ওষুধের মান-মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা নয়
মানুষের জীবন রক্ষায় ওষুধের প্রয়োজন হয়। চিকিৎসকরা নিয়মিত তাঁদের ব্যবস্থাপত্রে বিভিন্ন ওষুধ লিখে থাকেন। কিন্তু স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সাম্প্রতিক এক তথ্যে যে খবর পাওয়া গেছে, সেটা খুবই ভীতিকর। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রায় দুই বছরের তদন্তশেষে দেখা যাচ্ছে, দেশের দেড় শতাধিক ওষুধ কারখানার এক-তৃতীয়াংশেই অনুসরণ করা হয় না মান নিয়ন্ত্রণের যথাযথ রীতি।
সংসদীয় কমিটি এই ওষুধ কম্পানিগুলোর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে।
বাংলাদেশে ওষুধ শিল্প আজ বেশ প্রসার লাভ করেছে। দেশের ওষুধ এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। ওষুধ রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় করছে বৈদেশিক মুদ্রা। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে যে ওষুধ বাজারজাত করা হচ্ছে, সে ওষুধের মান নিয়ে প্রশ্ন অনেক দিনের। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ২০০৯ সালের জুলাই মাসের শেষার্ধে তদন্ত শুরু করে। দুই বছরেরও বেশি সময় তদন্তের পর কমিটি যে রিপোর্ট দিয়েছে, তা থেকে এটাই উপলব্ধি করা যায় যে ওষুধ শিল্পের অধিকাংশ মালিকই জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামান না। তাঁদের লক্ষ্য ব্যবসা করা, তার বেশি কিছু নয়। এমন অনেক ওষুধ আছে, যেগুলো ওষুধের দোকান ছাড়াও গ্রামের যেকোনো বাজারেই পাওয়া যায়। আবার এমন অনেক ওষুধের সন্ধান মিলেছে, যেসব ওষুধ পাওয়া যায় এলাকাবিশেষে। সংসদীয় কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৬৮। এর মধ্যে চালু প্রতিষ্ঠান ১৫১টি। ১৭টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ। ১২টি প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক মানের ওষুধ প্রস্তুত করে। এগুলোর ১০টি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। দেশের ওষুধ কম্পানিগুলোর সব ওষুধ যে মানসম্মত নয়, সে কথা আগেই বলা হয়েছে। সব কম্পানি মানসম্মত ওষুধ তৈরি করে না। অনেক কম্পানি ভিন্ন ভিন্ন এলাকার জন্য ভিন্ন ভিন্ন ওষুধ তৈরি করে। অথচ দেশের এই কম্পানিগুলোর ওষুধই দেশের চাহিদার ৯০ শতাংশ পূরণ করে। দেশের ওষুধের চাহিদার বাকি ১০ শতাংশ পূরণ হয় বিদেশি কম্পানির ওষুধ দিয়ে।
সংসদীয় কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ওষুধ প্রস্তুতের ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যে নীতিমালা রয়েছে, অনেক প্রতিষ্ঠানই সেটা মানে না। অনেক প্রতিষ্ঠানের নেই মান নিয়ন্ত্রণের যন্ত্রপাতি ও প্রয়োজনীয় দক্ষ লোকবল। অনেক প্রতিষ্ঠানেই নেই ওষুধের কাঁচামাল সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা, আলো ও তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। আবার ঢাকার অনেক ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ওষুধ তৈরিতে সরাসরি ওয়াসার পানি ব্যবহার করে বলে অভিযোগ আছে। কাজেই ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
এ অবস্থা বেশিদিন চলতে দেওয়া যায় না। জীবন রক্ষা করে যে ওষুধ, সে ওষুধের গুণগত মান বজায় রাখার জন্য ওষুধ প্রশাসনকে আরো সক্রিয় হতে হবে। দেশ থেকে ভেজাল, নকল ওষুধ দূর করতে হবে। দূর করতে হবে মানসম্মত নয় এমন ওষুধ। মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া যাবে না।
No comments