এ আতঙ্ক রুখতেই হবে by আমিনুল ইসলাম জুয়েল

একটি পত্রিকায় সংবাদ এসেছে, পাবনা-নগরবাড়ী মহাসড়কের ৫২ কিমি দূরত্বের মধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগ মোট ৩৫টি গতিরোধক দিয়ে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে! কিন্তু ড্রাইভারদের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে। আর তাই তো এ বছর ১৭ জানুয়ারি থেকে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত সাত মাসে ওই সড়কে সংঘটিত

দুর্ঘটনায় মোট ২৩ জন নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে ৮৩ জন। ছোটখাটো দুর্ঘটনার হিসাবে আহতের সংখ্যা শতাধিক। কোচ ও বাস ড্রাইভারদের বেপরোয়া মনোভাবের কারণেই বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে বলে খবরটিতে বলা হয়েছে। শুধু পাবনা- নগরবাড়ী মহাসড়ক নয় সারাদেশেই গাড়িচালকরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। বেপরোয়া ড্রাইভারের উদ্দেশে মৃত্যুর আগ মুহূর্তে নাট্য পরিচালক আহীর আলম বলেছিলেন, 'তুই এটা কী করলি!' আজ খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক তারেক মাসুদ কিংবা সাংবাদিক মিশুক মুনীরের কথা বলতে গেলে কয়েক বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আহীর আলমের কথাও অনিবার্যভাবে চলে আসে। আরও কয়েক বছর পেছনে তাকালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত তথা ধীরে বহে মেঘনা, সূর্যকন্যা, সীমানা পেরিয়ে প্রভৃতি ছবির পরিচালক আলমগীর কবীরের কথা বলতে হয়। তিনি ১৯৮৯ সালে পাবনার নগরবাড়ী ফেরিঘাটে দুর্ঘটনায় মারা যান। আলমগীর কবীরের গাড়ির ড্রাইভার প্রাইভেট কারটিকে ফেরির পন্টুনে ওঠাতে গিয়ে যমুনায় ডুবিয়ে দেন। ওই ক্ষেত্রে চালক যদি নিয়ম মেনে যাত্রী নামিয়ে গাড়িকে ফেরিতে ওঠাত তাহলে হয়তো এমন ঘটনা ঘটত না।
ক্রমবর্ধমান সড়ক দুর্ঘটনায় দেশের মানুষের পাশাপাশি উদ্বিগ্ন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এক বছর আগে তারা বলছিল, ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে দুর্ঘটনাপ্রবণ দেশ হিসেবে চিহ্নিত হবে। তাদের আশঙ্কা যে অমূলক নয় তার আলামত কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে। সরকারি গবেষণায় বলা হচ্ছে, জাল ও ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স, অদক্ষ গাড়িচালক, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন, সড়ক নিরাপত্তার অভাব, সড়ক নির্মাণে ত্রুটি ও মোটরযানের ত্রুটিসহ নানা কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। তবে সাধারণ একজন যাত্রীও বোঝেন, ড্রাইভারদের বেপরোয়া গাড়ি চালানোর জন্যই বেশিসংখ্যক দুর্ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া ড্রাইভাররা জানে তাদের পেছনে রয়েছে শক্তিশালী শ্রমিক সংগঠন। তাই দু'চারজন পথচারী তাদের গাড়ির চাকায় পিষ্ট হলেও তাদের টিকিটি ধরার সাধ্য কারও নেই। প্রচলিত আইনেও তারা সুবিধা পাচ্ছে। চালকের দোষে নিরীহ পথচারী মারা গেলেও সেই চালককে একদিন হাজতে পর্যন্ত আটকে রাখা যায় না। কিছুদিন আগে জনৈক ড্রাইভার আমাকে বলেছিল, একজন লাইসেন্সপ্রাপ্ত ড্রাইভার চার-পাঁচটি ট্রাক চালায়। একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কীভাবে? সে বলল, একজন ড্রাইভার গোপনে কয়েকজন মালিকের সঙ্গে চুক্তি করে। কমিশন নিয়ে সে বিভিন্ন হেলপারকে গাড়ি চালাতে দেয়। এভাবে মালিকের অগোচরেও অবৈধ চালকরা গাড়ি চালায়। দেশে অবৈধ চালকের সংখ্যা কত? সারাদেশে ১৩ লাখ রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত যানবাহন রয়েছে। আর বৈধ চালকের সংখ্যা নয় লাখ। ভারী যানবাহনেই কাজ করছে চার লাখ অবৈধ ড্রাইভার। এ ছাড়া দেশে রেজিস্ট্রেশন ছাড়া লাখ লাখ মাইক্রোবাস রয়েছে, যেগুলো অদক্ষ ও আনাড়ি চালকরা চালায়।
সড়ক দুর্ঘটনা আতঙ্কে যখন গোটা দেশ কাঁপছে তখনই বিনা পরীক্ষাতে বাস-ট্রাকের ২৭ হাজার পেশাদার লাইসেন্স দেওয়ার জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে শ্রমিক সংগঠনগুলো। অযোগ্যদের হাতে এভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স তুলে দিলে ভবিষ্যতের জন্য তা একটি খারাপ দৃষ্টান্ত ও কালচারে পরিণত হতে পারে, যা আমাদের মহাসড়কগুলোকে আরও অনিরাপদ করে তুলবে।
jewelameen@gmail.com
 

No comments

Powered by Blogger.