ভিন্নমত-শেয়ারবাজার ফটকা বাজার নয় by আবু আহমেদ
দুঃখজনক হলো, আমাদের সমাজের কেউ কেউ শেয়ারবাজারকে 'ফটকা বাজার' হিসেবে চিন্তা করেন। এটা যদি ফটকা বাজারই হয়, তাহলে এটা হলো ফটকা কারবারিদের বাজার। কিন্তু বিষয়টা তা নয়। অনেকে এই বাজারের প্রয়োজনীয়তা ও প্রকৃতি না বুঝে এ কথা বলছেন।
আর আমিও বুঝি, ইংরেজি শব্দ 'speculation'-এর ভুল বাংলা থেকে তাঁরা ফটকা শব্দটি পেয়েছেন। speculation কিন্তু একটা ধনাত্মক শব্দ এবং প্রতিটি বিনিয়োগ ও ব্যবসায়ই speculation আছে। কেউ একটি ব্যবসাও দেখাতে পারবেন না যেখানে speculation নেই। যেমন যাঁরা সঞ্চয়পত্র কিনছেন বা সরকারের এই ঋণপত্রে বিনিয়োগ করছেন, তাঁরা কি মনে করেন, ওইখানে speculation নেই? আছে। ধরুন, দেশের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি আপনার ধারণার বাইরে বেড়ে গেল, তখন আপনি সঞ্চয়পত্র থেকে যে সুদ পাবেন তার ভ্যালু প্রকৃত অর্থে কমে যাবে। তাহলে সঞ্চয়পত্র কেনার সময়ও আপনি যদি জ্ঞানী হন মূল্যস্ফীতি সম্পর্কে আপনাকে speculate করতে হবে।
আসলে আমার আর একটি ধারণা হলো, শেয়ারবাজারকে তাঁরাই ফটকা বাজার বলেন, যাঁদের কোনোকালেই এ বাজারে বিনিয়োগ ছিল না। তবে ফটকা বলার অন্য আরেকটি কারণ আছে। সেটা হলো, এ বাজারে মূল্যের উত্থান-পতন বেশি হয়। এসব লোক মূল্যের উত্থান-পতন বেশি দেখতে অভ্যস্ত নন। এই বাজারের মাধ্যমে ঝুঁকি নিতে গিয়ে অনেকে অনেক তাড়াতাড়ি বড়লোক হন, আবার অনেকে অনেক তাড়াতাড়ি দরিদ্র হন, সেটা দেখতেও অভ্যস্ত নন। আসলে এ বাজার সম্পর্কে এত ভুল ধারণা এসেছে আমাদের ঐতিহ্য থেকে। মাত্র ২০ বছর আগেও এ দেশের অর্থনীতিতে ৬০ শতাংশ অবদান রাখত কৃষি খাত। শিল্প খাত ছিল বটে, তবে ইকুইটি ক্যাপিটাল বা স্থায়ী মূলধন আসত বাংকগুলো থেকে। আর আমাদের সরকারের বাজেট চলত বিদেশি কথিত দাতাদের টাকায়। তখনো সচিব ছিলেন, তখনো মন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু অর্থনীতি ছিল শান্ত প্রকৃতির, অতি নিম্ন পর্যায়ের।
এখন যেকোনো অর্থমন্ত্রীর জন্য বাজেট রচনা, বাজেটে বিভিন্ন পক্ষকে খুশি করা এবং সর্বোপরি শেয়াবাজারের মতো একটা ংঢ়বপঁষধঃরাব বাজারকে সামাল দেওয়া একটি প্রাণান্তকর বিষয়। তবে বিদেশে শেয়ারবাজারের বিষয়টা স্বাধীন রেগুলেটর, যা আমাদের এখানে এসইসি নামে পরিচিত, তাদের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের এ অর্থনীতিতেও আইনে ও কাগজ-কলমে শেয়ারবাজারকে দেখভাল এবং রেগুলেট করার দায়িত্ব এসইসিকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো, আমাদের কোনো কোনো রেগুলেটর স্বেচ্ছায় অর্থ মন্ত্রণালয়সহ অন্যদের হস্তক্ষেপ আহ্বান করে বা তাদের পরামর্শে চলতে পছন্দ করে। এত দুর্বল আর আপসকামী এসইসি থাকলে শেয়ারবাজারকে নিয়ে যারা নোংরাভাবে খেলতে চায় তারা সুযোগ পেয়ে যায়, যা গত এসইসির ক্ষেত্রে হয়েছে। এসইসি নামের কমিশনকে ক্ষমতা দেওয়া আছে। কিন্তু সেই ক্ষমতা কমিশন জনস্বার্থে প্রয়োগ করতে ব্যর্থ। তাহলে আপনি ওই কমিশনকে কী বলবেন? এটা শুধু কমিশনেরই ব্যর্থতা নয়, যারা এই কমিশন গঠন করেছে তথা সরকারেরও ব্যর্থতা। সে জন্য আমরা কমিশন পুনর্গঠন করার ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়ে নজর দিতে বলি। এক. যাঁদের কমিশনের চেয়ারম্যান-মেম্বার পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে তাঁরা দৃঢ় চরিত্রের লোক কি না। তাঁদের জ্ঞান ও প্রজ্ঞা শেয়াবাজারকে রেগুলেট করার জন্য যে পর্যায়ের প্রয়োজন, তা আছে কি না। দুই. কমিশনের প্রয়োজনীয় লোকবল ও অবকাঠামোগত সুবিধা আছে কি না। তিন. এই কমিশনের চেয়ারম্যান-মেম্বার সবার জন্য ভালো আর্থিক প্রণোদনা আছে কি না। গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে শেয়ারবাজারের ওপর দিয়ে যে সুনামি বয়ে গেল সেটা তো এসইসির সৃষ্টি। কারণ যেটা পড়তে বাধ্য, সেটাকে পড়ার স্তরে নিতে দিল কে? শেয়ারবাজার থেকে অনেক নোংরা লোক, বড় খেলোয়াড় ও উদ্যোক্তা শ্রেণী অনৈতিক এবং ক্ষেত্রবিশেষে বেআইনি সুযোগ নিতে তখনই বেশি তৎপর হয়, যখন দেখে এসইসি অতি দুর্বল অথবা তাদের কাজের সঙ্গে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। শুধু শেয়ারের জোগান কম বলে কি অতিমূল্যে আইপিও ইস্যু করার অনুমতি দেওয়া যায়? যখন এমন ঘটে, তখন বিশ্বের অন্য দেশেও শেয়ারবাজারে ধস নেমেছে। অন্য কথা হলো, শেয়ারবাজারকে অনেকে জুয়াড়িদের বাজার বলেন। তবে এতেও সত্য-অসত্য দুই-ই আছে।
সব শেয়ারবাজারেই কিছু লোক আছে, যারা বিনিয়োগের বদলে স্বল্পকালের জন্য অনেক শেয়ার কিনে জুয়া খেলতে চায়। তাদের প্রথমত বাজারই শাস্তি দিয়ে দেয়। আর আইন লঙ্ঘন করলে এসইসি তো অবশ্যই শাস্তি দিতে পারে। তবে বিশ্বের সব শেয়ারবাজারেই অতি নিষ্ঠার সঙ্গে রেগুলেটরের পর্যবেক্ষণে থাকে। রেগুলেটর জরিমানা করতে পারে, বিরত রাখতে পারে, লাইসেন্স বাতিল করতে পারে। কিন্তু অবস্থা হলো, রেগুলেটর যখন ঘুমায় তখন জুয়াড়ি আর নোংরা খেলোয়াড়রা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। বহুদিন ধরে কোনো কোনো মুসলিম দেশ এই বাজার জুয়াতাড়িত বলে এ ধরনের বাজারকে অনুমতিই দেয়নি। বর্তমানে সব মুসলিম দেশেই শেয়ারবাজার আছে, সেগুলো ভালোভাবেই চলছে। এসব দেশ বুঝতে পেরেছে, শেয়ারবাজারের অবস্থান ও সহযোগিতা ছাড়া তাদের অর্থনীতি উঁচু প্রবৃদ্ধির স্তরে পেঁৗছতে পারবে না। তবে এ বাজারকে আংশিক হলেও মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, তুরস্কের মতো দেশ ইসলামীকরণ করে নিয়েছে। অতি সম্প্রতি মুম্বাই শেয়ারবাজারও ভারতের মুসলমানদের এই বাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার জন্য ৬০টি কম্পানি নিয়ে আলাদা ইনডেক্স তৈরি করেছে।
ইসলামে হালাল-হারামের ব্যাপার আছে। ইসলামী বিনিয়োগ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দুটি উপাদান বিবেচনায় আনা হয়। এক. কম্পানিটি যে পণ্য উৎপাদন বা ব্যবসা করছে তা হালাল কি না এবং দুই. ইসলামে জুয়া নিষিদ্ধ এবং Speculation-এর একটা সীমারেখা আছে। অনুপস্থিত পণ্যের ব্যবসা ইসলাম অনুমোদন করে না। আর সেই জন্য ইসলামী শেয়ারবাজারগুলোতে আজতক, আমার জানা মতে, ডিরাইভেটিভস (Derivatives) নামের অতি স্পেকুলেটিভ হাতিয়ার বেচাকেনা করার অনুমোদন দেওয়া হয় না। ২০০৭-০৮-এ নিউ ইয়র্ক অর্থবাজারে ধস নামিয়েছিল হাউজিং সম্পদ বেচাকেনার পেছনে যে ঋণ দেওয়া হয়েছে ওই ঋণের ডিরাইভেটিভস। পরে ওসব আর্থিক সম্পদকে টঙ্কি (Toxic) বা বিষাক্রান্ত পণ্য হিসেবে ওবামা প্রশাসন কিনে নিয়েছে। পশ্চিমা জগতে সবচেয়ে উত্তেজক ও আকর্ষণীয় বাজার হলো শেয়ারবাজার। শেয়ারবাজারের ফিউচার ট্রেড বা শেয়ারের আগাম লেনদেন এবং কমোডিটি বা পণ্যবাজারেরও আগাম লেনদেন, পুঁজিবাদ এগুলোর মাধ্যমে বিকশিত হয়েছে। আর পুঁজিবাদের খারাপ দিকগুলোও এগুলোর মাধ্যমে প্রতিভাত হয়েছে। এসব বাদ দিয়ে আমেরিকান সমাজ এগোতে পারবে না বলে তাদের ধারণা ও বিশ্বাস। বরং এসব তারা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে অর্থবাজার সংস্কারের নামে অনেক কিছু করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে আমরা অত তেজি এবং অনেক ধরনের হাতিয়ারের একটি স্টক এক্সচেঞ্জ চাইনি। আমরা চেয়েছি কার্যকর ও আস্থায় ভরপুর একটি শেয়ারবাজার, যেখানে Speculation থাকবে; কিন্তু সেটা পাগলা হবে না। জুয়ার ঝুঁকি থাকবে, তবে সেটা কারো নজরে পড়বে না। আর কার্যকর ও বিশ্বাসযোগ্য শেয়ারবাজার গড়ে তোলা ও রক্ষা করার মূল দায়িত্ব কিন্তু রেগুলেটর এসইসিরই।
লেখক : অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আসলে আমার আর একটি ধারণা হলো, শেয়ারবাজারকে তাঁরাই ফটকা বাজার বলেন, যাঁদের কোনোকালেই এ বাজারে বিনিয়োগ ছিল না। তবে ফটকা বলার অন্য আরেকটি কারণ আছে। সেটা হলো, এ বাজারে মূল্যের উত্থান-পতন বেশি হয়। এসব লোক মূল্যের উত্থান-পতন বেশি দেখতে অভ্যস্ত নন। এই বাজারের মাধ্যমে ঝুঁকি নিতে গিয়ে অনেকে অনেক তাড়াতাড়ি বড়লোক হন, আবার অনেকে অনেক তাড়াতাড়ি দরিদ্র হন, সেটা দেখতেও অভ্যস্ত নন। আসলে এ বাজার সম্পর্কে এত ভুল ধারণা এসেছে আমাদের ঐতিহ্য থেকে। মাত্র ২০ বছর আগেও এ দেশের অর্থনীতিতে ৬০ শতাংশ অবদান রাখত কৃষি খাত। শিল্প খাত ছিল বটে, তবে ইকুইটি ক্যাপিটাল বা স্থায়ী মূলধন আসত বাংকগুলো থেকে। আর আমাদের সরকারের বাজেট চলত বিদেশি কথিত দাতাদের টাকায়। তখনো সচিব ছিলেন, তখনো মন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু অর্থনীতি ছিল শান্ত প্রকৃতির, অতি নিম্ন পর্যায়ের।
এখন যেকোনো অর্থমন্ত্রীর জন্য বাজেট রচনা, বাজেটে বিভিন্ন পক্ষকে খুশি করা এবং সর্বোপরি শেয়াবাজারের মতো একটা ংঢ়বপঁষধঃরাব বাজারকে সামাল দেওয়া একটি প্রাণান্তকর বিষয়। তবে বিদেশে শেয়ারবাজারের বিষয়টা স্বাধীন রেগুলেটর, যা আমাদের এখানে এসইসি নামে পরিচিত, তাদের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের এ অর্থনীতিতেও আইনে ও কাগজ-কলমে শেয়ারবাজারকে দেখভাল এবং রেগুলেট করার দায়িত্ব এসইসিকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো, আমাদের কোনো কোনো রেগুলেটর স্বেচ্ছায় অর্থ মন্ত্রণালয়সহ অন্যদের হস্তক্ষেপ আহ্বান করে বা তাদের পরামর্শে চলতে পছন্দ করে। এত দুর্বল আর আপসকামী এসইসি থাকলে শেয়ারবাজারকে নিয়ে যারা নোংরাভাবে খেলতে চায় তারা সুযোগ পেয়ে যায়, যা গত এসইসির ক্ষেত্রে হয়েছে। এসইসি নামের কমিশনকে ক্ষমতা দেওয়া আছে। কিন্তু সেই ক্ষমতা কমিশন জনস্বার্থে প্রয়োগ করতে ব্যর্থ। তাহলে আপনি ওই কমিশনকে কী বলবেন? এটা শুধু কমিশনেরই ব্যর্থতা নয়, যারা এই কমিশন গঠন করেছে তথা সরকারেরও ব্যর্থতা। সে জন্য আমরা কমিশন পুনর্গঠন করার ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়ে নজর দিতে বলি। এক. যাঁদের কমিশনের চেয়ারম্যান-মেম্বার পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে তাঁরা দৃঢ় চরিত্রের লোক কি না। তাঁদের জ্ঞান ও প্রজ্ঞা শেয়াবাজারকে রেগুলেট করার জন্য যে পর্যায়ের প্রয়োজন, তা আছে কি না। দুই. কমিশনের প্রয়োজনীয় লোকবল ও অবকাঠামোগত সুবিধা আছে কি না। তিন. এই কমিশনের চেয়ারম্যান-মেম্বার সবার জন্য ভালো আর্থিক প্রণোদনা আছে কি না। গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে শেয়ারবাজারের ওপর দিয়ে যে সুনামি বয়ে গেল সেটা তো এসইসির সৃষ্টি। কারণ যেটা পড়তে বাধ্য, সেটাকে পড়ার স্তরে নিতে দিল কে? শেয়ারবাজার থেকে অনেক নোংরা লোক, বড় খেলোয়াড় ও উদ্যোক্তা শ্রেণী অনৈতিক এবং ক্ষেত্রবিশেষে বেআইনি সুযোগ নিতে তখনই বেশি তৎপর হয়, যখন দেখে এসইসি অতি দুর্বল অথবা তাদের কাজের সঙ্গে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। শুধু শেয়ারের জোগান কম বলে কি অতিমূল্যে আইপিও ইস্যু করার অনুমতি দেওয়া যায়? যখন এমন ঘটে, তখন বিশ্বের অন্য দেশেও শেয়ারবাজারে ধস নেমেছে। অন্য কথা হলো, শেয়ারবাজারকে অনেকে জুয়াড়িদের বাজার বলেন। তবে এতেও সত্য-অসত্য দুই-ই আছে।
সব শেয়ারবাজারেই কিছু লোক আছে, যারা বিনিয়োগের বদলে স্বল্পকালের জন্য অনেক শেয়ার কিনে জুয়া খেলতে চায়। তাদের প্রথমত বাজারই শাস্তি দিয়ে দেয়। আর আইন লঙ্ঘন করলে এসইসি তো অবশ্যই শাস্তি দিতে পারে। তবে বিশ্বের সব শেয়ারবাজারেই অতি নিষ্ঠার সঙ্গে রেগুলেটরের পর্যবেক্ষণে থাকে। রেগুলেটর জরিমানা করতে পারে, বিরত রাখতে পারে, লাইসেন্স বাতিল করতে পারে। কিন্তু অবস্থা হলো, রেগুলেটর যখন ঘুমায় তখন জুয়াড়ি আর নোংরা খেলোয়াড়রা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। বহুদিন ধরে কোনো কোনো মুসলিম দেশ এই বাজার জুয়াতাড়িত বলে এ ধরনের বাজারকে অনুমতিই দেয়নি। বর্তমানে সব মুসলিম দেশেই শেয়ারবাজার আছে, সেগুলো ভালোভাবেই চলছে। এসব দেশ বুঝতে পেরেছে, শেয়ারবাজারের অবস্থান ও সহযোগিতা ছাড়া তাদের অর্থনীতি উঁচু প্রবৃদ্ধির স্তরে পেঁৗছতে পারবে না। তবে এ বাজারকে আংশিক হলেও মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, তুরস্কের মতো দেশ ইসলামীকরণ করে নিয়েছে। অতি সম্প্রতি মুম্বাই শেয়ারবাজারও ভারতের মুসলমানদের এই বাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার জন্য ৬০টি কম্পানি নিয়ে আলাদা ইনডেক্স তৈরি করেছে।
ইসলামে হালাল-হারামের ব্যাপার আছে। ইসলামী বিনিয়োগ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দুটি উপাদান বিবেচনায় আনা হয়। এক. কম্পানিটি যে পণ্য উৎপাদন বা ব্যবসা করছে তা হালাল কি না এবং দুই. ইসলামে জুয়া নিষিদ্ধ এবং Speculation-এর একটা সীমারেখা আছে। অনুপস্থিত পণ্যের ব্যবসা ইসলাম অনুমোদন করে না। আর সেই জন্য ইসলামী শেয়ারবাজারগুলোতে আজতক, আমার জানা মতে, ডিরাইভেটিভস (Derivatives) নামের অতি স্পেকুলেটিভ হাতিয়ার বেচাকেনা করার অনুমোদন দেওয়া হয় না। ২০০৭-০৮-এ নিউ ইয়র্ক অর্থবাজারে ধস নামিয়েছিল হাউজিং সম্পদ বেচাকেনার পেছনে যে ঋণ দেওয়া হয়েছে ওই ঋণের ডিরাইভেটিভস। পরে ওসব আর্থিক সম্পদকে টঙ্কি (Toxic) বা বিষাক্রান্ত পণ্য হিসেবে ওবামা প্রশাসন কিনে নিয়েছে। পশ্চিমা জগতে সবচেয়ে উত্তেজক ও আকর্ষণীয় বাজার হলো শেয়ারবাজার। শেয়ারবাজারের ফিউচার ট্রেড বা শেয়ারের আগাম লেনদেন এবং কমোডিটি বা পণ্যবাজারেরও আগাম লেনদেন, পুঁজিবাদ এগুলোর মাধ্যমে বিকশিত হয়েছে। আর পুঁজিবাদের খারাপ দিকগুলোও এগুলোর মাধ্যমে প্রতিভাত হয়েছে। এসব বাদ দিয়ে আমেরিকান সমাজ এগোতে পারবে না বলে তাদের ধারণা ও বিশ্বাস। বরং এসব তারা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে অর্থবাজার সংস্কারের নামে অনেক কিছু করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে আমরা অত তেজি এবং অনেক ধরনের হাতিয়ারের একটি স্টক এক্সচেঞ্জ চাইনি। আমরা চেয়েছি কার্যকর ও আস্থায় ভরপুর একটি শেয়ারবাজার, যেখানে Speculation থাকবে; কিন্তু সেটা পাগলা হবে না। জুয়ার ঝুঁকি থাকবে, তবে সেটা কারো নজরে পড়বে না। আর কার্যকর ও বিশ্বাসযোগ্য শেয়ারবাজার গড়ে তোলা ও রক্ষা করার মূল দায়িত্ব কিন্তু রেগুলেটর এসইসিরই।
লেখক : অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
No comments