ধর্মীয় রাজনীতির বিধান মানতে পারি না by কামাল লোহানী
আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ জাতি। এ দেশের জনগণ তাই অকুতোভয়, অমিত তেজ, সাহসে উদ্দীপ্ত। ন্যায়ের জন্য, সত্য ও সুন্দরের জন্য নিজ প্রাণ বলিদান করতে বিন্দুমাত্র পিছপা হব না। অতীতেও হইনি। পাকিস্তানি শাসকচক্র, সামরিক বাহিনী, জমিদার-জোতদার শ্রেণীর কায়েমি স্বার্থ সংরক্ষণকারী গোষ্ঠীর তাঁবেদার মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ক্ষমতাবলয়ের বাইরে যে কপটতার আশ্রয় নিয়ে স্বদেশি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা,
সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে জল্লাদের দরবার বসিয়েছিল; আমরা তো মাতৃমুক্তিপণ করে কেউ অস্ত্র হাতে কেউ বা শব্দের গোলা হাতে তাক করেছি দুশমনদেরই। আমরা অবশেষে বঙ্গবন্ধুর ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে দেওয়া আহ্বান_'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম'কেই মুক্তির ডাক মেনে জোট বেঁধে তৈরি হয়ে গিয়েছিলাম দলমত-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে। অযুত প্রাণ ঝাঁপ দিয়েছিলাম মরণপণ করে দেশমাতৃকাকে মুক্ত করার তাগিদে। সেই যে যুদ্ধ চলেছিল ৯ মাস। এই সময়েই তো বাংলার সরলপ্রাণ মানুষের বিপুলসংখ্যক তরুণ শপথ নিয়েছিলেন মাতৃমুক্তিপণ করে। জীবনের মায়া ত্যাগ করে তাঁরা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যাঁরা ছিলেন বাঙালি জওয়ান ও অফিসার, তাঁদের মধ্যে অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে, চট্টগ্রাম সেনানিবাসে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা তো বটেই। অবশ্য এইচ এম এরশাদের মতো কেউ কেউ পাকিস্তানিদের সঙ্গে থেকে গিয়েছিলেন। যেমন খালেদা জিয়া। পাকিস্তানিদের সঙ্গেই তিনি থেকে যেতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছিলেন। কর্নেল এম এ জি ওসমানী ও কর্নেল কাজী নুরুজ্জামান_দুজনই পাকিস্তান আর্মি থেকে অবসর নিয়ে সাধারণ জীবন যাপন করছিলেন। তাঁরাও মুক্তিযুদ্ধে শামিল হয়েছিলেন। মুক্তিবাহিনী গঠিত হওয়ার পর কর্নেল এম এ জি ওসমানী প্রধান হলেন এবং উপপ্রধান সেনাপতি হয়েছিলেন বিমানবাহিনীর সিনিয়র অফিসার, যিনি অসহযোগ আন্দোলনকালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছিলেন, এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার। কর্নেল এম এ রবকে সম্মানিত করা হয়েছিল চিফ অব স্টাফ পদ দিয়ে। ১১টি সেক্টরে পুরো পূর্ব বাংলার রণাঙ্গনকে ভাগ করা হয়েছিল, যার একটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল কর্নেল নুরুজ্জামানকে। এ ছাড়া মেজর জিয়াউর রহমান, খালেদ মোশাররফ, আবু তাহের, সি আর দত্ত, আবু ওসমান চৌধুরী, সফিউল্লাহ, এম কে বাশার, মীর শওকত আলী প্রমুখ সেক্টরগুলোর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দেশ মুক্ত হওয়ার সময় পাকিস্তানি বাহিনী যখন আত্মসমর্পণ করেছিল সম্মিলিত মিত্রবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান জেনারেল অরোরার কাছে, তখন সেখানে বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর প্রতিনিধি হিসেবে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত ছিলেন এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার। সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তে গেরিলা কমান্ডের জনপ্রিয় মেজর হায়দারও উপস্থিত ছিলেন। তাঁকেও হত্যা করা হয়েছে। সেই আমলে ক্যু, পাল্টা ক্যুর কারণে কত যে মুক্তিযোদ্ধাকে প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছে, তার হিসাব নিশ্চয়ই সেনাবাহিনীতে আছে।
মুক্তিযুদ্ধে কোনো নায়ক, অধিনায়কের মৃত্যু হয়নি; কিন্তু মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে সেক্টর কমান্ডার জেনারেল খালেদ মোশাররফ, জেনারেল মঞ্জুর, উইং কমান্ডার খাদেমুল বাশারসহ বহু মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসারকে নির্বিচারে হত্যা করেছেন জেনারেল জিয়া, লে. জেনারেল এরশাদ। এটা ইতিহাসই সাক্ষ্য দেবে। জিয়া একদিকে গোলাম আযমকে পুনর্বাসিত করা থেকে শুরু করে জামায়াত, শিবির, আলবদর, আলশামস ও শাহীন ফৌজ এবং রাজাকারদের কৌশলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনেছিলেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার লড়াকু সৈনিক কর্নেল আবু তাহেরকে নির্মম-নিষ্ঠুরভাবে বিনা বিচারে কিংবা বিচারের নামে প্রহসন করে ফাঁসিতে চড়িয়ে হত্যা করেছিলেন। আবার জেনারেল এরশাদ যখন সেনাধ্যক্ষ, তখন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সঙ্গে চট্টগ্রামে যাওয়া এবং সেখানে সেনানিবাসে সেনা অফিসারদের মধ্যে যে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়েছিল, তার অবসান ঘটানোর কথা ছিল। কিন্তু আকস্মিকভাবে সেনাধ্যক্ষ হিসেবে এরশাদ চট্টগ্রাম যাওয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন বলে আমরা জনগণ শুনেছিলাম, সেই এরশাদ সুচতুর কৌশলে পরিকল্পিত (!) হত্যাকাণ্ড থেকে দূরে থেকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসের সেনাপ্রধান হিসেবে প্রদীপ্ত প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে যিনি মুক্তিযুদ্ধ করে দেশকে মুক্ত করতে জান কবুল লড়াই করেছিলেন পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে, সেই দুরন্ত বুদ্ধিদীপ্ত সেনা অফিসারকে সুকৌশলে হত্যা করা হয়েছিল চট্টগ্রাম সেনাবিদ্রোহের নায়ক হিসেবে চিহ্নিত করে। সে সময়ই ওই বিদ্রোহে জড়িত বলে মঞ্জুরের বেশ কয়জন ব্রিগেডিয়ার, কর্নেল, মেজর ও ক্যাপ্টেনকে হত্যা করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা হত্যার সুপরিকল্পিত চক্রান্ত সম্পূর্ণভাবে সফল হয়েছিল। এই বিদ্রোহ জিয়াকে হত্যা করতে ও করার জন্যই পরিকল্পিত হয়েছিল বলে ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে আছে। তবে বাস্তব হলো, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ও পরে ব্রিগেড অধিনায়ক হিসেবে জিয়াকে প্রাণ দিতে হলো। জেনারেল মঞ্জুর ও তাঁর সহযোদ্ধা মুক্তিসেনা পদস্থ সেনা অফিসারদের সেই বিদ্রোহের পরিণতিতে কোর্ট মার্শালে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মহান সৈনিকদেরই হত্যা করা হয়েছিল_এ কথা কি অস্বীকার করা যাবে? জেনারেল মঞ্জুরকে বিশ্বাসঘাতক ও রাষ্ট্রপ্রধানকে হত্যার অভিযোগে বিচার করার আগেই তখনকার সেনাপ্রধান এরশাদ চাতুর্যের সঙ্গে এ পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। সে কথা কোথাও সেদিন প্রকাশিত না হলেও জনগণের মুখে মুখে এ কথা ঘুরে ফিরেছে। এরপর চট্টগ্রাম কিলিং সমাপ্ত হলে তার বেনিফিশিয়ারি হয়েছিলেন এরশাদ। তাৎক্ষণিকভাবে উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু আড়ালে বসে সেনাপ্রধান ক্ষমতালাভের জপ করছিলেন। জিয়া-মঞ্জুরকে সরিয়ে দিয়ে মনে হলো পথের কাঁটাই সরিয়ে দিয়েছিলেন, এটি পরে প্রমাণিত হলো। কারণ এরশাদ বিচারপতি সাত্তারের মন্ত্রিসভায় দুর্নীতিবাজ মন্ত্রীদের অজুহাতে ক্ষমতার দুর্বল তখ্ত উল্টে দিয়ে নিজেই রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে দেশে সামরিক শাসন জারি করেছিলেন। দীর্ঘ প্রায় দশক ধরে রাজত্ব করেছেন।
এরশাদের আমলেই এ কে খন্দকার এবং সম্ভবত পরে এ এম এ মুহিত মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিলেন। তাঁরা কি তাঁদের স্ব-ইচ্ছায় না সদিচ্ছায় এরশাদের সঙ্গে গিয়েছিলেন? নাকি এ দুই মুক্তিযোদ্ধা, বিশেষ করে যে খন্দকার প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন ও সেনাধিপতি জেনারেল এম এ জি ওসমানীর সহযোগী ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধ পরিকল্পনা ও পরিচালনা করেছেন, জীবিতদের মধ্যে উপপ্রধান সেনাপতি হিসেবে সরব হয়েছেন দীর্ঘদিন থেকে, তাঁকে এই মহাজোট সরকারের মন্ত্রিসভায় নেওয়া হলো তখন সাধারণ মানুষ পর্যন্ত খুশি হয়েছিলেন। কারণ তিনি ছিলেন বিমানবাহিনীপ্রধান মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে এবং একজন অসম্ভব বিনয়ী স্বভাবের ভদ্রলোক মানুষ। যিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের নেতা, সবার শ্রদ্ধার পাত্র। যাঁরা শ্রদ্ধা করেন, তাঁরা সবাই তাঁকে চেনেন এবং মুক্তিযুদ্ধকাল ও পরবর্তী সময়ের সৎ ও সুন্দর ব্যবহারের জন্য তিনি জনপ্রিয়। এরশাদের মন্ত্রী ছিলেন কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতির অভিযোগ কেউ ওঠাতে পারেননি। তাঁকে সবাই 'ক্লিনম্যান' হিসেবেই জানেন। মুক্তিযুদ্ধকালে স্বাধীন বাংলা বেতারের বার্তা সম্পাদক হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধের নানা বিষয় জানার জন্য তাঁর শরণাপন্ন হতে হতো। তখন তো দেখেছিই, তারপর মুক্ত বাংলার প্রথম বিমানপ্রধান হিসেবেও তাঁকে দেখেছি তিনি বঙ্গবন্ধুর কতটা ঘনিষ্ঠ ছিলেন। কিন্তু কেন তাঁকে এরশাদের মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে হয়েছিল? তিনি বা মুহিত সাহেব কি স্বেচ্ছায় যোগ দিয়েছিলেন? এ প্রশ্নের জবাব তাঁরা দুজনই জানেন। তবে আমি এ কে খন্দকারের বিষয় বোধ হয় অল্প খানিকটা জানি। কারণ যুদ্ধোত্তরকালেও তাঁর সঙ্গে মাঝেমধ্যে টেলিফোনে কথা হতো। আবার রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে গিয়ে দেখেছি, হঠাৎ দেখা হলে তিনিই প্রথম হাতটা তুলে সালাম জানিয়েছেন। তাঁকে এরশাদ আমলে একদিন জিজ্ঞেস করলাম, 'খন্দকার ভাই, চতুর্দিকে গুজব উঠেছে আপনি নাকি এরশাদের মন্ত্রিসভায় যোগ দিচ্ছেন?' তিনি ত্বরিত জবাব দিলেন_'না না, কামাল সাহেব, প্রশ্নই ওঠে না। আমি এখন বৃদ্ধ মাকে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত, তাঁর চিকিৎসা করানো ছাড়া নিজেও আর এসব পরিবেশে কাজ করতে পারব না।' আবারও জিজ্ঞেস করলে তিনি সুস্পষ্টভাবে বলেছিলেন, 'প্রশ্নই ওঠে না'। কিন্তু এ কথাও সত্য যে কয়েক দিন পরেই তাঁকে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে হয়েছিল। কোন প্রভাব-পরিবেশে তিনি মন্ত্রী হয়েছিলেন, সে খবর অবশ্য জানি না। একজন সামরিক ব্যক্তির ক্যু কী ভয়ংকর, সে তো আমরা যেমন জানি, তার চেয়ে বেশি করে খন্দকার সাহেবরা জানেন। কিন্তু মহাজোট সরকার গঠন করার সময় কি প্রধানমন্ত্রী জানতেন না?
এ কে খন্দকার বয়োজ্যেষ্ঠ মন্ত্রী একজন, তাঁকে যখন মন্ত্রিসভায় নিয়েছিলেন তখন কি প্রধানমন্ত্রী আপনি তাঁকে বাছাই করেছিলেন? নাকি তিনি মন্ত্রী হওয়ার জন্য তদবির করেছিলেন? একজন দক্ষ, ভদ্রলোক ও অভিজ্ঞ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যাঁর সুনাম মানুষের মনে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে জোরালো বক্তব্য দিয়ে এসেছেন, তারই প্রতিফলন বৈঠকে ঘটিয়েছিলেন। কাগজে দেখলাম, আপনি মন্ত্রিসভার বৈঠকে তাঁর বিরুদ্ধে কটু কথা ও কঠোর মন্তব্য করে তাঁকে থামিয়ে দিয়েছেন। যে কথা বলেছেন, সে কথা তো সত্যি। কিন্তু কী করে সত্যি তাও তো জানা প্রয়োজন। এ কে খন্দকার সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের প্রধান এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে তাঁর পরিশ্রমী অবদান ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল ভূমিকা এত তাড়াতাড়ি ভুলে যাবেন না। তাঁর প্রতি এমন কটু মন্তব্য করায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অনেকেরই মনঃকষ্ট হয়েছে। তাই কি কেবল? এমন একজন বয়োবৃদ্ধ শ্রদ্ধেয় সৎ ব্যক্তিকে এভাবে 'হেনস্তা' করা সচেতন কেউই মেনে নিতে পারছেন না। ২০০১ সালের নির্বাচনের অনেক আগে যে সম্মিলিত নাগরিক সমাজ গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, এ কে খন্দকার তখনো তাঁর আহ্বায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর আবুল মাল আবদুল মুহিত পঞ্চাশের দশক থেকে ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়। তিনি সচেতন, দ্রুতগতিমনস্ক মানুষ। সংস্কৃতিমান। মুক্তিযুদ্ধকালে বিদেশে ছিলেন এবং দিনরাত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষেই কাজ করেছেন তা-ই নয়, বিদেশে সরকার ও রাজনীতিবিদদের মোটিভেট করেছেন দেশমাতৃকার মুক্তির লক্ষ্যে। হ্যাঁ, এরশাদের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। বক্তব্যও ঠিক। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতি বা অসততার অভিযোগ তো ওঠেনি। তিনি এরশাদের আমলে অর্থমন্ত্রী হয়েছিলেন। এটা যদি অপরাধ হয়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করার ক্ষেত্রে, তাহলে কি এরশাদকে নিয়ে মহাজোট করাটা ঠিক হয়েছে? সব মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি এর বিরোধিতা করেছিল, খন্দকার কিংবা মুহিতকে নেওয়ায় কেউই কোনো আপত্তি প্রকাশ করেছিল বলে আমার জানা নেই।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি নিয়ে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি করে মহাজোট যখন নির্বাচনে অবতীর্ণ হয়, তখন আওয়ামী লীগ এক বিশাল, জনপ্রিয়, রাজনৈতিক দল হওয়া সত্ত্বেও সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের নেতারা এবং ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি জামায়াতীদের বিরুদ্ধে যেভাবে জনসভা, বৈঠক, মতবিনিময় করে জনগণকে সচেতন করেছিলেন, তার ফলেই দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ভোটে বিজয়ী হয়েছে মহাজোট। সামনে আবার নির্বাচন। দেশের মানুষ ভরসা করে আপনাদের ওপর। কারণ আওয়ামী লীগ তো মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সংগঠন_জনগণ মুক্তিযুদ্ধের প্রধান শক্তি। তাকে তারা সংগঠিত করতে পেরেছিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এমন ক্ষোভ এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়াকালে, খুব কি ফলপ্রসূ হবে?
মন্ত্রিসভার বৈঠকে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট সচিব ও প্রয়োজনীয় কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকেন। কী করে খবরের কাগজগুলো এ খবর পেল? যারা পেয়েছে তাদের কাছে এ তো রসাল খবর। এ সংবাদ, কথোপকথন কিংবা আপনার উত্তেজিত মন্তব্যগুলো কী করে বাইরে গেল? তবে কি শর্ষেতেই ভূত আছে? এই যুদ্ধাপরাধীরা ক্রমেই নতুন করে 'লাই' পাচ্ছে। এ অবস্থা মানা যায় না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার সেদিনের মনঃকষ্টের কথাগুলো বাইরে বেরিয়ে যাওয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের মনেও আঘাত লেগেছে। আমরা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি চাই না বলেই রক্ত দিয়েছিলাম। সেই রক্তখচিত ইতিহাসই আমাদের শক্তি, প্রেরণা ও বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র অনুসরণীয় স্তম্ভ।
লেখক : প্রবীণ সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
মুক্তিযুদ্ধে কোনো নায়ক, অধিনায়কের মৃত্যু হয়নি; কিন্তু মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে সেক্টর কমান্ডার জেনারেল খালেদ মোশাররফ, জেনারেল মঞ্জুর, উইং কমান্ডার খাদেমুল বাশারসহ বহু মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসারকে নির্বিচারে হত্যা করেছেন জেনারেল জিয়া, লে. জেনারেল এরশাদ। এটা ইতিহাসই সাক্ষ্য দেবে। জিয়া একদিকে গোলাম আযমকে পুনর্বাসিত করা থেকে শুরু করে জামায়াত, শিবির, আলবদর, আলশামস ও শাহীন ফৌজ এবং রাজাকারদের কৌশলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনেছিলেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার লড়াকু সৈনিক কর্নেল আবু তাহেরকে নির্মম-নিষ্ঠুরভাবে বিনা বিচারে কিংবা বিচারের নামে প্রহসন করে ফাঁসিতে চড়িয়ে হত্যা করেছিলেন। আবার জেনারেল এরশাদ যখন সেনাধ্যক্ষ, তখন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সঙ্গে চট্টগ্রামে যাওয়া এবং সেখানে সেনানিবাসে সেনা অফিসারদের মধ্যে যে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়েছিল, তার অবসান ঘটানোর কথা ছিল। কিন্তু আকস্মিকভাবে সেনাধ্যক্ষ হিসেবে এরশাদ চট্টগ্রাম যাওয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন বলে আমরা জনগণ শুনেছিলাম, সেই এরশাদ সুচতুর কৌশলে পরিকল্পিত (!) হত্যাকাণ্ড থেকে দূরে থেকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসের সেনাপ্রধান হিসেবে প্রদীপ্ত প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে যিনি মুক্তিযুদ্ধ করে দেশকে মুক্ত করতে জান কবুল লড়াই করেছিলেন পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে, সেই দুরন্ত বুদ্ধিদীপ্ত সেনা অফিসারকে সুকৌশলে হত্যা করা হয়েছিল চট্টগ্রাম সেনাবিদ্রোহের নায়ক হিসেবে চিহ্নিত করে। সে সময়ই ওই বিদ্রোহে জড়িত বলে মঞ্জুরের বেশ কয়জন ব্রিগেডিয়ার, কর্নেল, মেজর ও ক্যাপ্টেনকে হত্যা করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা হত্যার সুপরিকল্পিত চক্রান্ত সম্পূর্ণভাবে সফল হয়েছিল। এই বিদ্রোহ জিয়াকে হত্যা করতে ও করার জন্যই পরিকল্পিত হয়েছিল বলে ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে আছে। তবে বাস্তব হলো, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ও পরে ব্রিগেড অধিনায়ক হিসেবে জিয়াকে প্রাণ দিতে হলো। জেনারেল মঞ্জুর ও তাঁর সহযোদ্ধা মুক্তিসেনা পদস্থ সেনা অফিসারদের সেই বিদ্রোহের পরিণতিতে কোর্ট মার্শালে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মহান সৈনিকদেরই হত্যা করা হয়েছিল_এ কথা কি অস্বীকার করা যাবে? জেনারেল মঞ্জুরকে বিশ্বাসঘাতক ও রাষ্ট্রপ্রধানকে হত্যার অভিযোগে বিচার করার আগেই তখনকার সেনাপ্রধান এরশাদ চাতুর্যের সঙ্গে এ পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। সে কথা কোথাও সেদিন প্রকাশিত না হলেও জনগণের মুখে মুখে এ কথা ঘুরে ফিরেছে। এরপর চট্টগ্রাম কিলিং সমাপ্ত হলে তার বেনিফিশিয়ারি হয়েছিলেন এরশাদ। তাৎক্ষণিকভাবে উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু আড়ালে বসে সেনাপ্রধান ক্ষমতালাভের জপ করছিলেন। জিয়া-মঞ্জুরকে সরিয়ে দিয়ে মনে হলো পথের কাঁটাই সরিয়ে দিয়েছিলেন, এটি পরে প্রমাণিত হলো। কারণ এরশাদ বিচারপতি সাত্তারের মন্ত্রিসভায় দুর্নীতিবাজ মন্ত্রীদের অজুহাতে ক্ষমতার দুর্বল তখ্ত উল্টে দিয়ে নিজেই রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে দেশে সামরিক শাসন জারি করেছিলেন। দীর্ঘ প্রায় দশক ধরে রাজত্ব করেছেন।
এরশাদের আমলেই এ কে খন্দকার এবং সম্ভবত পরে এ এম এ মুহিত মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিলেন। তাঁরা কি তাঁদের স্ব-ইচ্ছায় না সদিচ্ছায় এরশাদের সঙ্গে গিয়েছিলেন? নাকি এ দুই মুক্তিযোদ্ধা, বিশেষ করে যে খন্দকার প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন ও সেনাধিপতি জেনারেল এম এ জি ওসমানীর সহযোগী ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধ পরিকল্পনা ও পরিচালনা করেছেন, জীবিতদের মধ্যে উপপ্রধান সেনাপতি হিসেবে সরব হয়েছেন দীর্ঘদিন থেকে, তাঁকে এই মহাজোট সরকারের মন্ত্রিসভায় নেওয়া হলো তখন সাধারণ মানুষ পর্যন্ত খুশি হয়েছিলেন। কারণ তিনি ছিলেন বিমানবাহিনীপ্রধান মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে এবং একজন অসম্ভব বিনয়ী স্বভাবের ভদ্রলোক মানুষ। যিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের নেতা, সবার শ্রদ্ধার পাত্র। যাঁরা শ্রদ্ধা করেন, তাঁরা সবাই তাঁকে চেনেন এবং মুক্তিযুদ্ধকাল ও পরবর্তী সময়ের সৎ ও সুন্দর ব্যবহারের জন্য তিনি জনপ্রিয়। এরশাদের মন্ত্রী ছিলেন কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতির অভিযোগ কেউ ওঠাতে পারেননি। তাঁকে সবাই 'ক্লিনম্যান' হিসেবেই জানেন। মুক্তিযুদ্ধকালে স্বাধীন বাংলা বেতারের বার্তা সম্পাদক হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধের নানা বিষয় জানার জন্য তাঁর শরণাপন্ন হতে হতো। তখন তো দেখেছিই, তারপর মুক্ত বাংলার প্রথম বিমানপ্রধান হিসেবেও তাঁকে দেখেছি তিনি বঙ্গবন্ধুর কতটা ঘনিষ্ঠ ছিলেন। কিন্তু কেন তাঁকে এরশাদের মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে হয়েছিল? তিনি বা মুহিত সাহেব কি স্বেচ্ছায় যোগ দিয়েছিলেন? এ প্রশ্নের জবাব তাঁরা দুজনই জানেন। তবে আমি এ কে খন্দকারের বিষয় বোধ হয় অল্প খানিকটা জানি। কারণ যুদ্ধোত্তরকালেও তাঁর সঙ্গে মাঝেমধ্যে টেলিফোনে কথা হতো। আবার রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে গিয়ে দেখেছি, হঠাৎ দেখা হলে তিনিই প্রথম হাতটা তুলে সালাম জানিয়েছেন। তাঁকে এরশাদ আমলে একদিন জিজ্ঞেস করলাম, 'খন্দকার ভাই, চতুর্দিকে গুজব উঠেছে আপনি নাকি এরশাদের মন্ত্রিসভায় যোগ দিচ্ছেন?' তিনি ত্বরিত জবাব দিলেন_'না না, কামাল সাহেব, প্রশ্নই ওঠে না। আমি এখন বৃদ্ধ মাকে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত, তাঁর চিকিৎসা করানো ছাড়া নিজেও আর এসব পরিবেশে কাজ করতে পারব না।' আবারও জিজ্ঞেস করলে তিনি সুস্পষ্টভাবে বলেছিলেন, 'প্রশ্নই ওঠে না'। কিন্তু এ কথাও সত্য যে কয়েক দিন পরেই তাঁকে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে হয়েছিল। কোন প্রভাব-পরিবেশে তিনি মন্ত্রী হয়েছিলেন, সে খবর অবশ্য জানি না। একজন সামরিক ব্যক্তির ক্যু কী ভয়ংকর, সে তো আমরা যেমন জানি, তার চেয়ে বেশি করে খন্দকার সাহেবরা জানেন। কিন্তু মহাজোট সরকার গঠন করার সময় কি প্রধানমন্ত্রী জানতেন না?
এ কে খন্দকার বয়োজ্যেষ্ঠ মন্ত্রী একজন, তাঁকে যখন মন্ত্রিসভায় নিয়েছিলেন তখন কি প্রধানমন্ত্রী আপনি তাঁকে বাছাই করেছিলেন? নাকি তিনি মন্ত্রী হওয়ার জন্য তদবির করেছিলেন? একজন দক্ষ, ভদ্রলোক ও অভিজ্ঞ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যাঁর সুনাম মানুষের মনে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে জোরালো বক্তব্য দিয়ে এসেছেন, তারই প্রতিফলন বৈঠকে ঘটিয়েছিলেন। কাগজে দেখলাম, আপনি মন্ত্রিসভার বৈঠকে তাঁর বিরুদ্ধে কটু কথা ও কঠোর মন্তব্য করে তাঁকে থামিয়ে দিয়েছেন। যে কথা বলেছেন, সে কথা তো সত্যি। কিন্তু কী করে সত্যি তাও তো জানা প্রয়োজন। এ কে খন্দকার সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের প্রধান এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে তাঁর পরিশ্রমী অবদান ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল ভূমিকা এত তাড়াতাড়ি ভুলে যাবেন না। তাঁর প্রতি এমন কটু মন্তব্য করায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অনেকেরই মনঃকষ্ট হয়েছে। তাই কি কেবল? এমন একজন বয়োবৃদ্ধ শ্রদ্ধেয় সৎ ব্যক্তিকে এভাবে 'হেনস্তা' করা সচেতন কেউই মেনে নিতে পারছেন না। ২০০১ সালের নির্বাচনের অনেক আগে যে সম্মিলিত নাগরিক সমাজ গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, এ কে খন্দকার তখনো তাঁর আহ্বায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর আবুল মাল আবদুল মুহিত পঞ্চাশের দশক থেকে ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়। তিনি সচেতন, দ্রুতগতিমনস্ক মানুষ। সংস্কৃতিমান। মুক্তিযুদ্ধকালে বিদেশে ছিলেন এবং দিনরাত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষেই কাজ করেছেন তা-ই নয়, বিদেশে সরকার ও রাজনীতিবিদদের মোটিভেট করেছেন দেশমাতৃকার মুক্তির লক্ষ্যে। হ্যাঁ, এরশাদের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। বক্তব্যও ঠিক। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতি বা অসততার অভিযোগ তো ওঠেনি। তিনি এরশাদের আমলে অর্থমন্ত্রী হয়েছিলেন। এটা যদি অপরাধ হয়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করার ক্ষেত্রে, তাহলে কি এরশাদকে নিয়ে মহাজোট করাটা ঠিক হয়েছে? সব মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি এর বিরোধিতা করেছিল, খন্দকার কিংবা মুহিতকে নেওয়ায় কেউই কোনো আপত্তি প্রকাশ করেছিল বলে আমার জানা নেই।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি নিয়ে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি করে মহাজোট যখন নির্বাচনে অবতীর্ণ হয়, তখন আওয়ামী লীগ এক বিশাল, জনপ্রিয়, রাজনৈতিক দল হওয়া সত্ত্বেও সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের নেতারা এবং ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি জামায়াতীদের বিরুদ্ধে যেভাবে জনসভা, বৈঠক, মতবিনিময় করে জনগণকে সচেতন করেছিলেন, তার ফলেই দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ভোটে বিজয়ী হয়েছে মহাজোট। সামনে আবার নির্বাচন। দেশের মানুষ ভরসা করে আপনাদের ওপর। কারণ আওয়ামী লীগ তো মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সংগঠন_জনগণ মুক্তিযুদ্ধের প্রধান শক্তি। তাকে তারা সংগঠিত করতে পেরেছিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এমন ক্ষোভ এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়াকালে, খুব কি ফলপ্রসূ হবে?
মন্ত্রিসভার বৈঠকে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট সচিব ও প্রয়োজনীয় কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকেন। কী করে খবরের কাগজগুলো এ খবর পেল? যারা পেয়েছে তাদের কাছে এ তো রসাল খবর। এ সংবাদ, কথোপকথন কিংবা আপনার উত্তেজিত মন্তব্যগুলো কী করে বাইরে গেল? তবে কি শর্ষেতেই ভূত আছে? এই যুদ্ধাপরাধীরা ক্রমেই নতুন করে 'লাই' পাচ্ছে। এ অবস্থা মানা যায় না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার সেদিনের মনঃকষ্টের কথাগুলো বাইরে বেরিয়ে যাওয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের মনেও আঘাত লেগেছে। আমরা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি চাই না বলেই রক্ত দিয়েছিলাম। সেই রক্তখচিত ইতিহাসই আমাদের শক্তি, প্রেরণা ও বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র অনুসরণীয় স্তম্ভ।
লেখক : প্রবীণ সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
No comments