্য ও অভিজ্ঞ মন্ত্রীর ওপর এই সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব দিন। সর্বাগ্রে মন্ত্রীদের প্রধানমন্ত্রী কম কথা বলার নির্দেশ দিন। এখনও সময় আছে তার মন্ত্রিসভায় কথা বলার মন্ত্রী নয়, কিছু কাজের মন্ত্রী নিয়োগ দিন।
লন্ডন, ১৯ আগস্ট ২০১১, শুক্রবার
No comments