ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-ঐতিহ্য ও গৌরবের স্মারক by স্বপন কুমার দাস
আজ ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ দিনটি প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালন করে। এবারও দেশের এই সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
পুরো বিশ্ববিদ্যালয় হোর্ডিং, ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে চমৎকারভাবে সাজানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনগুলোয় আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আজ হাজারো প্রাক্তন ও নবীন ছাত্রছাত্রীর পদচারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ মুখর হয়ে উঠবে। সবার মুখে মুখে ফিরবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীত গৌরব আর আগামীর সম্ভাবনার কথা। এক যুগসন্ধিক্ষণে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হলে মুসলমান সংখ্যাগুরু পূর্ব বাংলা ও আসাম প্রদেশের মানুষের মধ্যে এক নতুন আশার সঞ্চার হয়। কিন্তু মাত্র ছয় বছরের ব্যবধানে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রচণ্ড বিরোধিতার মুখে এ বিভক্তি রদ করা হয়। ফলে এ অঞ্চলের মুসলমানদের মনে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। অতঃপর মুসলমান সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে ভারত সরকারের ওপর ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করা হলে বঙ্গভঙ্গ রদের রাজকীয় ক্ষতিপূরণ হিসেবে এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ড. পি জে হার্টস। তিনি এর আগে ১৭ বছর লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কমিশনের সদস্য ছিলেন। কলকাতাকেন্দ্রিক হিন্দু বুদ্ধিজীবীদের বিরোধিতা, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে ব্রিটিশ রাজকোষে অর্থাভাব ইত্যাদি প্রতিকূল অবস্থা অতিক্রম করে অবশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে। প্রথমে তিনটি অনুষদ, ১২টি বিভাগ, ৬০ জন শিক্ষক, ৮৪৭ জন ছাত্রছাত্রী এবং তিনটি ছাত্রাবাস নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সত্যেন বোসের কারণে সারা বিশ্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। তিনি কার্জন হলের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের গবেষণাগারে ১৯২৪ সালে কোয়ান্টাম সংখ্যায়ন আবিষ্কার করে বিজ্ঞানজগতে হৈচৈ ফেলে দেন। শুধু ড. বোসই নন, ভারতখ্যাত বিজ্ঞানী কে এস কৃষ্ণান ও সতীশ রঞ্জন খাস্তগীরের কর্মস্থল ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সফরে আসেন। সে বছর তিনি কার্জন হলে দুটি বক্তৃতা করেন, যা তার অন্যতম সেরা বক্তৃতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অবহেলিত পূর্ববঙ্গে শিক্ষা ও সংস্কৃতি প্রসারে নবজাগরণের সৃষ্টি করে। প্রথম দিকে মুসলিম শিক্ষক ও ছাত্রদের সংখ্যা ছিল নগণ্য। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে বিপুলসংখ্যক মুসলিম শিক্ষক ও ছাত্রের সরব উপস্থিতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সার্থক করে তোলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই সর্বপ্রথম মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন গড়ে তোলে। মাতৃভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে তারা বাঙালি জাতির স্বতন্ত্র ইতিহাস তুলে ধরে। এভাবে ধারাবাহিক আন্দোলনের মাধ্যমে তারা মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি তৈরি করে। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে। অবশ্য এ জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারীদের কঠিন মূল্য দিতে হয়। তাদের রক্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ লাল হয়ে ওঠে। ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শ্মশানে পরিণত হয়। এ দেশে শিক্ষা প্রসারে, বিশেষ করে নারী শিক্ষা প্রসারে, মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উন্মেষে, মানবসম্পদ উন্নয়নে, মুক্তবুদ্ধিচর্চায়, সংস্কৃতি বিকাশে, ক্রীড়াচর্চায়, ভাষা আন্দোলনে এবং বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে। জাতির যা কিছু অর্জন তার সবই এসেছে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে। অতীতের মতো ভবিষ্যতেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতির পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করবে। এবার ৯০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এটাই হোক সবার কামনা।
স্বপন কুমার দাস
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সত্যেন বোসের কারণে সারা বিশ্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। তিনি কার্জন হলের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের গবেষণাগারে ১৯২৪ সালে কোয়ান্টাম সংখ্যায়ন আবিষ্কার করে বিজ্ঞানজগতে হৈচৈ ফেলে দেন। শুধু ড. বোসই নন, ভারতখ্যাত বিজ্ঞানী কে এস কৃষ্ণান ও সতীশ রঞ্জন খাস্তগীরের কর্মস্থল ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সফরে আসেন। সে বছর তিনি কার্জন হলে দুটি বক্তৃতা করেন, যা তার অন্যতম সেরা বক্তৃতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অবহেলিত পূর্ববঙ্গে শিক্ষা ও সংস্কৃতি প্রসারে নবজাগরণের সৃষ্টি করে। প্রথম দিকে মুসলিম শিক্ষক ও ছাত্রদের সংখ্যা ছিল নগণ্য। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে বিপুলসংখ্যক মুসলিম শিক্ষক ও ছাত্রের সরব উপস্থিতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সার্থক করে তোলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই সর্বপ্রথম মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন গড়ে তোলে। মাতৃভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে তারা বাঙালি জাতির স্বতন্ত্র ইতিহাস তুলে ধরে। এভাবে ধারাবাহিক আন্দোলনের মাধ্যমে তারা মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি তৈরি করে। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে। অবশ্য এ জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারীদের কঠিন মূল্য দিতে হয়। তাদের রক্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ লাল হয়ে ওঠে। ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শ্মশানে পরিণত হয়। এ দেশে শিক্ষা প্রসারে, বিশেষ করে নারী শিক্ষা প্রসারে, মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উন্মেষে, মানবসম্পদ উন্নয়নে, মুক্তবুদ্ধিচর্চায়, সংস্কৃতি বিকাশে, ক্রীড়াচর্চায়, ভাষা আন্দোলনে এবং বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে। জাতির যা কিছু অর্জন তার সবই এসেছে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে। অতীতের মতো ভবিষ্যতেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতির পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করবে। এবার ৯০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এটাই হোক সবার কামনা।
স্বপন কুমার দাস
No comments