শান্তির জন্য অঙ্গীকার by জাহিরুল ইসলাম

শান্তি চায় না_ পৃথিবীতে এমন মানুষের সংখ্যা খুব কম। কিন্তু বাস্তবতা হলো, শান্তি বেশিরভাগ মানুষের প্রত্যাশিত হলেও এ জন্য কাজ করার মানুষ খুব কম। সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীর সংখ্যা কম হলেও এই অল্পসংখ্যক মানুষের কর্মকাণ্ডের প্রভাব খুব দ্রুত বাকি সবার ওপর পড়ে। জাগতিক কর্মকাণ্ডে মতদ্বৈধতা এবং বিরোধ মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।


সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে এটা আছে এবং ধ্বংস হওয়া অবধি থাকবে। কিন্তু তা এমন পর্যায়ে উন্নীত হওয়া উচিত নয়, যার ফলে শান্তি বিঘ্ন হয়। এই মতদ্বৈধতা এবং বিরোধকে সহনীয় মাত্রায় রেখে জীবন পরিচালনা করতে পারলেই সমাজে শান্তি ত্বরান্বিত হয়।
শান্তি এবং সহিংসতা একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে দুটি ধারণাই ক্রমশ পরিবর্তিত হচ্ছে। এখন শান্তি বলতে আমরা বুঝি ইতিবাচক উপাদান_ মানবাধিকার, সমঅধিকার, সুশাসন, ন্যায়বিচার, অর্থনৈতিক সচ্ছলতা, সুরক্ষিত পরিবেশ, নারীর ক্ষমতায়ন, আন্তর্জাতিক সম্প্র্রীতির উপস্থিতি। অন্যদিকে 'নীরব সহিংসতা' সহিংসতার ধারণাকে দিয়েছে নতুন মাত্রা। ফলে কোনো ব্যক্তিকে তার যথাযথ প্রাপ্য পেতে অসহযোগিতা করাকেও সহিংসতা হিসেবে গণ্য হয়। তাই এখন শান্তি বলতে আমরা বুঝি ইতিবাচক উপাদানগুলোর উপস্থিতি অথবা নীরব সহিংসতার অনুপস্থিতি।
সহিংসতা নিরসন করে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ যুগে যুগে ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে ক্রমেই ছড়িয়ে পড়েছে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে। বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কাজ করে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার সাড়ে ছয় দশক সময় অতিবাহিত হয়েছে। সদস্য দেশগুলোর সহযোগিতা এবং জাতিসংঘের গৃহীত কার্যক্রমগুলোর পূর্ণ বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে পারে বিশ্বশান্তি।
সারাবিশ্বে এবার ৩০তম বারের মতো পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য 'শান্তি ও গণতন্ত্র : আপনার কণ্ঠ দৃঢ় করুন'। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে শান্তি সম্পর্কে যেসব নতুন ধারণা উদ্ভব হচ্ছে তার সঙ্গে গণতন্ত্রের রয়েছে নিবিড় সম্পর্কর্। গণতান্ত্রিক পরিবেশ ছাড়া এসব ধারণার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন ও বিকাশ সম্ভব নয়। তাই বলা চলে, বর্তমান বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায় হলো মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং তার বিকাশ ঘটানো। শান্তির পূর্বশর্ত হচ্ছে সহনশীলতা। সহনশীল মনোভাবাপন্ন না হলে কখনও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান সম্ভব নয়। শুধু কি তাই? শান্তির জন্য কাজ করারও কোনো বিকল্প নেই। নিজে শান্তিকামী হয়ে ঘরে চুপ করে বসে থাকলে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে না। শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে সবার কাছে। এ কাজে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে একসঙ্গে। কেননা গুটিকয়েক মানুষের প্রচেষ্টায় শান্তি প্রতিষ্ঠা যেমন অসম্ভব তেমনি সামগ্রিক প্রচেষ্টাও সফল হবে না, যদি উপযুক্ত পরিবেশ না থাকে। শান্তি প্রতিষ্ঠার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে পরিবারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পারিবারিক শিক্ষাই কেবল পারে প্রতিটি মানুষকে শান্তিবাদী করতে। নৈতিক এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ শিক্ষার পাঠশালার মতোই পরিবার হচ্ছে শান্তিবোধ জাগ্রত করার অদ্বিতীয় পাঠশালা।
শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতে হবে ব্যক্তি পর্যায় থেকে। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই ব্যক্তি পর্যায় থেকে এমন কিছু করা সম্ভব নয় যার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। তবে এ কথাও তো ঠিক, পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই তার নিজস্ব পরিমণ্ডলে এভাবে চিন্তা করলে শান্তি প্রতিষ্ঠা অসম্ভব নয়। তাই ব্যক্তি পর্যায় থেকে আর কিছু না হোক, আমরা প্রতিদিন শান্তিপূর্ণ থাকার অঙ্গীকার করতে পারি। অঙ্গীকার করতে পারি মানুষকে ভালোবাসার এবং সহমর্মিতা প্রদর্শনের। প্রতিটি মানুষের মধ্যে শান্তিবোধ জাগ্রত হলে এবং প্রত্যেকে শান্তিবাদী হলেই কেবল বিনির্মাণ করা সম্ভব একটি শান্তিপূর্ণ পৃথিবী।
zahirul.du@gmail.com
 

No comments

Powered by Blogger.