শিক্ষা-শিক্ষকদের টাইম স্কেল
আমাদের দেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকদের পাওয়ার চেয়ে না-পাওয়ার পাল্লা বেশি ভারী, তাঁদের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থা নাজুক। বিগত সরকারের মতো বর্তমান সরকারও শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছে। মন্ত্রীরা মিটিং-সেমিনারে গিয়ে ‘শিক্ষকেরা মানুষ গড়ার কারিগর; শিক্ষকেরা জাতির মেরুদণ্ড’ এবং শিক্ষকদের শুধু উপদেশই দিচ্ছেন। শিক্ষকদের মানোন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।
এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কারণ, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ৯০ শতাংশ ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। যাঁরা এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, কেমন আছেন তাঁরা? কেমন চলছে তাঁদের জীবনযাপন?
সব সরকারই ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য শিক্ষকদের কিছু স্বপ্ন দেখায়, প্রতিশ্রুতি দেয়। শিক্ষক-কর্মচারীরাও সমাজের অংশ। সমাজের ভালো-মন্দের কথা তাঁরা ভাবেন। তাঁদের বাদ দিয়ে চলা যায় না। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বেসরকারি শিক্ষকদের মানবেতর জীবনযাপন পরিবর্তনের লক্ষ্যে কিছু ঘোষণা দিয়েছিল। তাঁদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রদানের অঙ্গীকার ছিল এই ইশতেহারে।
পূর্ব পাকিস্তানে বেসরকারি স্কুল রেজিস্ট্রেশন অর্ডিন্যান্স ১৯৬২ দিয়েই নীতিমালা প্রণয়ন শুরু হয়। তারপর স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে নানা অর্ডিন্যান্স এসেছে শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কে। কচ্ছপগতিতে হলেও শিক্ষকদের চাকরির সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে, এ কথা সত্য। কিন্তু তা কোনো মানসম্পন্ন পর্যায়ে পৌঁছায়নি। সার্কভুক্ত দেশগুলোর শিক্ষার মান সমপর্যায়ে নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেই সঙ্গে শিক্ষকদের মর্যাদা বা আর্থিক সুযোগ-সুবিধার কথা আসেনি। পশ্চিম বাংলায় একজন স্কুলশিক্ষক ৫০ হাজার টাকা মাসিক বেতন পান। তাদের মুদ্রামান বাংলাদেশের তুলনায় বেশি। সেই অর্থে ৫০ হাজার টাকা বাংলাদেশের ৭৫ হাজার টাকার সমান। এবার বিভিন্ন সময়ে প্রদেয় সুযোগ-সুবিধার তথ্যগুলো খতিয়ে দেখা যাক।
স্বাধীনতা অর্জনের এক দশক অতিক্রান্ত হওয়ার পরও এ বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। ১৯৮০ সালে তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রথম শিক্ষকদের জন্য একটি বেতনকাঠামো প্রদান করেন, যা কার্যকর করা হয় ১৯৮০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে। প্রারম্ভিক স্তরে বেতনক্রমের ৫০ শতাংশ প্রদান করা হয়। ১৯৮৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চিকিৎসা-ভাতা ৬০ টাকা, বাড়িভাড়া ১০০ টাকা যুক্ত করা হয়। ৩ মার্চ, ১৯৮৬ থেকে আরও ১০ শতাংশ বেতন বাড়ানো হয়। ফলে প্রাপ্ত বেতন হয় ৬০ শতাংশ। ১৯৮৬ সালের ১ জুলাই থেকে ৮৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত আরও ১০ শতাংশ বাড়িয়ে করা হয় ৭০ শতাংশ। চিকিৎসা-ভাতাও ৪০ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ১০০ টাকা। ১৯৯৪ সালে চিকিৎসা-ভাতা ৫০ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ১৫০ টাকা। ১৯৯৫ সালের জানুয়ারি থেকে বেতনের অংশ ৮০ শতাংশে উন্নীত করা হয়। জুলাই ২০০০ থেকে আবার করা হয় ৯০ শতাংশ। এরপর ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ গত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আরও ৫ শতাংশ বাড়িয়ে শতভাগে উন্নীত করে।
উৎসব-ভাতা ছিল না দীর্ঘকাল। এটি প্রদান করে বিএনপি সরকার (তবে আট বছর টাইম স্কেল বন্ধ করে দিয়ে উৎসব-ভাতা চালু করা হয়)। শিক্ষকদের স্কেলের ২৫ শতাংশ এবং কর্মচারীদের স্কেলের ৫০ শতাংশ প্রদান করা হয় উৎসব-ভাতায়। সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ প্রদান করেন কল্যাণ-ভাতা। ১৯৯০ সালে প্রণয়ন করা হয় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট আইন-১৯৯০।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা যুগোপযোগী করতে প্রণীত হয়েছে নতুন শিক্ষানীতি। শিক্ষকেরা দেখতে চেয়েছিলেন আশার আলো। সহকারী অধ্যাপক হওয়ার ক্ষেত্রে যে অনুপাতের খসড়াটি ঝোলানো ছিল। সেটি তুলে নেওয়া হবে, পত্রিকায় এমন খবরও এসেছিল। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। আর সে কারণে একজন শিক্ষক কবে সহকারী অধ্যাপকের পদ পাবেন, এর সঠিক সময়-বয়স নেই। এ জন্য তাঁকে ২০-২৫ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
স্বতন্ত্র বেতন স্কেল বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ সরকারের নেই। অর্থমন্ত্রী শিক্ষকদের পাঠদানের বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এ ক্ষেত্রে শিক্ষামন্ত্রী নির্বিকার। শিক্ষকদের পাঠদানে অনাগ্রহের বিষয়টি যদি সত্যি হয়, তবে সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে একটি পৃথক কমিশনের কথা ভেবেছে সরকার। আমরা আশা করেছিলাম, এর মাধ্যমে নিয়োগসংক্রান্ত জটিলতা এবং অর্থ ব্যয়ের ঝামেলা থেকে রক্ষা পাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু তা হচ্ছে না। ফলে বর্তমানে নিয়োগ-প্রক্রিয়া পরিণত হয়েছে নিয়োগ-বাণিজ্যে। ‘ডোনেশনের’ নামে অর্থ গ্রহণ অনেকটা ওপেন সিক্রেট। ফলে ব্যাহত হচ্ছে মেধাবী ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ।
শিক্ষামন্ত্রী সারা জীবন খেটে খাওয়া মানুষের রাজনীতি করেছেন। তিনি শিক্ষকদের মঙ্গল চান। কিন্তু কিছু করতে পারেন না কতিপয় আমলার বিরোধিতার কারণে। শিক্ষকদের আন্দোলনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে অনেকে উচ্চপদে আসীন হয়েছেন, পূর্বাপর সরকারের কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা ভাগিয়েছেন। কিন্তু সাধারণ শিক্ষকদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
নন্দকিশোর সাহা, সহকারী অধ্যাপক; আফজাল হোসেন শেখ, প্রভাষক; তাপস বিশ্বাস, প্রভাষক, কচুয়া ডিগ্রি কলেজ, কচুয়া, বাগেরহাট।
সব সরকারই ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য শিক্ষকদের কিছু স্বপ্ন দেখায়, প্রতিশ্রুতি দেয়। শিক্ষক-কর্মচারীরাও সমাজের অংশ। সমাজের ভালো-মন্দের কথা তাঁরা ভাবেন। তাঁদের বাদ দিয়ে চলা যায় না। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বেসরকারি শিক্ষকদের মানবেতর জীবনযাপন পরিবর্তনের লক্ষ্যে কিছু ঘোষণা দিয়েছিল। তাঁদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রদানের অঙ্গীকার ছিল এই ইশতেহারে।
পূর্ব পাকিস্তানে বেসরকারি স্কুল রেজিস্ট্রেশন অর্ডিন্যান্স ১৯৬২ দিয়েই নীতিমালা প্রণয়ন শুরু হয়। তারপর স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে নানা অর্ডিন্যান্স এসেছে শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কে। কচ্ছপগতিতে হলেও শিক্ষকদের চাকরির সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে, এ কথা সত্য। কিন্তু তা কোনো মানসম্পন্ন পর্যায়ে পৌঁছায়নি। সার্কভুক্ত দেশগুলোর শিক্ষার মান সমপর্যায়ে নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেই সঙ্গে শিক্ষকদের মর্যাদা বা আর্থিক সুযোগ-সুবিধার কথা আসেনি। পশ্চিম বাংলায় একজন স্কুলশিক্ষক ৫০ হাজার টাকা মাসিক বেতন পান। তাদের মুদ্রামান বাংলাদেশের তুলনায় বেশি। সেই অর্থে ৫০ হাজার টাকা বাংলাদেশের ৭৫ হাজার টাকার সমান। এবার বিভিন্ন সময়ে প্রদেয় সুযোগ-সুবিধার তথ্যগুলো খতিয়ে দেখা যাক।
স্বাধীনতা অর্জনের এক দশক অতিক্রান্ত হওয়ার পরও এ বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। ১৯৮০ সালে তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রথম শিক্ষকদের জন্য একটি বেতনকাঠামো প্রদান করেন, যা কার্যকর করা হয় ১৯৮০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে। প্রারম্ভিক স্তরে বেতনক্রমের ৫০ শতাংশ প্রদান করা হয়। ১৯৮৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চিকিৎসা-ভাতা ৬০ টাকা, বাড়িভাড়া ১০০ টাকা যুক্ত করা হয়। ৩ মার্চ, ১৯৮৬ থেকে আরও ১০ শতাংশ বেতন বাড়ানো হয়। ফলে প্রাপ্ত বেতন হয় ৬০ শতাংশ। ১৯৮৬ সালের ১ জুলাই থেকে ৮৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত আরও ১০ শতাংশ বাড়িয়ে করা হয় ৭০ শতাংশ। চিকিৎসা-ভাতাও ৪০ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ১০০ টাকা। ১৯৯৪ সালে চিকিৎসা-ভাতা ৫০ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ১৫০ টাকা। ১৯৯৫ সালের জানুয়ারি থেকে বেতনের অংশ ৮০ শতাংশে উন্নীত করা হয়। জুলাই ২০০০ থেকে আবার করা হয় ৯০ শতাংশ। এরপর ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ গত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আরও ৫ শতাংশ বাড়িয়ে শতভাগে উন্নীত করে।
উৎসব-ভাতা ছিল না দীর্ঘকাল। এটি প্রদান করে বিএনপি সরকার (তবে আট বছর টাইম স্কেল বন্ধ করে দিয়ে উৎসব-ভাতা চালু করা হয়)। শিক্ষকদের স্কেলের ২৫ শতাংশ এবং কর্মচারীদের স্কেলের ৫০ শতাংশ প্রদান করা হয় উৎসব-ভাতায়। সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ প্রদান করেন কল্যাণ-ভাতা। ১৯৯০ সালে প্রণয়ন করা হয় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট আইন-১৯৯০।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা যুগোপযোগী করতে প্রণীত হয়েছে নতুন শিক্ষানীতি। শিক্ষকেরা দেখতে চেয়েছিলেন আশার আলো। সহকারী অধ্যাপক হওয়ার ক্ষেত্রে যে অনুপাতের খসড়াটি ঝোলানো ছিল। সেটি তুলে নেওয়া হবে, পত্রিকায় এমন খবরও এসেছিল। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। আর সে কারণে একজন শিক্ষক কবে সহকারী অধ্যাপকের পদ পাবেন, এর সঠিক সময়-বয়স নেই। এ জন্য তাঁকে ২০-২৫ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
স্বতন্ত্র বেতন স্কেল বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ সরকারের নেই। অর্থমন্ত্রী শিক্ষকদের পাঠদানের বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এ ক্ষেত্রে শিক্ষামন্ত্রী নির্বিকার। শিক্ষকদের পাঠদানে অনাগ্রহের বিষয়টি যদি সত্যি হয়, তবে সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে একটি পৃথক কমিশনের কথা ভেবেছে সরকার। আমরা আশা করেছিলাম, এর মাধ্যমে নিয়োগসংক্রান্ত জটিলতা এবং অর্থ ব্যয়ের ঝামেলা থেকে রক্ষা পাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু তা হচ্ছে না। ফলে বর্তমানে নিয়োগ-প্রক্রিয়া পরিণত হয়েছে নিয়োগ-বাণিজ্যে। ‘ডোনেশনের’ নামে অর্থ গ্রহণ অনেকটা ওপেন সিক্রেট। ফলে ব্যাহত হচ্ছে মেধাবী ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ।
শিক্ষামন্ত্রী সারা জীবন খেটে খাওয়া মানুষের রাজনীতি করেছেন। তিনি শিক্ষকদের মঙ্গল চান। কিন্তু কিছু করতে পারেন না কতিপয় আমলার বিরোধিতার কারণে। শিক্ষকদের আন্দোলনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে অনেকে উচ্চপদে আসীন হয়েছেন, পূর্বাপর সরকারের কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা ভাগিয়েছেন। কিন্তু সাধারণ শিক্ষকদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
নন্দকিশোর সাহা, সহকারী অধ্যাপক; আফজাল হোসেন শেখ, প্রভাষক; তাপস বিশ্বাস, প্রভাষক, কচুয়া ডিগ্রি কলেজ, কচুয়া, বাগেরহাট।
No comments