উত্তরাঞ্চলের আবহাওয়া অফিস-অব্যবস্থাপনার দায়
দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলার মধ্যে ছয়টি জেলায় আবহাওয়া অফিস থাকলেও সেগুলো উপযুক্ত ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে কাঙ্ক্ষিত দায়িত্ব সম্পাদনে সক্ষম হচ্ছে না। ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন এ অঞ্চলের জেলাগুলোর প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে কীভাবে প্রভাবান্বিত করে চলেছে, তার যথাযথ মূল্যায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।
গত শনিবার সমকালের লোকালয় পাতায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত এক রিপোর্ট থেকে আরও জানা যায়, রংপুর অধিকতর ভূমিকম্পপ্রবণ হওয়ার কারণে এ জেলার অফিসটিতে আবহাওয়া নির্ণর্য় যন্ত্রের সঙ্গে একটি ভূমিকম্প পরিমাপক যন্ত্রও বসানো আছে। আবহাওয়া নির্ণর্য়ের রাডারটি প্রায় এক বছর আগে বিকল হয়ে গেলেও সেটি এখনও ঠিক করা হয়নি। ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছাড়া প্রয়োজনীয় আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে ব্যর্থ হচ্ছে রংপুর আবহাওয়া অফিস। অন্য পাঁচটি জেলার আবহাওয়া অফিসও চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। উপরন্তু আরও পাঁচটি আবহাওয়া অফিস প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও আমলাতান্ত্রিক নানা জটিলতা ও অজুহাতের কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি। কবে প্রতিষ্ঠান হিসেবে এসব আলোর মুখ দেখবে তা কারও পক্ষেই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। অথচ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আলস্য ভাঙলে উত্তরাঞ্চলের আবহাওয়া মনিটর করার আধুনিক যন্ত্র সংবলিত নতুন আবহাওয়া অফিস প্রতিষ্ঠা করা যেমন সম্ভব, তেমনি পুরনো অফিসগুলোকে আধুনিক যন্ত্রপাতিতে সজ্জিতকরণ এবং পুরনো ও বিকল যন্ত্রপাতি দ্রুত মেরামত করে কর্মক্ষম করে তোলাও সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অর্থ ছাড় করা এবং প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার পুরনো সংস্কৃতিকে ঝেড়ে ফেলতে হবে এবং সঞ্চার করতে হবে নতুন কর্মোদ্যম। আর কর্তৃপক্ষের সক্রিয়তার ফলে আমাদের আবহাওয়াবিদরা যদি জলবায়ু ও অন্যান্য প্রভাবে উত্তরাঞ্চলের আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তনের প্রভাবকে সম্যক উপলব্ধি করতে পারেন, তাহলে ওই বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষি ও মৎস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণ করতে সক্ষম হবো। আমরা উত্তরাঞ্চলের আবহাওয়া অফিসগুলোকে অবিলম্ব্বে আধুনিক যন্ত্রপাতি সজ্জিত করা ও বিকল যন্ত্রগুলো মেরামত করার আহ্বান জানাই। একই সঙ্গে নতুন আবহাওয়া অফিস স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দূর করে সেগুলো অতিসত্বর প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাই।
No comments