আন্তর্জাতিক সমবায় দিবস-ঐক্যই শক্তি by সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম
বৃদ্ধ পিতা মৃত্যুশয্যায় তাঁর সন্তানদের কাঠি ভাঙতে দিয়ে একতার শিক্ষা দিয়েছিলেন। একটি করে কাঠি ভাঙা মুহূর্তের বিষয়, কিন্তু যখনই সেগুলো আঁটিবদ্ধ থাকে, তখন ওই বাঁধনের সব কাঠি নিরাপদ। সেখানে প্রত্যেকের শক্তি বিচ্ছিন্ন নয়, বরং সব শক্তি এক হয়ে তৈরি হয় একটি কঠিন সংঘবদ্ধতা, তৈরি হয় সমবায় শক্তি। এ গল্প কমবেশি সবারই জানা।
তবে এ ধারণার বৃহৎ রূপ আন্তর্জাতিক সমবায় সমিতির পেছনে রয়েছে একটি বাস্তব গল্প_বঞ্চনা ও দারিদ্র্যের কথা। সে গল্পটি হয়তো খুব পরিচিত নয়। উনিশ শতকের মাঝামাঝি ওয়েস্টার্ন ইউরোপ, নর্থ আমেরিকা ও জাপানের মানুষ অনুভব করেছিল, অর্থনৈতিক উন্নয়নে একক ভিত্তির ধারণা থেকে যৌথ প্রয়াসের চিন্তা করতে হবে।
১৮৪৪ সালে ইংল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে তুলার কারখানার শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ ছিল অস্বাস্থ্যকর, মজুরি ছিল খুব কম। জীবনযাত্রার মান এতটাই নিচু ছিল যে সন্তানকে দুই বেলা খাবার জোগানো সেই মজুরিতে সম্ভব ছিল না। অবস্থার পরিবর্তনে ২৮ জন শ্রমিক মিলে প্রত্যেকের সামান্য অর্থ এক করে তৈরি করেছিল একটি মুদি দোকান, যা তাদের একার পক্ষে কল্পনাতীত। প্রথম প্রথম সারা দিন কারখানার কাজের পর সপ্তাহে দুই দিন রাতে সবাই মিলে দোকান চালাত। খুব অল্প সময়েই এ দোকান থেকে প্রাপ্ত লাভ তাদের সংসারে সচ্ছলতা এনে দিল। তাই মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যেই সপ্তাহে পাঁচ রাত দোকান খোলা শুরু করল তারা। শুরু হলো আধুনিক যুগের সমবায় সমিতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এ বছর পালিত হচ্ছে ৮৯তম আন্তর্জাতিক সমবায় দিবস। ১৯২৩ সাল থেকে জুলাই মাসের প্রথম শনিবার পালিত হয়ে আসছে দিনটি। এবারের দিবসের প্রতিপাদ্যে প্রাধান্য তরুণদের।
২০১১ সালে দিবসটির প্রতিপাদ্য_'Youth, The Future of Co-operative Enterprise'. সমবায়গত উদ্যোগ কিভাবে ক্ষমতায়নে সাহায্য করে, সে বিষয়ে তরুণদের উৎসাহী করাই এবারের মূল লক্ষ্য। এ বছরের আগস্টে শেষ হতে যাচ্ছে জাতিসংঘ ঘোষিত ইয়ুথ ইয়ার, আর জাতিসংঘ ২০১২ সালকে ঘোষণা করতে যাচ্ছে সমবায় বর্ষ হিসেবে। এ দুইয়ের সঙ্গে সংগতি রেখে এবার আন্তর্জাতিক সমবায় দিবসের প্রতিপাদ্যে তরুণদের অবস্থান। আয়োজন করা হয়েছে নানা ধরনের প্রতিযোগিতার, যার সব কিছুতে প্রাধান্য পাচ্ছে একতা ও সমবায়ের কথা। সমবায়গত উদ্যোগের মধ্য দিয়ে তরুণরা দেশের অর্থনীতির চাকা সচল করবে, ভূমিকা রাখবে দেশের রাজনীতিতে-উন্নয়নে। আর এভাবেই তৈরি হবে পৃথিবী নামের একটি গ্রাম। সবার মিলিত শক্তি যে কী কঠিন শক্তিশালী ও দুর্ভেদ্য, তার উদাহরণ তো জাপানের অর্থনীতি, মালয়েশিয়ার উন্নয়ন, বার্লিন প্রাচীর ভেঙে দুই জার্মানির মিলনে আবারও পরাশক্তিরূপে নিজেদের অবস্থান তৈরি।
ঠিক ভিন্ন চিত্র দক্ষিণ ও উত্তর কোরিয়ায়। মিল হয়নি বলে প্রতিমুহূর্তে সমুদ্রসীমা নিয়ে উত্তেজনা। এখন সব সফল ইন্ডাস্ট্রি-প্রতিষ্ঠান-কম্পানির ইতিহাসও কিন্তু সমবায়ের গুণগানই গায়। যেকোনো উন্নয়ন অনেক বেশি দ্রুত সম্ভব, যদি তার পেছনে শুধু একক চেষ্টা না হয়ে ইচ্ছাটা হয় অনেকের। যদি স্বপ্নে থাকে যৌথ খামার, তবেই না সম্ভব একদিন এই পৃথিবী নামের গ্রামটার সব শিশুর মুখে হাসি ফোটানো, আর সব বৃদ্ধ মানুষের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আর আমাদের সেই চিরায়ত প্রবাদ 'দশে মিলে করি কাজ', সে তো শুধু আমাদের জন্য তৈরি হয়নি, সব ভাষায়ই বলা হয় একই কথা।
সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম
১৮৪৪ সালে ইংল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে তুলার কারখানার শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ ছিল অস্বাস্থ্যকর, মজুরি ছিল খুব কম। জীবনযাত্রার মান এতটাই নিচু ছিল যে সন্তানকে দুই বেলা খাবার জোগানো সেই মজুরিতে সম্ভব ছিল না। অবস্থার পরিবর্তনে ২৮ জন শ্রমিক মিলে প্রত্যেকের সামান্য অর্থ এক করে তৈরি করেছিল একটি মুদি দোকান, যা তাদের একার পক্ষে কল্পনাতীত। প্রথম প্রথম সারা দিন কারখানার কাজের পর সপ্তাহে দুই দিন রাতে সবাই মিলে দোকান চালাত। খুব অল্প সময়েই এ দোকান থেকে প্রাপ্ত লাভ তাদের সংসারে সচ্ছলতা এনে দিল। তাই মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যেই সপ্তাহে পাঁচ রাত দোকান খোলা শুরু করল তারা। শুরু হলো আধুনিক যুগের সমবায় সমিতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এ বছর পালিত হচ্ছে ৮৯তম আন্তর্জাতিক সমবায় দিবস। ১৯২৩ সাল থেকে জুলাই মাসের প্রথম শনিবার পালিত হয়ে আসছে দিনটি। এবারের দিবসের প্রতিপাদ্যে প্রাধান্য তরুণদের।
২০১১ সালে দিবসটির প্রতিপাদ্য_'Youth, The Future of Co-operative Enterprise'. সমবায়গত উদ্যোগ কিভাবে ক্ষমতায়নে সাহায্য করে, সে বিষয়ে তরুণদের উৎসাহী করাই এবারের মূল লক্ষ্য। এ বছরের আগস্টে শেষ হতে যাচ্ছে জাতিসংঘ ঘোষিত ইয়ুথ ইয়ার, আর জাতিসংঘ ২০১২ সালকে ঘোষণা করতে যাচ্ছে সমবায় বর্ষ হিসেবে। এ দুইয়ের সঙ্গে সংগতি রেখে এবার আন্তর্জাতিক সমবায় দিবসের প্রতিপাদ্যে তরুণদের অবস্থান। আয়োজন করা হয়েছে নানা ধরনের প্রতিযোগিতার, যার সব কিছুতে প্রাধান্য পাচ্ছে একতা ও সমবায়ের কথা। সমবায়গত উদ্যোগের মধ্য দিয়ে তরুণরা দেশের অর্থনীতির চাকা সচল করবে, ভূমিকা রাখবে দেশের রাজনীতিতে-উন্নয়নে। আর এভাবেই তৈরি হবে পৃথিবী নামের একটি গ্রাম। সবার মিলিত শক্তি যে কী কঠিন শক্তিশালী ও দুর্ভেদ্য, তার উদাহরণ তো জাপানের অর্থনীতি, মালয়েশিয়ার উন্নয়ন, বার্লিন প্রাচীর ভেঙে দুই জার্মানির মিলনে আবারও পরাশক্তিরূপে নিজেদের অবস্থান তৈরি।
ঠিক ভিন্ন চিত্র দক্ষিণ ও উত্তর কোরিয়ায়। মিল হয়নি বলে প্রতিমুহূর্তে সমুদ্রসীমা নিয়ে উত্তেজনা। এখন সব সফল ইন্ডাস্ট্রি-প্রতিষ্ঠান-কম্পানির ইতিহাসও কিন্তু সমবায়ের গুণগানই গায়। যেকোনো উন্নয়ন অনেক বেশি দ্রুত সম্ভব, যদি তার পেছনে শুধু একক চেষ্টা না হয়ে ইচ্ছাটা হয় অনেকের। যদি স্বপ্নে থাকে যৌথ খামার, তবেই না সম্ভব একদিন এই পৃথিবী নামের গ্রামটার সব শিশুর মুখে হাসি ফোটানো, আর সব বৃদ্ধ মানুষের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আর আমাদের সেই চিরায়ত প্রবাদ 'দশে মিলে করি কাজ', সে তো শুধু আমাদের জন্য তৈরি হয়নি, সব ভাষায়ই বলা হয় একই কথা।
সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম
No comments