সাময়িক প্রসঙ্গ-কম খাওয়া ও বাজারে কম যাওয়া by বদিউর রহমান
খবরের কাগজে এবং টেলিভিশনের টক শোতে লেখক-আলোচকদের লেখা ও আলোচনা পড়লে এবং শুনলে মাঝে মধ্যে মনে হয় তাদের থেকে বেশি জ্ঞান বোধহয় আর কারও নেই। ভাবি, তাদের মধ্য থেকে জাঁদরেল হিসেবে খ্যাত দু'চারজনকে সংশ্লিষ্ট খাতের মন্ত্রী বানিয়ে দিলে কেমন হয়! 'মুখে বক্শ আলী,
লেখতে কাটাকাটি'_ যে পুরনো কথা রয়েছে তা মানতে গেলে কিন্তু তারাও লেখাসর্বস্ব বা বাকসর্বস্ব, তার অধিক কিছু হয়তো পাওয়া যাবে না। বক্শ আলী মুখে অনেক কথাই বলতে পারেন, লিখতে দিলে আর কিছুই পারেন না। সারমর্ম আমরা জেনেছিলাম এভাবে যে, বলার চেয়ে করতে গেলে অর্থাৎ বাস্তবায়নে গেলে 'ডাব্বা!' আমাদের সুশীলদের মধ্যে আর মন্ত্রী-এমপি-রাজনীতিকদের মধ্যেও অনেক অনেক বক্শ আলী রয়েছেন। আমরা ক্ষুদেরাও হয়তো ক্ষুদে ক্ষুদে বক্শ আলী। অর্থনীতিবিদদের মধ্যে তো হাবভাবটাই এমন যে, তারা ছাড়া অর্থনীতি, বাজারনীতি, মুক্ত অর্থনীতি, মুদ্রানীতি এসব আর কে বেশি বোঝে? কেউ হয়তো কালো টাকার সন্ধান পেয়ে যাবেন কেবল সিন্দুকে আর সিন্দুকে, তার সিন্দুকি টাকার বরকত পবিত্র রমজান মাসে হয়তো অনেকগুণ বেশি সওয়াবের কাতারেও এসে যেতে পারে। কেননা রমজানে সবকিছুতে সওয়াব বেশি বিবেচনায় ব্যবসায়ীরাও হরেক রকম জিনিসের অনেক মূল্য বাড়িয়েছেন। আর এ রমজানের বরকত ধরার জন্যই তো আমাদের মন্ত্রীরাও নতুন নতুন থিসিস-জাতীয় বা ফতোয়া-জাতীয় পরামর্শ আমাদের দিয়ে থাকেন। আমরা যেহেতু আমজনতা, আমাদের তো সেগুলো শুনতে হবে, মানতে হবে অথবা অন্তত মানার চেষ্টা করতে হবে। কেননা তারা যে আমাদের ভালো চান সবসময়, তারা যে রাষ্ট্র চালান, তারাই যে আমাদের মুরবি্ব!
দু'বছইর্যা তত্ত্বাবধায়কের আমলে অর্থাৎ সেনা-নির্দেশিত তত্ত্বাবধায়কের আমলে যখন দ্রব্যমূল্য হুড়মুড় খেয়ে লাফাতে লাগল, চালের দামও যখন অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে ফেলল, তখনও আমাদের নছিহত করা হয়েছিল। কেউ কম খেতে বলেছেন, কেউবা আবার আলু খেতেও বলেছিলেন। কোনো পণ্ডিত ব্যক্তি আবার সাহস করে তখনকার নীরব দুর্ভিক্ষের কথাও বলেছিলেন। আরেকজন আরেক ধাপ এগিয়ে সরব দুর্ভিক্ষের কথাই বলে ফেলেছিলেন। তখন দ্রব্যমূল্যে হিমশিম খেয়ে আমার স্ত্রী পারিবারিক বাজার সরকারের ঠিকাদারি থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। সাপ্তাহিক জনতার চোখে ১০.৪.০৮ লিখেছিলাম, নীরব দুর্ভিক্ষ, হিডেন হাঙ্গার, চাল নিয়ে চুলোচুলি আর আমার স্ত্রীর পদত্যাগ (সূত্র_ আমার বই। তত্ত্বাবধায়ক আমল কিছু রাজনীতি কিছু বাজনীতি)। আবার দৈনিক যুগান্তরে ওই সময়ে লিখেছিলাম, 'কম খাওয়া, আলু খাওয়া আর ফল্স সিলিংয়ের মিষ্টি হাওয়া'। যারা আমাদের কম খেতে বা আলু খেতে পরামর্শ দিয়েছেন, তারা কিন্তু তখনও অফিসে ফল্স সিলিং লাগিয়ে আরও মিষ্টি হাওয়া খাওয়ার কাজ বন্ধ করেননি। তখন আমি ৩০ কেজি নাজিরশাইল চাল ১৩৫০ টাকায়, ৬ কেজি আটা ২৬৪ টাকায় আর ৩ কেজি মসুর ডাল ২৮৮ টাকায় কিনেছিলাম। আর এখন? আওয়ামী সরকারের তো ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ঋণী থাকা উচিত অন্তত এ জন্য যে, তারা তখন দাম বাড়িয়ে দেওয়াতে এ সরকার এখন তার সুফল ভোগ করতে পারছে, অন্তত বলতে পারছে যে আমরা তো তা-ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছুটা কমাতে পেরেছি। পৃথিবী যে গোল তা আমরা অনেকভাবেই দেখে থাকি। এই যেমন এখন দেখছি দ্রব্যমূল্যে আমরা আবার আগের স্থানে এসে গেছি এবং যাচ্ছি। অর্থনীতির কথকতায় কত কত ব্যাখ্যা যে এর পেছনে থাকবে তার হয়তো শেষ নেই; কিন্তু আমাদের মন্ত্রী সাহেবদের পরামর্শে যে আমরা খেই হারিয়ে ফেলি!
সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে একদিন বাজারে কম যেতে বলেছেন। দেশের ১৬ কোটি মানুষ (আমাদের সরকারি গণনায় ১৪ কোটি ২৩ লাখ নয়) যদি একদিন বাজারে না যান, কিছু না কেনেন, তাহলে নাকি তার হিসাবে দ্রব্যমূল্য কমে যাবে। যৎসামান্য অর্থনীতির যেটুকু পাঠ ছাত্রাবস্থায় নিয়েছিলাম এবং পরে তা যতটুকু এস্তেমাল করেছি তাতে একদিন বাজারে না গেলে দ্রব্যমূল্য কমার কোনো কারণ দেখি না। এতে ঘুরেফিরে পাটিগণিতের সেই পুরনো অঙ্কই এসে যায়_ মূল্যবৃদ্ধির কারণে কোনো ব্যক্তি তার ব্যবহার কতটুকু কমালে ওই খাতে তার ব্যয় বেশি হবে না। আমার বাজেট অবশ্যই অর্থমন্ত্রীর বাজেট নয়, ঠিক রাখতে হলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আনুপাতিক হারে ব্যবহার কমাতে হবে। অর্থমন্ত্রী 'বাতকা বাত' একদিন বাজারে কম যেতে বলে ফেলেছেন, না প্রকৃতই তার লাভ-লোকসানের কোনো গবেষণালব্ধ তথ্য পেয়েই তা বলেছেন তা কিন্তু আমরা জানতে পারিনি। এটা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা গবেষণা করে আমাদের জানাতে পারেন। হালে কোনো কোনো মন্ত্রীর 'লাগামছাড়া' বক্তব্যের যে বাহুল্য দেখা যাচ্ছে অর্থমন্ত্রীও সে কাতারে শামিল হয়ে গেছেন। এটা তার বয়সের কারণে কি-না বোঝা যাচ্ছে না। যদি তা-ই হয়ে থাকে তাহলে তো আমাদের স্মরণ করতেই হয় যে, পুরান চাল সবসময় ভাতে বাড়ে না, তাতে পোকাও ধরে। অনেক সময় ভালো পরামর্শও মানুষের ভালো লাগে না, দ্রব্যমূল্যের এ কঠিন সময় এমন বক্তব্যকে রসিকতা মনে হওয়া বোধহয় উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আমি বলি, এমন কঠিন সময় তার মুখে এটা বেমানান। অযথা 'বাক্যদোষী' হওয়ার কোনোই প্রয়োজন ছিল না। ১ আগস্ট ২০১১-এর কয়েকটি পত্রিকার দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত বড় বড় খবর দেখলে পরিস্থিতি কিছুটা হলেও বোধহয় আঁচ করা যায় : দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকবে তো_ আসছে রমজান, সাধারণ মানুষের মধ্যে দুশ্চিন্তা (দৈনিক সমকাল); পাইকারি ও খুচরা বাজারে দামের ব্যাপক ফারাক_ এক বছরে বেড়েছে ৩৭ পণ্যের দাম (যুগান্তর); দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দায়ী : সংসদীয় কমিটি (আমার দেশ); টিসিবির পণ্য বিক্রি মুখ থুবড়ে পড়েছে (ইত্তেফাক); নিত্যপণ্যের বাজার ৫ শিল্প গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে (প্রথম আলো)। তারপর ৪ আগস্টের প্রথম আলোর লিড নিউজ_ 'অসহনীয় বাজার, কষ্টে মানুষ'। এই যখন অবস্থা তখন আবার নতুন রসিকতা নিয়ে সরব হলেন বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান। পাকিস্তান আমলে আটা-ভুট্টা খাওয়ার পরামর্শের কথা সবাই জানেন। এখন মনে হয় বেচারা মোনায়েম খানকে আর দোষারোপ করে কী লাভ? হোটেল ইন্টারকনটিনেন্টালে আটা-ভুট্টার মোলায়েম খাবার খেয়ে কি আর বাঙালিকে হাইকোর্ট দেখানো যায়। বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রীকে নিয়ে মানুষ নাখোশ। তিনি 'অতিকথনের' তালিকাভুক্ত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের অন্যতম। তার এ মেয়াদে দৃশ্যমান সফলতা আমাদের নাগালের বাইরে। আগের বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং তার এক বাণিজ্য সচিবের বিরুদ্ধে টিসিবিকে অকার্যকর করে দেওয়ার অভিযোগ প্রবল, এখনও তা বহাল রয়েছে। বর্তমান মন্ত্রীও টিসিবি নিয়ে ভালো কিছু করতে পারেননি। সমালোচনা রয়েছে সদিচ্ছার অভাব এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আঁতাত। নিন্দুকদের মুখে চুনকালি পড়ূক, আমরা বলব আমাদের মন্ত্রীরা সবসময় ভালো এবং আন্তরিক, আগেরই হোক আর পরেরই হোক। ফারুক খান অর্থমন্ত্রী থেকে এককাঠি এগিয়ে মানুষকে কম খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। অর্থমন্ত্রীর পরামর্শে একদিন বাজারে না গেলে অন্য দিন বেশি কিনে কম খাওয়ার হয়তো প্রয়োজন হতো না। ফ্রিজ, ডিপফ্রিজ যাদের আছে তারা এমনিতেই প্রতিদিন বাজারে যান না। গরিবের আবার দিনরাত কিসের, টাকা থাকলে তো বাজার! 'ভেজাল প্রতিরোধে আমাদের করণীয়' শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি ভেজাল রোধে এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কম খাওয়ার উপকারিতা বর্ণনা করেছেন। ৫ আগস্টের পত্রিকাগুলোতে এ খবর বেশ স্থান এবং গুরুত্ব পেয়েছে। তবুও রক্ষা যে, তিনি রমজান হিসেবে রাতেও খেতে বারণ করেননি। তারা ক্ষমতায়, কত পরামর্শই তো দিতে পারেন। নিজের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য আর কত 'থিওরি' দেবেন, আর কত বাঙালদের 'হেদায়েত' করবেন? কিছু করতে না পারলে, দুর্বৃত্তদের সঙ্গে পেরে না উঠলে বিদায় হোন না, অন্য কেউ পারে কি-না সুযোগটা দিন অন্তত।
বদিউর রহমান : সাবেক সচিব
দু'বছইর্যা তত্ত্বাবধায়কের আমলে অর্থাৎ সেনা-নির্দেশিত তত্ত্বাবধায়কের আমলে যখন দ্রব্যমূল্য হুড়মুড় খেয়ে লাফাতে লাগল, চালের দামও যখন অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে ফেলল, তখনও আমাদের নছিহত করা হয়েছিল। কেউ কম খেতে বলেছেন, কেউবা আবার আলু খেতেও বলেছিলেন। কোনো পণ্ডিত ব্যক্তি আবার সাহস করে তখনকার নীরব দুর্ভিক্ষের কথাও বলেছিলেন। আরেকজন আরেক ধাপ এগিয়ে সরব দুর্ভিক্ষের কথাই বলে ফেলেছিলেন। তখন দ্রব্যমূল্যে হিমশিম খেয়ে আমার স্ত্রী পারিবারিক বাজার সরকারের ঠিকাদারি থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। সাপ্তাহিক জনতার চোখে ১০.৪.০৮ লিখেছিলাম, নীরব দুর্ভিক্ষ, হিডেন হাঙ্গার, চাল নিয়ে চুলোচুলি আর আমার স্ত্রীর পদত্যাগ (সূত্র_ আমার বই। তত্ত্বাবধায়ক আমল কিছু রাজনীতি কিছু বাজনীতি)। আবার দৈনিক যুগান্তরে ওই সময়ে লিখেছিলাম, 'কম খাওয়া, আলু খাওয়া আর ফল্স সিলিংয়ের মিষ্টি হাওয়া'। যারা আমাদের কম খেতে বা আলু খেতে পরামর্শ দিয়েছেন, তারা কিন্তু তখনও অফিসে ফল্স সিলিং লাগিয়ে আরও মিষ্টি হাওয়া খাওয়ার কাজ বন্ধ করেননি। তখন আমি ৩০ কেজি নাজিরশাইল চাল ১৩৫০ টাকায়, ৬ কেজি আটা ২৬৪ টাকায় আর ৩ কেজি মসুর ডাল ২৮৮ টাকায় কিনেছিলাম। আর এখন? আওয়ামী সরকারের তো ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ঋণী থাকা উচিত অন্তত এ জন্য যে, তারা তখন দাম বাড়িয়ে দেওয়াতে এ সরকার এখন তার সুফল ভোগ করতে পারছে, অন্তত বলতে পারছে যে আমরা তো তা-ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছুটা কমাতে পেরেছি। পৃথিবী যে গোল তা আমরা অনেকভাবেই দেখে থাকি। এই যেমন এখন দেখছি দ্রব্যমূল্যে আমরা আবার আগের স্থানে এসে গেছি এবং যাচ্ছি। অর্থনীতির কথকতায় কত কত ব্যাখ্যা যে এর পেছনে থাকবে তার হয়তো শেষ নেই; কিন্তু আমাদের মন্ত্রী সাহেবদের পরামর্শে যে আমরা খেই হারিয়ে ফেলি!
সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে একদিন বাজারে কম যেতে বলেছেন। দেশের ১৬ কোটি মানুষ (আমাদের সরকারি গণনায় ১৪ কোটি ২৩ লাখ নয়) যদি একদিন বাজারে না যান, কিছু না কেনেন, তাহলে নাকি তার হিসাবে দ্রব্যমূল্য কমে যাবে। যৎসামান্য অর্থনীতির যেটুকু পাঠ ছাত্রাবস্থায় নিয়েছিলাম এবং পরে তা যতটুকু এস্তেমাল করেছি তাতে একদিন বাজারে না গেলে দ্রব্যমূল্য কমার কোনো কারণ দেখি না। এতে ঘুরেফিরে পাটিগণিতের সেই পুরনো অঙ্কই এসে যায়_ মূল্যবৃদ্ধির কারণে কোনো ব্যক্তি তার ব্যবহার কতটুকু কমালে ওই খাতে তার ব্যয় বেশি হবে না। আমার বাজেট অবশ্যই অর্থমন্ত্রীর বাজেট নয়, ঠিক রাখতে হলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আনুপাতিক হারে ব্যবহার কমাতে হবে। অর্থমন্ত্রী 'বাতকা বাত' একদিন বাজারে কম যেতে বলে ফেলেছেন, না প্রকৃতই তার লাভ-লোকসানের কোনো গবেষণালব্ধ তথ্য পেয়েই তা বলেছেন তা কিন্তু আমরা জানতে পারিনি। এটা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা গবেষণা করে আমাদের জানাতে পারেন। হালে কোনো কোনো মন্ত্রীর 'লাগামছাড়া' বক্তব্যের যে বাহুল্য দেখা যাচ্ছে অর্থমন্ত্রীও সে কাতারে শামিল হয়ে গেছেন। এটা তার বয়সের কারণে কি-না বোঝা যাচ্ছে না। যদি তা-ই হয়ে থাকে তাহলে তো আমাদের স্মরণ করতেই হয় যে, পুরান চাল সবসময় ভাতে বাড়ে না, তাতে পোকাও ধরে। অনেক সময় ভালো পরামর্শও মানুষের ভালো লাগে না, দ্রব্যমূল্যের এ কঠিন সময় এমন বক্তব্যকে রসিকতা মনে হওয়া বোধহয় উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আমি বলি, এমন কঠিন সময় তার মুখে এটা বেমানান। অযথা 'বাক্যদোষী' হওয়ার কোনোই প্রয়োজন ছিল না। ১ আগস্ট ২০১১-এর কয়েকটি পত্রিকার দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত বড় বড় খবর দেখলে পরিস্থিতি কিছুটা হলেও বোধহয় আঁচ করা যায় : দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকবে তো_ আসছে রমজান, সাধারণ মানুষের মধ্যে দুশ্চিন্তা (দৈনিক সমকাল); পাইকারি ও খুচরা বাজারে দামের ব্যাপক ফারাক_ এক বছরে বেড়েছে ৩৭ পণ্যের দাম (যুগান্তর); দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দায়ী : সংসদীয় কমিটি (আমার দেশ); টিসিবির পণ্য বিক্রি মুখ থুবড়ে পড়েছে (ইত্তেফাক); নিত্যপণ্যের বাজার ৫ শিল্প গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে (প্রথম আলো)। তারপর ৪ আগস্টের প্রথম আলোর লিড নিউজ_ 'অসহনীয় বাজার, কষ্টে মানুষ'। এই যখন অবস্থা তখন আবার নতুন রসিকতা নিয়ে সরব হলেন বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান। পাকিস্তান আমলে আটা-ভুট্টা খাওয়ার পরামর্শের কথা সবাই জানেন। এখন মনে হয় বেচারা মোনায়েম খানকে আর দোষারোপ করে কী লাভ? হোটেল ইন্টারকনটিনেন্টালে আটা-ভুট্টার মোলায়েম খাবার খেয়ে কি আর বাঙালিকে হাইকোর্ট দেখানো যায়। বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রীকে নিয়ে মানুষ নাখোশ। তিনি 'অতিকথনের' তালিকাভুক্ত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের অন্যতম। তার এ মেয়াদে দৃশ্যমান সফলতা আমাদের নাগালের বাইরে। আগের বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং তার এক বাণিজ্য সচিবের বিরুদ্ধে টিসিবিকে অকার্যকর করে দেওয়ার অভিযোগ প্রবল, এখনও তা বহাল রয়েছে। বর্তমান মন্ত্রীও টিসিবি নিয়ে ভালো কিছু করতে পারেননি। সমালোচনা রয়েছে সদিচ্ছার অভাব এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আঁতাত। নিন্দুকদের মুখে চুনকালি পড়ূক, আমরা বলব আমাদের মন্ত্রীরা সবসময় ভালো এবং আন্তরিক, আগেরই হোক আর পরেরই হোক। ফারুক খান অর্থমন্ত্রী থেকে এককাঠি এগিয়ে মানুষকে কম খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। অর্থমন্ত্রীর পরামর্শে একদিন বাজারে না গেলে অন্য দিন বেশি কিনে কম খাওয়ার হয়তো প্রয়োজন হতো না। ফ্রিজ, ডিপফ্রিজ যাদের আছে তারা এমনিতেই প্রতিদিন বাজারে যান না। গরিবের আবার দিনরাত কিসের, টাকা থাকলে তো বাজার! 'ভেজাল প্রতিরোধে আমাদের করণীয়' শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি ভেজাল রোধে এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কম খাওয়ার উপকারিতা বর্ণনা করেছেন। ৫ আগস্টের পত্রিকাগুলোতে এ খবর বেশ স্থান এবং গুরুত্ব পেয়েছে। তবুও রক্ষা যে, তিনি রমজান হিসেবে রাতেও খেতে বারণ করেননি। তারা ক্ষমতায়, কত পরামর্শই তো দিতে পারেন। নিজের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য আর কত 'থিওরি' দেবেন, আর কত বাঙালদের 'হেদায়েত' করবেন? কিছু করতে না পারলে, দুর্বৃত্তদের সঙ্গে পেরে না উঠলে বিদায় হোন না, অন্য কেউ পারে কি-না সুযোগটা দিন অন্তত।
বদিউর রহমান : সাবেক সচিব
No comments